Category Archives: Writings

khola akasher niche

Khola Akasher Niiche Ghumalam

খোলা আকাশের নিচে ঘুমালাম

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

মুজদালিফায় অবস্থান করা হজ্জের একটি ওয়াজিব পর্ব। আমরা হজ্জ করেছিলাম আজ থেকে ১৯ বছর আগে, সেই ২০০৪ সনে। আমরা রাতের কোন এক সময় আরাফার ময়দান থেকে মুজদালিফায় গিয়ে পৌছলাম। আমাদের কাফেলায় ছিল খুব সম্ভব ৪৫ জন হাজী। খুব ক্লান্ত ছিলাম। খোলা আকাশের নিচে মাটিতে শুতে হয়। আমাদের পরনে ছিল সেলাইবিহীন মাত্র দু’টরো সাদা কাপড়। এক টুকরো লুঙ্গির মতো করে প্যাচ দিয়ে পরা। আরেক টুকরো চাদরের মতো করে শরীরে জড়িয়ে রাখা। আমার উঁচু ভুড়ির কিছুটা বের হয়ে থাকতো। ওখানে গিয়ে নিজেকে কিছুই মনে হতো না। কিসের ডাক্তার, কিসের গেজেটেড অফিসার, কিসের মেডিকেল শিক্ষক। আমি কিছুই না। সারাক্ষণ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত ও আখেরাত নিয়ে ভাবতাম।

আমরা চাদর বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম চিত হয়ে মুজদালিফার মাটিতে। এক সারিতে আমরা ছেলেরা শুলাম। আমাদের পায়ের দিকে কিছুটা দূরে শুলো মহিলারা। আমি আকাশের দিকে তাকালাম। আল্লাহর সৃষ্টি আকাশের তারকারাজি দেখতে লাগলাম। সৃষ্টি জকগতের রহস্য নিয়ে ভাবতে লাগলাম। শহরের বিল্ডিংয়ের ভিতর থাকতে থাকতে রাতের আকাশ দেখা ভুলেই গিয়েছিলাম। ছোট বেলা গরমের দিনে উঠোনে বিছানা করে বাবার সাথে শুয়ে আকাশের তারকা দেখতাম। গোনতে চেষ্টা করতাম। বাবা বলতেন আশমানের তারা গুনে কেউ শেষ করতে পারবে না। সেই ভাবে শুয়ে শুয়ে তারা দেখতে লাগলাম। ক্লান্ত ছিলাম। তবুও ঘুম আসছিল না। পায়ের দিকে চোখ গেল। দেখি আমার স্ত্রী স্বপ্না আমার দিকে টুলটুলি চেয়ে আছে। আমিও টেলটেলি চেয়ে রইলাম। মাথা নেড়ে নেড়ে ইশারায় জিগালাম “ঘুম আসে না?” স্বপ্নাও মাথা নেড়ে নেড়ে ইশারায় বললো “না, ঘুম আসে না।”

১৮ জানুয়ারি ২০২৩ খ্রি.

ময়মনসিংহ

#memoryofsadequel

tiner thali

টিনের থালি

টিনের থালি

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ টিনের থালাবাসন ব্যবহার করতো। গরীবরা ব্যবহার করতো পোড়ামাটির থালাবাসন। থালা, বাটি ও ডিস ছিলো টিনের তৈরি। সানকি, বাটি ও গামলা ছিলো পোড়ামাটির তৈরি। ধনি বাড়িতে অল্প কিছু পোরসেলিনের বা চিনামাটির থালাবাসন ছিলো। এগুলোকে করইর বাসনও বলা হয়। এগুলো সাধারণত সিকায় তুলে রাখা হতো। মেহমান এলে করইর থালায় খাবার পরিবেশন করা হতো। এগুলোর সাথে পিতলের চামচ ব্যবহার করা হতো।

টিনের থালির উপর দিয়ে সাদা রংগের প্রলেপ দেয়া থাকতো যাতে জং (মরিচা) না ধরে। থালি পুরান হলে ঘসায় ঘসায় রং উঠে গিয়ে জং ধরে যেতো। জং ধরলে থালি ছিদ্র হয়ে যেতো। আমরা বলতাম ছেন্দা। অন্য এলাকার মানুষ বলতো কানা। ছেন্দা থালি বড় চওনা হাটে নিয়ে মেকার দিয়ে ঝালাই করে আনা হতো। রং উঠে গেলে বলা হতো কালাই উইঠা গেছে। বারবার ঝালাই করলে খালিতে ভাত খাওয়ার অনপোযুক্ত হয়ে যেতো। এমন থালি দিয়ে ভৌরা (নিচু এলাকার) মানুষ নায়ের (নৌকার) পানি হিচতো (সেচতো)। মেয়েরা ছাই ফেলতো বা ছাই রেখে জিয়লমাছ (শিং মাছ) কাটতো। পাহাইড়া (পাহাড় এলাকার) মানুষ মান্দা হিচতো।

ফকিররা (ভিক্ষুক) ভিক্ষার থলেতে একটা টিনের থালি রাখতো। কেউ খাবার দিলে এই টিনের থালিতে নিয়ে খেতো। ভিক্ষা নিতো আইচায় করে। আইচার ভিক্ষা থলের চাউলের সাথে মিশিয়ে নিতো।

এখন গ্রামে বা শহরে টিনের থালি চোখে পড়ে না। আমি কয়েকমাস আগে ময়মনসিংহের স্বদেশী বাজারে কাঁচের বৈয়ম কিনতে গিয়ে এই থালির দেখা পাই। সখ করে একটা থালি কিনে আনি। আজ ভাগনে ফারহানকে দেখিয়ে বলি “এমন টিনের থালিতে আগের দিনে বেশী ভাগ মানুষ ভাত খেতো। এখন এগুলো দেখা যায় না।” ফারহান বললো “আমি যেনো কোথায় দেখেছি। মনে পড়েছে, ভিক্ষুকের হাতে দেখেছি।” শুনে সবাই হা, হা করে হেসে দিলো। আমি এরপর আমার এই স্মৃতি কথাটি লিখে ফেললাম।

ময়মনসিংহ

২৩ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি.

#memoryofsadequel

haque-sir-fnac

Introduced by Haque Sir

হক স্যারের কারনে পরিচিতি পেলাম

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

সময়টা খুব সম্ভব ১৯৯৭ বা ৯৮ সন। ডাঃ ফজলুল হক পাঠান ভাই ময়মনসিংহ বিএমএ-র জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহের সব জেলার ডাক্তারদের নিয়ে একটা বিরাট সম্মেলন করেছিলেন। সেই সম্মেলনে আমি একটা সাইন্টিফিক পেপার প্রেযেন্ট করেছিলাম। প্যাথলজির প্রফেসর, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, সাবেক অধ্যক্ষ, সাবেক বিএমএ প্রেসিডেন্ট ডাঃ আব্দুল হক স্যার সেদিন অন্যতম লিজেন্ড হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। তিনি তার বকৃতায় সম্মেলন আয়োজকদের ভুয়সী প্রশংসা কনেন। বিশেষ করে সাইন্টিফিক পর্বের প্রতি বেশ গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন “সাইন্টিফিক প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে আমরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়গুলো জানতে পারি। যেগুলো এখনো বইয়ে আসেনি। আমার এক ছাত্র ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার সুন্দর করে প্রেজেন্ট করেছে। সে প্যাথলজি বিভাগের হিস্টোপ্যাথলজির পাশাপাশি সাইটোপ্যাথলজি বিশেষ করে এফ এন এ সি ও পেপস স্মিয়ার করা হচ্ছে তা সুন্দর করে প্রেজেন্ট করেছে। এফ এন এ সি পরীক্ষার কথা তো আমার জানাই ছিলো না। আমার এক আত্মীয় কয়েকদিন আগে হাসপাতালে এসে ভর্তি হয়। আমি দেখে অনুমান করি তার ক্যান্সার হয়েছে। বায়োপসি পরীক্ষা করতে হবে ডায়াগনোসিস করার জন্য। কয়েকদিন সময় লাগবে। বিকেলে আমার বাসায় ওরা খবর নিয়ে এলো যে পরীক্ষায় ক্যান্সার ধরা পড়েছে। আমি বললাম যে আমাদের এখানে বায়োপসি পরীক্ষা করতে ৩ থেকে ১০ দিন সময় লাগে। আজকেই কিভাবে পরীক্ষা করলো। ওরা বললো, দুই ঘন্টার মধ্যেই রিপোর্ট দিয়েছেন। আমি বললাম যে রিপোর্ট নিয়ে আসো। রিপোর্টে দেখি ঠিকই ক্যান্সার ডায়াগনোসিস করেছেন আমারই ছাত্র, সম্প্রতি পিজি থেকে এম ফিল পাস করে এসেছেন ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার। তারপর এনিয়ে প্রফেসর মীর্জা হামিদুল হকের সাথে কথা বললাম। জানতে পারলাম এফ এন এ সি করে এখানে দ্রুতই ক্যান্সার ডায়াগনোসিস করা যাচ্ছে……।”

