Author Archives: talukderbd

Digital World

What is Mobile Pocket Router?

মোবাইল পকেট রাউটার কি এবং তার কি ব্যবহার তার একটা ভিডিও দেখুন।

my-village

আমার গ্রাম বড়বাইদপাড়া

ঈদ পূণর্মিলনী জুম মিটিং ৭ জুলাই ২০২৩

Music and Songs

Musics and Songs

16 Beat Tabla

[Embedded from YouTube]

ads banner:

Drum and bas

Aaj more ghar aayela Balma

আজ মোরে ঘর আইলা বালমা


বান্দিস বা ছোট খেয়াল
রাগ – মালকৌস
তাল – ত্রিতাল
কথা:

স্থায়ী:
আজ মোরে ঘর আইলা বালমা
কারংগিয়া দারুংগ
সু রাংগ রেলিয়া |

অন্তরা:
আতর অরগজা সুগন্ধ বসন পিহারু
ফুল বন সেজ বিছাউ
চুন চুন কালিয়া ||

Lyric without notation [Embedded from YouTube]

ads banner:

Lyric with notation [Embedded from YouTube]

Raag Bhairvi

স্থায়ীঃ
বারজরি নাহি রে
বারজরি নাহি রে, কানাই
পানিয়া ভরনে ঘাগরি মোরি গিরাই
করত লড়াই ।
অন্তরাঃ
যমুনা কি তটপে
গাম্ভী চলাবতে
করত থি থরি মরি ঘাগরি ফোরি, রে কানাই ।।

Raag Maru Bihag

রাগ মারু বিহাগ

Ajo Modhuro Bashori Baje

Nazrulgeeti

নজরুলগীতি

কথাঃ

আজো মধুর বাঁশরী বাজে
গোধুলী লগণে বুকের মাঝে ।

আজো মনে হয় সহসা কখনো
জলে ভরা দুটি ডাগর নয়ন
ক্ষণিকের ভুলে সেই চাঁপা ফুলে
ফেলে ছুটে যাওয়া লাজে ।।

নোটেশনঃ

MgM PnDP
MgS g M P P

SR’nS SMMMg
mgMP MgMgrS |

P P PPnP MgM PnPn P S’S’S
S’n S’R’nS’ R’M’G’ R’S’ R’S’ n n  S’ R’ S’ n D P
PnPn S’R’ S’n S’R’S’n nn S’R’nS’nDP
PnD PPDP MgS SMgMM PgmmP ||

Raag Bhoopali Sargam | Teental 16 Beats

রাগ ভুপালি স্বরগম – তিন তাল

বাংলার লোকগীতি

তোরা বাতাস দে বাতাস দে

Falani

Falani

ফালানি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি

ফালানির একটাও কুরকা

ফালানির একটাও কুরকা আছাল না। তার বাহের তিগা পয়সা নিয়া নিয়া খুটির বিতর জরা করতো। এবা কইরা হে ১০০ টেহা জরা করছাল। হেই টেহা দিয়া তার বাহে আটে তিগা একটা ডেহি মুরগি কিন্না দিছাল। কয়দিন পরই হেই মুরগি করকরাইয়া ডোলের বিতর আন্ডা পারন ধরে। বালাই আন্ডা পারছাল। বাইসটা আন্ডা পারছাল। চাইরডা আন্ডা হিদ্দ কইরা রাইন্দা খাইছাল। চাইরডা আন্ডা আন্ডার পাইকারের কাছে বেইচ্যা নইটানা কিন্যা খাইছাল। দুইডা আন্ডা পচা বাইরইছাল। আর যেডি আছাল ঝাইঞ্জরে মইধ্যে খের বিছাইয়া মুরগিরে কুইচা বহাইছাল। মুরগি মইদ্যে মইদ্যে কক কক কইরা বাইরে গিয়া আদার খাইয়া আইত। হেসের দিকে হারাদিন কুইচা বইয়া থাকত। কুইচা মুরগির ঠোলার খের ভর্তি হুরহুরি পোকা অইছাল। হেই হুরহুরি পোকা বারির বেবাককের গতরেই হুরহুরাইত। বাইসদিন পর মুরগি বাচ্চা তোলায়। উঠানে খুদ ছিটাইয় দেয় বাচ্চাগুনারে খাওনের নিগা। বাচ্চাগুনায় চিয় চিয় কইরা ডাহে আর ঠুকরাইয়া খুদ খায়। একটা বাচ্চা ছাইয়ের ঠেংগিত পরছাল। ছাইয়ের বিতর গনগনা আগুন আছাল। হেই আগুনে পুইরা একটা বাচ্চা মইরা যায়। আরেকটা বাচ্চা আইশালের আগুনে পুইরা মইরা যায়। একটা বাচ্চা চিলে নিয়ে যায়। আরেকটা নেয় বেজিয়ে। আরেকটা গরুর পারা খাইয়া চেটকা অইয়া মইরা যায়। উঠানে ধান খেদানোর সোম ফালানির দাদির কোটার বারি খাইয়া মইরা যায় একটা । যেডি বাইচ্চা থাহে হেডির মইদ্যে অর্ধেক অয় ডেহি, আর অর্ধেক অয় মোরগ।

ফালানির বিয়া অইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক গ্রাম্য ভাষায় লেখা গল্প)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

হেদিন যে ফালানির কতা কইছিলাম হে ফালানির বিয়া অইয়া গেছে। অইজে, কইছিলাম না যে, ফালানির ডেহি মুরগি বাইশটা আন্ডা পারছাল। হেন তিগা চাইরডা আন্ডা হিদ্দ কইরা আইন্দা খাইছাল। চাইরডা আন্ডা পাইকারের কাছে বেচচাল, দুইডা আন্ডা পচা বাইরইছাল। আর যেডি আছাল হেডি দিয়া মুরগিরে কুইচা বহাইছাল। হেন তিগা মুরগি যে কয়ডা বাচ্চা তোলাইছাল তার তিগা একটা আইশালের আগুনে পইরা পুইরা মরে, একটা ছাইয়ের ঠেংগিত পইরা পুইরা মরে, একটা গরুর পারা নাইগ্যা মইরা যায়, আর একটা ধান খেদাইন্যা কোটার বারি নাইগ্যা মইরা যায়, একটা নিয়া যায় চিলে আর একটা নিয়া যায় বেজিয়ে। যে ছয়ডা বাইচ্চা আছাল হেইগনা বড় অইয়া তিন্ডা অয় ডেহি আর তিন্ডা অয় মোরগ। হেন তিগা দুইডা মোরগ পলাই আটার য়াটে নিয়া বেইচ্চা একটা য়াসা আর একটা য়াসি কিন্না আনে। তাইলে অহন ফালানির অইল গিয়া পাচডা কুরকা আর দুইডা য়াস। য়াসগুলা ফালানিগ পাগারে হাতুর পারে। য়াসিডায় হারাদিন ঘাগ ঘাগ কইরা ডাহে, আর য়াসাডায় গলা হেস হেসাইয়া পাকপাক কইরা ডাহে। বিল পাড়ের ক্ষেত তিগা হামুক কুরাইয়া আইন্যা পাচন দিয়া ভাইংগা দেয় য়াসের হুমকে। য়াস হেগনা ক্যাত ক্যাতি গিলে আর গলা মোচড় পারে। ছোট ছোট হামুক আমানই গিল্লা হালায়। ফালানির বিয়ার পর য়াস মুরগি পালনের খুবই কষ্ট অইতাছে ফালানির মায়। ফালানিরে দুল্লা য়াইখাই ফালানির বাপে মইরা গেছে। ফালানিরে ডাংগর করতে অনেক কষ্ট করতে অইছে। বিয়া দিবার পর কষ্ট আবার বাইরা গেলো। কী আর করবো, মেও পোলা অইয়া জন্মাইলে হশুর বাড়ি ত যায়নই নাগব। মেয়াডারে বিয়া দিবার পর তিগা থাইকা থাইকা ফালানির মায় কান্দে আর আঁচল দিয়া চোখের পানি মুছে।

বালা ধনি বাইত্যেই ফালানির বিয়া অইছে। ফালানির চেহারাও বালা খপছুরতের। পরতম সরাদার দেইহা যায় তারে পাগার পাড়এ যেসুম হে কলস বোজাই কইরা মাঞ্জায় কইরা নিয়া য়াইটা যায়। ফালানির বিয়ার কতা তোলে আহাদুল্লা হিকদারের নাতি দিয়া, অর নাম অইল শাব্দুল। শাব্দুল মেট্রিক পর্যন্ত পড়ছে। হে অহন বিদেশ করব। গেরামের পোলারা মোছ একটু কালা অন ধরলেই আদম বেপারির দালাল ধইরা বিদেশ চইলা যায় জমিন জিরাত, বাড়ি ঘর, নোটা বাটি বেইচ্চা দিয়া। যাগ কিছু নাই তারাও গরীবের বন্ধু সমিতি তিগা সুদী কইরা টেহা নিয়া বিদেশ চইলা যায়। হেই ইন হোদাইতেই চাইর পাচ বোছর নাইগ্যা যায়। শাব্দুলের পাসপোর্ট ভিসা অইয়া গেছে। টেহাও যোগার অইছে। অর্ধেক যোগাইছে শাব্দুলের বাহে আর অর্ধেক যোদাইছে ফালানির চাচায়। দুই এক হপ্তার মধ্যেই শাব্দুলের ফেলাইট। পরতম গিয়া পাঁচ বোছর পর দুই মাসের ছুটি নিয়া দেশে আইব। যাওনের আগে যুদি ফালানির পেটে সোন্তান ধরে হেই সোন্তান তহন চাইর বোছইরা অইয়া যাবো। এই চাইরডা বোছর গেন্দাডায় বাপের আদর পাবো না। মইদ্যে মইদ্যে মোবাইলে দেকপার পাবো বাপের মুখ। তয় ছুইয়া দেকপার পাবো না। পেটের উপর গড়াগড়ি করার ভাইগ্যে থাকপ না। কান্দে নিয়া নাচনের ভাইগ্য থাকপ না। তুলতুলা গালের মইদ্যে নাক দিয়া ঘষা দিয়া উলু উলু করার সুযোগ পাব না। কতা হেস কইরা খালি কবো আব্বু টা টা। উম্মা উম্মা। আর যুদি এই কয়দিনে ফালানির পেটে বাচ্চা না ধরে তয়লে পাঁচ বোছর পর্যন্ত দেরি করন নাগব সোন্তান ধরনের নিগা। ভাগ্যে যুদি না থাহে হেই দুইমাসে সোন্তান না ধরে তাইলে আবার ছুটি নিয়া আহন পর্যন্ত দেরি করন নাগব। ফালানিরে বিয়া করার পর তিগা শাব্দুলের বিদেশ যাইতে ইচ্ছা করতাছে না। কিন্তু করার কিছু নাই। দালালেরে টেহা পয়সা দেয়া হেস। পাসপোর্ট ভিসাও কম্পিলিট। অহন না করন ঠিক অব না।

অ, ফালানির কিবা কইরা বিয়া অইল হেইডা কবার নইছিলাম। সোমবার দিন য়াটে যাওনের সুম হরাদারে ফালানিরে পাগার পাড়ে দেখছাল। মোঙ্গল বারে শাব্দুলের বাপের কাছে বিয়ার কতাডা তোলে। বুইধবারে ফালানির চাচার কাছে কতা নিয়া যায়। বিসুদবারে কয়জন নোক নিয়া ফালানিরে দেকবার যায়। পাঁচশ টেহা য়াতে দিয়া ফালানিরে দেইহা আহে। তাগো পছন্দ অয়। শুক্কুরবারে ফালানির চাচা কয়জন নোক নিয়া শাব্দুলেগ বাইত্যে ঘর দেহুনি আহে। তাগো ঘর বর পছন্দ অয়। হুনিবার যায়, অববার যায়। এবা কইরা বাজার হদায় হেস কইরা বিসুদবারে বিয়া পড়াইয়া ফালানিরে নিয়া যায় হশুরবাড়ি। ইনু তার সবই আছে। দাদা হশুর, দাদি হউরি, হশুর, হউরি, ভাশুর, জাও, নোনাশ, নোনদ, দেওর, চাচাহশুর, চাচিহউরি, ফুবুহউরি, খালাহউরি, ভাশুরের ঘরে ভাইস্তা, ভাস্তি ইন্না বেকই আছে। ই বাড়ির বেক্কেই বালা মানুষ। খালি জাওডা একটু জাইরা গোছের। বেশী জাউরামি করলে জামাইয়ে ঢেহির ওচা দিয়া বাইরাইয়া য়ান্দন ঘরে ফালাই য়াখে। চাইর ভিটায় চাইরডা টিনের ঘর। বাইরবাড়ি আছে কাছাড়ি ঘর। হেনু ইস্টি এগানা আইলে থাকপার দেয়। একটা জাগীরও থাহে হে ঘরে। কামলা জামলা নুইলেও এই কাছাড়ি ঘরে বহে, খায় থাহে। য়ান্দন ঘর আগে ছোনের ছাউনি আছাল। অহন টিন নাগাই দিছে। অর দাদাহশুর অনেক বুড়া। মুতুল্লায় এহান দাঁতও নাই। হক্ত খাবার খাপ্পায় না। তার নিগা আটার নুটানি য়াইন্দা দিওন নাগে। হউরির য়াতের য়ান্দন বেক্কের কাছেই বালা নাগে। তার য়াতের সালুন পাসের বাড়ির মাইন্সেও চাইয়া নেয়, এবা মজা কইরা সালুন য়ান্দে। ভাহুরের ডাইবিটিস আছে। তার নিগা উটি বানান নাগে। হশুরেরও ডাইবিটিস য়োগ আছে। উনি আবার য়োটি খাপ্পায় না। খাইলে গলা জ্বলে। য়াইতে দুধ দিয়া কলা দিয়া ভাত চেইতকা খান। কবিরাজে য়োগের জইন্যে জানি তারে মুধু খাইতে কইছে। য়াতের তালুতে মধু নিয়া চাইটা খান।

ছাগল, গরু, মইশ, ভেরা, য়াস, কুরকা ইন্না বেকই আছে। পালে একটা বড় পাঠা আছে, দুইডা বড় খাসি আছে, পাঠি আছে দুইডা, ভরুইন্যা দুইডা ছাগল আছে। বিয়াইন্য ছাগলো আছে একটা। হেডার আবার তিন বাচ্চা। দুইডা মাইগ্যা বাচ্চা আর একটা মর্দা বাচ্চা। ছাগলের ওলানে বোটা মাত্র একটা। দুই বোটা তিগা যেসুম দুই বাচ্চায় দুধ খায় আরেকটায় ফাল পারতে থাহে। এই জন্যেই কেউ বঞ্চিত অইলে কয় “আমি অইলাম গিয়া ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।” পাঠি দুইডা ভরুইন্যা সময় অইছে। বাইস্যা মাসে ভরবার পারে। বিয়াইন্যা গাই আছে দুইডা। একটার কাচিল্যা বাছুর। কাচিল্যা গাইয়ের দুধ খাওন যায় না। বাছুরের বয়েস এক মাস অইলেই কাচুইল্যা ছাইড়া যাব। হেসুম তিগা ফালানিরা ইডার দুধ পানাবার পাব। আর যে গাই কাচুইল্যা ছাইড়া গেছে হেডার দুধ পানায় ফালানির হউরি। পরতম বাছুরেরে গাইয়ের ওলান চাটতে দেয়। ওলান চাটতে চাটতে গাই চোনাইয়া দেয়। এরপরই ওলানভর্তি দুধ আহে। যেসুম বাছুরে দুধের বোটায় চোশন দেয় হেসুম হউরি বাছুরের মুখ ঝেংটা মাইরা হরাই হালায়। বাছুরের গলায় পাগা নাগাইয়া ফালানি বাছুরেরে টাইন্যা ধইরা হরাই য়াখে। ফালানি বাছুরের গতর য়াতাইয়া দেয়। বাছুরে ফালানির আচল চাবায়। উম্মুর দিয়া য়াটুর উপর দোনা য়াইখা হউরি চই চই কইরা গাই পানায়। দোনা ভইরা দুধ অয়। অব না ক্যা, গাইয়েরে ধানের কুড়া, গোমের ভুষি, পান্তা ভাত, আর কত কি খাওয়ায়। দুধ ত অবই। হেই দুধ খাইয়া হাইরাও য়াট বাজারে নিয়া বেইচা টেহা পায়। পালে একটা বড় হাড় গরু আছে। ইডারে কুরপানির নাম কইরা য়াইখা দিছে। কুরপানি দিলে মেলা গোস্ত অব। ই বাইত্যে দুইডা বল্ দও আছে। হেগ্না দিয়া আলানে পালানে চিপা চুপা দিয়ে য়াল বায়। কারন, বড় বড় ক্ষেতগুনায় য়াল বাওয়া য়য় পাওর ট্রিলার দিয়া। বহন বাছুর আছে দুইডা। বুইড়া একটা গাই আছে। হেডা বিয়ায়ও না, য়ালেও জোড়ন যায় না। ইডা কামে নাগে মলন দেওনের সুম। মলন জোরার সুম ইডা মেউয়া ইসাবে কাম করে। মলনের মইদ্যে জোড়ে বল্দগুনারে। কিনারায় জোরে বহন বাছুরগুনারের। পানাইন্যা গাই মলনে জোড়ে না।

সোংসারের কাম করনের বাবাকই আছে শাব্দুলেগ। নাঙ্গল, জোয়াল, চংগ, নাঙ্গুইলা, কোদাল, খোন্তা, ছেনি, পাচন, কাঁচি, দাও, বটি, বাগি, ইন্যা বেকই আছে। মেওপোলা মাইনষের কাম করনের সব জিনিসই আছে এগ বাইত্যে। ঢেহি আছে ধান ভানার, হাফট আছে ধান হুকাবার, কোটা আছে গাছ তিগা আম কাঠল পারবার, হলা হাছুন আছে ঘর বাড়ি হোরনের নিগা, উচি আছে ময়লা ফালাবার। ডাহি আছে ধান নেওয়ার, ঝাঞ্জইর ছাপ্নি আছে খই ভাজনের। জাতা আছে ছাতু ভাঙ্গনের নিগা। বুরকা, পাইল্যা, চাপ্নি, খোরা, হানকি, বাটি, ঘটি, নাইন্দা, কোলা, জালা, ডোল, বেড়, চালা, ডালা, ঝান্না ইন্না বেকই আছে। তাগ টিনের থালিও আছে, আবার করইর থালিও আছে। জামাই জোড়া, ইস্টি এগানাই আইলে করইর থালিতে খাবার দেয়। ট্রাংগ সুটেসও আছে। ধরতে গেলে ফালানির বালা বাড়িতেই বিয়া অইছে।

পালানের ক্ষতের ধাইরায় নাউ, কুমরা, হশা, ঝিংগা, পোড়ল, শিমইর, শীবচরণ এইন্যা আরজিছে ফালানির হউরি। ইন্যার জইন্যে বাশ দিয়া জাঙলা বানাই দিছে। হেইন্যা মইদ্যে ঝলমি ঝলমি তরিতরকারি ধরে। বাপের বাড়ির নিগা ফালানির পরাণ পোড়ে। তাই জাংলা তলে খারইয়া পুম্মুহি চাইয়া থাহে। বুক ভাইঙা কান্দন আহে তার।

ফালানির জামাইর ফেলাইট ছাড়নের তারিখ ঠিক অইছে। বিমান বন্দর পর্যন্ত তার নগে ক্যারা ক্যারা যাবো হেডা ঠিক অইল। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করলো। মাও বাপেরে হেলাম কইরা শাব্দুল গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে শাব্দুলের নগে উঠলেন এলাহি মেম্বর সাব, ফালানির ভাহুর, আর ফালানি। বিমান বন্দরে যাওনের পর পেঁচ মাইরা দালালে আরও ১০ য়াজার টেহা চাইয়া বইল। কয় যে কুনু কুনু জানি দেওন নাগব। অহন টেহা পাব কুনু? বিমান ছাইড়া দেওনের সোময়ও অইয়া গেল গা। হারাহারি কইরা মোবাইল কইরা বিকাশ কইরা দশ য়াজার টেহা আইন্যা দালালের য়াতে দেয়। শাব্দুল বিমানের সীটে গিয়া বহে। একসুম বিমান ছাইড়া দিল। শো শো শব্দ কইরা আসমানের দিকে উঠতে নইল। ফালানি বিমানের দিকে ফ্যাল ফ্যাল কইরা চাইয়া রইল। একসুম পচিম দিকের আসমানের দেওয়ার হাজের বিতর বিমানডা য়ারাইয়া গেল গা।

১০/৫/২০২১ খ্রি.

