এই ভিডিওতে, আমি বিএনপি পরীক্ষা, এর ব্যবহার এবং ফলাফলের ব্যাখ্যা করেছি । বি-টাইপ ন্যাট্রিউরেটিক পেপটাইড (বিএনপি) হল একটি হরমোন যা স্ট্রেস বা হার্ট ফেইলিউরের প্রতিক্রিয়ায় হার্ট দ্বারা নিঃসৃত হয়। আমি পরীক্ষা কিভাবে কাজ করে, হার্টের অবস্থা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব এবং ফলাফলগুলি কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তা কভার করি। আপনি একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদার বা শুধুমাত্র মেডিকেল পরীক্ষা সম্পর্কে কৌতূহলী হোন না কেন, এই ভিডিওটি আপনাকে BNP পরীক্ষা এবং এর তাৎপর্য সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা প্রদান করবে। In this video, I explore the BNP test, its uses, and the interpretation of results. B-type natriuretic peptide (BNP) is a hormone released by the heart in response to stress or heart failure. I tried to cover how the test works, its importance in diagnosing heart conditions, and how the results are interpreted. Whether you’re a healthcare professional or simply curious about medical tests, this video will provide you with a comprehensive understanding of the BNP test and its significance. Hashtags #BNP#NT-ProBNP #Heartfailure Keywords BNP, NT-Pro BNP, BNP Test, Congestive Cardiac failure, heart failure test, hormone, Brain Natriuretic Peptide, Pathological test, Laboratory Test, Simple health Talks, Easy Health Talks বিএনপি, এন টি প্রো বিএনপি, হার্ট ফেইলুর, হরমোন, নেটট্রি ইউরেটিক পেপ্টাইড , প্যাথলজিকেল টেস্ট,
ঝগড়াটা শুরু হয়েছিল হায়াত সিকদারের মৃত্যুর ৪০ দিন পর। অর্থাৎ চল্লিশা খাওয়ার পরদিন থেকে। মৃত্যুর আগ মুহূর্তে হায়াত সিকদার একটা ওয়াসিয়ত করে যান। বড় ছেলের শশুরের কাছ থেকে তিনি ৫ লাখ টাকা নিয়েছিলেন। সেই টাকা আর ফেরত দেননি। কেউ কেউ মনে করে নিয়েছেন এই টাকা যৌতুক হিসেবে নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ভেবে নিয়েছেন যে এটা ধার হিসেবে নিয়েছেন। যে হিসেবেই নিয়ে থাকুন এই টাকা ফেরত দেয়ার চিন্তাও করেননি হায়াত সিকদার। মৃত্যুর আগে হুজুরের একটা বয়ান স্মরণ হয়। হুজুর বলেছিলেন আল্লাহ তার যেকোনো হক আদায় না করলে নিজ গুণে বান্দাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন তওবা করলে। কিন্তু বান্দার হক বান্দাকেই ক্ষমা করতে হবে। বান্দায় ক্ষমা না করলে আল্লাহয় ক্ষমা করবেন না। তাই, তিনি মৃত্যুর আগ মুহুর্তে তওবা পড়ে তার স্ত্রী ও দুই ছেলে-বৌয়ের উপস্থিতিতে ওয়াসিয়ত করেন “আমি মরে গেলে আমার ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে বড় বৌয়ের বাবাকে দিয়ে দিও। আর আমাকে মাফ করে দিতে বলো। ” এরপরে কালিমা বলতে বলতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
দাফনের ৪০ দিন পর যথারীতি খরচ করে চল্লিশা খাওয়ানো হলো। পেট ভরে খেয়ে সবাই হায়াত সিকদারের আত্মার শান্তি কামনা করে দোয়া করে গেলেন। নিকটাত্মীয়রা সেদিন বাড়িতেই থেকে গেলেন। অনেক খাবার বেশী হয়েছিলো। সেগুলো দিয়েই রাতের খাবার খেয়ে নিলেন সবাই। বাকী বাসী ভাতে পানি দিয়ে পান্তা করার জন্য রেখে দেয়া হলো। গরমের দিনে পান্তা ভাত চুকা মানে টক হয়ে গিয়েছিলো। সেই পান্তাভাত দিয়ে চুকা খিচুড়ি রান্না করে সবাই সকালের নাস্তা খেলেন। সবাই হায়াত সিকদারের প্রসংশা করে স্মৃতিচারণ করলেন। কিন্তু বড় ছেলের বৌ মজলিসে বলে বসলেন “আব্বা মারা যাবার সময় ওয়াসিয়ত করে গেছেন তার ব্যাংক থেকে টাকা তুলে ৫ লাখ টাকা আমাকে দিয়ে দিতে।” ছোট বৌ বলে উঠলেন “মিথ্যা কথা। এই কথার কি কোন স্বাক্ষী আছে?”