স্যারের বকৃতা শুনে অন্যান্য জেলার চিকিৎসকগণও জেনে গেলেন এফ এন এ সি ও পেপ্স স্মিয়ার পরীক্ষার গুরুত্ব এবং আমিও পরিচিতি পেয়ে গেলাম বৃহত্তর ময়মনসিংহের সকল ডাক্তারদের কাছে। প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ হিসাবে ডাক্তারদের সাথে পরিচিতি পেলে যে কি লাভ তা ডাক্তারগণ জানেন। কাজেই ময়মনসিংহে ডাক্তারদের মাঝে পরিচিতি পেতে আমার সরাসরি শিক্ষক প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হক স্যারের বিরাট অবদান আছে। আমি স্যারকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি।

১০ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি

ময়মনসিংহ

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ম-১৭ ব্যাচ (১৯৮৫ এম বি এম এস)

সাবেক বিভাগীয় প্রধান, প্যাথলজি

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

#memoryofsadequel

Haque-sir-er-basay

Haque Sir-er Basay

হক স্যারের বাসায় গিয়েছিলাম

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হক স্যার তখন অবসর জীবন যাপন করছিলেন। ময়মনসিংহের চরপাড়ার লাশকাটা ঘরের বিপরীত দিকের রাস্তায় তিনি বাড়ি করে থাকতেন। ১৯৯৭ সনের পরে হবে। বাংলাদেশ জার্নাল অব প্যাথলজি-তে আমার প্রথম দুটি সাইন্টিফিক রিসার্চ আর্টিকেল প্রকাশিত হলো। এগুলো ছিলো ঢাকার শাহবাগে ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্রাজুয়েট মেডিসিন এন্ড রিসার্চ (আইপিজিএম আর)-এ এম ফিল কোর্স করার সময় আমার থিসিস। পাকস্থলীর ক্যান্সারের সাথে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি জীবাণুর সম্পর্কে গবেষণা করছিলাম। আমার গবেষণার ফলাফল জার্নালে প্রকাশ পাওয়ায় খুব আনন্দিত ছিলাম। এই আনন্দ সবার সাথে শেয়ার করা যায় না। সবাই এর মর্জাদা বুঝে না। ঢাকার হোটেল শেরাটনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটি অব প্যাথলজিস্ট-এর সম্মেলনে জার্নাল বিতরণ করা হয় নিবন্ধিত মেম্বারদের মাঝে। আমি আমার প্রিয় শিক্ষক প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হক স্যারকে প্রদান করার জন্য অতিরিক্ত দুটি কপি সংগ্রহ করেছিলাম। হক স্যার ছিলেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যক্ষ। তিনি ময়মনসিংহ বিএমএ-এর এক সময় প্রেসিডেন্টও ছিলেন।

আমি তখন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের প্যাথলজি বিভাগের লেকচারার ছিলাম। অফিস থেকে বের হয়ে সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে জার্নাল দুটি হাতে নিয়ে স্যারের বাসার দিকে গেলাম। গেইটে করা নাড়ায় স্যার নিজেই দরজা খুলে দিলেন। আসেন আসেন বলে স্যার খুব খুশি হয়ে আমাকে তার বেড রুমে নিয়ে গিয়ে বাসালেন। সিম্পল একটা খাটে সাধারণ বিছানা পাতা। মশারীর দুই কোণা বাঁধা আছে। অন্য দুই কোণা বিছানার অর্ধেক পর্যন্ত কভার করে আছে। বাসায় অন্য কেউ আছে বলে মনে হলো না। স্যারের স্ত্রী ঢাকার বাসায় থাকেন। মেয়েরাও ঢাকায় থাকে। বাসার পরিবেশ দেখে মনে হলো আমি সেই হাজার বছর আগের দিনের কোন এক দার্শনিকের কাছে এসেছি। স্যার জার্নাল দুটি হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখলেন। আমি আমার আর্টিকেল বের করে দিয়ে বললাম “স্যার, এ দুটি আমার প্রথম আর্টিকেল।” স্যার আমাকে

অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দিত চোখে পড়া শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পড়ার পর বললেন “খুব ভালো হয়েছে। তবে বেশ কিছু গ্রামার ভুল আছে।” আমি বললাম

– স্যার গতকাল আমাদের সোসাইটির বার্ষিক সম্মেলন ছিলো। সেখানে সবাইকে এই জার্নাল দিয়েছে। আমি আপনার জন্য দুটি নিয়ে এসেছি।

– খুব ভালো করেছেন। সাদেক, কেউ এখন দায়িত্ব নিয়ে খোঁজ খবর নেয় না। অথচ, দেখেন, আমি এই সোসাইটির আজীবন সদস্য। একটা চিঠিও পাই না। আপনি আমার কথা মনে করে জার্নাল নিয়ে এসেছেন, এজন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি আরও পেলে আমার জন্য নিয়ে আসবেন। নতুন কিছু জানতে হলে জার্নাল পড়তে হবে। এই যে হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি জীবাণু যে স্টোমাকে থাকে কজনে জানেন? আপনি স্টোমাক থেকে জীবাণু আইসোলেট করেছেন এবং তার সাথে যে ক্যান্সারের এসোসিয়েশন আছে তার প্রমাণও করেছেন।

স্যার ছোট বড় সবাইকে আপনি করে বলতেন। আমি স্যারের ছাত্র হলেও তিনি আমাকে আপনি করে বলতেন। অনেক্ক্ষণ তিনি অনেক স্মৃতিচারণ করে কথা বললেন। বিশেষকরে তিনি যখন ইংল্যান্ডে পোস্ট গ্রাজুয়েট কোর্সে ছিলেন সেই সময়ের স্মৃতি কথা বলছিলেন। আমার ক্লাস আছে বলে উঠতে চাইলে স্যার বললেন “সাদেক, একটু বসেন। চা দিচ্ছি” বলে দ্রুত ভিতরের রুমে গিয়ে নিজেই চা বানিয়ে আমার জন্য নিয়ে এলেন।” আমি বিনয়ের সাথে বললাম “স্যার, আপনি কষ্ট করে চা বানালেন!” স্যার, হালকা হেসে বলেলেন “এই সামান্য এক কাপ চা, আর কি, খান। এভাবেই কেটে যাচ্ছে। “

৯ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি

ময়মনসিংহ

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ম-১৭ ব্যাচ

সাবেক বিভাগীয় প্রধান

প্যাথলজি বিভাগ

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ

#memoryofsadequel

baba

আমার বাবা

(স্মৃতিকথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

আমার বাবার নাম দলিল উদ্দিন তালুকদার। জন্মগ্রহণ করেন কালিহাতির ভিয়াইল গ্রামের দক্ষিণ পাড়ায় তালুকদার বাড়ি। আমার দাদা ছিলেন মোকছেদ আলী তালুকদার। বাবার ডাক নাম ছিল দলু । বাবার শরীরে ইমুনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম ছিল। তাই, ঘনঘন অসুস্থ্য হতেন । অসুস্থ থাকার কারনে বাবা পরিশ্রমের কাজ করতে পারতেন না। একজন কৃষক হয়েও কৃষিকাজ তেমন করতেন না। যার দরুন অনেক জমি জমা থাকলেও তিনি তেমন সচ্ছল ছিলেন না।

বাবা বেশিরভাগ সময়ই ঘুরে বেড়াতেন। লাইলি বুবু ও আকবর ভাইর জন্মের পরই দাদা বাবাকে পাঠিয়ে দেন পাহাড় অঞ্চলের জমি দখল করে আবাদ করার জন্য। বাবা ঢনডনিয়া গ্রামের বড়বাইদ পাড়া এসে বাড়ি করেন। মা আমাকে গর্ভে করে নিয়ে আসেন আমাদের নতুন বাড়িতে। তাই, আমার জন্ম হয়েছে এই গ্রামে আনুমানিক ১৯৫৮ সনে । তখন এটা কালিহাতি থানার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এখন এটা পড়েছে সখিপুর উপজেলার অধীন।

বাবাকে দেখেছি ঘনঘন ভিয়াইল যেতে। জিজ্ঞেস করলে বলতেন “তোমার দাদাগো বাড়ি গেছিলাম। তোমার ফুফুগ বাড়ি গেছিলাম।” অল্প বয়সেই আমার দাদী অন্ধ হয়ে যান। আমার দাদার স্বভাবও উড়াটে ধরনের ছিলো। আমার বড় ফুফু খুব বুদ্ধিমতি ছিলেন। অল্প বয়সেই ভাই বোনদের দায়িত্ব নিতে হয় তাকে। আমার বাবা-চাচার একজন নির্ভরযোগ্য বোন ছিলেন আমার বড় ফুফু। তাই তিনি ফুফুর কাছে চলে যেতেন। ফুফুর বিয়েও হয়েছিল ভিয়াইল গ্রামের উত্তর পাড়ার তালুকদার বাড়ি। মফিজ উদ্দিন তালুকদার ছিলেন আমার ফুফা।

