Tag Archives: গল্প

Ham Bangali

হাম বাঙালি হায়

(রম্যরচনা)

হেলাল ভাই (ছদ্মনাম) মোবাইল করলেন। আমি রিসিভ করে সালাম দিলাম। জিজ্ঞেস করলেন “কাইফা হালুকা?” আমি ভাবলাম বাঙালি হয়ে যখন বিদেশি ভাষায় প্রশ্ন করেছেন তাহলে আমিও বিদেশি ভাষায় উত্তর দেই। বললাম “হামলুক ভালো আছি হায়?”

হেলাল ভাই হেসে দিয়ে বললেন

সাদেক ভাই, আমি একবার বিদেশের মাটিতে হাটছিলাম। আমার পিছেপিছে এক মেয়েও হাটছিলেন। একবার লক্ষ্য করলাম মেয়েটি আমার হাত ধরে হাটছে। আমি মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে ঝাকি মেরে হাত ছাড়িয়ে ফেললাম। আবার হাটতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর মেয়েটি আবার আমার হাতে ধরে হাটা শুরু করলেন। আমি আবারও হাত ছুটিয়ে হাটতে থাকলাম। এভাবে তৃতীয়বার যখন হাত ধরলেন, আমি ঝেংটা মেরে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মেয়েটির দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকালাম। মেয়েটি মুচকি হেসে বললেন “দাদা, হাম বাঙালি হায়।”

আজকে আপনার হিন্দিতে “হামলুক ভালো আছি হায়” শুনে সেই ঘটনাটা মনে পড়লো।

এরপর থেকে আমার কাছে মনে হচ্ছে, রাস্তায় যত মেয়েকে ছেলেদের হাত ধরে হাটতে দেখছি এদের সবাই স্বামী-স্ত্রী নাও হতে পারে। আপনার কাছে কী মনে হয়?

সাদেকুল তালুকদার

৫ জুলাই ২০২৪ খ্রি.

(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

Falani

Falani

ফালানি উপন্যাসের পাণ্ডুলিপি

ফালানির একটাও কুরকা

ফালানির একটাও কুরকা আছাল না। তার বাহের তিগা পয়সা নিয়া নিয়া খুটির বিতর জরা করতো। এবা কইরা হে ১০০ টেহা জরা করছাল। হেই টেহা দিয়া তার বাহে আটে তিগা একটা ডেহি মুরগি কিন্না দিছাল। কয়দিন পরই হেই মুরগি করকরাইয়া ডোলের বিতর আন্ডা পারন ধরে। বালাই আন্ডা পারছাল। বাইসটা আন্ডা পারছাল। চাইরডা আন্ডা হিদ্দ কইরা রাইন্দা খাইছাল। চাইরডা আন্ডা আন্ডার পাইকারের কাছে বেইচ্যা নইটানা কিন্যা খাইছাল। দুইডা আন্ডা পচা বাইরইছাল। আর যেডি আছাল ঝাইঞ্জরে মইধ্যে খের বিছাইয়া মুরগিরে কুইচা বহাইছাল। মুরগি মইদ্যে মইদ্যে কক কক কইরা বাইরে গিয়া আদার খাইয়া আইত। হেসের দিকে হারাদিন কুইচা বইয়া থাকত। কুইচা মুরগির ঠোলার খের ভর্তি হুরহুরি পোকা অইছাল। হেই হুরহুরি পোকা বারির বেবাককের গতরেই হুরহুরাইত। বাইসদিন পর মুরগি বাচ্চা তোলায়। উঠানে খুদ ছিটাইয় দেয় বাচ্চাগুনারে খাওনের নিগা। বাচ্চাগুনায় চিয় চিয় কইরা ডাহে আর ঠুকরাইয়া খুদ খায়। একটা বাচ্চা ছাইয়ের ঠেংগিত পরছাল। ছাইয়ের বিতর গনগনা আগুন আছাল। হেই আগুনে পুইরা একটা বাচ্চা মইরা যায়। আরেকটা বাচ্চা আইশালের আগুনে পুইরা মইরা যায়। একটা বাচ্চা চিলে নিয়ে যায়। আরেকটা নেয় বেজিয়ে। আরেকটা গরুর পারা খাইয়া চেটকা অইয়া মইরা যায়। উঠানে ধান খেদানোর সোম ফালানির দাদির কোটার বারি খাইয়া মইরা যায় একটা । যেডি বাইচ্চা থাহে হেডির মইদ্যে অর্ধেক অয় ডেহি, আর অর্ধেক অয় মোরগ।