বড় বৌ – কেন, আম্মার সামনেই তো বলেছেন। তুমিও শুনছো। এখন এমন কথা বলছো কেন? আম্মা, আপনেও শুনেছেন। এখন সবার সামনে বলুন।
শাশুড়ি – তাই তো বলেছেন। আমিও শুনেছি।
ছোট বৌ – আপনিও মিথ্যা কথা বলছেন, আম্মা। আপনি ভাবীর পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন। মিথ্যা কথা আমি মানি না।
এভাবে বেশ কিছুদিন ঝগড়া বিবাদ চলতে লাগলো। বড় বৌয়ের ছোট ভাই একটু চালাক চতুর আছে। ফেইসবুক, ইউটিউব ও গুগল দেখে দেখে অনেক কিছুর উপর জ্ঞান অর্জন করে ফেলেছে এই ২০ বছর বয়েসেই। ইন্টারনেট থেকে পড়ে জানতে পেরেছে যে, সাউন্ড রিট্রাইভাল নামে একটা এপ আছে যেটা দিয়ে অতীতের কথা, যা কোন কিছু দিয়ে রেকর্ড করে রাখা হয়নি সেগুলো বের শোনা যায়। সে বুদ্ধিকরে মামুন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়ে মানুনকে জিজ্ঞেস করলো
– আপনার কাছে কি এমন এপ আছে যা অতীতে যে কথা রেকর্ড করে রাখা হয়নি সেই কথা বের করে শোনা যায়?
– আছে তো। এই মোবাইলেই ইনস্টল করা আছে।
– আমার তালই ৪০ দিন আগে একটা ওয়াসিয়ত করে গেছেন। কিন্ত সেটা এখন অস্বীকার করছে কেউ কেউ। আপনি সেই কথা এখন শোনাতে পারবেন?
– অবশ্যই। এটাও তো আমার ব্যবসা। এজন্য আমি ফি নিয়ে থাকি। এই এপ নামানোর জন্য আমাকে ফি দিতে হয়েছে। প্রয়োজনীয় ডাটা এন্ট্রি দিলে সেই কথা শোনা যাবে।
– চলুন ভাই, আমার বোনের বাড়ি। ওখানে একটা সমস্যা হয়ে গেছে।
সমস্যাটা বুঝিয়ে বলে মনির মামুনকে নিয়ে এলো হায়াত সিকদারের বাড়ি। সাথে মসজিদের ইমাম সাব, ওয়ার্ড কাউন্সিলার ও কয়েকজন গণ্যমান্য লোক নিয়ে এলেন। মনির সমস্যাটা মামুনের কাছে তুলে ধরলো। মামুনের কাছে জানতে চাইল
– মামুন ভাই, আগে ব্যাখ্যা করে বলুন, এটায় কিভাবে অতীতের সাউন্ড রেট্রাইভ করে আনে।
মামুন – এখানে কয়েকটা সিস্টেম এক সাথে কাজ করে। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস দিয়ে হারানো সাউন্ড উতপত্তির স্থান নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়। গ্লোবাল টাইমিং সিস্টেম দিয়ে কোন একটা নির্দিষ্ট সময় ইনপুট দিতে হয়। এন্টার দিলেই সাউন্ড তথা নির্দিষ্ট লোকেশনের অতীতের কথা শোনা যায়।
কাউন্সিলর – আমাদের মুখের কথা বলার সাথেই রেকর্ড করা না হলে সেটা বাতাসে মিলিয়ে যায়। সেই কথা এই মেশিনে উতপত্তি করে কিভাবে?
মামুন – আমরা যখন এক দেশ থেকে আরেক দেশে মোবাইল ফোনে কথা বলি সেটা একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফিজিটাল সিগনালে রুপান্তরিত করে ইথার মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় । যাকে বলা হয় মডুলেশন। যিনি ফোন রিসিভ করবেন তার ফোনের ডিভাইস সেই সিগনালটিকে রুপান্তরিত করে সেই কথা বা সাউন্ড তৈরি করে আমাদের শোনায় ডিমডুলেশন করিয়ে। এজন্য এটাকে মোডেম নামে ডাকা হয়। মডুলেশন-ডিমডুলেশন সংক্ষিপ্ত হয়ে মোডেম হয়েছে। আর সাউন্ড রিট্রাইভাল সিস্টেম হচ্ছে অতীতের সাউন্ড বের করে শুনায়। সব সাউন্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিগনালে রুপান্তরিত হয়ে আমাদের অদেখা ন্যাচারাল মিডিয়াতে সংরক্ষিত থাকে। সাউন্ড রিট্রাইভাল সিস্টেম দিয়ে সেই সিগনাল থেকে আবার সাউন্ড তৈরি করা যায়।
ইমাম – আমরা জীবনে যেসব আমল করছি সেগুলো অনবরত কেরামান কাতেবীন ফেরেস্তা আল্লাহর নির্দেশে লিপিবদ্ধ করছে। মৃত্যুর পর বিচারের দিন সেই আমলনামা যার যার হাতে দিবেন। সেই মিডিয়াতে বান্দার সব কর্মকাণ্ড দেখা যাবে। আপনাদের আবিস্কার দেখছি কেরামান কাতেবীনের রেকর্ডের সাথে মিল আছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহর সৃষ্টি জীব হচ্ছে মানব। এই মানব জাতিই এমন জিনিস বানাতে পারলো। সেই মানবের যিনি সৃষ্টিকর্তা তার না জানি কত ক্ষমতা। সোবহান আল্লাহ!