বাবা জমিতে ফসল তেমন ফলাতে পারতেন না। তাই, তালুকের জমি বিক্রি করে বাজার সদায় করে খেতেন। বাবার কাছে আমাদের কিছু চাইতে হয়নি। আমাদের যার যখন যা কিছু লাগতো বাবা জমি বেচা টাকা দিয়ে কিনে আনতেন।

বাবা খুব পাড়া পেড়াতেন। খেয়ে কুলি ফেলতেন নওপাড়া গিয়ে। জিতাস্বরি পাড়ার হাতু কাক্কু, দলু তাঐ ও বুর্জু কাক্কুর সাথে বাবার খুব খাতির ছিলো। তারাও বাবার মতো অলস ছিলেন। তাদের সাথেই বেশি সময় কাটাতেন। বর্ষাকালের অর্ধেক সময় নৌকায় কাটাতেন। ভিয়াইলের মধ্য পাড়ার তোমজ বেপারির ছেলে হাসান বেপারি আমাদের দাদা হতেন। আমাদের কাছে হাছেন দাদা নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি তায়েজ উদ্দিন কাক্কুর বাবা। হাছেন দাদা আমাদের খুব আদর করতেন। আমাদের জন্য জিলাপি নিয়ে আসতেন। কিন্তু আমরা তাকে পছন্দ করতাম না। কারন হলো, তিনি বাবাকে আমাদের থেকে নিয়ে যেতেন তার সাথে ব্যবসা করতে। তিনি পাট ও কাঠের ব্যবসা করতেন। তার বিরাট নাও (নৌকা) ছিলো। নাওয়ের সামনের অংশ প্রসস্থ ছিলো। এই অংশে মালামাল বোঝাই করা হতো। পিছনের অংশে ছই ছিল। এই ছইয়ের নিচে বসে হাছেন দাদা, বাবা ও হাছেন দাদার বড় ছেলে কদ্দুস কাক্কু গল্প করতে করতে হুক্কা খেতেন। আমি মাঝে মাঝে এই নায়ে বাবার সাথে ছোট চওনা ঘাট থেকে উঠে ভিয়াইল গিয়েছি। ছোট চওনা ঘাট থেকে গজারি কাঠের গুড়ি অথবা পাট কিনে নায়ে ভরে নারায়ণগঞ্জ নিয়ে বিক্রি করার উদ্যেশ্যে রওনা দিতেন। চারজন মাল্লায় এই নাও বেয়ে নিতেন। সামনে দুই পাশে দুইজন, পিছনে দুইপাশে দুইজন মাল্লা লগি দিয়ে খোজ দিতেন এক সাথে। ভারী নাও ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতো। বাবা অথবা কদ্দুস কাক্কু পিছনের গলুইয়ে বসে হাল ধরে থাকতেন। আমি বাবার টোনায় বসে বাবার সাথে হাল ধরে মজা পেতাম। খাল ও নদী দিয়ে যাওয়ার সময় মাল্লারা পাড় দিয়ে হেটে হেটে গুন টেনে যেতেন। গুনের কাঠি কাঁধে নিয়ে বাঁকা হয়ে আঁকা বাঁকা শুকনো ও কাঁদা পথে হাটতেন মাল্লারা। তাদের কষ্টের কথা আমি এখনো ভুলতে পারিনি। পথে রাত হয়ে যেতো। হাছেন দাদা মাটির চৌকায় রান্না করতেন। ভাতে বেগুন সিদ্ধ দিয়ে খাস (সরিষা) তেল দিয়ে ভর্তা করতেন। চামারা চাউলের গরম ভাত দিয়ে খেতে কি যে স্বাদ পেতাম! খেয়ে নায়ের গুড়ায় বসে পানিতে প্রশ্রাব করে ছইয়ের নিচে বেতের পাটিতে ঘুমিয়ে পড়তাম। ঘুমের ভিতরেই বাবা আমাকে কোলে নিয়ে নাও থেকে নামিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতেন।

বাবা যখন নায়ে যেতেন তখন একটানা ১০-১৫ দিন কাটিয়ে আসতেন। ঐসময় আমার মন খারাপ থাকতো। আমি হাছেন দাদার প্রতি বিরক্ত থাকতাম। মাও বিরক্ত হতেন হাছেন দাদাকে দেখে। তিনি বলতেন “অইজে আবার আইছে, তোমার বাবাকে নিয়ে যেতে।” বড় হয়ে আমার হাছেন দাদার প্রতি অভিযোগ ছিলনা। আমি বুঝতে পেরেছি আয় রোজগার করতে বাড়ি ছেড়ে থাকতে হয় অনেকদিন। হাছেন দাদাই ছিলেন বাবার সবচেয়ে ভালো বন্ধু।

বাবাকে বিদায় দেয়ার জন্য মা অনেকদূর পিছে পিছে যেতেন। আমিও মার সাথে গিয়েছি। আমার চোখের পানি গাল বেয়ে পড়তো। বাবা গামছা দিয়ে মুছে দিতেন। কোলে নিয়ে আদর করে বলতেন “বাজান, কাইন্দো না, কয়দিন পরই আই পরমু।” মার কোলে আমাকে বসিয়ে দিয়ে বাবা বুইদ্দাচালার সরু পদ দিয়ে আড়াল হয়ে যেতেন। আমি নিশ্চুপ দাড়িয়ে থাকতাম। চারদিক নিরব হয়ে যেতো। সবুজ গাছের আড়াল থেকে থেকে-থেকে ঘুঘু ডেকে উঠতো। আমার মনে হতো বাবা চলে গেলেন বলেই ঘুঘুরা কাঁদছে। অন্যদিন অত ডাক শুনিনি।

আমার কপালের এক পাশে, গাল ও চোখ সহ প্রতিবছর শীতকালে ব্যাথা করতো। তীব্র ব্যাথা। যন্ত্রনায় কান্না করতাম মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে, কপাল দু’হাতে ধরে। এটাকে বলা হতো আধকপালে মাথার বিষ। আমার কষ্টে বাবাও কষ্ট পেতেন। বাবা বড় চওনা ও কচুয়া হাট থেকে বড়ি এনে দিতেন। পানি দিয়ে খেতাম। কোন কাজ হয়নি। একজন বললেন যে, ভুয়াইদের এক মান্দাই মহিলা কবিরাজ আধকপালে মাথার বিষের চিকিৎসা জানেন। বাবা আমাকে কাঁধে নিয়ে ভুয়াইদ গেলেন। মহিলা বিধান দিলেন “সকালে উদিয়মান সূর্যের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মাটিতে সেজদা দিতে হবে কিছুক্ষণ করে কয়েকদিন।” তাতে কোন কাজ হলো না। ছোট দাদা জয়নাল আবেদীন তালুকদার শুনে বললেন ” মুসলমানের পোলা হয়ে হিন্দু কবিরাজের কথায় সূর্যপূজা করতাছ? বাড়ির পাশেই কবিরাজ থাকতে গেছস ভুয়াইদ! আমিই তো আধকপালে বিষের চিকিৎসা জানি।” এই বলে তিনি গাছান্ত বেটে বটিকা বানিয়ে দিলেন। আমি প্রতিদিন সকালে বিষ ওঠার শুরুতেই ঐ বটিকা খেতাম। ওটা এমন ঝাল লাগতো যে বিষের যন্ত্রনার চেয়ে ঝালের তীব্রতাই বেশি ছিল। দাদার ঔষধ বাদ দিলাম। বাবা খবর পেলেন বাঘেরবাড়িতে একজন আধকপালী মাথা বিষের ভালো কবিরাজ আছেন। বাবা আমাকে পর পর তিন দিন কাঁধে করে নিয়ে গেলেন ঝার ফুক দিতে। কোন কাজ হলো না। প্রতিবছর আমার এমন রোগ হতো। আমি কষ্ট পেতাম। কোন চিকিৎসা নেইনি। মেডিকেল কলেজে ৩য় বর্ষে পড়ার সময় শিখলাম যে ট্রাইজেমিনাল নিউরালজিয়াতে এমন কপালের এক পাশে ব্যাথা হয়। এর ঔষধ কি তাও বই পড়ে জেনে নিলাম। আমি নিজের বুদ্ধিতেই ফার্মেসী থেকে ঔষধ কিনে কাউকে না জানিয়ে সকালে খেয়ে নিলাম। শুরু হলো সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা। বুঝতে পেলাম। ভুল করেছি। ভুল চিকিৎসা করেছি নিজের উপর। অসহ্য যন্ত্রণায় বিছানায় ছটফট করলাম। বিছানা থেকে উঠতে পারলাম না। কাউকে আমার বোকামির কথা বললাম না। মৃত্যুর জন্য প্রস্তত হলাম। কিন্তু আল্লাহ বাচিয়ে দিলেন। এরপর নাক-কান-গলা বিভাগের আউটডোরে মেডিকেল অফিসারকে দেখালাম। তিনি আর এস ডাঃ সিরাজুল আরেফিন স্যারের কাছে রেফার্ড করলেন। তিনি আমার সব ইতিহাস শুনে এবং নাক-কান-গলা দেখে বললেন “তোমার প্রতিবছর শীতকালে সাইনোসাইটিস রোগ হয়। তোমার সাইনোসাইটিস রোগ হয়েছে।” তিনি সাইনোসাইটিস সম্পর্কে বিস্তারিত আমাকে শিখিয়ে দিলেন। তারপর থেকে আমার আর সাইনোসাইটিসের ব্যাথার কষ্ট হয় নি। আলহামদুলিল্লাহ।