ফালানির বিয়া অইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক গ্রাম্য ভাষায় লেখা গল্প)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

হেদিন যে ফালানির কতা কইছিলাম হে ফালানির বিয়া অইয়া গেছে। অইজে, কইছিলাম না যে, ফালানির ডেহি মুরগি বাইশটা আন্ডা পারছাল। হেন তিগা চাইরডা আন্ডা হিদ্দ কইরা আইন্দা খাইছাল। চাইরডা আন্ডা পাইকারের কাছে বেচচাল, দুইডা আন্ডা পচা বাইরইছাল। আর যেডি আছাল হেডি দিয়া মুরগিরে কুইচা বহাইছাল। হেন তিগা মুরগি যে কয়ডা বাচ্চা তোলাইছাল তার তিগা একটা আইশালের আগুনে পইরা পুইরা মরে, একটা ছাইয়ের ঠেংগিত পইরা পুইরা মরে, একটা গরুর পারা নাইগ্যা মইরা যায়, আর একটা ধান খেদাইন্যা কোটার বারি নাইগ্যা মইরা যায়, একটা নিয়া যায় চিলে আর একটা নিয়া যায় বেজিয়ে। যে ছয়ডা বাইচ্চা আছাল হেইগনা বড় অইয়া তিন্ডা অয় ডেহি আর তিন্ডা অয় মোরগ। হেন তিগা দুইডা মোরগ পলাই আটার য়াটে নিয়া বেইচ্চা একটা য়াসা আর একটা য়াসি কিন্না আনে। তাইলে অহন ফালানির অইল গিয়া পাচডা কুরকা আর দুইডা য়াস। য়াসগুলা ফালানিগ পাগারে হাতুর পারে। য়াসিডায় হারাদিন ঘাগ ঘাগ কইরা ডাহে, আর য়াসাডায় গলা হেস হেসাইয়া পাকপাক কইরা ডাহে। বিল পাড়ের ক্ষেত তিগা হামুক কুরাইয়া আইন্যা পাচন দিয়া ভাইংগা দেয় য়াসের হুমকে। য়াস হেগনা ক্যাত ক্যাতি গিলে আর গলা মোচড় পারে। ছোট ছোট হামুক আমানই গিল্লা হালায়। ফালানির বিয়ার পর য়াস মুরগি পালনের খুবই কষ্ট অইতাছে ফালানির মায়। ফালানিরে দুল্লা য়াইখাই ফালানির বাপে মইরা গেছে। ফালানিরে ডাংগর করতে অনেক কষ্ট করতে অইছে। বিয়া দিবার পর কষ্ট আবার বাইরা গেলো। কী আর করবো, মেও পোলা অইয়া জন্মাইলে হশুর বাড়ি ত যায়নই নাগব। মেয়াডারে বিয়া দিবার পর তিগা থাইকা থাইকা ফালানির মায় কান্দে আর আঁচল দিয়া চোখের পানি মুছে।