কাউন্সিলর – মামুন, এখন কাজটা শুরু করুন। অনেক সময় লাগবে? আমার আরেকটা দরবার আছে। চুরির কেইস।
মামুন – কয়েক সেকেন্ডের ব্যাপার। চুরির কেইস ধরারও এপ আছে। হায়াত সিকদার যে স্থানে কথাগুলো বলেছিলেন সেই স্থানের কো-অর্ডিনেট ইনপুট দিতে হবে অর্থাৎ লেটিচুড, লংগিচুড এবং এল্টিচুড নাম্বার দিতে হবে।
কাউন্সিলর – এটা কি আবার?
মামুন – পৃথিবীর যেকোন স্থানের একটি পজিশন নাম্বার আছে। এটা বের করা সহজ। আপনি গুগুল ম্যাপের যে কোন পয়েন্টে ক্লিক করলে দেখবেন এর পজিশন লেখা উঠে। আপনার মোবাইল ফোন দিয়েও দেখতে পারেন। আমি যে স্থানে হায়াত সিকদার কথা বলছিলেন সেখানে মোবাইল নিয়ে গিয়ে পজিশন বের করলাম। এটা ইনপুট দিলাম। এখন তারিখ ও সময়টা বলুন, ইনপুট দেই।
বড় বৌ – এত তারিখের বিকাল চারটা সারে চারটার দিকে।
মামুন লেটিচুড, লংগিচুড, এল্টিচুড এবং তারিখ ও সময় এন্ট্রি দিয়ে রেজাল্ট বাটন ক্লিক করতেই মোবাইলে বেজে উঠল একটা শিশুর কান্না। অনেকেই বলে উঠলো “এইটা আবার কে কাঁদে?” বড় বৌ বললেন “এটা মর্জিনার বাচ্চা কান্না করছে। মারা যাওয়ার কয়েক মিনিট আগে মর্জিনা এসেছিল আব্বাকে দেখতে। সেই বাচ্চার কান্না শোনা যাচ্ছে। আপনি এর কয়েক মিনিট পর টাইম সেট করুন।” এবার শোনা গেলো পাশের মসজিদের মুয়াজ্জিন হেলালের আজান। শাশুড়ি বললেন “এই আজানের পর কথাগুলো বলছিলেন। টাইম আরেকটু বাড়িয়ে দিন।”
এবার বেজে উঠল “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি মরে গেলে আমার ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে বড় বৌয়ের বাবাকে দিয়ে দিও। আর আমাকে মাফ করে দিতে বলো। মরে যাচ্ছি। বৌমার বাবাকে দিয়ে যা থাকে তা ইসলামী বিধান অনুসারে তোমরা ভাগ করে নিবে। আসতাগফিরুল্লাহ, রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বেও ওয়াতুবু ইলাইহি। লা হাওলা ওয়া লা কুয়াতা ইল্লাহ। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। ” কান্নার রোল শোনা গেলো। সবাই সত্যটা ধরে ফেললেন। ছোট বৌ বলে উঠলেন “এই মোবাইলে যত সত্য-মিথ্যা কথা শোনা যায়। মোবাইলে ইউটিউব ভিডিওতে দেখেছি একজন আরেকজনের কন্ঠ হুবহু নকল করে বলে যাচ্ছে। ভাবী তার ছোট ভাইকে নিয়ে ষড়যন্ত্র করে এসব আয়োজন করছে আব্বার ৫ লাখ টাকা মেরে খাওয়ার জন্য। যান গা এলা।” শুনে সবাই থ মেরে বসে রইলেন।
২১ অক্টোবর ২০২৩ খ্রি.
ময়মনসিংহ
(বিজ্ঞান ভিত্তিক কল্পকাহিনি)
কপিরাইট প্রটেক্টেড।
কপি পেস্ট না করে শেয়ার বাটনে ক্লিক করে শেয়ার করুন।
ছাদবাগানের গাছভরা খঞ্জন জাতের বারমাসি সজনের ভিডিও | Rooftop Garden Video of khonjon
khonjon #sojne #Rooftop
Dr. Md. Sadequel Islam Talukder MBBS, M Phil (Pathology) বাগান,সাদেকুল,তালুকদার,ফুল,ফল,sadequel,talukder,lecture,garden,flowers,fruits,khonjon,sojne,flowers from seeds,gardening tips,planting flowers,planting perennial,flower seedlings,flower
মানুষের মাংস কি ফ্রিজে রাখা যায়? সহজ স্বাস্থ্য কথা | Human meat can be kept in the refrigerator?