বাবা আমাকে প্রথম হাট দেখিয়েছেন। বড় চওনা, কচুয়া, ইন্দ্রজানী, বর্গা ও পলাশতলীর হাট বাবাই আমাকে প্রথম দেখিয়েছেন। বাবার সাথেই আমি প্রথম বাসে উঠি। বাবাই আমাকে প্রথম সিনেমা দেখান। বাবার পেটের নাভীর কাছে ব্যথা করতো। তীব্র ব্যাথায় অনেক রাতে পেট ধরে কাঁদতে দেখেছি। হাট থেকে বোতলের ঔষধ এনে খেতেন। কোন কাজ হতো না। একবার, তখন আমি খুব ছোট, আমি মার সাথে রৌহার মামাবাড়ি ছিলাম। বাবা কোথাও যাচ্ছিলেন। আমি বললাম

– বাবা, কুনু যাবাইন?

– তোমার হাছেন দাদার সাথে সয়ার হাটে যামু। তোমার দাদা একটা গরু কিনবেন।

– আমি যামু।

– দুর আছে। মোটরে চইড়া যাইতে অয়।

– ভোঁ মোটর সাইকলে?

– না, মোটর গাড়িতে।

– আমি মোটরে চরমু।

– এখন না। বড় অইলে নিয়া যামুনি।

– না, আইজকাই যামু।

বলে কান্না শুরু করে দিলাম। বাধ্য হয়ে বাবা আমাকে সাথে নিতে রাজি হলেন। মা আমার গায়ে একটা হাওই শার্ট পরিয়ে দিলেন। কালিহাতির রাজাফৈরের কাছে গেলে ভোম ভোম রকম শব্দ পেলাম। বাবা বললেন “এইটা মোটরের শব্দ।” চামুরিয়া পাড়ি দিলে ফটিকজানি নদীর উপর ব্রিজ দেখিয়ে বললেন “ঐযে দেখ কত বড় পুল।” পুলের উপর তাকাতেই দেখা গেলো বিরাট এক কাছিমের মতো জিনিস পুলের উপর দিয়ে চলে গেলো। আমি বললাম “ওঠা কি গেলো?” বাবা বললেন “ওঠা, প্রাইভেট কার। বড় লোকেরা ওডায় চড়ে।” এরপর বড় একটা কিছু যাচ্ছিল। বললেন “এইডা মোটর গাড়ি।” কালিহাতি বাসস্ট্যান্ডে কিছুক্ষণ দাড়ালে ময়মনসিংহ থেকে একটা মোটর গাড়ি এসে থামলো। কাঠবডি বাস। কাঠের জানালা। সীট খালি নেই। আমরা দাড়িয়েই গেলাম। সয়া গিয়ে নেমে পড়লাম। কালিহাতি ও এলেঙ্গার মাঝামাঝি হলো সয়ার হাট। ঘুরে ঘুরে গরু কিনতে রাত হয়ে গেলো। রাতে আমরা চলে গেলাম বাগুনডালি গ্রামে। সেই গ্রামে একজন কবিরাজ ছিলেন। সেই বাড়ি গিয়ে রাত কাটালাম। কবিরাজ বাবার পেটের ব্যাথার ঔষধ দিলেন। ঔষধ দেখতে লোহার করাতের গুড়ার মতো। খেলে ব্যাথা ভালো হয়। পরেরদিন সকালে ঐ বাড়িতে নাসতা করে আমরা পা পথে গরু নিয়ে ভিয়াইল চলে আসি। সেই ঔষধ খেয়ে বাবা ভালো থাকতেন। এরপরও কয়েকবার বাবা সেই ঔষধ এনে সেবন করেছেন। কিন্তু ঔষধের দাম খুব বেশি ছিল। আমি এখন মনে করি ওগুলো আসলেই করাতের গুড়া। করাতে থাকে এলুমিনিয়াম। এই এলুমিনিয়াম পাকস্থলির হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে এসিডকে নিউট্রাল করে দিয়ে পেট ব্যাথা তথা পেপ্টিক আলসার ভালো করে। বাবা এরপর খোঁজ পান খাওয়ার সোডা বেকিং পাউডার। বাবা বেকিং পাউডার খেয়ে পেপ্টিক আলসারের ব্যাথা থেকে উপসম হতেন। আমি ডাক্তার হবার পর আর বাবাকে বেকিং পাউডার খেতে হয় নি।

বাবা আমাকে কোনদিন কোন কাজ করতে বলেন নি। বাবা না বললেও আমি সংসারের অনেক কাজ করেছি। বাবা আমাকে কোনদিন পড়তে বলেননি। কারন, তিনি জানতেন সাদেককে পড়তে বলতে হবে না। আল্লাহ সাদেককে ও গুণটি দিয়েই তৈরি করেছেন। আমি যখন দোয়াত জ্বালিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত পড়তাম বাবা আমার পাশেই শুয়ে শুয়ে মশা মেরে দিতেন এবং বিচুন দিয়ে বাতাস দিতেন। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতেন। প্রাইমারির পড়া বুঝিয়ে দিতেন। বাবার অনেক বিষয়ে ভালো সাধারণ জ্ঞান ছিলো। তিনি কোন নিতিকথা শিখাননি। কারন, তার বিশ্বাস ছিল সাদেক কোন অনৈতিক কাজ করতে পারে না।

১৯৭৯ সনে যখন মা মারা যান তখন বাবার বয়স হয়তো ৫৫ বছর। ঘটকরা চেষ্টা করেছিলেন বাবাকে পুনরায় বিয়ে করিয়ে দিতে। আমি তখন এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমরা বিয়ের ব্যাপারে হা না কিছু বলিনি। বাবা বিবেচনা করে দেখেছেন যে সংসারের আমাদের নতুন মা এলে আমাদের শান্তি বিগ্নিত হতে পারে। তাই তিনি ধৈর্য ধরেন।

আমি ডাক্তার হবার পর বাবাকে সতর্ক করে দেই যে এখন থেকে তিনি জমি বিক্রি করে খেতে পারবেন না। আমি সংসারের জন্য যতটুকু পারি করে যাবো। তারপর থেকে তিনি আর জমি বিক্রি করেননি। তিনি ঘনঘন জ্বরে আক্রান্ত হতেন। আমি তখন আমার এম ফিল কোর্সের পড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। বাবার জন্য সময় দিতে পারিনি। এম ফিল শেষ করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যোগদান করে বাবাকে আমার বাসায় রাখলাম। কিন্তু আমার মনে হয়েছে বাবাকে জেল খানায় বন্দী করে রেখেছি। বাবার সাথে সময় দেয়ার কেউ ছিল না। বাবা ঘনঘন বাড়ি চলে যেতেন। আমি বুঝতে পারি বাবা এখন গ্রামময় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বন্ধুদের সাথে গুপ ছেড়ে হেসে হেসে গল্প করছেন। তাই আমি শহরে এসে থাকতে বাবাকে পিড়াপিড়ি করিনি।

২০০১ সনের দিকে বাবা খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখানো হয়। পরীক্ষা করে দেখা যায় বাবার প্যানসাইটোপেনিয়া আছে। অর্থাৎ সব রক্তকণিকা কম আছে। এজন্যই ঘনঘন ইনফেকশন হয়। ইনফেকশনের জন্যই জ্বর হয়। বাবাকে অনেকদিন হাসপাতালে ভর্তি রাখতে হয়। ভাতিজা আব্দুল মান্নান তালুকদার তখন কলেজে পড়তো। ওর পড়াশোনা ক্ষতি করে বাবার সাথে থাকে অনেক দিন। এরপর ধরা পড়লো বাবার লিভারে সিরোসিস হয়েছে। এরোগ ভালো হবার নয়। ৭৫ বছর বয়সে লিভার ট্রান্সপ্লান্ট করাও ঠিক হবে না মনে করলাম। যতটুকু সম্ভব সাধারণভাবে চিকিৎসা করে যেতে লাগলাম। বাবার ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়িতে রাখলাম। সুবিধা ছিল, ভাই, ভাবী, মান্নান ও আফ্রোজা বাবার ঠিকমতো যত্ন নিতে পারবেন নিজ বাড়িতে। তখন ছিল অক্টোবর মাস। আবহাওয়া ছিল দুর্যোগপূর্ণ। বাড়ির চারিদিকে ছিল কাদা আর কাদা। এমন একটি দিনে ২০০১ সনের ২০ অক্টোবর বাবার ইন্তেকালের সংবাদ পেলাম। কার নিয়ে ছুটে গেলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। দুই কিলোমিটার দুরে পাকা রাস্তায় নেমে কর্দমাক্ত রাস্তা দিয়ে হেটে গিয়ে বাবার মৃতদেহের কাছে উপস্থিত হলাম। দেখলাম আমার নিস্পাপ বড় ভাই আকবর হোসেন তালুকদার বাবার কাছে বসে বাবার মুখের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন। আনুমানিক ৭৫ বছর বয়সে বাবা চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে। বাবাকে ছেড়ে মা চলে গিয়েছেন পরপারে ২০ বছর আগে। আল্লাহ আমার ধৈর্যশীল বাবার জন্য বেহেস্ত নসীব করুন।

১৫/৪/২০২০ খ্রি.

ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

#memoryofsadequel

kathal churi

কাঁঠাল চুরি

(স্মৃতি কথা)

তখন ক্লাস ওয়ান বা টুতে পড়তাম। তখন আম-কাঁঠাল গাছ তেমন বেশী ছিলো না। যেহেতু, তালুকদারদের মধ্যে মেঝ দাদা মেছের আলী তালুকদার প্রথম এই গ্রামে এসে বাড়ি করেছিলেন সেহেতু দাদাদের গাছগুলো তুলনামূলক বড় ছিলো। কি কারনে যেন আমরা মেছের দাদার স্ত্রী, যিনি আমাদের দাদী হন তাকে সব নাতী নাত্নিরা বাব্বু ডাকতাম। বাব্বু আমার বাবার আপন চাচী। মুকুলের আপন দাদী। দাদুদের গাছগুলো প্র‍্থম দিকে বাব্বুই লাগিয়েছিলেন। তাই, গাছগুলোর নাম বাব্বুর নামে হয়েছে। যেমন, বাব্বুর কাঁঠাল গাছ, বাব্বুর আম গাছ। বাব্বুর কাঁঠাল গাছটা ছিল বাব্বুগ ঘরের পিছে, বাঁশ আড়ার সাথে । তাই কাঠাল চুরি করা সহজ ছিলো।

এই কাঁঠাল পাকলে হয় জুম্মাঘরে দেয়া হবে শুক্রবারে। না হয় ভেঙ্গে বাব্বু মুকুলকে খাইয়ে দিবে। না হয় বাটি ভর্তি রোয়া নিয়ে ছোট কাক্কুর হাতে দিবে। এটাই ছিলো আমাদের ধারণা। শাজাহান, রাজ্জাক, মুকুল ও আমি সাধারণত এক সাথে পাড়াময় ঘুরে বেড়াতাম। বাব্বু মুকুলকে খুব আদর করতেন এবং চোখে চোখে রাখতেন। আমরা মুকুলকে নিয়ে যেদিকে যেতাম, বাব্বুও সেদিকে যেতেন। কাঁঠালটা বড় হলে পাকলো কিনা জানার জন্য পাজুন (গরু পিটানোর লাঠি) দিয়ে বারি দিতাম প্রতিদিন একবার করে। একসময় পাকার জন্য আর ধৈর্য্য ধরে না। সিদ্ধান্ত নিলাম পেড়ে মুখে কচি ঠুকায়ে পাঁকাবো। তাতে তো আমাদের লাভ হবে না। মুকুল একা খেতে পারবে, আমরা পারবো না। তিনজনে সিদ্ধান্ত নিলাম মুকুলকে সাথে নিয়ে এই কাঁঠাল চুরি করবো। তাতে ধরা পরলে মুকুল সাথে থাকলে কেউ চোর বলতে পারবে না। সেই মতো একদিন আমরা কাঠালটা ঝেংটা টান মেরে পেড়ে বাঁশ আড়ার ভিতর দিয়ে লুকিয়ে এক দৌড়ে ঘোনা পার হয়ে বুইদ্যা চালার জঙ্গলে লুকিয়ে পড়লাম। কোদাল দিয়ে মাটি কেটে গর্তে কাঠাল রেখে মাটি দিয়ে ঢেকে ফেললাম। তারপর ৪ চোর মিলে বুইদ্যা চালার মাঝখানে যেখানে বন ছিলনা সেখানে বসে শলাপরামর্শ করলাম কিভাবে ফলোআপ দিতে হবে। সিদ্ধান্ত হলো সব চোর একাত্র হয়ে প্রতিদিন একবার করে কাঁঠাল দেখে যাব। একটা আসংকা ছিলো যে কাঁঠাল পেকে গেলে আড়ার শিয়াল মাটি থেকে কাঁঠাল তুলে খেয়ে ফেলবে। তাই রাতে হুয়া হুয়া করে শিয়াল ডাকলে মনে করতাম কাঁঠালটা খেয়ে শিয়াল আনন্দ করছে। কাঁঠাল দেখতে যাওয়ার আগে আমরা একে অন্যকে ডাকতাম। সিদ্ধান্ত হয়েছিলো যে “ঠাল” বললে মনে করবো ঐ চুরি করা কাঠাল।

in-feed-ads:

একদিন আমি শাজাহানকে ডাকলাম “এই শাজাহান, ঠাল।” অন্যরাও বলে উঠলো “ঠাল।” সেখানে কয়েকজন মুরুব্বিও ছিলেন। মোতালেব ভাই বললেন “কি ব্যাপার? কিসের ঠাল?” আমি বললাম “এটা আপনি বুঝবেন না। এটা আমাদের সাংকেতিক ভাষা।” ভাই বললেন “বুঝব না মানে? কাঁঠাল চুরি করছস। এখন কাঁঠালকে বলছস ঠাল। তাই না?” আমরা বললাম “তা না।” তাড়াতাড়ি সরে পড়লাম জেড়ার হাত থেকে। পরামর্শ করলাম এখন থেকে ঠাল বলা যাবে না। বলবো লঠাকা। রাজ্জাক বললো “এটা বললে আবার ধরা খাবা। বাশার ভাই বানান উল্টো করে কথা বলতে পারে। বুঝে ফেলবেন লঠাকা মানে কাঠাল।” চুরি নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলাম। ঐদিন আর ফলোআপ দিতে গেলাম না। পরেরদিন গিয়ে দেখি শিয়ালে কাঁঠাল খেয়ে মাটির সাথে চেড়াবেড়া করে রেখে গেছে। কেইত্তা দেখে মনে হলো বাত্তি হইছিলো না। আমরা খেলে হয়তো পাইনছা লাগতো। যাহোক, চুরিটা সাকসেসফুল হলো না।

বড় হয়ে বুঝেছি, ওটা চুরি ছিলো না। দাদীর গাছের কাঁঠাল চুরি করে খেলে সেটা চুরি হয় না। চুরি করে খেয়েছে শিয়ালে।

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

১১ অক্টোবর ২০২২

ময়মনসিংহ

#memoryofsadequel

Khuingar Chala

খুইংগার চালা

গত দুই বছর আগে ইন্দ্রজানী হাট নিয়ে ফেসবুকে একটা গল্প লিখেছিলাম। সে গল্প পড়ে একজন পাঠক আমাকে অনুরোধ করেছিলেন তাদের খুইংগার চালা নিয়ে একটা গল্প লিখতে। গল্পটা ছিল স্মৃতিচারণমূলক। স্মৃতিচারণমূলক গল্প কেউ লিখতে বললে আমি লিখতে পারি না। আমার মাথায় যখন স্মৃতিচারণ খেলতে থাকে তখন আমি স্মৃতিচারণমূলক গল্প লিখি। তাই খুইংগার চালা নিয়ে এখনো কোনো গল্প লেখা হয় নি আমার। গতকাল দুপুরে খাবার সময় মোবাইলে একটা কল আসে। আমি সাধারণত মোবাইলে খাবার সময় কল ধরি না। মোবাইল স্ক্রিনে ‘নূর-ই-আলম খুইংগার চালা’ নামটা দেখে মোবাইলটা আমি রিসিভ করলাম । কথা শেষে স্বপ্না জিজ্ঞেস করলো

– কে ফোন করেছিল? তুমিতো সাধারণত খাবার সময় ফোন ধর না।

– নূর-ই-আজম ফোন করেছিল। রোগী নিয়ে আসবে।

– নূর-ই-আজম কে?

– খুইংগার চালার।

– খুইংগার চালা? খুইংগার চালা আবার কেমন নাম? খুইংগার মানে কি?