বালা ধনি বাইত্যেই ফালানির বিয়া অইছে। ফালানির চেহারাও বালা খপছুরতের। পরতম সরাদার দেইহা যায় তারে পাগার পাড়এ যেসুম হে কলস বোজাই কইরা মাঞ্জায় কইরা নিয়া য়াইটা যায়। ফালানির বিয়ার কতা তোলে আহাদুল্লা হিকদারের নাতি দিয়া, অর নাম অইল শাব্দুল। শাব্দুল মেট্রিক পর্যন্ত পড়ছে। হে অহন বিদেশ করব। গেরামের পোলারা মোছ একটু কালা অন ধরলেই আদম বেপারির দালাল ধইরা বিদেশ চইলা যায় জমিন জিরাত, বাড়ি ঘর, নোটা বাটি বেইচ্চা দিয়া। যাগ কিছু নাই তারাও গরীবের বন্ধু সমিতি তিগা সুদী কইরা টেহা নিয়া বিদেশ চইলা যায়। হেই ইন হোদাইতেই চাইর পাচ বোছর নাইগ্যা যায়। শাব্দুলের পাসপোর্ট ভিসা অইয়া গেছে। টেহাও যোগার অইছে। অর্ধেক যোগাইছে শাব্দুলের বাহে আর অর্ধেক যোদাইছে ফালানির চাচায়। দুই এক হপ্তার মধ্যেই শাব্দুলের ফেলাইট। পরতম গিয়া পাঁচ বোছর পর দুই মাসের ছুটি নিয়া দেশে আইব। যাওনের আগে যুদি ফালানির পেটে সোন্তান ধরে হেই সোন্তান তহন চাইর বোছইরা অইয়া যাবো। এই চাইরডা বোছর গেন্দাডায় বাপের আদর পাবো না। মইদ্যে মইদ্যে মোবাইলে দেকপার পাবো বাপের মুখ। তয় ছুইয়া দেকপার পাবো না। পেটের উপর গড়াগড়ি করার ভাইগ্যে থাকপ না। কান্দে নিয়া নাচনের ভাইগ্য থাকপ না। তুলতুলা গালের মইদ্যে নাক দিয়া ঘষা দিয়া উলু উলু করার সুযোগ পাব না। কতা হেস কইরা খালি কবো আব্বু টা টা। উম্মা উম্মা। আর যুদি এই কয়দিনে ফালানির পেটে বাচ্চা না ধরে তয়লে পাঁচ বোছর পর্যন্ত দেরি করন নাগব সোন্তান ধরনের নিগা। ভাগ্যে যুদি না থাহে হেই দুইমাসে সোন্তান না ধরে তাইলে আবার ছুটি নিয়া আহন পর্যন্ত দেরি করন নাগব। ফালানিরে বিয়া করার পর তিগা শাব্দুলের বিদেশ যাইতে ইচ্ছা করতাছে না। কিন্তু করার কিছু নাই। দালালেরে টেহা পয়সা দেয়া হেস। পাসপোর্ট ভিসাও কম্পিলিট। অহন না করন ঠিক অব না।

অ, ফালানির কিবা কইরা বিয়া অইল হেইডা কবার নইছিলাম। সোমবার দিন য়াটে যাওনের সুম হরাদারে ফালানিরে পাগার পাড়ে দেখছাল। মোঙ্গল বারে শাব্দুলের বাপের কাছে বিয়ার কতাডা তোলে। বুইধবারে ফালানির চাচার কাছে কতা নিয়া যায়। বিসুদবারে কয়জন নোক নিয়া ফালানিরে দেকবার যায়। পাঁচশ টেহা য়াতে দিয়া ফালানিরে দেইহা আহে। তাগো পছন্দ অয়। শুক্কুরবারে ফালানির চাচা কয়জন নোক নিয়া শাব্দুলেগ বাইত্যে ঘর দেহুনি আহে। তাগো ঘর বর পছন্দ অয়। হুনিবার যায়, অববার যায়। এবা কইরা বাজার হদায় হেস কইরা বিসুদবারে বিয়া পড়াইয়া ফালানিরে নিয়া যায় হশুরবাড়ি। ইনু তার সবই আছে। দাদা হশুর, দাদি হউরি, হশুর, হউরি, ভাশুর, জাও, নোনাশ, নোনদ, দেওর, চাচাহশুর, চাচিহউরি, ফুবুহউরি, খালাহউরি, ভাশুরের ঘরে ভাইস্তা, ভাস্তি ইন্না বেকই আছে। ই বাড়ির বেক্কেই বালা মানুষ। খালি জাওডা একটু জাইরা গোছের। বেশী জাউরামি করলে জামাইয়ে ঢেহির ওচা দিয়া বাইরাইয়া য়ান্দন ঘরে ফালাই য়াখে। চাইর ভিটায় চাইরডা টিনের ঘর। বাইরবাড়ি আছে কাছাড়ি ঘর। হেনু ইস্টি এগানা আইলে থাকপার দেয়। একটা জাগীরও থাহে হে ঘরে। কামলা জামলা নুইলেও এই কাছাড়ি ঘরে বহে, খায় থাহে। য়ান্দন ঘর আগে ছোনের ছাউনি আছাল। অহন টিন নাগাই দিছে। অর দাদাহশুর অনেক বুড়া। মুতুল্লায় এহান দাঁতও নাই। হক্ত খাবার খাপ্পায় না। তার নিগা আটার নুটানি য়াইন্দা দিওন নাগে। হউরির য়াতের য়ান্দন বেক্কের কাছেই বালা নাগে। তার য়াতের সালুন পাসের বাড়ির মাইন্সেও চাইয়া নেয়, এবা মজা কইরা সালুন য়ান্দে। ভাহুরের ডাইবিটিস আছে। তার নিগা উটি বানান নাগে। হশুরেরও ডাইবিটিস য়োগ আছে। উনি আবার য়োটি খাপ্পায় না। খাইলে গলা জ্বলে। য়াইতে দুধ দিয়া কলা দিয়া ভাত চেইতকা খান। কবিরাজে য়োগের জইন্যে জানি তারে মুধু খাইতে কইছে। য়াতের তালুতে মধু নিয়া চাইটা খান।