Dr. Sadequel Islam Talukder sadequel@yahoo.com
tissue #biopsy #humansample
From this video you can learn a common mistake in keeping or storing human tissue or biopsy sample in refrigerator. histopathology test, biopsy test, cancer test etc.
সামাদ স্যার ছিলেন আমার হাই স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক। আব্দুস সামাদ বিএসসি স্যার। ক্লাসে সাধারণ গণিত, নৈর্বাচনিক গণিত ও পদার্থবিদ্যা পড়াতেন। এই তিনটি বিষয়েই আমি ভাল করতাম । তাই, স্যার আমাকে অন্যদের থেকে একটু বেশি স্নেহ করতেন। খুব সরল ছিলেন। সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। ১৯৭৫-৭৬ সনে ভালুকার বাটাজোর বিএম হাই স্কুলে স্যার আমাকে নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়িয়েছেন। আমি এর আগে কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে পড়েছি । ১৯৭৫ সনে নবম শ্রেনীতে ওঠার পর কচুয়া স্কুলে আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষক কেউ ছিলেন না । ১৯৭৪ সনে দেশের অবস্থা ভালো ছিল না । মানুষের মধ্যে অভাব অনটন ছিল । গ্রামের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিলো না । অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে চলে যায় । আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষক ভীমচন্দ্র বিএসসি স্যারও নিরূদ্যেশ হলেন । জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম । আমাদের বিজ্ঞান ও গনিত বিষয় কেউ পড়ালেন না । কয়াদি স্কুলে আমার ফুফাতো ভাই আব্দুল মোত্তালেব তালুকদার (মতি ভাই) বিএসসি টিচার ছিলেন। হেড স্যার আমাকে পাঠিয়েছিলেন তাকে কচুয়া স্কুলে চলে আসার প্রস্তাব নিয়ে । তিনি রাজি হলেন না ।
আমার পড়ার উদ্যেশ্য ছিল ডাক্তার হওয়ার । না হতে পারলে ইঞ্জিনিয়ার । না হতে পারলে বিএসসি-এমএসসি হওয়ার। কিন্তু নবম শ্রেনীর তিন মাস হয়ে গেলো বিজ্ঞান পড়া শুরুই করতে পারলাম না । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো । চলে এলাম বাটাজোর স্কুলে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শওকত স্যার । তিনি ছিলেন সেই সময়ের এলাকার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক । তিনি যে স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হতেন সেই স্কুলই রাতারাতি উন্নত হয়ে যেতো । তার আগে বাটাজোর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম কুতুব উদ্দিন স্যার। তিনিও খুব শক্তিশালী হেড মাস্টার ছিলেন । তার অবদানেই বাটাজোর স্কুল অত্র এলাকার মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্কুল ছিল । তিনি রাজনীতি করতেন । শুনেছি, তিনি একাই আওয়ামী লীগের অনেক সংঠনের প্রধান ছিলেন । এজন্য ভেতরে ভেতরে তার অনেক শত্রু তৈরি হয় । এক রাতের অন্ধকারে তিনি শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন । সেই খুনের জের ধরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাটাজোর এলাকায় খুনা-খুনি চলতে থাকে ।