লেখকের কথাঃ

মাতৃভাষায় কথা বলতে ও শুনতে সবাই ভালো বাসে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমাদের অনেকেই মায়ের ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অনেকেরই নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা আছে। তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল। আমার এলাকায়ও নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা আছে। সেই ভাষাটাকে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ফালানির গল্পের ছলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের গ্রাম বাংলার জিনিসপত্রের আঞ্চলিক নামের সাথে পরিচয় করার প্রয়াস করেছি এই গল্পে। গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ডে ফালানি ও শাব্দুল নামের দুটি কাল্পনিক চরিত্রে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাটা সামান্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কাউকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না।

ফালানির নোনাশের জামাই

ফালানির নোনাশের জামাই একটু ভেবলা কিছিমের। কয় বছর ধইরা বিয়া করছে এহনো কোন পোলাহান ছোলাপান অয় নাই। বাপ মাও মইরা গেছে গা। দুইডা গরু আছে য়াল বাওনের। হেন্নারে পালতে অয় অর নোনাশেরই। খের কাইটা কুরার নগে মিশাইয়া চারিত দিয়া খাওয়ায়। নগে এক মোট নুনও মিশাই দেয়। অর নোনাশের জামাইই গরুগুনারে বাছ্রা ক্ষেতে নিয়া হাচার দেয়। গরুগুনা বালাই আছে, গামচাইয়া ঘাস খায়। টাইক ধইরা পানি খায়। নোনাশের জামাইরে হশুর বাড়িত নিতার দাওত দিলে নোনাশেরে নিয়া ত আহেই, নগে গরু দুইডারেও নিয়াহে। হেন্নারে ফালানিগ গরুর নগেই বাইন্দা থয়। অগ গরুয়ে হেগ গরুরে দেকবার পায় না। হিং দিয়া খালি গুতায়। ইন্না এহেবারে যাইরা গরু। নিতা খাবার আইয়া এক হপ্তা ভইরা তাহে। নোনাশে বাপের বাড়ি আইয়া একটা কামেও য়াত দেয় না। বইয়া বইয়া খালি ফালানির ছক্কল ধরে। আর ইডা ওডা কয়। ফালানি য়াও করে না। ফালানি মনে মনে কয় “নোনাশডা পাজি অইলেও বাপের বাড়ি আইয়া থাকপার চায় থাকুক। তার জামাইডারে নিয়া এত দিন থাহে ক্যা? জামাই খাওনের সুম একবার ইডা চায়, একবার ওডা চায়। একবার কয় কাচা মইচ দেও। একবার কয় পিয়াইচ কাইটা দেও। থাহুক মরারডা। ওডার গরুগুনা কিয়েরে নিয়ায়?”

২৭/৫/২০২১

ফালানির ঘাউড়া চাচা হশুর

ফালানির চাচা হশুরের একজোন বছরকারী কামলা আছে। কামে কাইজে বালাই। হেদিন য়াল বাওনের সুম নাংলের ফালাডা ভাইংগা ফালায়। দেহা অইলে তারে হইচ করে

– তুই নাংগল ভাংলি কিবায় রে?

– চাচা, উত্তর মুরার ক্ষেতে য়াল জুরছিলাম। দুই ঘুরানি দেওনের পরে একটা গাছের হিকরে বাইজা নাংগলডা ভাইংগা গেল গা।

– হে ডা ত বুজলাম। তুই নাংগল বাংলি কিবা কইরা হেইডা বালা কইরা ক?

– হেইডাই ত কইলাম। য়াল জোরার পাজুন দিয়া দুই বলদরে দুইডা বারি মারলাম। দুই ঘুরানির পরই মাটির নিচের একটা হক্ত হিকরের নগে বাইজা নাংগলডা ভাইংগা গেল গা।

– আরে বাইরা বেটা, নাংগল ভাংলি কিবা কইরা হেইডা ভাইংগা ক?

– য়াল জুইরা কুটি হক্ত কইরা ধইরা আছিলাম। ক্ষেতের মইদ্যে দুই ঘুরানি দেওনের সুম হিকরের নগে বাইজা টাস কইরা নাংগল্ডা বাইংগা গেল গা। মটকা কাঠের নাংগল মোনয়।

– আরে গাবর, নাংগল কিবা কইরা ভাংলি হেইডা ক।

এবা কইরা যতই বুঝায় ফালানির চাচাহশুর খালি হইচ করে লাংগল ভাংল কিবায়। কামলায় দেখল ইডা ত বালা ঠেটা মানু রে! ইডারে বালা একটা শিক্ষা দিওন নাগব।

কামলাডায় কয়দিন পারে দুপুরে খওনের সুম একটা ডাংগর মেয়ায় তারে খাওন বাইরা দিছাল। খাইয়া হাইরা বাইর বাড়ি গিয়া ফালানির চাচা হশুরের নগে দেহা য়য়। কামলায় হইচ করে

– চাচা, আইচকা দুপুর সুম আমারে যে মাইয়াডায় বাইরা দিছাল হেডা ক্যারা?

– আরে ছেরা, তুই অরে চিনস নাই। ওডা আংগ ছোট গেদি জয়গন।

– তাত চিনলাম। অইজে যে ছেরিডায় আমারে ভাত বাইরা দিল হেডারে ত চিনলাম না?

– আরে বাইরা বেটা, ওইডাই ত আংগ জয়গন। বেহের ছোট। আইজকা শাড়ী পিনছে। হেই জিন্তেই তুই চিনবার পারস নাই।

– আরে চাচা, আমি ত হেইডাই জানবার চাইতাছি ঐ মাইয়াডা ক্যারা?

এমুন্সুম জয়গন আইয়া কইল “এই যে আন্নেরা যে এনু মিটাই মিটাই কতা কইতাছুইন, উম্মুরা দিয়া গরু ছুইটা পাহা ধানের হিঞ্জা গুনা আমচাইয়া খাইহালাইতাছে। হেইডা দেহুইন গা।

১/৭/২০২১

ফালানির চাচি হউরিডা এহেবারে কিরপিন। মাছ পইচ্যা যুদি বগবগা কুইয়া অইয়া গোন্দ উইঠাও যায় তাইলেও ফালব না। আন্দন ঘরের পাছ তনে গুলাইলের পাতা তুইলা হেগনার নগে নাড়াচারি কইরা খায়। পেট পরিস্কার য়াখনের নিগা গোন্দ বাদাইলের পাতা ভাইজা খায়।

ফালানির চাচত দেওর

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ফালানির চাচত দেওরডারে কিবা কিবা জানি ঠেহে। য়াটবার সুম মাঞ্জা ঢুলাইয়া য়াটে। মেওপোলা মাইনষের নাগাল য়োঠে লিবিস্টিক দেয়। বাবরি চুল য়াকছে। মইদ্যেহানে হিতি করে। কপালে টিপও দেয়। য়াইসা য়াইসা কতা কয়। গুঞ্জি গায় দেয়। তপন পিন্দে। আবার ছেরিগ নাগাল ওড়না গায় দেয় গামছা দিয়া। খালি মেয়া মাইন্সের নগে মেল দিবার চায়। কেউ বাড়া বানবার নইলে তার নগে গিয়া ঢেহি পার দেয়। ফালানির নগেও ঢেহি পার দিবার নইছাল। ফালানি কইল “ছুট মিয়া, আন্নে অইলাইন গা মর্দাই মানুষ। আন্নে মাইগ্যা মাইনষের নাহাল করুইনকে ক্যা?” দেওর কয় “আলো মাই, ভাউসে কি কয়, আমার অহনই বিয়ার বয়স অইছি নিহি?” কতা কবার নইলেই দুই তিনডা তালি মারে হাতে। আর পান চিবায়। ফালানি হউরির কাছে কইছাল “ছুট মিয়া অবা মেয়া মাইন্সের নাগাল করে ক্যা? আমার নগে ঢেহি পার দিবার চায়। আমার শরম করে।” হউরি কইল “ওডা অর জর্মের দোষ। নাদের ডাক্তর কয় যে পোলা মাইন্সের গতরে যুদি জর্মে তিগা কিছু কোষ মেয়া মাইন্সের কোষের মোত থাহে তাইলে হেডায় অবা করে। হেডারে মাইন্সে হিজরা কয়। মেয়ানোকের কোষ যত বেশী থাকপ তত বেশি মেয়ালিপানা করব। আংগ ভাইস্তাডা কিছুডা হিজরার সভাব পাইছে। ওডারে বিয়া করাইলে বউ থাকপ না।”

ইবারের মরা পরের উপুর দিয়া গেছেঃ

ফালানি তার হউরির নগে তার ফুবু হউরিগ বাড়ি ফয়তার দাওয়ত খাইতে গেছাল। তারা ফবু হউরির নগেই খাবার বইছাল। খায়ন দায়ন ভালাই দিছাল। চামারা ধানের ভাতের নগে হাঁড় গরুর গোস্ত আর মাস কালাইর ডাইল। হেষে চুকা দুই। পাতলা দইয়ে কুশাইরা চিনি দিয়া মাহাইয়া চুমুক পাইরা খাইয়া ফুবু হউরি ঢেউক দিয়া কয় “ইবারের মরা পরের উপর দিয়া গেছে।” হুইন্যা ফালানির হউরি কয় “এল্লা বুঝি ইডা কি কইলাইন, বুঝবার পাইলাম না।” ফুবু হউরি বুঝাইয়া কয় “ইবার কলেরা য়ইয়া আংগ পোলার বউডা মইরা গেল গা, যেডার নিগা আমরা ফয়তা খাপ্পাইলাম। উম্মুরা আবার আংগ বড় গেদির জামাইডা মইরা গেছে কলেরা য়ইয়া। হেডার ফয়তা খামু আগামী শুক্কুরবার। দুইডাই পরের সোন্তান। তাই কই, ইবারের মরা পরের উপুর দিয়া গেছে। “

১২/৯/২০২১

ফালানির খাওনের কষ্টঃ

ফালানির হউরিডা কিবা জানি। পোলার বউগুনারে চাপে য়াখে। য়াকপ না ক্যা, ওডার হউরিও পোলার বউগরে চাপে য়াকত। তাই, হেইডা শোধাইতাছে হের পোলার বউগ উপুর দিয়া। ফালানি একবার মোনে মোনে কয় “আমি হউরি য়ইয়া তা করমু না। তয় এই হউরি বেটি যেসুম বুড়া অইয়া য়াতুর য়ইয়া যাব হেসুম মজা দেহামু। মজ্জালেও কাছ দিয়া যামুনা। বিছনা নষ্ট কইরা ফালাইলেও হেগ্না ধুমু না। ক্যারা বলে কইছে ‘ধারাইলে শোধানী আছে।” ফালানির মায়ের কতা মোনে য়য়। মায়ে কই দিছে “হউরি যত খারাবই য়উক হউরিরে কষ্ট দিবি না। পাপ য়ব।” হেই কতা মোনে কইরা ফালানি মোনে মোনে কয় ” থুক্কু ইন্যা কি চিন্তা করলাম! তওবা, হউরিরে কোন দিনও কষ্ট দিমু না।”

অহন হুনুন, ফালানির হউরি কিবা কইরা তারে খাওনে কষ্ট দেয়। ভাত য়ান্দনের সুম যুদি ফালানি হউরিরে হইছ করে “আম্মা চাইল কয় কাঠা দিমু?” হউরি চোপা কইরা উঠে “ক্যা, তোমার হোদ নাই? তোমার মায় হিকাই দেয় নাই, কয়জোন মাইনসের নিগা কয় কাঠা চাইল দিওন নাগে বুরকার মইদ্যে?” ফালানি আন্দাজ কইরা চাইল দেয়। বাড়ির বেক্কের খাওন শেষ য়ইলে ফালানির খাওন নাগে। কোন কোন দিন দুপুরের খাওন খাইতে ফালানির আছরের জের ওক্ত য়ইয়া যায়। বুরকায় ভাত কোম থাকলে কোমই খাইতে অয়। বেশি থাকলে খাইয়া হাইরা পানি দিয়া পান্তা ভাত বানাইতে য়য়। হেই পান্তা আবার য়াইতে খাওনের সুম ফালানিরই খাইতে অয়। ভাত যুদি পুইড়া ধরে হেই পোড়া ভাত ফালানিরই খাইতে অয়। ভাতের মইদ্যে যুদি ঘাসের বিচি, আখির দানা থাহে হেগ্না হুধ্যাই খাওন নাগে তার। বাড়িতে যুদি তার হশুর, ভাশুর কোন য়াবি জাবি আনে হউরি কোন কোন সুম ফালানিরে হাদে। আবার হাদেও না। হরবি কলাগুনা পাইক্যা মইজ্যা পইচ্যা যাইতাছে। তাও হউরি কোন সোম কয় না “বউ গ কলা গুনা খাও।” যেসুম ফালাই দিওন নাগব হেসুম কয় “এল্লা, বউ কলা খাইলা না?”

এবা।

৮/৯/২০২১

মুরগির আওয়াদানিঃ

(টাংগাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির হউরির আন্ডা পারা মুরগিডা ঘরের পাছে ঠোরকাইয়া ঠোরকাইয়া আধার খাইতাছাল আর মইধ্যে মইধ্যে গলা উচা কইরা করকরাইতাছাল। তারপর ঘরের ভিতর ঢুইকআ পড়লো। ফালানি এই কুরকা কইয়া ডাক দিয়া ঘরের ভিতর হান্দাইয়া দেহে মুরগিডা কিবা করে। এক বার নাফ দিয়া কারে ওঠে, আবার নাফ দিয়া চকির উপুর ওঠে, একবার নাফ দিয়া উগারের উপুর ওঠে, একবার নাফ দিয়া ডোলের উপুর ওঠে। আবার নাফ দিয়া ডোলের ভিতর ধানের উপুর চুপ কইরা বই পড়ল। ফালানি য়ান্দন ঘরে তার হউরিরে ডাক দিয়া কয় “আম্মা গো, মুরগিডা কিবা জানি ঘরের ভিতর আওয়াদানি করতাছে।” হুইন্যা হউরি কয় “করুক, আন্ডা পারবো, তুমি উন তনে আই পড়।”

একটু পর মুরগি কক কক কইরা নাইরা নুইল। তারপর বাইরইয়া কক কক করতে করতে ঘরের পাছে গিয়া মিলাই গেলো গা।

৩০/৯/২০২১

ফালানি বাপের বাড়ি আইপড়ছে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানি বাপের বাড়ির পুস্কুনি তরি আইলে পড়ে দেহে তার ভাবী ঘাটপাড়ে চুল আলগা কইরা মাথা মোল্কাইয়া গোসল করতাছে। নোন্দের জামাই দেইখা ফালাইলে ভাবীয়ে শরমাবো। তাই, জামাইরে কইল “ভাবী ঘাটপাড়ে মাথা আলগা কইরা গোসল করতাছে। শরম পাবো। গলা খাউর দেও।” জামাই গলা খাউর দিলে ভাবী চইমকা গিয়া তাত্তারি কইরা আঁচলডা ঝাহি দিয়া সোজা কইরা মাথায় দিলো। তাতে কি অইল, জামাই মাথা ত দেখলই এক ঝলক শরীরও দেইখা ফালাইল। তাই, মাথা নিচা কইরা কইল “সালামাইকুম, ভাবী সাপ কিবা আছুইন?” ভাবী কইল “এইত্ত, আছি, আন্নেরা যেবা দোয়া করুইন। যাইন বাইত্যে যাইন। আমি আইতাছি গোসল কইরা। ” ফালানি জামাইরে পিঠের মইদ্যে ধাক্কা দিয়া কয় “নও, ভাবী গোসল কইরা আহুক। ” ফালানি জামাই নইয়া বাড়িত গেলো।

ভাবীয়ে ভাবনায় পইড়া গেলো। ফালানিরে আনবার না গেলে ত আবার দেয় না। আইচকা জামাই যে নিজেই নিয়াইল? হউরিয়ে বাইর কইরা দিল নিহি?

বাইত্যে গিয়া দেহে যে ফালানির মায় হুতি দিয়া য়াইসালে তিগা ভুইত্যা একটা ডেগ নামাইতাছে। জামাই গলা খাউর দিয়া কইল ” আম্মা কিবা আছুইন?” হউরিয়ে কইল “কিবা আর থাহি। মাঞ্জায় টাস নাগছে হুতি দিলে সোজা য়নজায়না। তোমরা ভালা আছো? বিয়াই, বিয়ানি, পুতুরা, জিয়ারি, বুইনেরা ভালা আছে?”

ফালানিরে কইল “গেদি, জামাইরে অজুর পানি দেও। খই ভিজাইয়া চিপ্পা মিঠাই দিয়া নাস্তা দেও।”

জউরিরেও চিন্তায় পইরা গেলো। কতানাই বার্তা নাই, জামাই যে ফালানিরে নইয়া অভম্বিতি হশুর বাড়ি আইল?

ads banner:

ফালানি চুক্কা আম খাইল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

গেছেকাইল ফালানির জামাই বাড়িত গেছে গা। যাওনের সুম ফালানির মায় বুরকায় কইরা কয়ডা জিয়ল মাছ দিয়া দিছে। আর কইয়া দিছে “বাজান, মাছগুনা বিয়াই বিয়ানিরে য়াইন্দা খাবার কইয়। জিয়ারিগ নইয়া আবার আইয়। কয়ডা টেহা দিয়া দিলাম। এডা তপন কিন্যা নইয়।” যাওনের সুম ফালানিয় কইছে “আন্নে আমারে নিবার আহুইন জানি। আম্মা কইছাল পেটের সোন্তান তিন মাস অইলে বাপের বাড়ি তিগা আই পড়বা। জৈষ্ঠ্যমাসে তিন মাস পড়ব। নিবার আহুইন জানি। তার আগে যুদি আবার পারুইন এডা বেলাউছ নিয়াইবাইন।

করিম আর ফালানি বাইরবাড়ি আম গাছ তলে বইয়া বইয়া আলাপ করতাছে। করিম কইল

– বুগ, আমগুনা ভালাই ডাংগর অইছে। অহনো ক’ড়া আছে। কয়দিন পরে আইট অইযাবো। খাবা নিহি। ইগাছের আম কাচামিঠা। ওগাছের আম জাউন্যা জাউন্যা নাগে। আর কাচারি ঘরের পাছের আম এবা চুক্কা গো!

করিম গাছে উইঠা কয়ডা কাঁচা আম পাইরা নিয়াইল।

ফালানি কইল

– তুই কাঁচামিঠাডা খা। আমারে চুক্কাডাই দে।

– আম ছিলামু কি দিয়া? ইবার চৈতপূজায় মেলায়ও যাইনাই, ছুরিও কিনি নাই। ঝিনই আছে। ঝিনই নিয়াহিগা। কাইলকা পাটার মইদ্যে ঝিনই ঘইষা দাড় দিছি। য়াসেরে খাওনের নিগা বড় বড় ঝিনই কুড়াইছিলাম। ঝিনইডা খুব ভালা অইছে। চক পাড়ারা ঝিনই পুইড়া চুনা বানায়। পাথর চুনার দাম বেশি। তাই বেশিরভাগ বাইত্যেই ঝিনইর চুনা খায়। অহন খাল হুকাইয়া মেলা ঝিনই বাইরইছে।

– ঐযে এডা হিল পড়া আম দেখতাছি। ঐডা পাইরান। হিল পড়া আম খাইতে ভালাই নাগে। কিবা জানি দেওয়ায় গুড়্গুড়াইতাছে। গুমাও নাগতাছে। ঝড়ি আবার পারে। ঝড়ি আইলে মেলা আম পইড়া যাবগা।

– বু, কাক্কি কি ইবার কাসন্ড বানাইছে? যেসুম আম পাহন ধরব হেসুম কাঁচা আর পাহা আম বটি দিয়া কুচা কুচা কইরা কাইট্যা কাঁচা মইচ দিয়া ভাঞ্জাইয়া ভত্তা কইরা দিবা।

এদুল্যা বাতাস আইলো। হিল পড়া আমডা পইড়া গেলো। ফালানি দৈড় দিয়া খোটতে গিয়া উইস্টা খাইয়া পইড়া গেলো। করিম কইল “ভারে গেলেই ত অইত। অহন পইড়া দুক্কু পাইলানা?”