ছাগল, গরু, মইশ, ভেরা, য়াস, কুরকা ইন্না বেকই আছে। পালে একটা বড় পাঠা আছে, দুইডা বড় খাসি আছে, পাঠি আছে দুইডা, ভরুইন্যা দুইডা ছাগল আছে। বিয়াইন্য ছাগলো আছে একটা। হেডার আবার তিন বাচ্চা। দুইডা মাইগ্যা বাচ্চা আর একটা মর্দা বাচ্চা। ছাগলের ওলানে বোটা মাত্র একটা। দুই বোটা তিগা যেসুম দুই বাচ্চায় দুধ খায় আরেকটায় ফাল পারতে থাহে। এই জন্যেই কেউ বঞ্চিত অইলে কয় “আমি অইলাম গিয়া ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা।” পাঠি দুইডা ভরুইন্যা সময় অইছে। বাইস্যা মাসে ভরবার পারে। বিয়াইন্যা গাই আছে দুইডা। একটার কাচিল্যা বাছুর। কাচিল্যা গাইয়ের দুধ খাওন যায় না। বাছুরের বয়েস এক মাস অইলেই কাচুইল্যা ছাইড়া যাব। হেসুম তিগা ফালানিরা ইডার দুধ পানাবার পাব। আর যে গাই কাচুইল্যা ছাইড়া গেছে হেডার দুধ পানায় ফালানির হউরি। পরতম বাছুরেরে গাইয়ের ওলান চাটতে দেয়। ওলান চাটতে চাটতে গাই চোনাইয়া দেয়। এরপরই ওলানভর্তি দুধ আহে। যেসুম বাছুরে দুধের বোটায় চোশন দেয় হেসুম হউরি বাছুরের মুখ ঝেংটা মাইরা হরাই হালায়। বাছুরের গলায় পাগা নাগাইয়া ফালানি বাছুরেরে টাইন্যা ধইরা হরাই য়াখে। ফালানি বাছুরের গতর য়াতাইয়া দেয়। বাছুরে ফালানির আচল চাবায়। উম্মুর দিয়া য়াটুর উপর দোনা য়াইখা হউরি চই চই কইরা গাই পানায়। দোনা ভইরা দুধ অয়। অব না ক্যা, গাইয়েরে ধানের কুড়া, গোমের ভুষি, পান্তা ভাত, আর কত কি খাওয়ায়। দুধ ত অবই। হেই দুধ খাইয়া হাইরাও য়াট বাজারে নিয়া বেইচা টেহা পায়। পালে একটা বড় হাড় গরু আছে। ইডারে কুরপানির নাম কইরা য়াইখা দিছে। কুরপানি দিলে মেলা গোস্ত অব। ই বাইত্যে দুইডা বল্ দও আছে। হেগ্না দিয়া আলানে পালানে চিপা চুপা দিয়ে য়াল বায়। কারন, বড় বড় ক্ষেতগুনায় য়াল বাওয়া য়য় পাওর ট্রিলার দিয়া। বহন বাছুর আছে দুইডা। বুইড়া একটা গাই আছে। হেডা বিয়ায়ও না, য়ালেও জোড়ন যায় না। ইডা কামে নাগে মলন দেওনের সুম। মলন জোরার সুম ইডা মেউয়া ইসাবে কাম করে। মলনের মইদ্যে জোড়ে বল্দগুনারে। কিনারায় জোরে বহন বাছুরগুনারের। পানাইন্যা গাই মলনে জোড়ে না।