শওকত স্যার ইংরেজি লিটারেচার পড়াতেন । প্রথম যেদিন তার ক্লাশ করলাম সেদিন তিনি ক্যাসাবিয়াংকা নামে একটা পয়েম (কবিতা) পড়াচ্ছিলেন । তিনি পাজামা-পাঞ্জাবি ও জিন্না-ক্যাপ পরতেন । বাম হাতে বই নিয়ে ডান হাত ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে মঞ্চের উপর হেটে হেটে কবিতা পড়ে পড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন । তিনি বলছিলেন “ক্যানন এট রাইট অব দেম, ক্যানন এট লেফট অব দেম, –“ । এমনভাবে অভিনয় করে করে পড়াচ্ছিলেন যে মনে হচ্ছিলো স্যারই কামানের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন । আমি তার পড়ানোর স্টাইল দেখে মুগ্ধ হলাম । আরেকদিন তিনি একটা কবিতা পড়াচ্ছিলেন । সেটা মেঘনায় বান কবিতার “শোন মা আমিনা, রেখে দেরে কাজ, তরা করে মাঠে চল, এখনি নামিবে দেয়া, এখনি নামিবে ঢল —“এর ইংরেজি ভার্সনের “ও মেরি, গো এন্ড কল দা ক্যাটল হোম —-” পড়াচ্ছিলেন । মেরি বানে ভেসে মারা গিয়েছিল । তার খোঁজে গিয়ে দেখতে পেলো মেরির চুল পানিতে ভাসছে । দেখে চুল না শেওলা বুঝা যাচ্ছিল না । কবিতায় ছিলো “ইজ ইট উইড?” স্যার এমনভাবে অভিনয় করে পড়ালেন যে, যেনো স্যার নিজের চোখে দেখছেন। স্যারের পড়ানোর স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করেছিলো । কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই স্যারকে এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যেতে হলো । আমরা আরেক শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষককে হারালাম ।
আমি ভর্তি হয়েছিলাম ২ এপ্রিল ১৯৭৫ সনে । দিয়েছিলাম ১ এপ্রিল । সেদিন এপ্রিল ফুল মনে করে কে যেনো ভর্তি হতে নিষেধ করেছিলেন । আমি সন্তুষ্ট হলাম । বিএসসি স্যার হিসাবে পেলাম আব্দুস সামাদ স্যার ও আব্দুর রউফ স্যারকে । আব্দুল বারী স্যার খুব সম্ভব আইএসসি, বিএ টিচার ছিলেন । সামাদ স্যার পড়াতেন গনিত ও পদার্থ বিজ্ঞান, রউফ স্যার পড়াতেন রসায়ন, বারী স্যার জীব বিজ্ঞান, জামাল স্যার বাংলা সাহিত্য, সামসুল হক স্যার বাংলা ব্যাকরন, বিল্লাল স্যার ইংরেজি গ্রামার এবং আনসার মৌলভি স্যার ইসলামীয়াত । শওকত স্যার চলে যাবার পর নতুন হেড স্যার আসেন আব্দুর রহমান স্যার । পরপর দুইজন হেড মাস্টার আসেন। দুইজনের নামই ছিল আব্দুর রহমান । যিনি হেড স্যার ছিলেন তিনিই ইংরেজি লিটারেচার পড়াতেন ।
যেহেতু আমি তিন মাস বিজ্ঞান ও অংক বিষয় ক্লাস করিনি সেহেতু আমি এই বিষয়গুলো ক্লাসে তেমন ফলো করতে পারছিলাম না । তাই, আমি স্যারদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারছিলাম না । আমি ক্লাসে অপরিচিত এক আগুন্তুক হিসাবে রয়ে গেলাম । আমি বিষন্ন থাকতাম ক্লাসে । ক্লাসে ফজলু ও দেলোয়ারের খুব নাম ছিল । অথচ কচুয়া স্কুলে থাকাকালিন ওদের মতোই আমি ছিলাম । ওরা এই স্কুলে আসে ক্লাস সেভেনে থাকতে । জামাল স্যার ফজলুকে বেশী স্নেহ করতো । আমার হিংসা হতো । এপ্রিলেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হলো । আমি পদার্থ বিজ্ঞানে দুই নম্বর কম পেয়ে ফেল করে বসলাম । জীবনে আমি থার্ড হইনি । সেই আমি একটা সাবজেক্টে ফেল করলাম! নিজেকে শান্তনা দিতাম এই বলে যে আমি গত তিন মাস কিছুই পড়ি নি । পাস মার্কের কাছাকাছি গিয়েছি, কম কিসের?
আমিই ফার্স্ট হবো এই সংকল্প নিয়ে পড়া শুরু করলাম । সব পাঠ্য বইয়ের নোট বই কিনে ফেললাম । পাঠ্যবই ভাল ভাবে পড়ি । তারপড় কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা নোট বই দেখে শিখে নেই । কিভাবে অংক কষতে হবে নোট বই দেখে শিখে নেই । ক্লাসে ভালো করতে থাকি । মনোযোগ দিয়ে ক্লাসে স্যারদের কথা শুনি । সামাদ স্যার ধীরে ধীরে সরল ভাষায় কথা বলে পড়াতেন । আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতাম । সামাদ স্যারের পড়ানোর ধরন আমার ভালো লাগে । আমি এটাকে স্টাইল না বলে ধরনই বললাম । আমি এমবিবিএস ক্লাসে স্টাইল করে পড়াই না । আমার পড়ানোর ধরন সামাদ স্যারের মতো । আমি জানি, আমি যেভাবে পড়াই ছাত্রদের বুঝার জন্য উপকারি । অল্প কিছু ছাত্রদের কাছে সেটা পছন্দ নাও হতে পারে । আমি মনে করি স্টাইল করার দরকার নাই, ভালোভাবে বুঝে ছাত্ররা ভা্লো ডাক্তার হলেই হলো ।