ফালানির ভাশুর চেতাং মাইরা হুইয়াছাল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানি বাইরবাড়ি তনে আইয়া বড় ঘরে গেছাল তেতইল খাবার নিগা। কয়দিন দইরা খালি চুক্কা খাবার চায় ফালানি। ভাতত খাবারই পায়না। মাছ গোস্ত যেডাই দেইক হেইডাই খালি বয় আহে। তেতইল চাইটা খাইলে চাইরডা ভাত খাবার পায়। ঊমা, ঘরে গিয়া দেহে ভাশুরে চকির উপুর চেতাং মাইরা হুইয়া ঘোম দিছে। ইবাড়ির মানুগুনা এবাই। এহাকজোনের ঘোম পারনের ডিল এহাক ধরনের। কেউ ঘোমায় চিত্তর অইয়া, কেউ ঘোমায় উপ্পুর অইয়া, কেউ ঘোমায় কাইত অইয়া, কেউ ঘোমায় কাউব্দা দিয়া, কেউ ঘোমায় মোক ঢাইকা, কেউ ঘোমা য়া কইরা, কেউ ঘোমায় নাক গাইকা আবার কেউ ঘোমায় তপন খুইলা বুক তরি টান দিয়া। অসুবিধা য়য় না হেসুম তপন দিয়া বুক তনে য়াটু উব্দি ঢাকা থাহে। শরমের কতা, ভাশুরের হুমকে তেতইল খাব কিবায়। এমুন সুম য়ান্দন ঘর তিগা হউরি কইল “বউগ, তোমার ভাশুরেরে ডাক দেও, জহুরের নোমাজের ওক্ত গেতাছেগা, চিত্তর অইয়া হুইয়া ঘোম দিছে।” ভালাই অইল। ফালানি অস্তে কইরা ডাক দিল “মিয়া ভাই, ওটবাইন না? আম্মা নামাজ পড়বার কইতাছে।” ভাশুরের ঘোম ভাইংগা গেলো গা। দুই য়াতের দুই আঙুল দিয়া চউক ঘষা দিয়া য়া কইরা য়াম নিয়শ ছাইরা কয় “ঘোমাই পরছিলাম। এর মইদ্যেই হপন দেখলাম ঘরে এক চোর ঢুইকা কি জানি নিবার নিগা য়াতাপাতা করতাছে। তোমার ডাহনে ঘোম ভাইংগা গেলো গা।

– হেডা বেটা চোর, না বেটি চোর আছাল?

– বেটি চোরই ত দেকলাম।

– তাইলে মোনয় তেতইলের আচার খাবার আইছাল।

– য়বার পারে।

ভাশুর উইঠা চউক কচলাইতে কচলাইতে নাইয়ের তলে তপন পিন্দা য়াটতে য়াটতে কলের পাড় উম্পি গেলোগা।

ভালাই অইল। ফালানির হউরি উগার উপুরের ধন্নার নগে সিকার মইদ্যে করইর বইয়মে তেতইলের আচার য়াকছাল। হেইডা পারবার সুম একটা বুরকার মইদ্যে ঠ্যালা নাইগ্যা ঢুস কইরা পইরা গেলগা। হউরি হইছ করল

– বউগ, শব্দ অইল কিয়ে, কী পড়ল?

– বিলাই, বিলাইয়ে বুরকার মইদ্যে মুক দিয়া কাইত কইরা ফালাইছে।

– ভাংগে নাইত?

– না, ভাংগে নাই।

ফালানি বইয়ম তিগা তেতইল বাইরা কইরা চোটকাইয়া খাওনের সুম জিলবায় চট চট শব্দ য়ইছাল। হউরি বুজবার পাইয়া কইল ” বউগ, বেকটি খাই ফালাইও না। গেদির নিগা য়াইখা দিও। গেদি আইলে তেতইল খাবার চাবো। ” ফালানি শরম পাইল।

ফালানির মাথার চুলে বিলি দিলো

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

দুপুইরা খাওন শেষ কইরা ফালানির মায় ঘরের হাইঞ্চায় হরবি গাছটার তলে টুলডা নইয়া বইল। ফালানিরে ডাক দিয়া কইল “গেদি, আয়ছে, তোর চুলে বিলি দিয়া দেই।” ফালানি ফিরাডা টান দিয়া আইন্যা মায়ের হুমকে বইল। ফালানির ছোট বুইনডারে ডাক দিয়া কইল “অ গেদি, তুইয় আয় মাথায় বিলি দিবার। তর ভাবীরেও আবার ক। আর বড় ঘর তনে মোস্কা, হাড়ের কাহই আর খাস তেলের বোতলডা নিয়ায়। এরপর বেক্কেই লাইন দইরা গাছতলে বইল মাতায় বিলি দিবার নিগা। বেকের আগে বইল ফালানির ছোট বুইন। তার পাছে ফালানি। তার পাছে ফালানির মাও। তার পাছে ফালানির ভাবী বইল। মাথায় বিলি দেওন শুরু অইল। ভাবীডার পাছে কেউ বহে নাই। তাই ভাবীর বিলি দেওনের কেউ নাই। পরের বাড়ির মেয়াগ এবাই অয়।

গেরামের মেয়া মাইনষের যেসুম কাম কোম থাহে হেসুম তারা লাইন দইরা মাথায় বিলি দিতে বহে। বিলি দিয়া তারা উহুন আনে। মোস্কা দিয়া উহুন আইব্যা মুচমুচি মারে। য়াড়ের কাহই দিয়া চুলে হিতি করে। যারা মাথা মোলকাইয়া গোসল ধয় না তাগ মাথায় উহুন য়য়। উহুনে চুলের গোড়ে বই বই য়স খায় আর আগে। এই জোন্যে উহুন অইলে মাথা খাইজায়। উহুনে গুড়া গুড়া আন্ডা পারে চুলের গোড়ে। হেই আন্ডা ফুইটা নিক বাইরয়। এবা খুদি খুদি নিক বাইটা বাচ্রার নাগাল, চুলের নগে নাইগ্যা থাহে। এই নিক গুনা নউখ দিয়া চিমটি দিয়া দইরা আনা যায়। দুই য়াতের বুইড়া আঙ্গুলের চিপা দিয়া টিপি দিয়া ইন্যারে ফাটাইয়া মাইরা ফালান যায়। আবার মোসকা দিয়া ধুইরা টান মাইরা আইন্যা চাপ দিলে মুচমুচি ফাইট্যা মইরা যায়। বড় উকুন দুই আঙ্গুল দিয়া ধইরা আইন্যা দুই বুইরা আঙুলের নউখ দিয়া চিপা দিয়াও মাইরা ফালান যায়।

মাথায় বিলি দিতে দিতে মেওপোলাগুনায় আলাপ জুইরা নইল।

ফালানির বুইন – তোমরা ঢেলা ঢেলা উহুন আইন্যা আমার য়াতে দিবা। আমি আঙ্গুল দিয়া চাপা দিয়া টাসটাসি মাইরা ফালামু।

ফালানি – এই যে এডা ধরছি। গালাই ফালা।

বুইন – ইডা না উরুসের নাগাল ভুইত্তা। হেদিন দেহি দুলাভাইর ঘারের নিচে পিঠের উপুরে নাল টক টকা অইয়া চাক্কা বান্দিছে। আমি কইলাম, এল্লা দুলাভাই, আন্নের পিঠে কী অইছে? দুলাভাই কইল যে তোংগ চকিত উরুস আছে। উরুসে কামড়াইছে।

ফালানি – তুই আবার দেকলি কিবায়?

বুইন – দুপুরসুম গোসল কইরা উঠানে বাশের আড়ের উপুর তপন হুকা দেওনের সুম দেখছি।

ফালানি – মাইনষের প্যাচাল বাদ দ্যা, সোজা অইয়া ব। তর চুল এবা পাটের ফেউয়ার নাগাল ক্যা? এই ফেইস্কা চুলের আগা হোমান কইরা কাইট্যা ফালান নাগব। কাহই দিয়া চুল দোয়াবি। চুলের মইদ্যে জট অইগেছে।

বুইন – চুলের মইদ্যে ভালা দামী দামী তেল দিওন নাগে। মাইনষের কাছে হুনছি কি একটা তেল জানি আছে, হেডা চুলে দিলে চুল তোসা পাটের নাগাল বড় অইয়া মাটি ছেচইরা যায়।

ফালানি – তর দুলাভাই আমারে বোতলের বাসনা নাইরল তেল আইন্যা দেয়। আমার হউরি খালি হস্তা জিনিস আনবার কয়। হে আনবার কয় আলগা নাইরল তেল। হেন্যা আমার কাছে পোড়া পোড়া গোন্ধ করে। নাইরল করাইর মদ্যে আইসালের আগুনে জ্বাল দিয়া আলগা তেল বানায়। হেই জোন্যে গোন্ধ করে।

বুইন – তাইলে বতলের নাইরল তেল বাসনা করে ক্যা?

ফালানি – মিশিনে নাইরল তেল বানাইয়া তার নগে বাসনা ফুলের পাপড়ি ভিজাইয়া থয় মোনয়।

মা – তর বাপে সব সুমই আমার নিগা বাসনা তেলের বতল আনত। বিয়ার সুম দিছাল গোন্ধরাজ তেল। তুই য়বার পর আমার মাথার চান্দি জ্বলত। চান্দি দিয়া ততা ভাপ বাইরইত। এবা ততা য়ইত জানি চান্দিতে আলই ধানের চাইল দিলে ফুইট্টা উঠব। হিম কবরি তেল দিলে মাথা ঠান্ডা য়ই গেত। তাই, হেসুম হিম কবরি তেল আনত আমার নিগা।

ভাবী – আংগ মা মাথায় কদুর তেল দেয়।

বুইন – মা, কদুর তেল বানায় কি দিয়া গ?

মা – মাইনষে কয় না, যেই কদু হেই নাউ। নাউরেই কোন কোন মাইনষে কদু কয়। নাউয়ের বিচি তনে তেল বাইর করলে তারে কয় কদুর তেল। জয়না গোটার বিচির তনে তেল বাইর করলে কয় জয়না তেল। বয়রা গোটার বিচি তিগা অয় বয়রা তেল। বাজনা গোটার নিচি তনে বাজনা তেল, তিলের তিগা তিলের তেল, ভেন্না গোটা তিগা ভেন্না তেল, বাদাম তিগা বাদাম তেল, হউসা তিগা খাস তেল। সূর্যমুখীর বিচির তনেও তেল য়য় সূর্যমুখী তেল।

ফালানি – সোয়াবিন তেল, জল্পইর তেল, কালিজিরা তেল, জয়তুন তেল, ইন্নার কথা ত কওই নাই।

বুইন – মইয়রজান বুর চুলগুনা দীলগা আছে। ছাইড়া দিলে য়াটুর নিচ তুরি পড়ে।

ভাবী – মইয়রজানের চেহারাডা খপসুরুতের অইলেও সুখ অইল না। জামাইয়ে ছাড়া কইরা দিছে।

ফালানি – ক্যা, কি অইছিল?

বুইন – ওডার হউরিও যেবা জাউরা, ওডার জামাইডাও হেবা জাউরা। জমিন জিরাত বেইচ্যা, ওডার গয়নাগাটি বেইচ্যা বিদেশ করবার গেছে গা। মইয়রজান বু জিদ ধরছাল গয়না বেচপার দিব না। জোর কইরাই গয়নাগুনা বেইচ্যা ফালাইলে বু বাপের বাড়ি আই পড়ে। আর শশুরবাড়ি যায় না। জামাইয়েও তারে কাগজ কইরা খেদাই দিছে।

ফালানি – এই জোন্যেই কয়দিন ধইরা দেখতাছি ছেড়ি গরু-ছাগল হাচার দেয়। অইদে মদে কাম করে। বেজার অই থাহে। আমার নগেও মোন খুইলা কতা কইল না। গয়না নইয়া কি কেউ কব্বরে যায়? গয়নার নিগা কিয়েরে বিয়া ভাংগন নাগব? বেক্কুইল্যা মেয়ানোক! জামাই বিদেশ তনে টেহা কামাই কইরা আইন্যা ওর থিগা আরও ভরা গয়না কিনবার পাইত।

মা – কিবাজানি দেওয়ায় গুড়্গুড়াইতাছে। টিনের চালে ঢাসঢাসি ফোটা পরতাছে। বৌগ, উঠ, তোমার হশুরের তপনডা ভিজ্জা যাব। তুইল্যা ফালাওগা। উইঠা পর তরা।

ফালানি গরুরে গোস্ত খাইতে দিছাল

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

গয়নাগাটি বেইচ্চা ফালানের পর তিগা ফালানির মুহে য়াসি নাই। এরপর আবার পালের হাড় গরুডা বেইচ্চা ফালাইছে। এই জোন্যে তার মোনডা এহেবারে ভাইংগা গেছেগা। গুতাইন্যা হাড় অইলেও ফালানিরে কুনদিন গুতায় নাই। গরুডার নিগা ফালানির পরন পোড়ে। খালি চাড়ির পাড়ের মুহি চাই থাকে। মশায় যাতে না কামুর দিবার পারে হে জুন্যে চট কাইটা হাড়ডার গতরে পিনদাইয়া দিত। হেই চটটা অহন গোয়াইল ঘরের বেড়ার উপুর ঝুলতাছে।

ফাগুন মাস। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুল ফুল ফুইটা গাছ নাল য়ইয়া গেছে। গাছ ভর্তি হালিক ফুলের মধু খাইতাছে আর কালকিল করতাছে। ঝোপের ভিতর তিগা কুকিল পৌখে কু কু করতাছে। কিবা জানি হুনা হুনা নাগতাছে ফালানির। দুপুর বেলা পুস্কুনির পাড়ে আম গাছ তলার বাসের মাচাংগে গিয়া বইল। চৌখ আবার চাড়ির পাড়ের মুহি। মোনে অইয়া গেল হেই হাড়ের কথা। নতুন বউ কালে এক বার চাড়ির হাড়ের খাবারের নগে ফালানি গোস্তের সালুন মিশাই দিছাল। গরু যে গোস্ত খায় না হেডা ফালানি জানত না। ফালানি ভালাবুইজা গরুর খাওনের নগে গোস্ত মিশাই দিছাল। হাড়ে চাড়ি খায় না ক্যা, খায়না ক্যা, ইডা নইয়া বেবাকে যেসুম পেচাল পারতাছে হেসুম ফালানির জ্যাডা হশুর আইয়া চাড়ির খাওন আওলাইয়া দেহে গোস্ত মিশাইন্যা। কইল “এই, ইন্যার নগে গোস্ত মিশাইছে ক্যারা? ফালানি কইল ” আমি গো।”

– মিশাইছ ক্যা?

– আমার গরুডার নিগা পরন পোড়ে, তাই।

– এই পাগুল্লি, গরুয়ে যে গোস্তের বয় সইয্য করতে পারে না হেইডা তোমার মাও বাপে হিকাই দেয় নাই? গোস্ত ভাঞ্জাইয়া দিছ দেইখাই গরুয়ে খাইতাছে না। চাড়ির বেবাক খাবার হেইমটা পরিস্কার কইরা নতুন কইরা খাবার দেও।

ফালানি বেবাকের হুমকে চাড়ি পরিস্কার কইরা নতুন কইরা খাবার দিল। গরু হেইন্না গামছাইয়া খাইল।

ফালানি এক ঢেইলেই য়াঁস মাইরা ফালাইছাল

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালালি হেদিনকাও বাইরবাড়ির গাছ তলের মাচাংগে বইয়া ঠ্যাং নাচাইছাল। দেহে পুস্কুনির পানিতে দুইডা য়াঁস হাতুর পারতাছাল জোড়া ধইরা। এডা য়াঁসা আরেডা য়াঁসি। দেইখা ফালানির মেলা খুশি নাগছাল। হেসুম অচমবিতি তাগ বাড়ির কতা মোনইল। হেডা বিয়ার আগের কতা। হেগ পুস্কুনিতেও হেগ দুইডা য়াঁসা-য়াঁসি হাতুর পারত। হেডাও তার কাছে বালা নাগত। মস্কিল য়ইল, একদিন দেহে ঘাটের যেনু বইয়া ফালানি কাপড় ধোব হেনু ঢাল্লা একটা আগা দিছে। য়াঁসের কামই অবা। গ্যাতগেতি খাব, আর যেনুনা হেনু পেঁচপেঁচি আগবো। য়াঁসের গু ঘাটে দেইখা ফালানির য়াগ উইঠা গেলো গা। পুস্কুনির পাড়ে তিগা পাইল্যা ভাঙার চেড়া দিয়া একটা ঢেইল মারছে। হেই ঢেইল নাগল গিয়া য়াঁসিডার মাতার মইদ্যে। মাতায় ঝাই ধইরা কাইত অইয়া পানিত ভাসপার নইল। ফালানি তাত্তারি কইরা য়াঁসটারে ধইরা বাড়িত নিয়া গিয়া মায়রে কইল “মইরা গেলো গ।” মায় কইল “জব কর তাত্তারি।” ফালানির বড় ভাইয়ে অবাই নেংগা বঠি দিয়া য়াঁসিডারে জব কইরা ফালাইল। উনুকার মানু অবাই করে। য়াঁস কুরকা যুদি কোন কারনে মইর যাবার নয়, তাত্তারি জব কইরা ফালায়। ফালানি হেসুম ছোট আছাল। বিয়ার যোগ্যি অইছাল না। পোলাইপানির ভাবে যায় নাই। হেই য়াঁসের সালুন খুব বাস্না অইছাল। গোস্তের টুকরা য়াতে নইয়া বারিন্দায় খারই খারইয়া যেসুম ফালানির চাচত ভাইরে দেহাই দেহাই ফালানি খায়, হেসুম চাচত ভাই কয় “আমগোও য়াঁস কুরকা আছে! আমগো য়াঁস কুরকারও ব্যারাম অব। ব্যারাম অইলে আমরাও জব করমু। হেসুম আমরাও অবা দেহাই দেহাই খামু।” এবা য়াসুইন্যা কতা মোনে অইল ফালানির। যে য়াঁসাডা বাইচ্যা আছাল, হেডাও কয়দিন পরে ফালানির দুলাভাই আইলে জব কইরা খাই ফালায়। এই য়াঁস দেইখা হেই য়াঁস গুনার কতা মোনয়। পরান পোড়ে।

ads banner:

ফালানির জামাইরে বিদেশ করবার দিবনা

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

পরদিন দুপুসুম ফালানি, ফালানির জামাই আর করিম গাছতলে বইয়া আলাপ করাতাছিল। এমুনসুম শুয়াকুরের মুহি তিগা মগ্য মিয়া এডা ছাগল নইয়াইতাছিল। বাইরবাড়ি তুরি আইয়া ছাগলডায় খুট্টি ধরলো। যতই টান দেয় ততই খুট্টি ধরে। পাইছায় খালি, আইগায় না। হেসুম মেলা বাতাস আছিল। মগ্য মিয়া ফালানির ভাবীর কিবা ভাই অয় জানি, কপ্পামু না। হেই জোন্যে তাগ মইদ্যে বেয়াই বিয়ানি সোম্পর্ক। তার নগে ফালানিরে দিয়া একবার বিয়ার কতাও অইছাল । ফালানির পছন্দও অইছাল। কিন্তু ফালানির বাপে কি জোন্য জানি পছন্দ করল না। ইডা আবার জামাইয়েও জাইন্যা ফালাইছে। এই জোন্যে মগ্য মিয়ারে জামাই ভালা চৌক্ষে দেহে না।

ফালানি মগ্য মিয়ারে হইছ করলো “ছাগল কিন্না আনলাইন নিহি?” মগ্য কইল “টাইন্যাই নিমু। ” আবার হইছ করল “আমি হইছ করতাছি, ছাগলডা কিন্যা আনলাইন নিহি।” কয় “হেছড়াইয়াই নিমু।” ফালানি কয় “কানে কোম হুনুইন নিহি?” মগ্য কয় “দড়ি ছিড়ব না। দড়ি হক্ত আছে। ” আসলে মগ্য মিয়া য়ারকালা না। বাতাসের শব্দে কতা ঠিকমতো হোনা যায় নাই। মগ্য মোনে করছে ছাগলের খুট্টির কথা কইতাছে। করিম খুট্টি ছাড়াইন্যা কাম করল। গাছ তিগা অল্প কয়ডা কাঠলের পাতার ডাইল য়াতে নিয়া কইল “আয় আয়।” অবাই ছাগলডা খুট্টি ছাইড়া ফালানিগ কাছে আইল। মগ্য মিয়া তাত্তারি কইরা ঘোড়া কাঠের পয়ার মইদ্যে ছাগলডারে বাইন্দাহালাইল। ছাগলডায় হেনু চোনাই দিল। চোনাই হাইরাই নাদান নইল। বটি বটি নাদা। করিম কয় “ছাগলের নাদা অবা বটি বটি য়য় কিবায়? আট্টু বড় অইলে ইন্যা দিয়া মাডবল খেলান গেতো। ছোট পোলাপাইনে বুট মোনে কইরা মুহে দিব।” ফালানি কয় “তুই যেসুম আকুরা পারস হেসুম বুট মোনে কইরা ছাগলের নাদা মুখে দিছিলি।” করিম কয় “ফালানি বু, বেশী কিছু কইলে কইল আমি তোমার কতা দুলাভাইর কাছে কইয়া দিমু।”

ফালানি মগ্যরে যেই কইছে “আন্নে একটা য়াম ছাগল” অবাই মগ্য কইয়া উঠল “আন্নের জামাইই একটা য়াম ছাগল।” ফালানি কইল “আমি কবার নইছিলাম আন্নে একটা য়াম ছাগল কিনবাইন। য়াম ছাগলে লাভ বেশী। মেলা দাম পাওযায়। হবি ভাই একটা য়াম ছাগল পাইল্যা ডাংগর কইরা পায়তিরিশ য়াজার টেহা বেচ্চে।” মগ্য কইল “আবার ঠাস কইরা পইরা মইরা গেলে পায়তিরিশ য়াজার টেহাই গেলো গা।” ফালানির জামাই বিরক্তি য়ইয়া কইল “ছাগলের পেঁচাল বাদ দেওছে।”

ফালানি মগ্যরে হইছ করলো

– আইচ্ছা বিয়াই, আন্নে বিদেশে গিয়া কিয়ের চাকরি করুইন?