সোংসারের কাম করনের বাবাকই আছে শাব্দুলেগ। নাঙ্গল, জোয়াল, চংগ, নাঙ্গুইলা, কোদাল, খোন্তা, ছেনি, পাচন, কাঁচি, দাও, বটি, বাগি, ইন্যা বেকই আছে। মেওপোলা মাইনষের কাম করনের সব জিনিসই আছে এগ বাইত্যে। ঢেহি আছে ধান ভানার, হাফট আছে ধান হুকাবার, কোটা আছে গাছ তিগা আম কাঠল পারবার, হলা হাছুন আছে ঘর বাড়ি হোরনের নিগা, উচি আছে ময়লা ফালাবার। ডাহি আছে ধান নেওয়ার, ঝাঞ্জইর ছাপ্নি আছে খই ভাজনের। জাতা আছে ছাতু ভাঙ্গনের নিগা। বুরকা, পাইল্যা, চাপ্নি, খোরা, হানকি, বাটি, ঘটি, নাইন্দা, কোলা, জালা, ডোল, বেড়, চালা, ডালা, ঝান্না ইন্না বেকই আছে। তাগ টিনের থালিও আছে, আবার করইর থালিও আছে। জামাই জোড়া, ইস্টি এগানাই আইলে করইর থালিতে খাবার দেয়। ট্রাংগ সুটেসও আছে। ধরতে গেলে ফালানির বালা বাড়িতেই বিয়া অইছে।

পালানের ক্ষতের ধাইরায় নাউ, কুমরা, হশা, ঝিংগা, পোড়ল, শিমইর, শীবচরণ এইন্যা আরজিছে ফালানির হউরি। ইন্যার জইন্যে বাশ দিয়া জাঙলা বানাই দিছে। হেইন্যা মইদ্যে ঝলমি ঝলমি তরিতরকারি ধরে। বাপের বাড়ির নিগা ফালানির পরাণ পোড়ে। তাই জাংলা তলে খারইয়া পুম্মুহি চাইয়া থাহে। বুক ভাইঙা কান্দন আহে তার।

ফালানির জামাইর ফেলাইট ছাড়নের তারিখ ঠিক অইছে। বিমান বন্দর পর্যন্ত তার নগে ক্যারা ক্যারা যাবো হেডা ঠিক অইল। একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করলো। মাও বাপেরে হেলাম কইরা শাব্দুল গাড়িতে উঠলো। গাড়িতে শাব্দুলের নগে উঠলেন এলাহি মেম্বর সাব, ফালানির ভাহুর, আর ফালানি। বিমান বন্দরে যাওনের পর পেঁচ মাইরা দালালে আরও ১০ য়াজার টেহা চাইয়া বইল। কয় যে কুনু কুনু জানি দেওন নাগব। অহন টেহা পাব কুনু? বিমান ছাইড়া দেওনের সোময়ও অইয়া গেল গা। হারাহারি কইরা মোবাইল কইরা বিকাশ কইরা দশ য়াজার টেহা আইন্যা দালালের য়াতে দেয়। শাব্দুল বিমানের সীটে গিয়া বহে। একসুম বিমান ছাইড়া দিল। শো শো শব্দ কইরা আসমানের দিকে উঠতে নইল। ফালানি বিমানের দিকে ফ্যাল ফ্যাল কইরা চাইয়া রইল। একসুম পচিম দিকের আসমানের দেওয়ার হাজের বিতর বিমানডা য়ারাইয়া গেল গা।

১০/৫/২০২১ খ্রি.

লেখকের কথাঃ

মাতৃভাষায় কথা বলতে ও শুনতে সবাই ভালো বাসে। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। আমাদের অনেকেই মায়ের ভাষায় কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। অনেকেরই নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা আছে। তারা পরিবারের সদস্যদের সাথে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলে। আমার বাড়ি টাঙ্গাইল। আমার এলাকায়ও নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা আছে। সেই ভাষাটাকে আপনাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ফালানির গল্পের ছলে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। আমাদের গ্রাম বাংলার জিনিসপত্রের আঞ্চলিক নামের সাথে পরিচয় করার প্রয়াস করেছি এই গল্পে। গল্পের ব্যাকগ্রাউন্ডে ফালানি ও শাব্দুল নামের দুটি কাল্পনিক চরিত্রে তাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যাটা সামান্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কাউকে দোষারোপ করার উদ্দেশ্য আমার ছিল না।