আমি স্বপ্নাকে খুইংগা কথাটার মানে ভালো করে বুঝিয়ে দিলাম। এরপর থেকে আমার ইচ্ছা হল খুইংগার চালা নিয়ে কিছু একটা লিখি। তাই আজ দুপুরে খাবার পর শুয়ে শুয়ে খুইংগার চালা নিয়ে কিছু লেখার চেষ্টা করলাম।

খুইংগার চালা নিয়ে আমার তেমন কোন স্মৃতি নেই। তবে আমি একবার খুইংগার চালায় গিয়েছিলাম । আমার চাচাতো ভাই ইখতিয়ার উদ্দিন (বাশার ভাই)পাকিস্তান আমলে এস এস সি পাশ করে খুইংগার চালা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি নেন। আমি তখন ক্লাস থ্রিতে পড়তাম। যেহেতু এটা স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে তাই আমাদের দেশের নাম ছিল পাকিস্তান। এই পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ছিল ১৪ ই আগস্ট। আমি স্বাধীনতা দিবস পালন করতে বাশার ভাইর সাথে খুইংগার চালা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে যাই। মাঠটা ছিল অনেক বড়। অনেক খেলাধুলা হয়েছিল সেদিন। ওই বিরাট মাঠে ঘোড়দৌড়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। খুবই উপভোগ্য ছিল সেই ঘোড় দৌড়। যে ঘোড়াটি প্রথম স্থান অধিকার করেছিল সেই ঘোড়ার সওয়ার ছিল মাত্র ৭-৮ বছরের একটি ছেলে। ছেলেটির গা ছিল খালি। ভাঁজ করে লুঙ্গি পড়েছিল। আমরা পাহাড়িয়া পোলারা অনেকেউ ভাঁজ করে লুঙ্গি পড়তাম বাইটা বাছ্রার ভয়ে। লুঙ্গির নিচের অংশে মাঠের বাইটা বাছ্রা ছেঁকে ধরতো। তাই হাটু পর্যন্ত ভাঁজ করে লুঙ্গি পড়তে হতো। কিন্তু ওই ছেলেটি বাইটা বাছ্রার ভয়ে লুঙ্গি ভাঁজ করে পরে নি। সে পরেছিল ঘোড়া চালনার সুবিধার্তে। ঘোড়দৌড়ের সময় তাঁর ঘোড়াটি যেন উড়ে উড়ে চলছিল। সে ঘোড়ার লাগাম ধরে রেখেছিল। ঘোড়ার পিঠের উপর সে ছুটে ছুটে পড়ছিল। এই সময় তার লুঙ্গি উপর দিকে একবার উড়ছিল আর নামছিল। দর্শকরা দুই কারণে আনন্দ পাচ্ছিল। এক নাম্বার আনন্দ ছিল ঘোড়ার দৌড় দেখার আনন্দ। তুই নাম্বার আনন্দের কারন ছিল বাচ্চাদের জন্য। এটা ছিল ছেলের লুঙ্গি উড়ার আনন্দ। লুঙ্গি উড়ার সময় ছেলেটি বেআব্রু হয়ে যাচ্ছিল। তাই বাচ্চারা আনন্দ পাচ্ছিল। আমিও কিন্তু তখন বাচ্চাই ছিলাম। তাই, আমি দুই কারনে আনন্দ পেয়েছিলাম। আরেকটি আনন্দের খেলা ছিল লাঠিবাড়ি খেলা। খুবই চমৎকার ছিল সেই লাঠিয়ালদের লাঠি বাড়ি খেলা। সারাদিন খেলাধুলার আনন্দ উপভোগ করে রাতে বাশার ভাইর সাথে বাড়িতে ফিরি। আমার সাথে মজিবর ভাইও সেদিন গিয়েছিলেন খুইংগার চালা। সাড়াসিয়া বেসরকারি প্রাইমারি স্কুলটি যখন সরকারিকরণ করা হয় তখন বাশার ভাই সাড়াসিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। এটা খুব সম্ভব স্বাধীনতা যুদ্ধের আগেই।

Read more: Khuingar Chala

আপনাদের কিন্তু এখনো খুইংগার কথাটার মানে বোঝানো হয়নি। গাছের ভিতর যদি কোনো কারণে গর্ত থাকে সেটাকে বলা হয় খুং বা খোং। আপনারা বলেন গাছের কোটর। ছোট বেলায় আমরা পড়েছি “আদিম যুগের মানুষ গাছের কোটরে বাস করতো।” সে কোটরকেই আমরা বলতাম খোং। সাধারণত পুরাতন বা বৃদ্ধ গাছে খোং তৈরি হয়। খাঠখোকড়া পাখি ঠুকড়িয়ে গাছে খোং তৈরি করে খোংগের ভিতর বাসা বানায় । গাছের কোন অংশ পঁচে গিয়েও খোং তৈরি হতে পারে। খোং যে কারনেই তৈরি হোক না কেন অনেক প্রকার পাখি এসব খোংগে বাসা বানায়। কাঠঠোকড়া, টিয়া, দোয়েল, ভুতুম পেঁচা ইত্যাদি পাখি খোংগের ভিতর বাসা বানায়। আমি গাছে উঠে খোংগের ভিতর উঁকি দিয়ে পাখির বাসা দেখতাম। ডিম পাড়া থেকে শুরু করে বাচ্চা তোলানো পর্যন্ত প্রতিটি পর্ব আমি পর্যবেক্ষণ করতাম। কোন পাখির ডিম কত দিনে ফোটে তা আমার জানা হয়ে গিয়েছিল। গিরিকিটি বা কক্কে সাপও খোংগে থাকতো। আমাদের বাড়ির উত্তর পাশে একটা অশথ্ব গাছ ছিল। আমরা বলতাম বটগাছ। সেই গাছে অসংখ্য খোং ছিল। সেই খোংগেও অনেক পাখি বাসা করতো। সন্ধায় বড় ভুতুম পাখি ডাকতো “ভুত ভুতুম, ভুতুম।” ছোট ভুতুম পেঁচা ডাকতো “কেচরমেচর” করে। পাখির কাছে গেলে কুতকুতি চেয়ে থেকে ভয় দেখাতো। বেলা ডোবার পর কক্কে সাপ ডেকে উঠতো “কক্কে কক্কে বলে। ” শুনেছি কক্কে সাপের যত বয়স ততবার কক্কে কথাটি উচ্চারণ করে ডাকার সময়। যেমন, যেটার বয়স তিন বছর সেটা ডাকতো তিন বার কক্কে কক্কে কক্কে বলে। একেক কক্কে একেক নির্দিষ্ট সময় দিনে-রাতে মাত্র একবার ডেকে উঠতো।

খোংগের ভিতর মৌমাছিও বাসা বানায়। আমরা বলতাম খুইংগা চাইক (চাক)। এই মৌমাছি আলাদা প্রজাতির মৌমাছি। এরা গাছের ডালে বসে না। এরা চাক বানায় গাছের খোংগে অথবা উলুর টিকরে। উইপোকাকে আমরা বলতাম উলু পোকা। পুরাতন গাছ মাটির উপর বরাবর কেটে ফেললে তার সাথে উইপোকা বাসা বেধেঁ মাটি তুলে ডিবির মতো করে ফেলে। তখন ছোটখাটো পাহারের মতো মনে হয়। এগুলোকে আমরা বলতাম উলুর টিকর। একসময় পাখা গজার পর সব উলু আকাশে উড়ে যেতো। চৈত্র মাসে সন্ধার সময় গজারির মরা পাতায় আগুন দিলে সেই আগুনের উপর উলু ঝাকে ঝাকে উড়ে এসে পড়ে পুড়ে যেতো। তাই বলা হয় “পীপিলিকার পাখা গজায় মরিবার কালে।” উলুও এক প্রকার পীপিলিকা। উলু বাসা ছেড়ে চলে গেলে সেই খোংগে খুইংগা চাক বসত। মনো ভাইদের বাড়ির পিছনের আড়ায় (জংলায়) একটা উলুর টিকর ছিলো। সেই টিকরে প্রতি বছর খুইংগা চাক বসতো। খুইংগা চাকের মৌমাছি সাধারণত কামড়ায় না। আমি খোংগে হাত দিয়ে আসতে করে মৌমাছি চাক থেতে সরিয়ে পাঠশোলা (স্ট্র) দিয়ে টেনে টেনে মধু খেতাম। আমার সাথে একদিন মুকুলও গিয়েছিল মধু খেতে। মৌমাছি কি মনে করে যেনো মুকুলের কঁচি কানের লতিতে হুল ফুটিয়ে বসে। মুকুল আমার চেয়েও তিন বছরের ছোট। মুকুল বিষে কান্না শুরু করে। আমি মুখ চেপে কান্না বন্ধ করে দেই। কারন, মনো ভাই টের পেলে খবর ছিল।

যেসব গাছে বেশি বেশি খোং থাকতো সেসব গাছকে খুইংগা গাছ বলা হতো। যেসব কাঠালের গায়ে গর্ত গর্ত থাকতো সেসব কাঠালকে খুইংগা কাঠাল বলা হতো। আমাদের বাড়ির পশ্চিম পাশে একটা কাঠাল গাছ ছিল। সেই গাছের কাঠাল খুইংগা ছিল। তাই, সেই গাছকে খুইংগা গাছ বলা হতো। খুইংগা হলেও কাঠাল খুব স্বাদের ছিলো।

খুইংগার চালা গ্রামের নাম কেন খুইংগার চালা হয়েছে তা আমার জানা নেই। চালা হলো উচু ভুমি। খুইংগার চালা আমি দেখেছি একটু উচু ভুমি। খুব সম্ভব এই উচু ভুমিতে আগের দিনে অনেক খুইংগা গাছ ছিলো। তাই হয়ত খুইংগার চালা নাম হয়েছে। আপনার কি মনে হয়?