– আমি কোম্পানির চাকরি করি। সহাল বেলা অফিসে আর বিহাল বেলা মালিকের বাসায়। য়াইতে মালিকের বাসায়ই থাহি।

– খাওয়া দাওয়া য়ান্নাবাড়ি?

– কামের ফাকে আমিই দু’য়ান য়ান্দি। বেশী আন্দন নাগে না। মালিকে খাইয়া যেডি বেশী য়য় হেডিই খাইহারন যায় না। থালি ভইরা ভাত, নয় পোলাও নিব। আস্ত মুরগী পাতে নিব। এক কামুর খাইয়া আর খাব না হালায়। হেইন্যা আমারে ফালাবার দেয়। আমি নিয়া কামড়াই খাই। য়াইতে এসি ছাইড়া হুই থাহি মালিকের বাসায়ই। আরাম আছে।

– হেই জোন্তেই ত আন্নের এবা ভুড়ি অইছে। আরামে থাহুইন ত, আর আই পরনের নাম নাই। এনু থাকলেত ছাগল টানন নাগব। বউয়ের ফরমাইস করন নাগব। অহন আলা আইপরুইন গা।

– এই, বিয়াই, নইন আন্নেরে নিয়া যাই বিদেশ। আমি ভিসা আইন্যা দিমু নি, আমার মালিকেরে কইয়া।

– ফালানি হুইন্যা তেলে বাগুনে জ্বইল্যা উঠলো। আন্যের কুবুদ্ধি দেয়ন নাগবনা। আংগ বিদেশ করন নাগব না। আমরা কষ্ট কইরাই থাকমু। অহন আলা বিয়ানির কাছে যাইন।

ফালানি হশুরের তপন ফালাই দিছাল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

গয়নাগুনা আর পালের হাড় গরুডা বেচনের পর তিগা ফালানির বেশী ভালা ঠেহে না। কামে মোন ধরে না। হউরিয়ে বুজবার পায়। তাই বেশী কিছু কয় না। ফালানি কাম বাদ দিয়া খালি বাইর বাড়ি মাচাংগে বই থাহে। এমমুর দিয়া হউরি য়ান্দন ঘরে বইয়া বটি দিয়া তরিতরকারি কাটতাছে। ছিমইর কাটা শেষ। যেসুম নবিল্লা কাটতাছে হেসুম ফালানি বাইর বাড়ি তিগা বাইত্যে আই পরতাছে। উঠানের মইদ্যে দড়ির উপুর হশুরে তপন হুকা দিয়া য়াকছে। হেই তপনের নিচ দিয়া যাওনের সুম মাথার কিলিপের নগে বাইজা তপনডা মাটিত পইরা গেলো গা। ফালানি ধাতুবাত কইরা তুইল্যা ঝাহি দিয়া আবার হুকা দিয়া য়াকলো। হউরি আবার হেডা দেইখা ফালাইছে। কয় “কিবা কইরা য়াটো, হশুরের তপনে বাইজা পড়? হোদ নাই?”

ফালানিগ গাই বিয়াইছে

(টাঙ্গাইলের ভাষার ব্যবহার)

ফালানিগ চিত কপাইল্যা গাইডা আইজকা বিয়ানবেলা বিয়াইছে। একটা বহন বাছুর অইছে। এটের পর তিনবার বহন বাছুর অইল। এডা হাড় বাছুর অইলে ভুষি টুষি খাওয়াইয়া পাইল্যা নাইল্যা ডাংগর কইরা বড় কইরা কুরবানির য়াটে বেইচা ভালা দাম পাওন গেত। তাই, ফালানির হউরির মোন ভালা না। অওনের পর থিগাই বাছুরডা জারে থইরালে কাপতাছে। ফালানি গরুর নিগা গোয়াইল ঘরে খের বিছাই দিছে জানি টেল্কা না নাগে। বাছুরডার নিগা ফালানির পরণ পোড়ে।

শব্দার্থঃ

চিত কপাইল্যা – কপালে সাদা রঙ আছে

গাইডা – গাভীটা

আইজকা – আজকে

বিয়ানবেলা – সকালে

বিয়াইছে – প্রসব করেছে

বহন বাছুর – বকনা বাছুর

হাড় বাছুর – ষাড় বাছুর

অইছে – হয়েছে

অইল – হলো

এটের পর – পরপর

পাইল্যা নাইলা – লালন পালন করে

য়াটে – হাটে

গেত – যেতো

ডাংগর – বড়

জারে – শীতে

থইরালে – থরথর করে

টেল্কা – ঠান্ডা

পরণ পোড়ে – মায়া লাগে, প্রাণ পোড়ে।

in-feed-ads:

ফালানির বেক গয়নাগাটি বেইচা ফালাইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির চাচত দেওর চাকরি করবার নিগা ছৌদি যাবো। চাইর লাখ টেহা নাগব। দালালেই সব কিছু কইরা দিতাছে। মাও-বউয়ের গয়নাগাটি, ইডা ওডা বেইচা দুই লাখ টেহা দালালের য়াতে তুইলা দিছে। মেডিকেলে আনফিট কইরা কিছু টেহা বেশী নিছে দালালে। টেহা দিলেই যুদি আনফিট তিগা ফিট য়য়, তাইলে আনফিটের ইপোর্টটাই ভুয়া মোনে য়ইতাছে। যাইগ্যা, নেয় নেইগ্যা। ছলের টেহা জলেই যাবো দালালের। অহন অনেক টেহা যোগার করতে য়বো। ফালানির চাচাহশুর পালানের ক্ষেতটা বেচপার চাইল ফালানির হশুরের কাছে। কইল “আন্নের ক্ষেতের নগে ক্ষেত, পালানের ক্ষেত, য়াস, কুরকা, ছাগল, গরু ছাইড়া দিলেই এই ক্ষেতে আইয়া পড়ে। আমি চাই আন্নেই এই ক্ষেতটা নেইন। মাইনসের কাছে জমিন বেচাডা ঠিক অব না।” ফালানির হশুরের য়াতে টেহা নাই জমিন কিনবার। য়াইতে ফালানির হশুর- হউরি গিরিমিন্টি কইরা বুদ্ধি বাইর করলো ফালানির গয়নাগাটি বেইচ্যা টেহা যোগার করবার নিগা। বড়ঘরে ডাইকা নিয়া হউরি ফালানিরে বুজাইয়া কইল “বউগ, পালানের জমিনডা বেইচা ফালাইতাছে। আংগই নিনন নাগব। আংগ য়াতে অহন টেহা নাই। কইছিলাম কি, তোমার বাপের কাছে কইয়া যুদি কিছু টেহা যোগার কইরা দিতা!” ফালানি নাক খাউজাইয়া কইল “আম্মা, আংগ বাবার কাছেও অহন টেহা নাই। টেহা চাওন ঠিক য়ব না। ” হউরি পানের পিস্কি ফালাইয়া কইল “তাইলে তোমার গয়নাগুনা বেইচা ফালাও। উন্না ত আমরাই দিছিলাম। ক্ষেতের ফসল বেইচ্চা আবার বেক গয়না কিন্যা দিমুনি।” মেলা বুজানির পরে ফালানি য়াজি অইল। হেই গয়নাগুনা কিনল ফালানির নোন্দে। গেছে কাইল, না, গেছে পশুদিন, ফালানির নোন্দে হেই গয়নাগুনা পইরা জামাই নইয়া পাপের বাড়ি আইছে ফুর্তি কইরা। এবাই কইল কূন্দিন আহেনা আনবার না গেলে। হেদিন নাচন মাইরা আই পড়ছে। আইয়া দাঁত বাইর কইরা য়াইসা য়াইসা ডাইন কানের মার্কি দুলাইয়া, গলার মপচেইন কামড় দিয়া ধইরা ফালানিরে কয় “ভাবী, কিবা আছুইন?” ফালানির আত্মার মইদ্যে ছেত কইরা উঠলো। উঠব না ক্যা, উন্না যে আছাল ফালানির বিয়ার গয়না!

ফালানির সোন্তান পেটে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির বড় ভাশুরের মেয়াডা ভালাই গায়গতরে বাইড়া ওঠছে। বিয়ার যোগ্যি অইয়া ওঠতাছে। পরায় সুমই ফালানির নগে থাহে। হেও বুঝবার পাইছে গয়না আর পালের হাড় গরুডা বেচনের পর তিগা ফালানি কিবা জানি অই গেছে। কতা কয় না, খায় না-দায় না। হুকাইয়া চোউক ডো~রে গেছেগা। হে য়ান্দন ঘরে গিয়া ফালানির হউরির কাছে কইল “দাদি, কাক্কিরে মোনয় ভুতে ধরছে।”

– কিবা কতা কস?

– কাক্কি যে খালি ভুতলামি ধইরা বই থাহে, খায় না, বিয়ান বালা ওঠে না। তাইতে কই।

– গয়নাগুনা বেচনে মোন ভালানা, তাই।

– একবার মোনয় য়াক্কস য়ই গেছে।

– ক্যা?

– আইসালের পোড়ামাটি খায়, মাটির পাইল্যাভাংগা চ্যাড়া খায়। কোমরের কোচের মইদ্যে হাইরা থয়। ঘরের পাছে গিয়া কুরমুড়াইয়া চাবাইয়া খায়। ইডা য়াক্কস না, কী?

– তাই নিহি? কয়দিন দইরা কইতাছে মাথা ভার ভার নাগে। বমি অবার চায়। তেতইল খায়। বুইজা ফালাইছি কি অইছে। তর কাক্কিরে ডাক দ্যাছে।

ভাশুরের মেয়া ঘরের পাছে গিয়া দেহে ফালানি উছাত করতাছে। দাদির কাছে আইয়া কইলে দাদি কয় “এহেবারে বুইজা ফালাইছি। বউয়ের সোন্তান পেটে আইছে।”

ফালানি নোন্দের জামাইর বেক টেহা নিয়া গেছেগা

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

এক্সো কইরা দেহা গেছে ফালানির নোন্দের মাঞ্জার য়াড্ডি ভাইংগা গেছেগা। ডাকতরেরা নোয়ার পাতি নাগাইয়া স্ক্রুপ দিয়া আটকাই দিব। হেইন্যা মেলা দামের। এই জুন্যে বাড়িত তনে পোনর য়াজার টেহা নিয়াইছে নোন্দের জামাই। বুকের বাম পকটে য়াইখা দিছে। টেহা পকটে নিয়াই গেছাল অইটালে খাবার নিগা। এক বেটা হোমকে তিগা সালামালকি দিয়া কয় “মিয়া ভাইরে চিনা চিনা নাগতাছে! নাম জানি কী?” জামাই নাম কইয়া দেয়। “বাড়ি জানি কোন গেরামে?” জামাই গেরামের নাম কইয়া দেয়। “তাইলে ত আন্নে আমগ বাড়ির কাছেরই মানুষ। এই জোন্যেই চিনাচিনা নাগতাছে। আহুইন নাস্তা করি।” জামাই খুশি য়ইয়া নাস্তা খাইতে বহে। নাস্তার অর্ডারি বেটাডায়ই দেয়। দুইজোনে পেট ভইরা নাস্তা খায়। ইডা ওডা আলাপ কইরা বেটাডায় বেবাক জাইন্যা ফালায়। একসুম বেটায় কয় “আপনে খাওয়া দাওয়া অইটালে না কইরা আংগ বাসায়ই করবাইন। হাসপাতালে চাকরি করি। মোটামুটি ভালাই চলে। অসুদপাতি বাইরে তিগা কিনবাইন না। আমি হাসপাতাল তিগা পাওনের কাম কইরা দিমুনি।” অচমবিতি জামাইর বুক পকেটের টেহাডি তার য়াতে নিয়া কয় “এনু কয় টেহা আছে? বেশি টেহা নগে য়াকবাইননা। শহরে টাউট বাটপার আছে নিয়া যাবগা।” এই বিল্লা খুচরা পঁচাত্তর টেহা জামাইর পহেটে দিয়া বাকী টেহাডি বেটার য়াতে নিয়া নিলো। এক কাপ চায়ের অর্ডারি দিয়া বেটায় কইল “চা খাইতে থাকুন। আমি সামনে তিগা খিলি পান নিয়া আহি। আন্নেরে নিয়া আমগো বাসায় যামু। আন্নের ভাবির নগে পরিচয় করাইয়া দিমু।” জামাই শুনে খুশি য়য়। চা খাওয়া শেষ, বেটায় পান নিয়া আহে নাই। আধা ঘন্টা পার অইয়া গেছে বেটার কোন খোজ পাত্তা নাই। অইটালের বেটারা কয় “কি, বই আছুইন ক্যা? টেবিল খালি করুইন। কাউন্টারে গিয়া বিল দেইন গা।” কাউন্টারে গিয়া বিল কত য়ইছে হুইন্যা জামাইর মাথায় য়াত। জামাইর য়াতে আছে মাত্র পঁচাত্তর টেহা। সব টেহা নিয়া গেছে সেই টাউট বেটায়। জামাই কাহিনি হুনাইলে ম্যানেজার কয় “দুই টাউটে যুক্তি কইরা মাংনা খাবার আইছস? একটা ঘুষি দিয়া নাক ফাটাই ফালামু, টেহা দে?”

in-article-ads:

ফালানির নোন্দের গয়নাগাটি চোরে নিছে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

বিসুদবারের য়াটে গিয়া য়াবিজাবি বেইচ্যা ফালানির জামাই কিছু জিনিস কিনলো শশুরবাড়ি নইয়া যাওনের নিগা। ফালানির নিগা এডা বেলাউছ নিল। ফালানিই কইছিল নিয়া যাওনের নিগা। দোহানদার হইচ করছাল “কয় নম্বার বেলাউছ গতরে দেয়?” জামাই কইল “নোম্বর ত কপ্পামু না। তয় গতর বেশী মোটাও না, আবার বেশী চিকনও না। তিন মাইসা সোন্তান পেটে। আরও মোটা য়ব। এবা দেইখা দেইন জানি সোন্তান য়ওন তুরি গতরে দিবার পায়। অহন যে ছায়া পিন্দে হেগনাও পরে কষা অব। তাই, ডোলা দেইখা দুইডা ছায়া দেইন।” ফালানির ছোট বুইনের নিগা এডা নিমা, আর এডা কাচুলি নইল। ফালানির চাচত ভাই করিমের নিগা এডা বাটইল কিনল। বেক্কের নিগা কিছু জিলাপা আর য়স গজা নইল। ফালানি বাদামটানা আর নইটানা পছন্দ করে। তাই, তার নিগা আলাদা কইরা একটা বাদামটানার তক্তি, আর এডা নই টানার তক্তি পলিথিন দিয়া পেচাইয়া নইল। এই দুইডা জিনিস যুত কইরা ফালানির য়াতে দিল। বাটইল পাইয়া করিম খুশির চোটে কয় “দুলাভাই, ইডা দিয়া ঘুগু মাইয়া আন্নেরে খিলামু। য়াইত পোহাই নউক।” বুইনে কইল “দুলাভাই, কাচুলি আনছুইন ক্যা? কাচুলি গতরে দিতে আমার ভালা ঠেহে না।” ডোলা ছায়া দেইখা ফালানি কইল “ইডা এডা ভালা কাম করছুইন বুদ্ধি কইরা।”

য়াইতে হুইয়া হুইয়া মেলা আইত তুরি প্যাচাল পারল ফালানি জামাইর নগে। ফালানি হইচ করল

– আম্মা কি আমারে নিয়া যাওনের কোন কতা কইছে? আমার ইনুও মাইয়ার নগে থাকপার মোন চায়, আবার উনুও আন্নের কাছে থাকপার মোন চায়। আমি পরছি দোটানায়।

– মা, কইছে আর কয়দিন পর তোমারে নিয়া যাবো। আবার সোন্তান য়বার আগ দিয়া এনু পাঠাই দিব। সোন্তান য়বার সুম নিহি মায়ের কাছে থাহন ভালা। মায় যেবা ঝালাম সইতে পারব হউরি কি তা পারবো?

– আম্মা যেডা কয় হেডাই য়ব নি। আমার য়হন তিগাই কিবা জানি ডর করতাছে। য়ানি বুজি পরতম সোন্তান য়বার সুমই পইরা গেছে। হেই কতা মোনইয়া আমার ডর করে।

– এই যে দুনিয়া ভইরা মানুষ দেকতাছ, ইন্নার মাও কি সোন্তান য়বার সুম মইরা গেছে? একটা খারাপ খবর আছে।

– কী?

– ছোট বুইনডার গয়নাগুনা চোরে নিছে গা।

– কি কও? তারমানে আমার কাছ তনে যে গয়নাগুনা কিন্না নিছাল হেইন্যা বেইকটি চোরে নিছে গা? কিবায় নিলো।

– তার আগের গয়নাগুনা, তোমার কাছ তনে কিনা গয়নাগুনা, সব চোরে নিছে।

– কিবায় নিলো? শিং কাইটা চোর ঘরে ঢোকছাল?

– হেদিন খুব গুমা আছাল। ছেড়িডায় য়াইতে খাইয়া গুমার চোটে চকির উপুর একটা গইর দিছাল। কুনসুম জানি ঘোমাই পড়ে। আর জাগনা পায় না। জানলা-দুয়ার বেকই খোলা আছাল। দুয়ার খোলা পাইয়া চোর ঘরে ঢুইকা পরে। চাংগের উপুর তার সুটকেস আছিল। সুটকেস ধইরা গয়নাগাটি নিয়া গেছে। একটু ভাছও পায় নাই। কুত্তায় এটু ঘেউঘেউ করছিল। হুইন্যা তার হউরি কইছে “এই কুত্তা।” কুত্তায় থাইমা গেছে। উত্তরমুরা ক্ষেতে নিয়া সুটকেসের তালা ভাইংগা সব কিছু থুইয়া খালি গয়নাগুনা নইয়া গেছে। চোর মোনয় বাড়ির কাছেরই য়ব।

– ক্যান, কাউরে সন্দে য়য়?