সামাদ স্যার ক্লাসে অংক করতে দিতেন । আমরা দ্রূত অংক করে মঞ্চে উঠে স্যারকে দেখাতাম । যে আগে দেখাতে পারতো স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতো । আগের রাতে নোট দেখে চেপ্টারের সব অংক সল্ভ করা শিখে আসতাম । ক্লাসে অংক দেয়ার সাথে সাথে দ্রূত সমাধান করে ফার্স্টবয় ফজলুর আগে দেখাতে চেষ্টা করতাম । দ্রুত দেখাতে গিয়ে বেঞ্চের কোনায় আংগুলে ঠেলা লেগে গল গলি রক্ত পড়ে । আমার সেদিকে খেয়াল ছিল না । আমার টারগেট ছিলো স্যারকে আগে অংক করে দেখানো । ক্লাসমেট মজনু আমাকে বলল “এই খুন হয়ে গেছো । আঙ্গুল কেটে রক্ত পড়ছে ।” বলার পর আমি দেখি গলগলি রক্ত পড়ছে আঙ্গুল কেটে । এমন ছিলো আমার জেদ । ফার্স্ট হতেই হবে । সামাদ স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতেই হবে । এরপর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় দ্বিতিয় স্থান অধিকার করলাম । সব স্যারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো আমার প্রতি । সামাদ স্যারের কাছে হয়ে গেলাম এক নাম্বার অনুগত ভালো ছাত্র।
১৯৭৬ সনে টেস্ট পরীক্ষা শেষে আমাদের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। ভাল ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমাদের ৩১ জন পরীক্ষার্থীকে স্কুলের হোস্টেলে রাখেন। এক রুমে অনেকজন রাখা হত। আমার পড়ায় ক্ষতি হতে পারে বলে জানালে স্যার আমাকে একাই এক রুমে রাখেন। আমাদের তত্বাবধান করার জন্য সামাদ স্যার ও বারী স্যার স্কুল বিল্ডিং-এ থাকতেন। মাঝে মাঝে বেত হাতে নিয়ে চুপি চুপি রাউন্ড দিতেন। এক দিন রাত ১২ টার দিকে স্যারগণ চুপি চুপি রাউন্ড দিচ্ছিলেন। ছাত্ররা ঐ সময় একটু দুষ্টুমি করছিল। বারী স্যার বললেন “এই তোরা কি শুরু করেছিস?” সুলতান একটু ফক্কর ছিল। সে ভিতর থেকে বলে উঠল “শুরু না স্যার, শেষের দিকে।”
আমাদের পাহারা দেয়া ছাড়া স্যারদের তেমন কাজ ছিল না। বারান্দায় বসে সারাক্ষণ দাবা খেলতেন সামাদ স্যার আর বারী স্যার। বন্ধুরা দুপুরে খেয়ে প্রায় সবাই দুই এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিত। আমি দুপুরে খেয়ে ঘুমাতাম না। টেস্ট পেপার থেকে সামাদ স্যারকে একটা প্রশ্নপত্র পছন্দ করে দিতে বলতাম। স্যার যে কোন একটা প্রশ্নপত্র পছন্দ করে দিতেন। তখন শীতকাল ছিল। মাঠে বেঞ্চ বসিয়ে তার উপর বসে ঘড়ি ধরে বিকেল ২ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা দিতাম। একেক দিন একেক বিষয় পরীক্ষা দিতাম। সামাদ স্যার ও বারী স্যার খাতা দেখে নাম্বার দিতেন। বাংলা ও ইংরেজী ছাড়া সব বিষয়েই ৮০-র উপর নাম্বার পেতাম। ৮০-র উপর নাম্বার পেলে লেটার মার্ক বলা হতো । আমি তাই ৬ বিষয়ে লেটার পাবো বলে স্বপ্ন দেখতাম । খাতা দেখার জন্য স্যারগণ কোন ফি নেবার কল্পনাও করেন নি। বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষায় আমি ৪টা বিষয়ে লেটারমার্ক পেয়েছিলাম। সামাদ স্যারের সাবজেক্টগুলো বেশী ভাল করেছিলাম। সাধারণ গনিতে ৯৮, নৈর্বাচনিক গনিতে ৯৫ পদার্থবিদ্যায় ৯২ পেয়েছিলাম।