২৮/৩/২০২০ খ্রি.

Salah Uddin

Mawlana Salah Uddin

মাওলানা সালাউদ্দিন

Maolana Salah Uddin

মাওলানা সালাউদ্দিন ছিলেন আমার চাচাতো বোন হেলেনা আপার স্বামী। আরবী লাইনে লেখাপড়া করলেও তিনি বেশ বিজ্ঞান মনস্ক ও সাংস্কৃতিমনা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু পরিবারকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি বিয়ের পর জমি জমা কিনে আমাদের গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষকের পদে চাকরি করতেন। পাশাপাশি নিকাহ রেজিস্ট্রার করতেন। তিনি কাকরাজান ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। বিবাহ রেজিস্ট্রি করাকে ইসলামি পরিভাষায় কাবিননামা বলা হয়। আমরা সংক্ষেপে কাবিন বলতাম। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কাবিন করলে দুলাইভাই বেশী ফি নিতেন। তাই, অনেকেই দুলাভাইর বাড়িতে এসে কাবিন করাতেন। যিনি কাবিন রেজিস্ট্রি করতেন তাকে বলা হয় কাজী। তাই দুলাভাইকে কাজীও বলা হতো। দুলাভাই মারা যাবার পর তার মেজো ছেলে কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পায় এবং কাজীর কাজটাও পায়। এখন তার কাছে কাজীর কাজটা নেই। দুলাভাইর ছোট ছেলে রুহুল আমীনও ঘোনারচালা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে। বড় ছেলে আব্দুল হালিম প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করে।

আমি ছোটবেলা থেকেই দেখতাম দুলাভাই কাবিন করেন। তিনি কচুয়া আব্দুল্লাহ স্যারদের বাড়ির জামে মসজিদের শুক্রবার জুম্মায় ইমামতিও করতেন। দুলাভাইর সাথে আমি দু-এক বাড়িতে কাবিন করতেও গিয়েছি। ভালো খাবারও খেয়েছি।

শীতের দিনে তিনি বাহিরবাড়ির ধানিখোলায় খর বিছিয়ে তার তার উপর পিঠের বেতের পাটি বিছিয়ে কাবিন করতে বসতেন। বর ও কনে উভয় পক্ষই আসতেন। তারাও পাটির উপর বসতেন। গ্রামের মানুষ তামাসা দেখতে ভালোবাসে। তাই, যেখানে কয়েকজন লোক একত্র বসত সেখানেই গিয়ে সবাই ভীর করতো। কোথাও দুইপক্ষ ঝগড়া বাঁধালেও সবাই তামসা দেখতে যেতো। একবার গোড়াই থেকে একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে, বয়স খুব সম্ভব ১৬-১৭ হবে, হাত ধরে ঘুরাফিরা করছিল কচুয়া হাটের রাস্তায়। শুনলাম তারা একে অপরকে ভালোবেসে, বাবা-মার অমতে বিয়ে করার উদ্যেশে বের হয়ে পড়েছে। লোকে বলত বাইরইয়া পড়ছে। কাজেই তাদেরকে ভিন গ্রামের মানুষ ধরে বিয়ে পড়িয়ে দিত। এই জুটির পিছনে প্রায় ৫০-৬০ জন ছেলে মেয়ে তামসা দেখছিল। আমিও কিছুক্ষণ তামসা দেখলাম।

একবার পশ্চিম দিক থেকে কয়েকজন লোক এসেছিল দুলাভাইর কাছে কাবিন করতে। তাদের বেশভূষা দেখে গরীব মনে হলো। কনেটাকে আমার কাছে অসহায় মনে হলো। বর পক্ষের লোকগুলোকে তেমন সভ্য মনে হলো না। দুলাভাই কাবিন রেজিস্ট্রার খাতায় লিখার পর সরকারি ফি নিয়ে নিলেন। তারপর কনের উদ্দেশ্যে বললেন “অমুকের ছেলে তমুক এত টাকার দেন মোহর সাব্যস্ত করিয়া আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছে। আপনি রাজি আছেন?” কনে অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিছুই বললো না। দুলাভাই দ্বিতীয় বার ওকথাগুলো বললেন। কনে অনেকক্ষণ চুপ করেই রইলো ঘোমটা দিয়ে। তৃতীয় বার দুলাভাই বিরক্তির সাথে কথাগুলো বলে ধমকের সুরে উচ্চকণ্ঠে বললেন “রাজি আছেন?” কনে বিস্ফোরিত কণ্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠল “রাজি আছি।” আমি চমকে গিয়ে খেরের উপর ঢলে পড়লাম। কনে ফিকুরে ফিকুরে কান্না করতে লাগলো। আমি তখন ক্লাস সেভেন না এইটে পড়ি। আমার মনে হলো এটা ঠিক না। জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুলাভাই কিছুক্ষণ মেয়েটির কান্না শুনলেন। আমি দুলাভাইর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দুলাভাই চুপ করে রইলেন। দুলাভাই বললেন “এ বিয়ে হবে না।” বরপক্ষ বললেন “কনে রাজি আছে বলছে। বিয়ে হয়ে গেছে।” দুলাভাই বললেন “না, হবে না। সমস্যা আছে। কাবিন বাতিল।” মেয়েটি আরও পরিস্কার করে কান্না করতে লাগলো। অনেক কথাকাটাকাটির বরপক্ষ কাবিনের ফি ফেরত চাইল। দুলাভাই বললেন “কাবিনের পাতা খরচ হয়ে গেছে। আমি বই হিসাবে কিনে আনি। ফেরত পাবেন না। আপনাদের বিচার হবে। আপনারা জোর করে মেয়ে বিয়ে করতে নিয়ে এসেছেন। মেয়ে রাজি না। আমার ধমক শুনে রাজি বলেছে। মেম্বার ও পাড়ার মাদবর নিয়ে আসুন। তারপর কাগজ দেয়া হবে।” পরে কি হয়েছিল আমি জানি না।

কাবিননামা শেষ হলে বরের হাতের উপর কনের বাবার হাত রেখে দুলাভাই পাঠ করাতেন কনের বাবাকে “বলুন, আমার কন্যা, মুসাম্মত অমুক খাতুনকে এত টাকা দেন মোহরে আপনার কাছে বিবাহ দিলাম।” দুলাভাই বরকে বলতে বলতেন “আপনি বুলুন, কবুল, আলহামদুলিল্লাহ, কবুল করিলাম।” বর বলতেন “আলহামদুলিল্লাহ, কবুল করিলাম।” দুলাভাই বরের উদ্যেশ্যে বলতেন “আপনার বিবিকে ভরনপোষণ দিবেন, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চলাফেরা করাবেন এবং পর্দা পুশিদায় রাখবেন। তিন মাসের অধিক কাল নিরুদ্দেশ থাকিলে, পাগল কিংবা কারাগারাবদ্ধ হইলে বিবি আপনাকে তালাক দিতে পারিবেন। খাতা বন্ধ করলে বরপক্ষ সবাইকে খাজা বাতাসা ও কদমা খাওয়াইত। আমার কাছে সাদা কদমা খুব মজা লাগতো।

আমাদের গ্রামে একজন গরীব লোক ছিল। নিজের জমি ছিলো না। খুব আলসে ছিল। বোকাও ছিল। তার নাম লিখলাম না। ছদ্মনাম দিলাম হামজা। হামজা ভাই মাঝে মাঝে বোকার মতো কথা বলতেন। কেউ বোকার মতো কথা বললে আমরা বলতাম ” তুই অবা হামজা ভাইর নাগাল কথা কস ক্যা?” চৈত্র মাসে অথবা যে মাসে কোন কাজ থাকত না সেই মাসে হামজা ভাই খাবেন কী। কামলা দিলে যা টাকা পাওয়া যেতো সেই টাকা দিয়ে হামজা ভাই চাউল ও আটা কিনে খেতেন। মানে, দিন এনে দিন খেতেন। একদিন কামলা না দিলে না খেয়ে থাকতে হতো তার স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ। হামজা ভাইর বউ পরের ধান ভেনে অল্প কিছু চাউল পেতেন। আঁচলে করে আনতেন। শরীর খুব দুর্বল ছিল অল্প খেয়ে খেয়ে। তাই, ঢেকিতেও তেমন বল করে পার দিতে পারতেন না। যেদিন কামলা দিতে না পারতেন সেদিন হামজা ধনি বাড়ি থেকে এক কামলার দাম নিতেন। সেই টাকায় কাজের সময় তিনি কামলা দিয়ে পরিশোধ করতেন। মৌসুমের সময় কামলার দাম দুইগুন তিনগুন হলেও তিনি তা নিতে পারতেন না। যেহেতু তিনি অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছেন। অগ্রিম টাকা নিয়ে মৌসুমের সময় কামলা দিলে তাকে বলা হয় ঠুকা কামলা। হামজা ভাই ছোটদের মতো সামনে ভাজ করে লুঙ্গি পরতেন। তাই, আরও বোধাই বোধাই দেখা যেতো। কম বয়সেই তিনজন সন্তান রেখে হামজা ভাইর স্ত্রী মারা যান।