– চোর মোনয় অগ উত্তর বাড়ির আজিতে। চুরি য়ওয়ার পরের দিন আজিত কইট্টার য়াটে গেছিল। তারে দেহা গেছে সোনারুপার য়াটে ঘুরাফিরা করতে। ইডা অগ পাড়ার একজোনে এখছে। টাঙ্গাইল তনে এডিও আর ঘড়ি কিন্যা নিয়াইছে। এত ফ্যারাংগি করনের টেহা পাইল কুনু? টায় টায় থাইক্যা আসল ঘটনাডা বাইর করন নাগবো।

– আন্দাজি মাইনষেরে সন্দে কইরা শউত্রামি বাড়াইও না। এতদিন আশা আছাল কোন দিন যুদি নোন্দে গয়নাগুনা বেচপার চায় আমিই হেইন্যা কিন্যা নিমু। আমার পইরনের গয়না আমার তনেই আবো। তাও অইল না।

এবা ভরা কতা কইতে কইতে কুনসুম জানি অরা ঘুমাই পড়ে। সকালে নাস্তা খাইয়া জামাই যায়গা।

ads banner:

ফালানিগ হেই গুতাইন্যা হাড়ডা বেইচ্যা ফালাইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির নোন্দের জামাই টেহা য়ারাইয়া এহেবারে হাতারে পইরা গেছে। হউরিরে কইল “আন্নেগ হাড়ের গুতা খাইয়াই আন্নের মেয়ার পাঞ্জা ভাংছে। আর তার চেস্টা করার নিগাই আমি হাসপাতালে টেহা নিয়া গেছিলাম। হেই টেহাগুনা জাউরা মাইনসে নিয়া গেলো গা। অহন আমি কোন মুহে বাপের কাছে টেহা চামু? কাজে কাজেই, আন্নেরগই টেহা দিওন নাগব।” ফালানির মায় কইল “বিয়াই-বিয়ানির ত য়াগ করনেরই কথা। আমরা অইলেও য়াগ করতাম। বাজান, আমরা অহন টেহা পামু কুনু?” জামাই কইল “ক্যা, ওই গুতাইন্যা হাড়ডাই বেইচ্যা ফালাইন। পালে থাকলে আবার কারে গুতা দিয়া মিন্দারার য়াড্ডি ভাইংগা ফালায়, কেরা জানে। দেহা যাবো আন্নেরডাই ভাইংগা ফালাইছে।” হউরিয়ে হুইন্যা য়াজি অইল। সয়ার য়াটে নিয়া হারডা বেইচা জামাইডারে টেহা দিয়া দিল। হেই টেহায় মাঞ্জার অপারেশন করাইল। অপারেশন কইরা ভালা অইছে। খালি একটু টেংগুস পাইরা পাইরা য়াটে।

ফালানির পিঠে আম পড়লো

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ফালানির জামাই যাওনের পর তিগা ফালানির মোনের ভিতরে খালি আইরাম বাইরাম করে। একবার বাইরবাড়ি যায়। আবার আই পড়ে। কোনহানেই তার ভালা নাগে না। তার মোনে দোমনদসা। একমোনে চায় জামাইর কাছে যায়। আরেক মোনে চায় মায়ের নগেই থাহে। দুপুরসূম ফালানি বাইরবাড়ির আম গাছের তলে গিয়া ঘোড়াকাঠের উপুর বইল। দহিন পাড়ায় কয়ডা গুড্ডি উড়তাছাল। এইন্যারমুহি চাইয়া আছাল ফালানি। একটা গুড্ডির নাম পাইল্যা গুড্ডি। ওডার নিচমুহি মাটির পাইল্যার নাগাল। তাই, ওডার নাম পাইল্যা গুড্ডি। আরেকটা গুড্ডির নাম ফেইচ্ছা গুড্ডি। ওডার নিচমুহি ফেইচ্ছা পৌখের নাগাল নেজ আছে। তাই, কয় ফেইচ্চা গুড্ডি। একটা চং গুড্ডি উড়তাছাল। ওডার উপুরমুহি দুইমুড়া দুইডা নিশান নাগান আছে। নিচমুহি দুইডা পায়জামার মোতন আছে। ওড়ারসুম উন্না পতপত করে। ওডার মাথায় বেত নাগান আছে। বাতাস নাইগ্যা গুনগুন কইরা বাজে। হোনতে ভালাই নাগে। একটা পতিঙ্গা, আরেকটা সাপা গুড্ডিও উড়তাছাল। সাপা গুড্ডিডা ওড়ারসুম মোনে য়য় জানি আসমানে অজগর সাপ মোচড় পারতাছে। এমুনসুম বাড়িরমুহি তিগা করিম আইল ঝিনই দিয়া আম ছিলাইয়া খাইতে খাইতে। কইল

– ফালানি বু, আম খাবা?

– কোন গাছের আম?

– জাউইন্যা গাছের।

– দ্যা এক ফালা।

করিমও ঘোড়া কাঠে বইল। আম চোটকাইতে চোটকাইতে ফালানি কইল

– ঐ, অতগুনা গুড্ডি উড়াইতাছে ক্যারা?

– দুইখার পোলা জাফরে। দুইখা যেবা বেইন্যা, জাফরেও হেবা বেইন্যা অইছে। খালি জমিন বেইচা মুচমুচাইয়া খায়। কাম ত করেইনা। খালি আকাইমা খরচ করে। খাইয়া খাইয়া এবা মোটা অইছে যে ভুড়ি ভাসাইয়া কেদরাইয়া কেদরাইয়া য়াটে। অতগুনা গুড্ডি উড়ানের কি দরকার? খালি ঐ তালেই থাহে। বু, দেহছে, আমার ঘারের তলে পীঠের মইদ্যে কিবা জানি উচবিচ করতাছে। এটু খাইজাই দেও ছে।

– এনু?

– না, আট্টু নিচমুহি, গুঞ্জির তলে।

– এনু?

– হ, আট্টু ডাইনমুহি।

– কুনু গেছিলি যে পিঠ খাইজাইতাছে?

– পাট ক্ষেতে গেছিলাম।

– পাটের পাতা থিগা মোনয় ছেংগা নাগছে। পাট ক্ষেতে গেছিলি ক্যা?

– পাট ক্ষেতে কিয়েরে যায় হেডা জানো না?

– পানি খরচ করলি কুনু?

– পাট ক্ষেতের বাতর এটু কাটা আছে। অনুই পানি আছে কিছু। অনুই পানি করচ করছি। আইজকা কিবাজানি চুটমুটুইন্যা গুমা করতাছে। দেওয়া আইতে পারে। দেওয়া আইলে ঝুপঝুপি ভিজমু। দমকা বাতাস আইতাছে। ধলা বকগুনা উড়াল পারতাছে। দেওয়ায় হাচ করছে। ঝটকা বাতাসে পাইল্যা গুড্ডিডা ছুইটা গেলো। কাতাইতে কাতাইতে গিয়া পড়লো পাগাড়ে। দেওয়া অইলে উজাইন্যা কৈ মাছ ধরমু। হেদিন ভরাগুনা ধরছিলাম। উজাইন্যা কৈ ধরতে ভালাই নাগে।

বাড়ির ভিতর তিগা ফালানির মায় ডাক দিলেন “গেদি, বানাস চালাইছে। ঘরে আইপর। মাথার উপুর আম পড়বো।” কওয়ার নগে নগেই আগ ডাইল তিগা একটা ভুইত্যা আম পড়ল গিয়া ফালানির পিঠের মিনদাড়ার য়াড্ডির উপুর। ফালানি বেহা ধইরা এক নোড়ে বাইত গেলো গা।

—-

আজকের পর্বের বৈশিষ্ট্যঃ

গ্রামের বিভিন্ন রকমের ঘুড়ির পরিচয় দেয়া হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্নিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যথা আইরাম বাইরাম, চুটমুট, খাইজায়, গুমা, বাতর, পানি খরচ, ছেংগা, ভুইত্যা, নোড়, গেদি, মিনদাড়া, বানাস, উজান্যা, কাতাইতে কাতাইতে, কেদরাইয়া, ঝুপঝুপি, বেহা, গুঞ্জি, ধলা, হাচ, চুটমুটুইন্যা, ঝিনই, জাউইন্যা, কুনু, ক্যা ইত্যাদি।

ফালানির মামুর অবস্থা ভালানা

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

বড়বাইদপাড়া, সখিপুর

ফালানি বাইরবাড়ি ঘোড়া কাঠে বইয়া পাও নাচাইতেছিল। এমুনসুম তার মামু আইলো খোরাইয়া খোরাইয়া য়াটতে য়াটতে। দুই বোছর ধইরা তার এবা য়োগ য়ইছে। মাইনষে কয় অর্ধঙ্গের বাতাস নাইগ্যা এবা য়ইছে। কিননিগা কয় তা জানুইন? তারা মোনে করে খারাপ কিসিমের বাতাস তার গতরে নাগছে। যে বাতাস নাগলে শৈলের একমুরা দিয়া অবস য়ইয়া যায়। মানে অর্ধ অঙ্গ অবস য়ইয়া যায়। মুক একমুহি বেহা য়ইয়া গেছে। এক চৌক মুনজে না। খালি পানি পড়ে। জিবলা একমুহি নড়ে না। তাই, বেক কতা বোজন যায় না। বাইয়াত নুলা য়ই গেছে। বাইয়া ঠ্যাংও নড়ে না। ছেছুড় পাইরা য়াটন নাগে। এবা কইরা য়াইটা য়াইটা এনু উনু যায়। ডাকতর দিয়া চিগিস্যা করাইছিল। কাম য়য় নাই। কবিরাজেও কিছুদিন চিগিস্যা কইরা না পাইরা কই দিছে “ডাকতরেরা ইঞ্জিশন দিয়া য়োগ ডাবাই ফালাইছে। অহন কবিরাজি অসুধে কাম অব না। ফালানি কইল

– মামু, এবা কষ্ট কইরা এত দূর আইলাইন?

– কি করমু গেদি, ভরা দিন ধইরা তগ দেহি না। তাই আইজকা এবা কইরাই আইলাম। তা গেদি কিবা আছো? তর মায় কিবা আছে?

– আল্লায় বাচাইলে বালাই আছি। আংগ মামানিরে নই আইতাইন।

– কি আব, বাড়ি খালি থুইয়া আহন যায়?

– ক্যা, আন্নেগ য়শিদের বউ বাইত্তে নাই?

– গেদি, তুই মোনয় জানস না। হে জাউরাডা আমাগ নগে আর থাহে না। আংগ বাদ দিছে।

– ইন্না কী কইন? থাহে না মানে? ভাইংগা কইনসে।

– য়শিদ আছিল এডা ফকিন্নির পোলা। অরে গেন্দা থুইয়া অর বাপ মাও মইরা যায়। অর দাদীর কাছ তনে অরে পালবার আনছিলাম আংগ কোন সয়সোন্নতান য়ইল না দেইখা। হেই পোলারে কত যত্ন কইরা ভরা টেহা ভাইংগা পড়াইয়া আই এ পাস করাইছিলাম। এডা কাম অ করবার দেই নাই। জমিন জিরাত বেইচা পড়াইছিলাম। সিঙ্গাপুর যাবো কইরা কিয়েরজানি এডা টেনিং নাগবো কইরা দুই লাখ টেহা খরচ কইরা ঢাহা তনে টেনিং করাই আনলাম। তিন চাইর লাখ টেহা খরচ কইরা সিঙ্গাপুর পাঠাইলাম। যাওনের আগে তারে বিয়া করাইলাম ধনি বাড়ি দেইখা। বৌডাও শৈষ্ঠবের। বিদেশ যাওনের সুম তার হশুরের তনে তিন লাখ টেহা নিছিলাম। হেইডার নিগাই আমি ধরা খাইলাম। পোলা অহন বৌয়ের পাগল। হউরিরে ছাড়া কিছুই বুঝে না। বউডা এহেবারে ঝাউরা। খালি কুবুদ্ধি দেয়। পালুইন্যা পোলা আমার। পোলার বউরে জমি নেইকা দিবার কয়। জমি নেইকা না দিলে ত পালুইন্যা পোলায় পাবো না। আমার জমি ওই এটু। এও যুদি তারে নেইকা দেই, আর হে বউ যে ঝাউমারি করবো না ক্যারা কবো। ওই বৌ অই পোলা আংগ ভাত দিব না। আমি বুইজা ফালাইছি। অহন আংগ খোজ খবর তারা নেয় না। বিদেশ তনে টেহা পাঠায় বউয়ের কাছে। হেইন্যা দিয়া তার বাপ মাও নিয়া তেলে ঝোলে খায়। হশুর বাইত্যে এডা বিল্ডিং দিছে। হেনুই থাহে। পরের পোলা কি আপন য়য়? য়াতে জমিন যা আছে তা বাগি দিয়া যা পাই তাই দিয়া কোন মোতে চইলা যাইতাছে। গেদি, তরে অবা ওশা ওশা দেহা যাইতাছে ক্যা, ব্যারাম য়ইছে নিহি?

ফালানি মামুর হুমকে শরম পাইল। কইল “মামু, আন্নে যেসুম আন্নের মায়ের পেটে আছিলাইন হেসুম আন্নের মাও এবা ওশা ওশা ধরছাল।” ফালানির মামু খুশি হইয়া কইল “গেদি, তাইলে আমি নানা হইতাছি নিহি!”

২/৬/২০২২

কচু,গেচু, হালুক

(আঞ্চলিক ভাষায় রচিত “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ বিশেষ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

বড়াবাইদপাড়া, সখিপুর, টাঙ্গাইল

ফালানিগ বাড়ির পচিম উত্তর কোনার দুই তিন ক্ষেত পরেই নছুগ বাড়ি। মেলা বোছর ধইরা নছুর বাতের ব্যারাম। য়াত পাওয়ের আঙ্গুলের গিড়ায় গিড়ায় বিষ। কালকাল কইরা বিষায়। গরীম মানুষ। ভাত খাওনের টেহা নাই। অসুধ কিনব কি দিয়া? কবিরাজের কাছ তনে হস্তা অসুদের বোতল আনে। হেইন্না খাইয়া কিছুই অয় না। ছাগল বেচা টেহা নইয়া একবার ডাক্তরের কাছে গেছাল। ডাকতরে ভরা টেহার পরীক্ষা কইরা টেহাই ফুরাই ফালাইছে। ভরা টেহার অসুদ লেখছে। অত টেহার অসুদ খাওনের মুরাদ নাই নছুর। অহন আলা ডাক্তুরি অসুদ খাওন বাদ দিছে। বিষের চোটে য়াত পাওয়ের আঙ্গুলগুনা কোরকামোরকা ধইরা গেছে গা। কাম করবো কিবায়? নছুর বৌ মাইনষের ধান নইয়া দিয়া কিছু কিছু পায়। তাই দিয়া কোন মোতে এক বেলা খাওন যায়। আরেক বেলা কচু ঘেচু খাইয়া থাকন নাগে। নছুর ডাইন ড্যাংগের য়াটুর একটু নিচের য়াড্ডির মইধ্যে গুল দিছে। লোহার প্যারেক ততা কইরা য়াড্ডির উপুর ছেক দিয়া ঘাও বানাই ফালাছে। হেই ঘাওয়ের মইধ্যে এডা গোল কাঠের বল বহাইয়া তেনা দিয়া বাইন্দা থোয়। মইধ্যে মইধ্যে তেনা খুইলা গুলডা ধুইয়া আবার বহাইয়া তেনা দিয়া বাইন্দা থয়। গুলের গোড়া দিয়া য়স পড়ে। নছু মোনে করে বিষ পইড়া যায়। আসলে শৈলের পানির নগে ভালা জিনিস বাইরই পড়ে। নছু হেডা বুঝে না। শরীর হুকাইয়া কাঠ য়ইগেছে।

নছুর আছাল চাইর মেয়া আছাল । পোলা নাই। বড় মেয়াডার ওঠকাটা আছাল জন্মের তিগাই। হেডারে মেলা টেহা খরচা কইরা বিয়া দিছাল। জামাই খালি টেহা নিত নছুর কাছ তনে। টেহা না দিলে ছেড়িডারে খালি বাইরাইত। হউরিয়েও তারে মেলা শাজা দিত। হেডার কাপরে আগুন ধইরা মইরা গেছে। কেউ কেউ কয় হউরিয়ে কাপরের মইধ্যে কেরাইশ তেল ছিটাই দিয়া মেছের কাঠি দিয়া আগুন ধরাইয়া মাইরা ফালাইছে। হেডার কোন বিচার আচার য়য় নাই। গরীম মাইনষে কি বিচার পায়?

নছুর তিন মেয়া বিলের পারমুহি তিগা আইতেছিল। ফালানি হইছ করলো

– এই ছেড়িরা, কুনু গেছিলি?

– আমরা বিলে গেছিলাম।

– মাছেরে গেছিলি?

– না, আবিজাবি আনবার গেছিলাম।

– এই খালইর মইধ্যে কী?

– হামুক, য়াসেরে খাওয়ানোর নিগা। আংগ দুডা য়াস আছে। হামুক ভাইংগা দিলে গেত গেতি খায়।

– এই খালুইর মইদ্যে কী?

– ইন্যা ঘেচু। বিলের পাড় তিগা তুইল্লা আনলাম।

– ইন্যা দিয়া কী করবি?

– এইন্যা হিদ্দ কইরা খামু। এইন্যা খাইয়াই আংগ বাচন নাগে। কচু ঘেচু না থাকলে আংগ মরন ছাড়া আর কোন উপায় আছাল না। জাউরা মাইনষে হুয়রের বাতান নইয়া আহে কচু খেচু খাওয়াবার নিগা। অহন কচু ঘেচুও পাওন যায় না।

– ওডার মইদ্যে কী?

– ইডার মইদ্যে? ইডার মইদ্যে হালুক। হালুক গাছের বেকই কামে নাগে। উপুরে ডোগার মইদ্যে ধলা ফুল ফুটছে ছোট বোইনডায় মাথায় বানছে। স্যারে হাবলা ফুলরে কয় শাপলা ফুল। হাবলার ফুল তিগা যে ফল ধরে হেডা অইল ঢেপ। ঢেপও আনছি, এই যে। আংগ মা ঢেপের বিচি হুকাইয়া ভাইজা ঢেপের খই বানায়। মোয়া বানায় কুশাইরা মিঠাই দিয়া। এই যে হাবলা গাছ তুইলা আনছি। মা ইন্যা দিয়া তরকারি য়ান্দিব। হাবলা গাছের গোরে এই হালুক ধরছিল। হালুক হিদ্দই বেশী মজা। ফালানি বু তুমি কয়ডা হালুক নেও। হিদ্দ কইরা খাই দেইখো।

৮/৬/২০২২

in-feed-ads:

chharpoka

ছাড়পোকা

Chharpoka / Bed Bug

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ছাড়পোকার সাথে শেষ সাক্ষাৎ কবে, কোন সনে হয়েছিলো তা মনে করতে পারছি না। আপনার মনে আছে? ছাড়পোকাকে আমরা বলতাম উরুশ। উরুশ দেখতে তেলাপোকার বাচ্চার মতো লালচে, পাখা নেই। লম্বায় ২ থেকে ৭ মিলিমিটার। এরা চোরা কিসিমের পোকা। অন্ধকারে চিপা-চোপার ভিতর লুকিয়ে থাকতো।

গ্রামে আমরা বেশিরভাগই কাঠের চৌকিতে বেতের পাটি বিছিয়ে শুতাম। চৌকির তক্তার চিপায় ও পাটির বুননের চিপায় এই চোরারা লুকিয়ে থাকতো। লেপ-তোষক ও কাথা-বালিশের ভাজের ভিতরেও এরা লুকিয়ে থাকতো। কাঠের চেয়ার-টেবিলের চিপায়ও এরা লুকিয়ে থাকতো। রাতেরবেলা চোরের মতো এরা বেরিয়ে আসতো। ঘারের নিচে, পিঠের কিনারে এরা আসতে করে কামড়ে দিয়ে রক্ত পান করতো। মানুষের রক্তই ছিল এদের প্রধান খাদ্য। সারাদিন পরিশ্রম করে মানুষ রাতে আরাম করে ঘুমাবার চেষ্টা করতো। এই সময় এই চোরারা কামড়ানো শুরু করতো। কামড় খেয়ে মানুষ উ আ করে এপাশ ওপাশ করে ছটফট করতে করতে ঘুমিয়ে পড়তো। জ্যৈষ্ঠ মাসের ঘরমের দিনে একবার এক আত্মীয় বাড়ি গিয়ে রাতে বিপদে পড়েছিলাম। তোষকের নিচ থেকে ছাড়পোকারা এসে ঘারের নিচে কামড়াতে লাগলো। উঠে মশারির নিচে খাটের খারা তক্তার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে বসে রইলাম। ওমা, চোরারা পিঠে কামড়াতে লাগলো। লাফ দিয়ে গিয়ে খাটের মাঝখানে বসে রইলাম। একটু বাচা গেলো। কিন্তু ঘুমের চোটে আর বসে থাকা গেলো না। এদিকে গরম ধরলো প্রচুর। হাতপাখাটা হাতে নিয়ে বাহিরবাড়িতে গিয়ে ধানের আটির উপর বসলাম। এবার শুরু হলো মশার আক্রমণ। একবার ডান ঠ্যাংগে থাপ্পড় মারি, একবার বাম ঠ্যাংগে থাপ্পড় মারি, একবার ডান গালে মারি, একবার বাম গালে মারি, মাঝে মাঝে ডলা মারি রক্তচোষা মশার উপর। পরে কিভাবে রাত কাটিয়েছিলাম তা মনে করতে পারছি না। সব কথা মনে থাকে না।

টাংগাইল গিয়ে হলে বসে সিনেমা দেখতাম। সিনেমা হলে রাত দিন ২৪ ঘন্টাই অন্ধকার থাকতো। তাই, সিনেমা হল ছিলো ছাড়পোকাদের অভয়ারণ্য। হলের কাঠের চেয়ারের ফাক ফোকও বেশি ছিলো। দর্শকরা মনোযোগ দিয়ে সিনেমা দেখতো। সেই সুযোগে চোরারা ইচ্ছামত কামড়াতো। সিনেমা শেষে পাছা চুলকাতে চুলকাতে বাড়ি ফিরতো।

একবার এক ভদ্রমহিলাকে বসতে দিয়েছিলাম বেতের চেয়ারে। গল্প করার সময় মহিলা একবার ডানে কাত হন, একবার বামে কাত হন, একবার ডান চোখ ছোট করেন, একবার বাম চোখ ছোট করেন এবং একবার ঠোঁট শীশ দেয়ার মতো করে গোল করেন। আমি বুঝতে পারলাম ছাড়পোকার প্রতিটা কামড়ের সাথে তার এই অঙ্গভঙ্গি চলছে। করার কিছু নাই। বাসায় ফিরে তিনি এর চুলকানিটা বুঝবেন।

ছাড়পোকা মারার দৃশ্যগুলো ছিলো অপুর্ব। বাশের খরকি দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে বিভিন্ন আসবাবপত্র ও বিছানাপত্রের চিপা থেকে ছাড়পোকা বের করে পিঠের উপর চাপ দিয়ে ঠাস করে ফাটিয়ে ছাড়পোকা মারা হতো। একটা দুর্গন্ধ বের হতো উরুশের পেট থেকে। ওটার নামই ছিলো উরুশের গন্ধ। শীতকালে সকাল ১০/১১ টার সময় সব চৌকি উঠানে খারা করে রৌদ্রে দেয়া হতো । গরম পেয়ে সব উরুশ চিপা থেকে বের হয়ে আসতো। কুপি বাতির আগুন দিয়ে ছেকা দিলে ফটাশ করে ফুটে উরুশ মারা যেতো। এর ধুয়ার সাথেও উরুশের গন্ধ বের হতো। উঠোনে পাটি বিছিয়ে বালিশ লেপ কাথা রৌদ্রে দেয়া হতো। গরম পেয়ে উরুশ উঠোনের উপর দিয়ে হাটা ধরতো। পায়ের বুইড়া আঙ্গুল দিয়ে চাপ দিয়ে দিয়ে ঠাসঠাসি উরুশ মারা হতো। বর্ষাকালে চৌকি পুকুরের পানিতে দুই তিন দিন ডুবিয়ে রাখলে উরুশ ফাফর হয়েই মারা যেতো।

গল্পটা লিখছিলাম প্রাইভেট কারে বসে লং জার্নিতে মোবাইল ফোনের নোটপ্যাডে। কিন্তু কবে থেকে দেশে ছাড়পোকা নেই সেটা মনে করতে পারছিলাম না। ড্রাইভারকে জিজ্ঞেস করলাম “আপনি কি বলতে পারবেন কবে থেকে দেশে ছাড়পোকা নেই?” তিনি উত্তর দিলেন “খুব সম্ভব এরশাদ সাবের আমল থেকে।” আপনার কাছে কি মনে হয়?