একদিন বিকাল ৩ টার দিকে আমি মাঠে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম । দেখলাম সামাদ স্যার লেট্রিন থেকে হারিকেন নিয়ে বের হচ্ছেন। টিনসেড কাঁচা পায়খানাঘর স্কুল ঘর থেকে ৪০-৫০ গজ দূরে ছিল। আমরা টিউবওয়েল থেকে বদনায় পানি নিয়ে কাঁচা পায়খানায় মল ত্যাগ করতাম। হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তাম। হারিকেন একটি বিশেষ ধরনের কেরোসিনের বাতি ছিল যার আলো কমানো-বাড়ানো যে্তো। আমাদের সবার রুমে এ্কটা হারিকেন ও একটা করে বদনা থাকত। স্যারের হাতের হারিকেন নেভানো অবস্থায় ছিল। এমন ফকফকা দিনের বেলায় স্যারের হাতে হারিকেন কেন আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। বুঝতে গেলে আবার আমার পরীক্ষার ক্ষতি হয়। হাতে হারিকেন আছে, কিন্তু বদনা নেই। আরও জটিল মনে হচ্ছে। ফিরে আসার পর দেখি দুই স্যার হাসাহাসি করছেন। বুঝতে পারলাম দাবা খেলার নেশায় প্রকৃতির ডাকে যথাসময়ে সারা না দেয়ার কারনে জরুরী অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে বদনার পরিবর্তে হারিকেন নিয়ে স্যার লেট্রিনে গিয়েছিলেন। পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীরাও মাঝে মাঝে এমন আত্বভোলা হতেন। আমি পরীক্ষায় মনোনিবেশ করলাম।
১৯৭৭ সনের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পড় মাত্র একবার বা দুইবার স্যারের সাথে দেখা । তিনি ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ময়মনসিংহ আসেন আমার কাছে । স্যারের ছেলের নামও রেখেছেন আমার নামে ‘সাদেকুর রহমান’ । সে ময়মনসিংহ পড়ার সময় আমার সাথে দেখা করতো । দীর্ঘদিন স্যারের সাথে যোগাযোগ ছিল না । ২০১০ সনের দিকে অনেক কষ্ট করে স্যারের মোবাইল নাম্বার যোগার করে কল দেই । স্যারের কুশলাদি জানার পর আমি আমার অবস্থান জানাই । যানাই “আমার বড় মেয়ে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসি পাস করেছে। এখন এমবিএ পড়ে । ছোট মেয়ে এমবিবিএস পড়ছে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে । ওদের জন্য দোয়া করবেন ।“ শুনে স্যার বললেন “আমার জন্যও দোয়া করবে । আমি এখন শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে বাংলায় এমএ পড়ছি। আমার একটা আফসোস ছিল এমএ পাস করার। দেখি পাস করতে পারি কিনা।”
এরপর থেকে স্যারের সাথে আমার মাঝে মাঝে মোবাইলে যোগাযোগ হয় । স্যার গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। মোবাইল করলে খুশী হন। অনেক কথা বলেন। গত বছর বারবার স্যার বলছিলেন তার গ্রামে অনেক সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তিতে একটা মেডিকেল কলেজ করবেন। তার অনেক ছাত্র ডাক্তার হয়েছে তারা সবাই সহযোগিতা করলে মেডিকেল কলেজ করা তার জন্য কঠিন না বলে তিনি জানান। আমি বলি গ্রামে মেডিকেল কলেজ করা সম্ভব না। স্যার বুঝতে চান না। আজও স্যারের সাথে কথা হয়েছে মোবাইলে। স্যার ভাল আছেন। আল্লাহ স্যারকে সুস্থ সুন্দর ধীর্ঘ জীবন দান করুন।
প্রথম লিখন – ৫/১০/২০১৭ খ্রি.
দ্বিতিয় সংস্করণ – ২৪/০৪/২০২০ খ্রি.
পুনশ্চঃ
আজো স্যারের সাথে কথা হয়েছে মোবাইলে । আমি বললাম
-স্যার, সকালে আপনাকে কল দিয়ে পাই নি । আপনাকে কল দেয়ার পর বারী স্যারকে কল দিয়েছিলাম । তিনি কল ধরেন নি ।
-বারী সাব ত ঢাকায় থাকেন । তার ছেলে এখন নৌবাহিনীর একটা জাহাজের প্রধান । খুব ভালো আছেন । ছেলে এতো বড় পদে চাকরি করে! আমার ছেলেও বিমান বন্দরে ভাল চাকরি করে ।
-স্যার, আমি ১৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখ থেকে পিআরএল-এ গেছি ।
-তুমি এলপিআর-এ গেছো?
-স্যার, ওটাই এখন পিআরএল। আমি ১৩ তারিখে রিলিজ নেয়ার পর করোনা ভাইরাস লক ডাউনে যে ঘরে প্রবেশ করেছি তারপর থেকে আর নিচে নামি নি ।
-ভালোই হয়েছে তোমার জন্য । এই বিপদের সময় হাসপাতালে যেতে হবে না । তা কিভাবে সময় কাটাও?
