Jibito Uddhar

Mohilake Jibito Uddhar

মহিলাকে জীবিত উদ্ধার

(স্মৃতি কথা)

ঢাকা থেকে বরিশাল যাচ্ছিলাম লঞ্চে ১৯৮৮ সনে। রাতের খাবার খেয়ে ডেকে বিছানার চাদর বিছিয়ে ব্রিফকেস মাথায় দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। গভীর রাতে যাত্রীদের কোলাহল শুনে ঘুম ভেঙে গেলে চমকে গেলাম। তখন মাঝে মাঝে লঞ্চে ডাকাতি হতো যাত্রীদের মাথায় হাতুড়ি পেটা করে। সেই ইঞ্জুরির চিকিৎসা চরামদ্দিতে ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমিই করেছিলাম। কি ভয়াবহ সেই হাতুড়ির আঘাত! তাই, ডাকাতির কথা মনে হলেই আমি আঁতকে উঠতাম। উঠে দাঁড়ালাম। না, এটা ডাকাতের ঘটনা নয়। দেখলাম সবাই লঞ্চের ডান কিনারে জড়ো হয়ে নদীর পানিতে কী যেনো দেখছে। আমিও দেখতে গেলাম। দেখলাম কেউ একজন শ্রোতোশ্বনি নদীর পানিতে ভেসে যাচ্ছে। মাঝে মাঝে হাত উচু করে দেখাচ্ছে। দেখতে দেখতে সব যাত্রী যখন লঞ্চের ডান কিনারে জড়ো হলো লঞ্চ কাত হয়ে পানি প্রবেশের উপক্রম হলো। আমরা দৌড়ে এক যোগে বাম কিনারে চলে গেলাম। লঞ্চ বাম দিকে কাত হলো। ভয়ে দৌড়ে ডান কিনারে চলে গেলাম। এভাবে ডান-বাম খেলা চলো কয়েকবার। এবার মানুষটাকে লঞ্চের খালাসিরা নদী বক্ষ থেকে উঠাতে সমর্থ হলো। রাখা হলো ডেকের মাঝখানে। সবাই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে লাগলো। আমিও পেছন থেকে উকি দিয়ে দেখবার চেষ্টা করলাম। এক নজর দেখেই চোখ নত করে চলে এলাম। দেখলাম উদ্ধারকৃত মানুষটি একজন মধ্য বয়সি মহিলা, একজনে গরম কাপড় দিয়ে ঢেকে দিচ্ছেন। মহিলা মৃত মানুষের মতো পড়েছিলেন। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে জীবন মরণ চেষ্টা করে বেচে ওঠা মানুষ উদ্ধার হবার পর এভাবেই সাধারণত অবসাদগ্রস্ত হয়ে নিস্তেজ পড়ে থাকে। সবাই যার যার বিছানায় ফিরে এসে নৌকাডুবি নিয়ে নানান কাহিনী বলতে লাগলো। শুনলাম মহিলা সুস্থ আছেন। এখান থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার উজানে তারা নৌকাডুবির কবলে পড়েন। তারা এক নৌকা ভর্তি করে আটরশির পীরের খানেকায়ে যাচ্ছিলেন। সেই নৌকা পদ্মা নদী বক্ষে ডুবে যায়। শ্রোতের টানে মহিলা ভাসতে ভাসতে এপর্যন্ত এসে পড়েছেন। হালকা সাতার কেটে তিনি পানির উপর ভেসে থাকেন। পাহাড়ি মানুষ হলেও আমি সাতার কাটতে জানি। যেভাবে লঞ্চ একবার ডান দিকে এবং বাম দিকে কাত হচ্ছিলো, যদি লঞ্চডুবি হতো আমাকেও হয়তো এভাবে ভেসে সাতার কেটে বরিশালের দিকেই যেতে হতো।

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ময়মনসিংহ

৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি.

#momoryofsadequel#charamoddisadequel