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ময়মনসিংহ- কচুয়া জার্নিতে

#memoryofsadequel

বইটি ঘরে বসে পেতে নিচের ছবির উপর ক্লিক করুন

স্মৃতির পাতা থেকে

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ডাউল পাতলা করে দিলাম

ডাউল পাতলা করে দিলাম

Daul Patla Kore Dilam

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

আমার একটা স্বপ্ন ছিলো। যখন হোস্টেল মেসের ম্যানেজার হবো তখন ডাউল পাতলা না করে ঘন করবো। বাবুর্চি ছিল আব্দুল হাই। নুরু মিয়া ছিলো মেসের কর্মচারী। মেডিকেল কলেজের হোস্টেলগুলোর প্রতিটি মেস ছাত্ররা পরিচালনা করতো। হোস্টেল-সুপার প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হাই ফকির স্যার মেসের খোজ-খবর নিতেন। মেসের সভাপতি হতেন সিনিয়র একজন ছাত্র। সেক্রেটারি হতেন কম সিনিয়র একজন ছাত্র। মেসের বোর্ডারদের মধ্য থেকে বাই-রোটেশনে এক মাসের জন্য ম্যানেজার হতো। মাস শেষে টাকা বাচিয়ে ফিস্ট নামে একটা ভোজ দেয়া হতো। সেই ভোজে হাই স্যারকে দাওয়াত দেয়া হতো। খাওয়ার সময় স্যার মজার মজার কথা বলতেন।

হোস্টেলে সপ্তাহে দুদিন দেশী মুরগির মাংস ও অন্যান্য দিন ছোট রুই মাছ রান্না করা হতো পানছে করে। তরকারি হিসাবে শুধু গোল আলু। পাতলা ডাউল দেয়া হতো। দুবেলার সারামাসের ডাইনিং চার্জ ছিল ১৫০ টাকা। স্বপ্ন দেখতাম “আমি যখন মেসের ম্যানেজার হবো তখন ডাউল ঘন করবো।” আমি ম্যানেজার হলাম। নিজে বাজারে যাই নুরু মিয়ার সাথে। মাইচ্ছা বাজারে বড় মুদির দোকানের সামনে গিয়ে নুরু মিয়া বলত “স্যার, আইছে।” দোকানি চেয়ারে বসতে দিত। চা দিত। স্যার শুনতে ভালোই লাগত। নুরু ফর্দ করে জিনিসপত্র নিত। আমি টাকা দিতাম। ১০ দিন পর নুরু মিয়া বলল “স্যার, ঘন ডাউল দেয়াতে বোর্ডাররা বেশি বেশি ভাত খাচ্ছে। আপনার ১৫ দিনের বাজেট ১০ দিনেই শেষ হয়ে গেছে। শেষের দিকে বিপদে পড়বেন।” আমি বিপদটা বুজতে পেরে ডাউল পাতলা করে দিলাম।

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ খ্রি.

ময়মনসিংহ

#memoryofsadequel

বইটি ঘরে বসে পেতে নিচের ছবির উপর ক্লিক করুন

বর্ণিল অতীত

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

Cesarean section

Cesarean section

সিজার অপারেশন ছাড়াই বাচ্চা হয় কেমনে?

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

শিক্ষার্থীদেরকে কোন কিছু শিখাতে গেলে তার বয়সের দিকে একটু খেয়াল রাখতে হয়। আমি একদিন এই রকম একটা সমস্যায় পড়েছিলাম। ঈদের ছুটিতে কয়েকজন বাচ্চা ছেলে ও মেয়ে একজায়গায় বসে গল্প করছিলো । আমি ভাবলাম এই সুযোগে তাদেরকে একটু ধর্মীয় জ্ঞান দেই। আমি মানব সৃষ্টির শুরুটা কেমন ছিল বুঝাতে গিয়ে আদম (আঃ) ও বিবি হাওয়া (আঃ) এর সৃষ্টির কাহিনী বললাম। বিবি হাওয়ার অনেক সন্তান হলো বললাম। এরপর বলতে চেয়েছিলাম “যেহেতু সেই সময় আদমের সন্তান ছাড়া আর কোন মানুষের সন্তান ছিলনা, তাই ভাই-বোনের মধ্যেই বিয়ে সম্পাদন হয়। তারপর বিয়ের মাধ্যমে সন্তান জন্ম হয় এবং এভাবে মানব সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে এখন এই অবস্থা হয়েছে।” এর আগেই এক শিশু আমার গল্পে বাধা দিয়ে বলল “তখন তো আদম ও হাওয়া ছাড়া আর কেউ ছিলনা। তাইলে সিজার অপারেশন করে দিলো কোন ডাক্তারে?

– সিজার ছাড়াই হইছে।

– সিজার ছাড়াই বাচ্চা হয়? আমরা এখানে সবাই সিজার অপারেশন হয়ে মায়ের পেট থেকে জন্মেছি। আদমের সন্তানরা সিজার ছাড়াই জন্মিল কেমনে?

আমি ভেবাচেকা খেয়ে গল্প বাদ দিয়ে অন্য ঘরে চলে গেলাম

বইটি ঘরে বসে পেতে নিচের ছবির উপর ক্লিক করুন

শৈশবের একাত্তর

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

machhere

Machhere

মাছেরে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক মাতৃভাষায় লেখা স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

গ্রামে আমরা কেউ ঘাস কাটতে গেলে তারে কইতাম ঘাসেরে গেছে। আর কেউ মাছ ধরতে গেলে কইতাম মাছেরে গেছে। চেংরাকালে আমি মাছেরে গেতাম। আংগ বাড়ি সখিপুরের পাহার অঞ্চলে। উনা মাসে পাহারে পানি থাকত না। তাই মাছও পাও যাইত না। ভর অঞ্চলে হারা বোছরই পানি থাকত। মাছও মারন গেত হারা বোছর। উনা মাসে পাহাইরারা য়াটে তিগা মাছ কিন্যা আইন্যা খাইত। ১৫/২০ মাইল দূরে তনে মাঝিরা মাছ কান্দে কইরা নিয়া আইত পাহারে য়াটের দিন অইলে। এতদুর আনতে আনতে মাছ কুইয়া বকবকা অইয়া গোন্দ উইঠা যাইত। হেইন্যা ফালাই দিয়ন নাগত। তাই উনা মাসে জিওল মাছ, মাগুর মাছ, কই মাছ, ছাইতান মাছ, টেংরা, বাতাসি, গুইটা বাজাইল ছাড়া আর কিছু পাও গেত না। পাহাইরা মাইনষে জিওল মাছ, মাগুর মাছ, কই মাছ, ছাইতান মাছ বুরকা- পাইল্যায় পানি দিয়া জিয়াইয়া য়াকত। কয়দিন ভইরা য়াইন্দা খাইত। পঁচা মাছ গুলাইনের পাতা দিয়া য়াইন্দা খাইলে গোন্দ করতো না। ইন্যা খাইয়া পেট ভাটভুট করলে গোন্দবাদাইলের পাতা দিয়া হাক য়াইন্দা খাইত। বাইস্যা মাসে পাহারের ধাইরা দিয়া য়াট বইত। হেনু ভৌরারা নানান জাতের মাছ নিয়াইত বেচপার নিগা। বেশিরভাগই ছিল নোরাফেকা মাছ। পদ্মা নদীর ইলসা মাছও এই সব য়াটে নিয়াইত নাইয়ারা।

আমি যেবা কইরা মাছ মারতাম হেইন্যা হুইন্যা আন্নের মোনয়ব আমি বোধকরি বালা ছাত্র আছিলাম না। আমি খুব বালা ছাত্র আছিলাম। হেসুমকার দিনে বাটাজোর বি এম হাই স্কুল অত্র অঞ্চলের মদ্যে সব তিগা বালা স্কুল আছাল। হেই স্কুল তিগা এস এস সি পাস করছি য়েকর্ড ভাইঙ্গা, মানে আগে যারা পাস করছাল তাগ চাইতে বেশি নম্বর পাইছিলাম, জামাল স্যার কইছেন। এহন পর্যায়ের নিহি কেউ আমার নাগালা বালা এজাল্ট করপায় নাই।

আমি স্কুল তিগা আইয়া চাইরডা খাইয়া মাছেরে গেতাম। পুশ মাস তিগা জৈস্টি মাস পর্যন্ত পাহারে পানি থাকত না। তাই মাছেরে যামু কুনু? পাহারে পানি আইলে পানির নগে মাছ আইত। মাছ আইলে মাছেরে গেতাম। জৈস্টি মাসের হেষের দিকে যেদিন বেশি বিস্টি অইত হেদিন চালার বেবাক পানি ঘোনা ঘুনিতে নাইমা বাইদ ভইরা গেত। বাইদের পানিতে জোরা ভইরা গেত। জোরা অইল বাইদের মইদ দিয়া চিকন খালের নাগালা। জোরার পানি গিয়া নামত চাপরাবিলে। চাপরা বিল পানি দিয়া ভইরা গেত। চাপরা বিল উনা মাসেও হুকাইত না। হেনুকার মাছ বেশি পানি পাইয়া উজাইতে উজাইতে আংগ বাইদে আইয়া পড়ত আন্ডা পারনের নিগা। চলাচলা পুটি, হেলাম পুটি, টেংরা, গোলসা, নোন্দা, হৈল, বোয়াল, পাত্যা, ছাইতান, আগ্যা, ইচা, নোন্দা, বাইং, এবা নানান জাতের মাছ পেট ভর্তি আন্ডা নই আইত পাহাইরা হোতের মইদ্যে আন্ডা পারনের নিগা। আমরা বিস্টিত ভিজা, ছাতি মাথায় দিয়া, কলাপাতা পাথায় দিয়া, নয় মাতইল মাথায় দিয়া মাছেরে গেতাম। ক্ষেতের বাতর যেনু পানি যাওনের নিগা কাইটা দিত হেডা কইত জোর। আমরা জোরের হোতের পানিতে জালি পাইত্যা খারই থাকতাম। পানির নিচে জালির নগে ঠ্যাং ঠেহাই য়াকতাম। জালিতে মাছ ঢুইকা যেসুম ঠ্যাংগের মদ্যে গুতা মারত হেসুম জালি উচা করতাম। জালি তিগা মাছ ধইরা খালুইর মদে য়াকতাম। খালুই ভইরা যাইত মাছে। হেই মাছের পেট বোজাই আন্ডা থাকত। হেই জোরের মইদ্যে য়াইতে ঠুই পাইত্যা য়াকতাম। সক্কালে বেলা ওঠনের সোম গিয়া ঠুই চাইতাম। ঠুইয়ের আগায় হেই মাছগুনা বাইজা থাকত। ক্ষেতের বাতরে ঠুই উল্টাইয়া মাছ বাইর করতাম। খালুই ভইরা যাইত। মাছের নগে চেকমেকা, কাকরা, কুইচ্যা, টেপা, হামুক, ইন্যাও বাজত। ইন্যা বাইচ্যা পানিত ঢেইল মাইরা ফালাই দিতাম। জৈস্টি মাসে জাংলাভর্তি জিংগা, পোড়ল অইত। বাড়ির পালানে ডাংগা অইত নশনশা। মা হেইন্যা দিয়া মাছ য়ান্না করতেন। ঢলের মাছ নতুন তরিতরকারি দিয়া এবা মজাই যে নাগ ত গো, খাইয়া পেট ডিগ ডিগ করত।

আষাঢ়, শাওন, ভাদ্দর মাসে খালি বিস্টি অইত। বাইদ বোজাই পানি থাকত। পাহারের পাগার, পুস্কুনি, কুয়া, জোরা পানিতে ভইরা থাকত। এইসুম মাছগুনা বাইদে ছড়াই ছিটাই থাকত। আর মাছের পোনা গুনা বড় অইতে থাকত। হেসুম খালি ঠুই পাইত্যা মাছ ধরতাম। ভাদ্দর মাসের হেষের দিকে যখন বিস্টি কইমা যাইত হেসুম বাইদের জমিতে আমন ধানের গোছা নাগাইত। আর আগে এই জমিগুনাতে ছিল আউশ ধান। বেশি ভাগই ছিল ভাতুরি ধান। ভাতুরি ধান কাটার পর ক্ষেতে য়াল বাইয়া কেঁদা বানাইহালত। ধানের গোছা দেওনের আগে মই দিয়া ক্ষেত হোমান করন নাগত। কেঁদা ক্ষেতে মই দেওনের সূম চংগের পাছের পানি হইরা গিয়া মাছ বাইরইয়া দাফ্রাইতে থাকত। এইন্যা ধইরা ধইরা আমরা খালই বোজাই করতাম। কোমরের পিছনে খালই ঝুলাইয়া বাইন্ধা নিতাম। দুই য়াত দিয়া ধরতাম, আর খালই মইদ্যে য়াকতাম। কই মাছ গুনা কেঁদার উপর কাতাইতে থাকত। কি মজাই যে নাগত! আমি, মজি ভাই, জিন্না ভাই, সিদ্দি ভাই, এবা অনেকেই দল ধইরা হেইন্যা ধরতাম। মজি ভাই মইরা গেছে গাড়ি এক্সিডেন্ট কইরা। পাহাইরা বাইদের মাটি খুব সারিল মাটি। কয়দিনেই ধানের গোছা মোটা য়ই গেত। ক্ষেতে হেসুম টলটলা পানি থাকত। হেই পানি দিয়া নানান জাতের মাছ দৌড়াদৌড়ি করত। দেহা গেত। আমরা ক্ষেতের বাতর কাইটা জোর বানাইয়া হেনু বাইনাতি পাইত্যা য়াকতাম। বাইনাতি বাঁশের বেতি দিয়া বুনাইয়া বানান নাগত। বাইনাতির সামন দিয়া ভাটার মাছ ঢোকার পথ আছে, আবার পিছন দিক দিয়া উজাইন্যা মাছ ঢোকার পথ আছে। মাছ ঢোকপার পায়, বাইরবার পায় না। দিনাপত্তি সকালে বাইনাতি চাওয়া য়ইত। বাইনাতি পাতার সুম মুখ কাঠের, নইলে বাঁশের কচি দিয়া বন্ধ কইরা দেও য়ইত। হেইডা খুইলা মাছ খালইর মদ্যে ঢাইল্যা দেও য়ইত। বেশি ভাগ বাইনাতিত গুত্তুম আর দারকিনা মাছ বাজত। ইন্যা পিয়াজ কাঁচা, মইচ, হৌষার তেল দিয়া ভাজা ভাজা কইরা খাইলে কিবা মজাই যে নাগত গ! যেনুকার বাতর মোটা আছাল, হেনুকার বাতর ভাঙ্গাও বড় বড় আছাল। হেনু বাইনাতি না পাইত্যা বড় বড় দোয়ারি পাতন নাগত। দোয়ারি বাইনাতির নাগালা দুইমুরা চোক্কা না। দোয়ারি অইল বাসকর মোত। ইন্যাও বাঁশের হলা দিয়া বুনাইয়া বানায়।

আশ্বিন মাসে বেশি বিস্টি অইত না। ধানের গোছাগুনাও মোটা মোটা অইত। হেইন্যার ভিতর দিয়া মাছ কপ কপ করত। য়ইদের তাপে ক্ষেতের পানি ততা অই গেত। মাছগুনা যেম্মুরা গাছের ছেওয়া পড়ত হেম্মুরা আই পড়ত। আমরা স্কুল তিগা আইয়া বশ্যি নিয়া মাছেরে গেতাম। বশ্যির আধার গাত্তাম খই, কুত্তাডেউয়ার আন্ডা, নয় চেরা দিয়া। চেরাগুনারে জির কিরমিরমির নাগালা দেহা গেত। উন্যারে গাছতলের ভিজা মাটি তিগা কোদাল দিয়া কোবাইয়া বাইর কইরা ছেনি দিয়া টুকরা টুকরা কইরা কাইট্যা নিতাম। বড় বড় পিপড়াগুনারে আমরা ডেউয়া কইতাম। কুত্তার মোত অইলদা য়োংগের ডেউয়ারে কইতাম কুত্তাডেউয়া। গজারি গাছের আগায় পাতা পেঁচাইয়া কুত্তাডেউয়ায় বাহা বানাইয়া আন্ডা পারত। হেই আন্ডা দিয়া বশ্যি হালাইলে বেশি মাছ ধরত। তরুই বাঁশ দিয়া বশ্যির ছিপ বানাইতাম। না পাইলে বৌরাবাঁশের কুইঞ্চা দিয়া ছিপ বানাইতাম। খালই বুনাইতাম তল্যা বাসের বেতি দিয়া। গোছা ক্ষেতে বশ্যি ফালাইলে বড় বড় আগ্যা মাছ ধরত। পানির মদ্যে বশ্যি নাচাইলে আগ্যা মাছ ফালাই ফালাই আইয়া বশ্যির আইংটায় বাইজা পড়ত। খোট্টা দিয়া টানে তুইল্যা হালাইতাম। কোন কোনডা ছুইট্টা গিয়া আড়া জোংগলে গিয়া পইরা হাটি পারতে থাকত। পাতা খুচখুচানির শব্দ হুইন্যা আগ্যা মাছের ঘারে ধইরা খালইর মইধ্যে ভইরা ফালাইতাম। মাছ যাতে তাজাতুজা থাহে হেইজন্য জগের মইদ্যে নয় বদনার মইদ্যে পানি দিয়া জিয়াই য়াকতাম। আগ্যা মাছ জাইরা আছে৷ বদনায় য়াকলে আগ্যা মাছ হাটি মাইরা বাইরই গেত দেইখা হিসার জগে য়াকতাম। শিক্ষিত মাইন্সে আগ্যা মাছরে রাগা মাছ কইত ফ্যারাংগি দেহাইয়া। ভৌরা মাইনষে আগ্যা মাছ খাইত না। তারা গুত্তুম মাছও খাইত না। বংশি-মান্দাইরা চুইচ্চা খাইত। তারা কাছিমও খাইত। কাছিম জোংগলেও থাকত। ইন্যা খুব বড় বড় ছিল। ইন্যারে কইত দুরা।