গ্রামে গরীব পরিবার স্ত্রী ছাড়া চলতে পারে না। তাই, হামজা ভাই আরেকটি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিয়ের কাবিনের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। হামজা ভাই কিস্তিটুপি পাতালি করে পরেছিলেন। তাতে আরও বোধাই বোধাই লাগছিলো। যথারীতি কাবিন সম্পাদন করে হামজা ভাইর হাত ধরলেন তার শশুর। কাজী বলতে বললেন “বলুন, আমার কন্যা।” হামজা ভাইর শশুরে বলার কথা। ভুলক্রমে হামজা ভাই বলে ফেললেন “আমার কন্যা।” দুলাভাই ধমক দিয়ে বললেন “এই বোধাই, কারে কী কয়।” আমি ও মজি ভাই হাসতে হাসতে খেরের উপর লুটিয়ে পড়লাম।

২২/৪/২০২২ খ্রি.
ময়মনসিংহ

Fufu

আমার বড় ফুফু


আমি বুঝমান হয়ে দুইজন ফুফু পেয়েছিলাম। আমার আরও দুইজন ফুফু ছিলেন। চাচা পেয়েছিলাম একজন। আরও নাকি একজন চাচা ছিলেন। তারা বিয়ের বয়সে উপনিত হবার পর ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে একই বছর মারা গেছেন। বাবারও একই সময় জ্বর হয়েছিল। ম্যালেরিয়ায় বাবাকে মারতে পারে নাই। তাই আমরা বাবাকে পেয়েছি। তারপর থেকেই বাবা রোগা রোগা হয়ে বেচেছিলেন। কম বয়সেই আমার দাদী অন্ধ হয়েছিলেন। তাই বড় ফুফুর উপর আমার বাবা চাচা ও ফুফুদের অনেক দায়ীত্ব পড়ে। বড় ফুফুর নাম ছিল মেহারন (মেহেরুন্নেসা) আর ছোট ফুফুর নাম ছিল তাহারন (তাহেরুননেসা)। বড় ফুফুর শশুরবাড়ি নিজ গ্রাম ভিয়াইলের উত্তর পাড়া তালুকদার বাড়ি। বাবার বাড়ি ভিয়াইলের দক্ষিণ পাড়ার তালুকদার বাড়ি। ছোট বেলায় আমার একটা প্রশ্ন ছিল আমার দাদা মোকসেদ আলী তালুকদার তার এই সুন্দরি মেয়েটাকে একটি কালো ছেলের কাছে বিয়ে দিয়েছিলেন কেন? ফুফার নাম ছিল মফিজ উদ্দিন তালুকদার। ফুফার বড় ভাই ডা. সাখাওয়াৎ হোসেন তালুকদার কালিহাতি সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের  মেডিকেল অফিসার ছিলেন। তার ছেলে সফিকুল ইসলাম তালুকদার বাচ্চু ভাই, রফিকুল ইসলাম তালুকদার দুদু ভাই, আতিকুল ইসলাম তালুকদার নার্গিস ভাই ও তারিকুল ইসলাম তালুকদারকে আপনারা অনেকেই চেনেন। ফুফা ও ফুফার জমজ ছোট ভাই আন্তাজ আলী তালুকদার (আন্তা তালুকদার) গ্রামের বাড়িতেই থাকতেন। তার ছেলে চুন্নু ভাই, সেন্টু ভাই ও মিল্টনকে আপনারা অনেকেঞ্চেনেন। ফুফু  ১২-১৩ জন সন্তান জন্ম দেন । তারমধ্যে ৯ জন টিকে থাকে। প্রথম ৬ জন ছেলে আর শেষের ৩ জন মেয়ে। এরা হলেন গিয়াস উদ্দিন তালুকদার বিএ, আঃ বাসেত তালুকদার সুর্য বি এ, আঃ মোত্তালেব তালুকদার মতি বি এস সি, সামসুল হক তালুকদার ইঞ্জিনিয়ার, আবুল হোসেন তালুকদার বাবলু বিএ, আসাদুজ্জামান তালুকদার জিয়াউল এমএ। আমার ফুফাতো বোনদের সবারই এসএসসি পাস করার পর বিয়ে হয়ে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। তারা হলো সুফিয়া, জাহানারা ও সেলিনা। ফুফুর সন্তান অনেকগুলি হলেও তার সন্তানদের সন্তান মাত্র দুই একজন করে। ফুফুর নাতী নাত্নীরা প্রায় সবাই উচ্চ শিক্ষিত, গ্রাজুয়েট অথবা পোস্টগ্রাজুয়েট। ফুফা গ্রামের মানুষ হলেও তার ৯ জন সন্তানের সবাইকে এক যোগে লেখাপড়া করিয়েছেন তখনকার যুগে। মার কাছে শুনেছি ফুফারা ছিলেন ৪ আনার তালুকদার। আর আমরা ছিলাম ২ আনার তালুকদার। সমাজে ফুফাদের বংশ মর্যাদা বেশী ছিল। ফুফার চেহারা ফুফুর সাথে ম্যাচ না করলেও দাদা মেয়ে বিয়ে দিতে রাজী হন। তাছাড়া ফুফার বাবা ফুফুকে অনেক টাকা পণ দেন এবং ১৭ রকমের দামী দামী স্বর্নের গহনা দেন।

Continue reading

Surzo Banur Chheleti

সূর্যবানুর ছেলেটি


সূর্যবানু ছিল নাহার নার্সিং হোমের আয়া। তখন টাংগাইল শহরে তথা টাংগাইল জেলায় মাত্র একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ছিল এই নার্সিং হোম। এটা ছিল আকুরটাকুর পাড়ায় একটা বড় পুকুরের পাড়ে। আশেপাশে বড় বড় আমগাছ ও নারিকেল গাছ ছিল। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে হলেও এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল সুন্দর, মনোরম । ক্লিনিকের মালিক ছিলেন টাংগাইল শহরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত কাইয়ামারার নিঃসন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন ফারুক ভাই। তিনি তার স্ত্রী নাহারের নামে এই ক্লিনিক করেন পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমির উপর তিন তলা বিল্ডিং-এ। পাশেই আগে থেকেই পুরাতন আধাপাঁকা একটা ছিল তাদের । সেই বাড়িটা চিকিৎসকের থাকার কাজে ব্যবহার হতো । আমি ফ্যামিলি নিয়ে সেই বাসায় থাকতাম। বাসা ভাড়া দিতে হতো না। সর্ব সাকুল্যে মাসিক বেতন ছিল আমার ১,৮৫০ টাকা। ১৯৮৮ সনের জুলাই মাসে সরকারি চাকুরি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এক বছর এই ক্লিনিকে চাকরি করেছিলাম। আমার কর্তব্যনিষ্ঠা ও দক্ষতায় মুদ্ধ হয়ে ফারুক ভাই ছয় মাসের মাথায়ই আমাকে ক্লিনিকের মেডিকেল ডাইরেক্টর বানিয়ে দেন। তিনি ছিলেন জীবন বীমা কোম্পানির ম্যানেজার। অফিস ছিল ঢাকায়। থাকতেন ঢাকায়। প্রতিদিন তিনি আমাকে ফোন করে ক্লিনিকের খোঁজ খবর নিতেন। প্রথম দিকে ক্লিনিকে লোকশান হতো। আমি লোকশান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখিয়েছিলাম। লাভের টাকা তার হাতে তুলে দিলে তিনি টাকা ফেরৎ দিয়ে বললেন “আমার ক্লিনিক থেকে লাভ নেয়ার দরকার নেই। লাভের টাকা দিয়ে ক্লিনিকের উন্নয়ন করতে পারলেই হবে।” আমি সেই টাকা দিয়ে ক্লিনিকের রিপেয়ারিং-এর কাজ করিয়েছিলাম। তিনি খুব খুশী ছিলেন আমার প্রতি। আমার সরকারি চাকরি হলে তিনি আমাকে দ্বিগুণ বেতন অফার করেছিলেন রেখে দেয়ার জন্য। আমি সেই অফার গ্রহণ করি নি।

Continue reading