-স্যার, আমি তিনটা মেডিকেল জার্নাল এডিট করি ঘরে বসে অনলাইনে । আরেকটা জার্নাল দেখাশুনা করি এডিটরিয়াল বোর্ডের মেম্বার হিসাবে । গল্প লেখি । দুইটা গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে । আরও ৮-৯টা প্রকাশিত হবে ইনশা আল্লাহ । আপনাকে নিয়ে একটা গল্প লিখছি । আমার প্রিয়জনদের নিয়ে একটা স্মৃতিচারণমূলক বইয়ে এটা থাকবে । প্রকাশ পাওয়ার পর সব বই আপনাকে দেব, ইনশা আল্লাহ ।
-আমিও লেখা লেখি করি । আমি একটা উপন্যাস লিখছি । করোনা পরিস্থি চলে গেলে ওটা ছাপতে দেব । নাম দিয়েছি ‘চন্দ্রকলা’ । চাঁদের যেমন কলা আছে, বড় হতে হতে পূর্ণ হয়ে যায়, আবার ছোট হতে হতে শেষ হয়ে যায়, তেমন আরকি।
-প্রিন্ট হবার পর আমি নিব, স্যার। ইনশা আল্লাহ। দোয়া করবেন ।
১৯৯৫ সনে তদানিন্তন আইপিজিএম আর (পিজি হাসপাতাল) থেকে এম ফিল প্যাথলজি পাস করে ১৯৯৬ সনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে প্যাথলজি বিভাগের প্রভাষক পদে পদায়ন পাই। আমার এম ফিল থিসিসটি আর্টিকেল আকারে লিখে বাংলাদেশ জার্নাল অব প্যাথলজিতে সাবমিট করি। ঐ বছরই ওটা প্রকাশিত হয়। একই বছর আরও দুটি আর্টিকেল ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত হয়। ১৯৯৮ সনের মধ্যে ৫/৬ টি আর্টিকেল বিএমডিসি স্বীকৃত জার্নালে প্রকাশিত হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নাল এর এডিটরিয়াল বোর্ডে আমাকে এডিটর করে নেন। চিফ এডিটর ছিলেন প্রফেসর ডাঃ শাহ আব্দুল লতিফ। আমি লতিফ স্যারকে এটিটিং কাজে সহযোগিতা করতে থাকি। আমি ইন্টারনেট ও ডিজিটাল কন্টেন্ট এর উপর বেশ পারদর্শী হয়ে উঠি। পাব মেড ফ্যাক্ট শীট গুলো ডাউনলোড করে এর উপর পড়াশোনা করে পাব মেড ইন্ডেক্স করার উপর জ্ঞান অর্জন করে ফেলি। ২০০০ সনেই ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নালকে পাব মেডে ইন্ডেক্স করাতে সক্ষম হই। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে
অভিনন্দন জানিয়ে আমি অনেক ইমেইল পাই। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী চিকিৎসকরা আমাদের দেশের একটি জার্নাল আন্তর্জাতিক মান পাওয়ায় আমাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে থাকে। আমি অনুপ্রানিত হয়ে আরও সায়েন্টিফিক কাজ কর্ম করতে থাকি। তারই ফলে এপর্যন্ত আমার ৮৭ টি রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে।
২০০৮ সনে সরকার জনস্বার্থে আমাকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে বদলি করে। ওখানে ছিলাম পূর্ণ ৮ বছর। ২০০৮ সনে কলেজটির বয়স ১৭ বছর ছিল। কলেজের কোন জার্নাল ছিল না। প্রিন্সিপাল ছিলেন অধ্যাপক ডাঃ নজরুল ইসলাম। তিনি একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এ বললেন “আমি যখন মালয়েশিয়ায় ছিলাম তখন কোথাও গেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নালটি হাতে নিয়ে যেতাম। গর্ব করে বলতাম এটি আমাদের বাংলাদেশের পাব মেড ইন্ডেক্স জার্নাল। এই কাজটি সম্ভব হয়েছে ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার এর এক্সপার্টনেসের জন্য। আমরা তাকে এখানে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। এই সুযোগ আমরা কাজে লাগাবো।” সেদিনই আমাকে এক্সিকিউটিভ এডিটর করে দিনাজপুর মেডিকেল জার্নাল এর আত্মপ্রকাশ হয়। সেটির নাম পরিবর্তন হয়ে এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ জার্নাল হয়েছে। আমি একটানা ১৬ বছর যাবত সেই জার্নাল এডিট করছি। মরহুম অধ্যাপক ডাঃ মনছুর খলিল স্যারের সহযোগিতায় ২০১৫ সনের ডিসেম্বরে আমি বদলি হয়ে কিশোরগঞ্জ শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে ফিরে আসি। দুর্ভাগ্যক্রমে মনছুর খলিল স্যার আমি ফিরে আসার পরপরই হন্তেকাল করেন। প্রিন্সিপাল হন অধ্যাপক ডাঃ রুহুল আমীন খান। তখন কলেজটির বয়স ৫ বছর। ওখানেও জার্নাল ছিল না। একইভাবে আমাকে এডিটর করে শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ জার্নাল নামে একটি জার্নাল আত্মপ্রকাশ করলো। একটানা ৮ বছর যাবত সেই জার্নাল আমিই এডিট করছি। মাঝখানে কয়েক বছর আমি বাংলাদেশ জার্নাল অব প্যাথলজি এর এডিটরিয়াল বোর্ডের মেম্বারও ছিলাম। ২০১৭ সনে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ একাডেমি অব প্যাথলজি এর অফিসিয়াল জার্নাল জার্নাল অব হিস্টোপ্যাথলজি এন্ড সাইটোপ্যাথলজির। একটানা ৭ বছর ধরে এই জার্নালটি এডিটিং এর দায়িত্ব আমিই পেয়েছি। এদিকে ২০১৯ সনে আমি আবার ফিরে আসি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। আবার দায়িত্ব পাই ময়মনসিংহ মেডিকেল জার্নাল এডিটরিয়াল বোর্ড মেম্বার হিসাবে। ছিলাম ২০২১ সন পর্যন্ত। এতগুলো জার্নাল এডিট করতে গিয়ে শত শত রিসার্চসার আমার ফ্যান হয়ে গেছে। এর মাঝে আমি জীবনের এক ধরনের আনন্দ ও স্বার্থকতা খুজে পাই।