বাইদের পানির টান পরলে মাছগুনা পাগার, জোরায় গিয়া জরা অইত। আমরা হেইন্যারে খুইয়া, জালি, জাহি জাল, নয় ছিপজাল দিয়া মাইরা খাইতাম। বিষগোটা ছেইচ্ছা পাগারে ছিটাই দিলে মাছ গাবাই উঠতো। গাবাইন্যা মাছ ধইরা আরাম পায়ন গেত। পাগারের মাছ, জোরার মাছ ইন্যা পালা মাছ আছাল না। তাই যে কেউ ইন্যা মারতে পারত। আমরা চন্দের জোরা, আলম ঠাকুরের জোরা, ওহা বেপারির জোরা, খাজাগ জোরা, নাটুগ পাগার, কলুমুদ্দি তাওইগ পাগার তিগা ভরা মাছ মারছি। ঘাট চওনার জোরায় তনে ভরা ইচা মাছ মারছি খুইয়া দিয়া দোয়াইয়া। এনুকার পানি কইমা গেলে কেঁদার নিচে বাইং মাছ বই থাকত। কেঁদা পারাইলে পায়ের নিচে পিচলা নাগত বাইং মাছ। পায়ের নিচ দিয়া য়াত দিয়া কেঁদা হুইদ্যা বাইং মাছ টানে মেইল্যা মারতাম। য়াত দিয়া ধরতে গেলে বাইং মাছ পিচিল্যা যায় গা। একবার করছিলাম কি, এবা কইরা এডা মাছ কেদাসুদ্যা মেইল্যা মারছি, হেডা গিয়া পড়ল এডা ঝোপের ভিত্তরে। আমি ঝোপের ভিতর ফুস্কি দিয়া দেহি মেলা মাইনষের কংকাল, এহেবারে ঠেংগি দিয়া য়াকছে। ডরের চোটে তাত্তারি মাছ মারন বাদ দিয়া বাইত আই পরছি। য়াইতে হুইয়া হুইয়া বাবার নগে হেই কতা কইছি। বাবা কইল যে বংশি – মান্দাইরা কলেরা-বসন্ত হইয়া বেশি মানুষ মইরা গেলে চিতায় না পুইরা এবা ঝোপের মইদ্যে পালা দিয়া য়াকত। হেইন্যা মোনয় হুকাইয়া কংকাল অইছে।

কাতিমাসে বেশি মাছ মারন গেত। বাইদের ছোট ছোট গাতায় ভরা মাছ থাকত। টিনের থালি দিয়া হেই পানি হিচ্চা মাছ ধরতাম। এলকা পানি হিস্তে কষ্ট অইত। হেইজন্যে হাজা ধইরা হিচা মাছেরে গেতাম। পানি হিচা যে যেডি ধরাহারি হেডি ধইরা নিয়াইতাম। শাজাহান ঠিকমোত চোহে দেকত না। কেঁদার মইদ্যে খালি আতাপাতা করত। এই জন্যে যদি কইতাম “শাজাহান, হিচা মাছেরে যাবি নিহি?” শাজাহান কইত “ভাগে নিলে যামু।” আমি যে বোছর সেভেনে পড়ি, হেই ১৯৭৩ সোনে, হে ট্রাক্টরের চাকার নিচে পইরা মইরা গেছে। অহনো তার নিগা আমার পরণ পোড়ে। কেঁদার মইদ্যে মাছ ধরতে গেলে শইলে কেদা নাগত। যতই বালা কইরা গোসল করতাম কানের নতির পাছে কেদা নাইগাই থাকত ধলা অইয়া। খাবার বইলে পড়ে মা হেই কেঁদা আচল দিয়া মুইছা দিত।

কাতিমাসে পাহারের পানি হুকাই গেলে সব মাছ গিয়া চাপরাবিলে জরা অইত। মাছে বিল কপকপ করত। হুনিবার মোংগলবারে চাপরাবিলে মাছ মারনের নিগা মানুষ পিল্টা পরত। হেইডারে কইত বাওয়ার মাছ। বেশি মানুষ একবারে পানিত নামলে মাছ গাবাই উঠতো। তাই ধরাও পড়ত বেশি বেশি। এই জন্য সবাই বিলে মাছেরে যাওনের নিগা ডাহাডাহি পারত। অনেকে পরভাইত তিগাই শিংগা ফুয়াইত। শিংগার ফু হুইন্যা পাহাইরা মানুষ গুনা যার কাছে যেডা আছে হেডা নিয়া ভাইংগা চুইরা আইত চাপরা বিলে। এক নগে জাহইর দিয়া বিলে নামত নানান ধরনের জিনিস নিয়া। হেন্যা অইল মোন করুন চাবি, পলো, টেপারি, ফস্কা, কোচ, খুইয়া, জালি, ছিপজাল, ঝাকিজাল, চাকজাল আরও কত কী! ইলশা মাছ ছাড়া আর যত ধরনের মাছ আছে সব পাও গেত এই বিলে। খালইর চাইরমুরা পাটখরির মোঠা বাইন্দা দিত যাতে খালই পানিত ভাইসা থাহে। বড় বড় খালই ভইরা মাছ আইন্যা উঠানে ঢাইল্যা দিত। মেওপোলা মাইনষে হেইন্যা দাও বটি দিয়া কুইটা পাট খরিতে গাইতা দড়ি দিয়া ঝুলাইয়া অইদে হুকাইয়া হুটকি কইরা য়াকত নাইন্দার মইদ্যে। খাইত কয় মাস ধইরা। চাপরা বিলের আশে পাশের পাহাইরা গ্রামের মানুষ তিগা নিয়া হেম্মুরা হেই আংগারগাড়া পর্যন্ত মানুষ চাপরা বিলের মাছ মারতে আইত। হেই গেরামের নামগুনা আমি কইতাছি হুনুন – গবরচাহা, বৈলারপুর, য়ামুদপুর, বাঘেরবাড়ি, বেড়িখোলা, আন্দি, হুরিরচালা, চেল ধারা, নাইন্দা ভাংগা, গড়বাড়ি, বুড়িচালা, ইন্দাজানি, কাজিরামপুর, আদানি, ভাতগড়া,, ভুয়াইদ, পোড়াবাহা, ছিরিপুর, খুইংগারচালা, চটানপাড়া, ছোট চওনা, বড় চওনা, ঢনডইনা, হারাইসা, বাহার চালা, কাইলা, কৌচা, আড়াই পাড়া, ধলি, জামাল আটখুরা, দাইমা, ডাকাইতা, আরও ভরা গেরাম যেগ্নার কতা অহন মোনাইতাছে না। আমি হুনছি ভৌরারা চাপরা বিলে মাছেরে আইত না। আব ক্যা, তাগ কি মাছের অভাব আছে?

আংগ খালাগ বাড়ি মাইজ বাড়ি, আর বুগ বাড়ি অইল আমজানি। দুইডাই গাংগের পারে। বংশি নদীডারে আমরা গাং কই। আপারে আমরা বু ডাকতাম। জৈস্টি মাসের হেষের দিকে গাং পানিতে ভইরা যাইত। আমি বুগ বাইত গেলে, খালাগ বাইত গেলে বশ্যি নইয়া গাংগে মাছেরে গেতাম। আমজানির এবাদত ভাই, য়শি ভাই, হায়দার ভাই, আর মাইজ বাড়ির ইয়াছিন, ইসমাইল ভাইর নগে বশ্যি বাইতাম। ইয়াসিন ক্যান্সার অইয়া মইরা গেছে। তার নিগাও পরণ পোড়ে। আমার খালাত ভাই। বড় বড় নাইয়া বাইং, গুজা মাছ, হেলাম পুটি, বাইলা মাছ ধরত বশ্যিতে। ধরার আগে মাছে আধার ঠোকরাইত। হেসুম পাতাকাটি পানিতে নাচন পারত। তা দেইখা মোনের মইদ্যেও নাচন আইত। পাতাকাটি তল অইলে খোট্টা দিয়া মাছ তুইল্যা ফালাইতাম। বশ্যির মইদ্যে আটকাইয়া মাছ দাফরাইতে থাকত। কান্তা তিগা বশ্যি খুইলা মাছ খালইর মইদ্যে য়াকতাম। বুগ পাট ক্ষেতে চলাচলা পুটি মাছ দৌড় পাড়ত। হেইন্যা য়াত দিয়াই ধইরা ফালাইতাম। খালুই ভইরা যাইত পুটি মাছে। একটা আগ্যা মাছ ধরছিলাম দেইক্যা য়শি ভাই কয় “শালার পাহাইরায় আগ্যা মাছ ধরছে। আগ্যা মাছ মাইনষে খায়?” অশি ভাই দুলাভাইর চাচত ভাই। হেও মইরা গেছেগা। আগন পুষ মাসে গাংগের পানি কুইমা যাইত। কয়জনে মিল্যা গাংগে ঝার ফালাইত। হেই ঝারে বড় বড় বোয়াল মাছ, আইর মাছ, চিতল মাছ জরা অইত। ডল্যা জাল, নয় ঝাকি জাল, নয় চাক ঝাল দিয়া হেইন্যা ধরত। দুলাভাইরা কয়জনে ভাগে গাংগে ঝার ফালাইছাল। হেই ঝার তনে একটা মস্ত বড় পাংকাশ মাছ

ধরছাল। হেইডা কাইটা ভাগ কইরা নিছাল দুলাভাইরা। হেসুম বু আংগ বাইত্যে আছাল। দুলাভাই হেন তিগা এক ভাগা আংগ বাইত্যে নিয়াইছাল। আমি হেসুম দুল্যা আছিলাম। পাংকাশ মাছের নাম হেদিন হুনলাম। হায়রে মজা নাগছাল হেইডা!

আংগ নানিগ বাড়ি অইল ভরে, য়ৌয়া গেরামে। শিক্ষিত মাইনষে কয় রৌহা। হেনু গিয়াও মাছেরে গেছি। য়াইত কইরা আন্ধাইরের মইদ্যে বোরো ধান ক্ষেতের বাতর দিয়া আইটা যাওনের সোম হলক ধরাই যাইতাম। হলকের আলো দেইখা হৈল মাছ আইগাই আইত। কাছে আইয়া চাই থাকত। হেসুম ফস্কা দিয়া ঘাও মাইরা ধইরহালতাম। যাগ ফস্কা না থাকত তারা পাট কাটনের বাগি দিয়া কোপ মাইরা হৈলের ঘার কাইটাহালত। হৈল মাছ, সাইতান মাছ এক ঝাক পোনা নিয়া ঘুরাঘুরি করত। হেই পোনা খুইয়া দিয়া খেও দিয়া মারতাম। পোনামাছ ভাজি খুব বাসনা করত। এহন বুঝি উগ্না মারন ঠিক অয় নাই।

বাইস্যা মাসে আমি, ফজু ভাই, কাদে ভাই, নজু ডিংগি নাও নিয়া হুক্নি বিলের মইদ্যে গিয়া বশ্যি ফালাইতাম। বড় বড় ফইল্যা মাছ ধরত। নজু আমার তিগা এক বোছইরা ছোট আছাল। হে ছোট বালাই য়ক্ত আমাশা অইয়া মইরা গেছে। আশিন মাসে পানি নিটাল অইয়া গেত। চামারা ধান ক্ষেতের ভিতর হল্কা মাছ খাওয়া খাইত। হেসুম পানিত ছোট ছোট ঢেউ উঠত। আমি আর ভুলু ভাই ডিংগি নাও নিয়া যাইতাম মাছেরে। আমি পাছের গলুইয়ে বইয়া নগি দিয়া নাও খোজ দিতাম। ভুলু ভাই সামনের গলুইয়ে কোচ নইয়া টায় খারই থাকত। বিলাইর নাগালা ছপ্পন ধইরা। মাছে যেই য়া কইরা কান্তা নড়াইত অবাই ভুলু ভাই কোচ দিয়া ঘাও দিয়া ধইরা ফালাইত। আমি পৌকের নাগাল পাছের গলুইয়ে বই থাকতাম। ভিয়াইল আংগ ফুবুগ বাড়ি। হেনু গিয়াও এবা কইরা মাছ মারতাম গিয়াস ভাই, মতি ভাই, সূর্যভাই, সামসু ভাই, জিয়াবুল ভাই, চুন্নু ভাইগ নগে। চুন্নু ভাই, জিয়াবুল ভাই মইরা গেছে। ভিয়াইল আংগ কাক্কুগ বাড়িও। হায়দর ভাইর নগেও এবা কইরা মাছ ধরছি। ভৌরা মাইনষে আশিন মাসে পানির দারার মইদ্যে বড় বড় খরা পাইত্যা নোড়া ফেকা মাছ মারত। ফুবার নগে গিয়া ভরা নোড়া ফেকা মাছ কিন্যা আনছি নায় চইরা। কাতি মাসে তালতলাগ বোগল দিয়া যে বিলগুনা আছাল হেইগ্নার যত মাছ গোলাবাড়ির খাল দিয়া আমজানির গাংগে গিয়া নামত। আংগ গেরামের মাইনষে হেই খালে ছিপ জাল পাইত্যা হেই মাছ ধরত। খালের পাড়ে মাচাং বাইন্দা বইয়া বইয়া ছিপজাল বাইত। এহাকজোনে বাইক কান্দে নইয়া এক মোন দের মোন গোলাবাড়ি তিগা মারা পুটিমাছ আইন্যা উঠানে ঠেংগি দিয়া ঢালত। এত মাছ কিবা কইরা মারে ইডা দেকপার নিগা আমি আর জিন্না ভাই এক নগে গোলাবাড়ি গিয়া য়াইতে মাচাংগে হুইছিলাম। যাওনের সুম দেহি হাইল হিন্দুইরা খালে গুদারা নাই। অহন পাড় অমু কিবায়? ঘাটে কোন মানুষ জোনও আছাল না। জিন্না ভাই কইল “তুই অম্মুহি চা।” আমি চাইছি। ঘুইরা দেহি জিন্না ভাই এক য়াতে কাপর উচা কইরা ধইরা আরেক য়াত দিয়া হাতুর পাইরা খাল পাড় অইতাছে। দিস্ কুল না পাইয়া আমিও কাপড় খুইলা এক য়াতে উচা কইরা ধইরা হাতুর পাইরা পার অই গেলাম। য়াসুইন না জানি। হেসুম পোলাপান মানুষ আছিলাম। কেউ ত আর আংগ দেহে নাই। শরমের কি আছে? গোলাবাড়ি গিয়া দেহি হারা খাল ভর্তি খালি ছিপ জাল। ষাইট সত্তুরডা জাল পাতছে ছোট্ট এডা খালে, ঘোন ঘোন, লাইন দইরা। বেক্কেই য়াইত জাইগা জাল টানে। দিনে বেশি মাছ ওঠে না। য়াইতে নিটাল থাকে দেইখা মাছ খালে নামতে থাহে। দিনে বেক্কেই ঘুমায়। আমি আউস কইরা কয়ডা খেও দিছিলাম। অত বড় জাল আমি তুলবার পাই নাই। তাত্তারি মাচাংগে গুমাই পড়ি। হেষ আইতে ঘুম ভাইংগা যায় জারের চোটে। কাতি মাস অইলে কি অব, য়াইতে জার পড়ত। দেহি য়াত পাও টেল্কায় শান্নিক উইঠা গেছে গা। বিয়ান বেলা কোন মোতে কোকাইতে কোকাইতে বাইত আই পড়লাম। এন্তিগা এবা সর্দি নাগল গ, এক হপ্তা পর্যন্ত সর্দি জ্বর বাইছিল। জ্বর নিয়া কাতি মাসে বিয়ানবেলা য়ইদ তাপাইতে বালাই নাগত। এক নাক ডিবি ধইরা বন্ধ অই থাকত। নজ্জাবতি ফুলের বোটা ছিড়া নাকে হুরহুরি দিলে বাদা আইত। হাইচ্চ দিলে নাক বন্ধ খুইলা গেত। জোড়ে জোড়ে নাক ঝাইরা পরিস্কার করতাম। আমি গোলাবাড়ি একবারই গেছিলাম।

গোলাবাড়ির মাছ মারা নিয়া এডা মজার কতা কই। একবার এডা মেওপোলা য়োগী নিয়া আইল এক বেটা আংগ এলাকা তিগা। কাগজপাতি ঘাইটা দেকলাম সখিপুর আর টাঙ্গাইল তিগা ভরা টেহার পরীক্ষা করছে। খালি টেহাই গেছে। আমি কইলাম “ভরাইত পরীক্ষা করছুইন।” বেটাডায় য়াগ কইরা কই উঠলো “আন্নেরা সখিপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিং য়োগীগ কাছ তিগা টেহা নিয়নের নিগা গোলাবাড়ির খালের মতো জাল ফালাইছুন ক্লিনিক কইরা। গোলাবাড়ির খালে যেবা উজান ভাটি সব জালেই হোমানে মাছ বাজে, হেবা আন্নেগ বেবাক ক্লিনিকেও গেরামের মাইনষের টেহা বাজে। বেটা মাইনষে বিদেশে কষ্ট কইরা টেহা কামাই কইরা দেশে পাঠাইতাছে, আর হেই টেহা আন্নেরা জাল পাইত্যা ছাইব্বা তোলতাছুইন। য়োগী বালা অওনের নাম নাই। খালি টেহা নিতাছুইন। ” আমি কইলাম “য়োগী ডাকতরেরা বালা করবার পাবনা। বেটির জামাইরে দেশে নিয়াই পড়ুন। দেকবাইন এবাই বালা অই যাবো গা। “

জারের দিনে নানিগ বাড়ির চহের পানি হুকাই গেত। পাগারের পানি পানায় ঢাইকা গেত। আমি আর ফজু ভাই হেই পানিত তিগা খুইয়া দিয়া দোয়াইয়া মাছ মারতাম। ফজু ভাই পানার নিচ দিয়া খুইয়া ঠেইল্যা দিত। পানা হুইদ্যা খুইয়া উচা কইরা ধরত। আমি খাবলাইয়া পানা হরাইয়া দিতাম। হেই খুইয়ায় খইলসা মাছ, চাটা মাছ, কই, জিওল, মাগুর মাছ উঠত। চাটা মাছ খইলসা মাছের নাগালা দেখতে, তে একটু ছোট। আমি চাটারে খৈলসা কইছিলাম দেইকা ফজু ভাই কইল “এই শালার পাহাইরা, চাটা মাছ চিনে না!” তিন আংগুল দিয়া মাথা আর ঘার পেইচা ঠাসি মাইরা ধরন গাগত জিওল মাছেরে। কাতা দেয় দেইকা আমি ডরে জিওল মাছ ধরহাইতাম না। একদিন সায়স কইরা ধরবার নিছিলাম। অবাই একটা কাতা খাইলাম। হায়রে বিষান নইল! বিষের চোটে উজা নাফ পারন নইলাম। কানতে কানতে নানিগ বাইত গেলাম। মামানি কাতা দিওন্যা যাগায় চুনা নাগাই দিলে বিষ কিছুডা কমল। তারপর বিষ নামাইন্যা ঝারা দিল এবা কইরা

আউরা জাউরা বিষের নাম,

কোন কোন বিষের নাম।

অ বিষ ভাটি ছাইড়া যাও।

যুদি ভাটি ছাইরা উজান ধাও,

মা পদ্মার মাথা খাও।

অ বিষ ভাটি ছাইরা যাও।

ঝারা দেওনের ভরাক্ষোন পরে বিষ কোমলে ঘুমাই পড়ি। আমি আর কূন্দিন কাতা খাই নাই। কাতা খাইয়া এডা উপুকার অইছে। য়োগিরা যেসুম কয় “য়াত পাও এবা বিষায় জানি জিওল মাছে কাতা দিছে। ” হেসুম আমি বুঝি কিবা বিষায়।

শাওন ভাদ্দর মাসে আমজানি দুলাভাইগ পালানের পাট কাটার পরে কোমর তুরি পানি থাকত। হেই পানিত চেলা, মলা, ঢেলা, বাতাসি, তিতপুটি, এবা ভরা মাছ থাকত। দুলাভাইর নগে মুশুরি টাইনা হেইন্যা ধরতাম হিসার পাইল্যা বোজাই কইরা। হিসার পাইল্যা পানিত ভাইসা থাকত। মাছ ধইরা পাইল্যায় য়াকতাম।

চৈত বৈশাখ মাসে পানি হুকাই যাইত। নানিগ বোরো ক্ষেতে হিচা দিয়া পানি হিচপার নিগা গাড়া কইরা মান্দা বানাইত। হেই মান্দা হিচা মাছ ধরতাম। অইদের তাপিসে কাঠের নাও হুকাইয়া বেহা ধইরা গেত দেইখা ইন্যারে পুস্কুনির পানিতে ডুবাই য়াকত। নায়ের পাটাতনের নিচ দিয়া মাছ পলাই থাকত। আমরা দুই তিন জোনে মিল্যা ঝেংটা টান মাইরা নাও পারে উঠাই ফালাইয়া নাও তিগা মাছ ধরতাম। মামুরা পুস্কুনিতে ডল্যা জাল টাইনা বড় বড় বোয়াল মাছ ধরত। জালে মইদ্যে বাইজ্যা হেগ্নায় হাটিহুটি পারত। মামুগ কান্দের উপুর দিয়া নাফ দিয়া যাইত গা বড় বড় বোয়াল। পুস্কুনির পাড়ে খারইয়া আমরা তামসা দেখতাম।

মাছ মারনের এবা ভরা কতা লেহন যাবো। কিন্তু এত সোময় আমার নাই। আন্নেরা ত জানুইনই আমি একজোন ডাকতর মানুষ। ডাকতরে গ কি অত সোময় আছে? একটা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান আমি। দিনাপত্তি বিয়ানবেলা সারে আটটা তিগা বিকাল আড়াইডা পর্যন্ত হেনু কাম করন নাগে। বৈকাল চাইরডা তিগা য়াইত নয়ডা পর্যন্ত নিজের প্রাইভেট ল্যাবরেটরিতে কাম করি। হেনু গেরামে তিগা মেলা লোক আহে। তাগ নগেও কতা কওন নাগে। শুক্কুরবারে বন্ধ থাহে। হেদিন য়াবিজাবি কাম করি। চাইরডা মেডিকেল জার্নাল সম্পাদনা করন নাগে আমার। বই লেহি। কম্পিউটারের সফটওয়্যার বানাই বিক্রি করি। ছাদবাগান করি। অনলাইনে ক্লাস নেই। জুমে মিটিং করি। ইউটিউব ভিডিও বানাই। মেয়াগ নগে, নাতি নাত্নিগ নগে, বন্ধুগ নগে, শালা সুমুন্দি গ নগে ভিডিও কলে কতা কইতে য়য়। এবা আরবিলের মইদ্যে থাকি। আন্নেগ নগে মাছ মারা নিয়া আর লেহনের সোময় নাই। অহন চেম্বারে যামু, থাইগ্যা। দোয়া করুইন জানি।

১৩/৭/২০২১ খ্রি.

ময়মনসিংহ

দিন চারি ঠিকানা সখিপুরের ঢনঢইনা গেরামের বড়বাইদ পাড়ার তালুকদার বাড়ি।

থাহি ময়মনসিং

তালুকদার প্যাথলজি ল্যাবরেটরিতে আইলে দেহা অব।

বইটি ঘরে বসে পেতে নিচের ছবির উপর ক্লিক করুন

kanula

Kanula

কানুলা

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ইডা ভরাদিন আগের কতা। হেই উনাশি শালের কতা মোনয়। হেসুম আমি ইন্টারে পড়ি, নায়য় পাস করছি। ঠিক করলাম, ছোট ফুবুগ বাইত্যে যামু। আংগ দুইজন ফুবু আছাল। বড় ফুবুগ বাড়ি অইল ভিয়াইল গায়। ছোট ফুবুগ বাড়ি অইল কাশতলার হাতাই পাড়ায়। হেনুকার হামিদ ডাক্তর আছাল আংগ ছোট ফুবা। মুকুল, মজি ভাই অইল আংগ বাবার চাচত ভাইয়ের পোলা। হেই ইসাবে তারা আমার চাচত ভাই। দুইওজন মইরা গেছে। অগ আছাল একটা ফুবু। হেই ফুবুরও বাড়ি আছাল ভিয়াইল। পরে হেই ফুবা চৌরা পাহারে জমিন কিন্যা বাড়ি বানাইছাল। হেই বাইত্যেও আমি গেছিলাম কেলাস এইটে থাকতে। আগের দিনে আমরা ইস্টিবাড়ি যাওনের সোম হাজা নিয়া যাইতাম। মজি ভাই আমারে হাজা নইয়া গেছাল তার ফুবুগ বাইত। মোনে আছে হেন্তিগা ডেইল্টার য়াটে গেছিলাম। বাড়ির বোগলেই, কাছরা পাহারে। আংগ বাড়িডা খাটি পাহারে, ঢনডইনা গায়ে। চিনুইন? বড়বাইদ পাড়ার তালুকদার বাড়িগ পোলা আমি। দলু তালুকদারের ছোট পোলা। যাইগ্যা হে কতা, যে কতা কইতে চাইছিলাম, হেই কতা কই।

আমি মুকুলেরে হাজা নইয়া ছোট ফুবুগ বাড়ি রওনা দিলাম। গিরিমিন্টি করতে করতে বিয়াল অই গেছাল। দেওপড়া গেলে পরেই বেইল ডুইব্যা গেলোগা। হেদিন মোনয় আমাবইস্যার য়াইত আছাল। পুসুন্ডা গেলে পরে ঘুটঘুইটা আন্দাইর পইরা গেল। য়াস্তাঘাট কিছুই দেহা যাইতাছাল না। আন্দাজি ডাইন মুহি ঘুইরা য়াটতে থাকলাম। একসুম দেহি বাড়িঘরের কোন চিহ্ন নাই। খালি চক ক্ষেত। ইটা ক্ষেতের উপুর দিয়া য়াটন নইলাম। মুকুল কইল আমি ডরাইতাছি। আমি কইলাম ডরাইস না। লা হাওলা অয়ালা কুয়াতা পড়তে থাক। আমার মোনইল বেশি ডাইনে গেছিগা। অহন বাম মুহি যাওনের চেষ্টা করি। কিন্তু যেনেই যাই হেনেই বিল বাজে। বিল আর হেশয় না। য়াটতে য়াটতে অরান অইগেলাম। পানি তুলাস নাইগ্যা গেলো। খিদায়ও পেট পোড়া শুরু করলো। অহন দিশ কুল না পাইয়া উলটা পালটা য়াটা শুরু করলাম। এবা কইরা কয়েক ঘন্টা য়াটার পর মাইন্সের শব্দ পাইলাম এক বেটা মোনয় বদনা নিয়া ইটা ক্ষেতে ঘাটুদ্ধারে বাইরইছাল। আন্দাইরে মইদ্যে আমাগো দিসা পাইয়া কয় যে, এই ক্যারা? আংগ যাতে চোর মোনে না করে হেইজন্য তারা তারি কইয়া উঠি, আমরা ফুবুগ বাইত্যে যাবার চাইছিলাম। পথ য়ারাই ফালাইছি গো। ইডা কোন গাও? বেটাডা কইল ইডা অইল নারাইংগেল গাও। মুকুল কইয়া ফালাইল, নইন নারাইংগেলের আনো বুগ বাইত্যে যাই। আনো বু অইল মুকুলের ফুবাত বোইন। দুলাভাইর নাম ওস্তম মাস্টর। আমি হইচ করলাম, কাশতলা কি কাছেই? কইল যে, না দূর আছে। বীরবাসুন্ডা অইল মাগ নানির বাড়ি। আমি হইছ করলাম, বীরবাসুন্ডা কি কাছে? কইল, না। মুকুল কইল, আমি আর য়াটপার পামু না। নইন দুলাভাইগ বাইত্তেই যাই। তাই করলাম। বেটায় দুলাইগ বাড়ি দেহাই দিল। বাড়ির উঠানে গিয়া, ভাইগ্না নুর ইসলামরে ডাক দিলাম, নুর ইসলাম ঘুমাই পরছ? দুলাভাই কইয়া উঠলো, ক্যারা? আমরা পরিচয় দিলাম। আনো বু দোয়াত আতে নইয়া আংগ মুহের মুহি চাইয়া কইল, তরা কোন তিগা আইলি। বাড়িত তিগা পলাই আইছস না ত? বাব্বুর কাছে কই য়াইছস? মুকুলের দাদিরে নাতিরা বাব্বু কইত। এবা ভরা কতা। আমি কইলাম, ভরা কতা আছে। আগে তাততারি চাইরডা খাবার দেইন। খিদায় মইরা যাইতাছি। বু কইল, এবা দুপুর য়াইতে কী খাবার দিমু। বিয়ানা খাওনের নিগা আলু হিদ্দ আছে। আগে এইগনাই খাইয়া নি। আমি ধাতুবাত কইরা চাইরডা ভাত চরাই দেই। আমি কইলাম, বু আংগ অহন ভাত খাওন নাগব না। আলু খাইয়াই হুইয়া পড়মু।

নারাইংগেলে খুব আলু অয়। বাইল্যা মাটি ত। চিনামুরার মানুষ নিহি খালি আলু খাইয়া থাকছে। আংগ এক কাক্কু কইছে। ইডা মিছা কতাও অইতে পারে। কতার কতা। মস্কারি কইরা কইত, চিনামুরার ভদ্রলোক। বাইত্যে আলু খায়, বাইরে ফ্যারাঙ্গি করে। যাইজ্ঞ্যা, আমাগ কতা সব হুইন্যা দুলাভাই কইলেন “তোমগ কানুলায় ধরছাল। কানুলায় ধরলে পথ ভুলাই দিয়া অন্য পথ দিয়া ঘুরায়।”

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

১৪/৬/২০২১

train

Journey by Train

জার্নি বাই ট্রেইন

২০০৮ সন, জানুয়ারি মাস। আমার ছোট মেয়ে দীনাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করে মাইগ্রেশন ফর্মে প্রথম পছন্দ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ লিখে ময়মনসিংহ চলে এলাম। দিনাজপুর যাত্রার উদ্যেশ্যে দীনার মা স্বপ্না, দীনা ও আমি রওনা দিলাম। রত্না স্বপ্নার ইমিডিয়েট ছোট বোন। দীনার খালামনি। তার বাসা টাঙ্গইল। তার বাসায় রাত্রিযাপন করলাম। সকালে নানারকম রেসিপি দিয়ে নাস্তা করলাম। দীনা মেডিকেলে চাঞ্চ পাওয়াতে তারা সবাই খুশী।

বাসে দিনাজপুর যাওয়া অনেক কষ্টের ভেবে এবার ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। সিদ্ধান্তটা নেয়া হয়েছিল রত্নার পরামর্শেই। রত্না বলল “বাসে আট দশ ঘন্টা বসে থাকা খুব কষ্টের। ট্রেনে কি ফাইন কোন ঝাকি নাই। আরামে বসে যাওয়া যায়। নাস্তা করা যায়। বাথরুম করা যায়। কত সুবিধা!” আমরা টাঙ্গাগাইলা মানুষ। আগে এই জেলায় ট্রেন লাইন ছিল না। ট্রেন লাইন পেয়েছি যমুনা নদীর উপর সেতু হওয়ার পর। ট্রেনে উঠেছি মাত্র কয়েকবার। ট্রেনে হুরমুরি ওঠ-নামা করা আমার কাছে ঝামেলার মনে হতো। তাই আমি সাধারণত বাসেই জার্নি করতাম। খুব ছোট বেলায় দীনা ট্রেন জার্নি করেছে। সেটা তার মনে থাকার কথা না।

Read more: train

ট্রেনটা সকালে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে টাঙ্গইল হয়ে দিনাজপুর যাবে। এগারোটার দিকে টাঙ্গইল টাচ করবে। আমাদেরকে একটু আগেই স্টেশনে উপস্থিত হতে হবে টিকিট করার জন্য। স্বপ্না আমাকে ডাক্তার বলে ডাকে। সকাল থেকেই কিছুক্ষণ পরপর তার সতর্কবাণী আমাকে বিরক্ত করছিল। সে বারবার বলছিল “এই ডাক্তার, তুমি কিন্তু দীনার প্রতি খেয়াল রাখবে। ট্রেনের ঢুলানিতে তার বমি হতে পারে। আল্লাহ নাকরুক, বমি করতে করতে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে !” আবার বলে “এই ডাক্তার, অপরিচিত কারো কাছের কিছু কিন্তু খাবে না।” বারবার বলে “এই ডাক্তার, দীনাকে কিন্তু একা বাথরুমে পাঠাবে না। তুমি বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহ না করুক, কেউ যদি বাইর থেকে বাথরুমের দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়! মা আমার ফাপর হয়ে যাবে।” আমি দেখলাম নানারকম অজানা আতংকে স্বপ্না অস্থির। আমি তেমন তার কথায় পাত্তা দিচ্ছিলাম না। একটু একটু সশার টুকরা মুখে দিয়ে কচকচ করে চিবাচ্ছিলাম। একটা দুইটা বরই মুখে দিয়ে চিবাচ্ছি্লাম। রত্নার সাথে ঠাট্টা মস্করা করছি্লাম। রত্নাও সতর্ক কম করছে না। বলছে “এই দুলাভাই, দীনা বাথরুমে গেলে খেয়াল রাখবেন।” ইত্যাদি। ট্রেন আসার সময়ের এক ঘন্টা আগেই রত্না, দীনা, স্বপ্না ও আমি রিক্সা করে সাবালিয়া থেকে টাঙ্গইল রেল স্টেশনে গেলাম। টিকিট করলাম। দুই ঘন্টা বিলম্ব করে ট্রেন এলো। ততক্ষণ দীনার মা-খালাদের সতর্কবাণী শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে পড়ছি। ট্রেনে উঠে বসলাম।

কিছুদুর চলার পর একটু বোরিং লাগছিল। ইয়ার ফোনটা কানে লাগিয়ে মোবাইল থেকে মেহেদী হাসানের গজল শুনতে থাকলাম। দীনাও তার কানে ইয়ার ফোন লাগাল। সে কি শুনছিল তা আমি জানি না। গরম জামা গায়ে ছিল। দুপুরের পর থেকে গরম একটু বেশী মনে হচ্ছিল। আমার প্রশ্রাবের চাপ হল। দীনাকে সীটে রেখে টয়লেটে গেলাম। টয়লেটে ঢুকে ভাল করে ভিতর থেকে শিটকিনি লাগালাম। ট্রেন দুলছিল খটর খট খটর খট শব্দে। আমিও দুলছিলাম । প্রশ্রাব করার পঅর বের হওয়ার জন্য প্রস্ততি নিলাম। শিটকিনি খুললাম। দরজা ধাক্কা দিলাম। দরজা খুলছে না। খুলছে না কেন? বুঝতে পারলাম কেউ বাইরে থেকে শিটকিনি লাগিয়ে দিয়েছে। এইবার মনে পড়ল স্বপ্নার সতর্ক বাণীর কথা। তার ধারনা ছিল দীনা আটকা পড়তে পারে। দীনা ছোট্ট মেয়ে। সে আটকা পরতে পারে। কিন্তু দীনার বাবা যে আটকা পরতে পারে তা কারো মাথায় ছিল না। আমি একটু ধৈর্য ধরলাম। ভাবলাম আমার পর যার প্রশ্রাবের সিরিয়াল সেই বাইরের শিটকিনি খুলে যখন প্রবেশ করবে তখন তার পাশ দিয়ে আমি আসতে করে বের হয়ে যাব। কিন্তু পনের বিশ মিনিট অতিবাহিত হল কারো দেখা পেলাম না। এবার টেনশন শুরু হল। ঘামতে লাগলাম। ফুল সুয়েটার পরা ছিল। সুয়েটারের নিচে ঘাম চাপা পরে অসস্তি লাগা শুরু হল। টয়লেটটা ছিল পশ্চিম পাশে। বিকেলের পশ্চিমা রোদে টয়লেট গরম হতে লাগলো। আমার শরীরে জ্বালা ধরে গেল। চলন্ত ট্রেনের ঝাকুনিতে আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুলছি। কিন্তু এই দোলায় আরাম নেই, আছে কষ্ট। পকেট থেকে মোবাইল বের করে দীনাকে কল দিলাম। বিপত্তির কথা জানালাম। আরো ১০ মিনিট গেল। দীনা তার বাবাকে উদ্ধার করতে এলো না। আমি আবার কল দিলাম। দীনা বলল “তুমি কোন টয়লেটে গেছো, আমি তো খুঁজে পাচ্ছি না।”
-আমরা যে কম্পার্টমেন্টে ছিলাম সেইটার টয়লেটে।
-ওটা তো খালি।
-আমার মনে হয় তুমি উলটা দিকে খোঁজ করছো।
-তাহলে অন্য দিকে যাব?
-যাও।
অনেকক্ষণ দীনার কোন রেস্পন্স নাই।
আমি ঘেমে অস্থির।
-আব্বু, আমি কয়েকটা কম্পার্টমেন্ট খোঁজ করে দেখেছি কোন টয়লেট বাইরে থেকে বন্ধ না।
-তুমি বেশী দূর আর যেও না, সীট হারিয়ে ফেলবে।

দরজার কাছে এক সিকুরিটি ম্যান বসে ঘুমাচ্ছিল। দীনার মোবাইল অন ছিল। আমি শুনলাম দীনা বলছে “পুলিশ আংকেল, আমার আব্বু টয়লেটে গিয়ে আটকা পড়েছে। আংকেল, আংকেল…।” পুলিশ আংকেল কিছুই বুঝতে পারলেন না ঘুম থেকে জেগে উঠে। আমি পুলিশের সাথে দীনার ডায়লগ শুনে আরো চিন্তিত হয়ে পরলাম। ঘামতেই থাকলাম। মনে পরল ছুটির ঘন্টা সিনেমার কথা। স্কুল ছুটির পর দারোয়ান টয়লেট চেক না করেই এক ছাত্রকে টয়লেটে রেখে দরজা বন্ধ করে চলে গিয়েছিল। স্কুল কয়েকদিন ছুটি ছিল। ততদিনে ছেলেটির করুন মৃত্যু হয়। আমি মরব না। কিন্তু ঘেমে আমার বারটা বেজে যাবে। এক সময় কারো প্রশ্রাব পায়খানার চাপ এলে আমাকে উদ্ধার করবেই। কিন্তু যদি কারো চাপ না আসে! হায়, হায়! এক সময় দীনার ফোন এলো “আব্বু, আমি এখন আমার সীট চিনতে পারছি না।” আরেক টেনশন শুরু হল আমার।

অনেকক্ষণ আবার ফোন এল “আব্বু, আমি সীট খুঁজে পেয়েছি। চিন্তা করো না।”

এভাবে অবরুদ্ধ অবস্থায় আমার চল্লিশ পঞ্চাশ মিনিট কেটে গেলো। ট্রেন চলছে তার নিজস্ব গতিতে । আমি দুলছিলাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। এক সময় ছিটকিনি খুলে একজন লোক ভিতরে দাঁড়ানো আমাকে দেখতে পেল। বুঝতে পারলাম তার চাপ এসেছে। আমি আসতে করে তার পাশ দিয়ে বেরিয়ে পরলাম। সে ঢুকে পরল। কিন্তু জানল না আগের জনের ভাগ্যে কি দুর্গতি হয়েছিল। সীটে গিয়ে বাপবেটি এনিয়ে কথা বললাম। দীনা বলল “আমি তো দেখলাম ঐ টয়লেট থেকে একজন লোক বেরিয়ে এলো।” আমি আর তাকে  এনিয়ে বেশী জেরা করলাম না। ট্রেনের সিকুরিটিকে বিস্তারিত জানালাম। সতর্ক করে বললাম “আমি যেন আগামী সপ্তাহে কোন টয়লেটে দরজার বাইরে ছিটকিনি না দেখি। সবগুলো খুলে ফেলবেন।”এরপর ট্রেনে আমি মাত্র দুইএকবার ভ্রমন করেছি। অনেকদিন পর দীনা বলল “আম্মু সতর্ক করেছিল, ট্রেনে খোলা দরজার কাছে না যেতে। তাই আমি হয়ত ভাল করে টয়লেটের দরজা চেক করি নি।”

রাত আটটার দিকে দিনাজপুর পৌঁছলাম। অধ্যক্ষ স্যার আমাদের জন্য কলেজের ডর্মেটরির ভিআইপি রুমে থাকার ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন ।  দীনা ও আমি সেই রুমে অবস্থান করলাম। সকালের দিকে দীনা তার হোষ্টেল রুমে উঠল। তার রুমমেট পেখম তখন ক্লাসে ছিল। খবর পেয়ে রুমে এলো। দীনাকে জড়িয়ে ধরে বন্ধুত্ব প্রকাশ করল। আমার ভাল লাগলো।
১৯/২/২০১৮ খ্রি.