ফালানির নোনাশের জামাই

ফালানির নোনাশের জামাই একটু ভেবলা কিছিমের। কয় বছর ধইরা বিয়া করছে এহনো কোন পোলাহান ছোলাপান অয় নাই। বাপ মাও মইরা গেছে গা। দুইডা গরু আছে য়াল বাওনের। হেন্নারে পালতে অয় অর নোনাশেরই। খের কাইটা কুরার নগে মিশাইয়া চারিত দিয়া খাওয়ায়। নগে এক মোট নুনও মিশাই দেয়। অর নোনাশের জামাইই গরুগুনারে বাছ্রা ক্ষেতে নিয়া হাচার দেয়। গরুগুনা বালাই আছে, গামচাইয়া ঘাস খায়। টাইক ধইরা পানি খায়। নোনাশের জামাইরে হশুর বাড়িত নিতার দাওত দিলে নোনাশেরে নিয়া ত আহেই, নগে গরু দুইডারেও নিয়াহে। হেন্নারে ফালানিগ গরুর নগেই বাইন্দা থয়। অগ গরুয়ে হেগ গরুরে দেকবার পায় না। হিং দিয়া খালি গুতায়। ইন্না এহেবারে যাইরা গরু। নিতা খাবার আইয়া এক হপ্তা ভইরা তাহে। নোনাশে বাপের বাড়ি আইয়া একটা কামেও য়াত দেয় না। বইয়া বইয়া খালি ফালানির ছক্কল ধরে। আর ইডা ওডা কয়। ফালানি য়াও করে না। ফালানি মনে মনে কয় “নোনাশডা পাজি অইলেও বাপের বাড়ি আইয়া থাকপার চায় থাকুক। তার জামাইডারে নিয়া এত দিন থাহে ক্যা? জামাই খাওনের সুম একবার ইডা চায়, একবার ওডা চায়। একবার কয় কাচা মইচ দেও। একবার কয় পিয়াইচ কাইটা দেও। থাহুক মরারডা। ওডার গরুগুনা কিয়েরে নিয়ায়?”

২৭/৫/২০২১

ফালানির ঘাউড়া চাচা হশুর

ফালানির চাচা হশুরের একজোন বছরকারী কামলা আছে। কামে কাইজে বালাই। হেদিন য়াল বাওনের সুম নাংলের ফালাডা ভাইংগা ফালায়। দেহা অইলে তারে হইচ করে

– তুই নাংগল ভাংলি কিবায় রে?

– চাচা, উত্তর মুরার ক্ষেতে য়াল জুরছিলাম। দুই ঘুরানি দেওনের পরে একটা গাছের হিকরে বাইজা নাংগলডা ভাইংগা গেল গা।

– হে ডা ত বুজলাম। তুই নাংগল বাংলি কিবা কইরা হেইডা বালা কইরা ক?

– হেইডাই ত কইলাম। য়াল জোরার পাজুন দিয়া দুই বলদরে দুইডা বারি মারলাম। দুই ঘুরানির পরই মাটির নিচের একটা হক্ত হিকরের নগে বাইজা নাংগলডা ভাইংগা গেল গা।

– আরে বাইরা বেটা, নাংগল ভাংলি কিবা কইরা হেইডা ভাইংগা ক?

– য়াল জুইরা কুটি হক্ত কইরা ধইরা আছিলাম। ক্ষেতের মইদ্যে দুই ঘুরানি দেওনের সুম হিকরের নগে বাইজা টাস কইরা নাংগল্ডা বাইংগা গেল গা। মটকা কাঠের নাংগল মোনয়।

– আরে গাবর, নাংগল কিবা কইরা ভাংলি হেইডা ক।

এবা কইরা যতই বুঝায় ফালানির চাচাহশুর খালি হইচ করে লাংগল ভাংল কিবায়। কামলায় দেখল ইডা ত বালা ঠেটা মানু রে! ইডারে বালা একটা শিক্ষা দিওন নাগব।

কামলাডায় কয়দিন পারে দুপুরে খওনের সুম একটা ডাংগর মেয়ায় তারে খাওন বাইরা দিছাল। খাইয়া হাইরা বাইর বাড়ি গিয়া ফালানির চাচা হশুরের নগে দেহা য়য়। কামলায় হইচ করে

– চাচা, আইচকা দুপুর সুম আমারে যে মাইয়াডায় বাইরা দিছাল হেডা ক্যারা?

– আরে ছেরা, তুই অরে চিনস নাই। ওডা আংগ ছোট গেদি জয়গন।

– তাত চিনলাম। অইজে যে ছেরিডায় আমারে ভাত বাইরা দিল হেডারে ত চিনলাম না?

– আরে বাইরা বেটা, ওইডাই ত আংগ জয়গন। বেহের ছোট। আইজকা শাড়ী পিনছে। হেই জিন্তেই তুই চিনবার পারস নাই।

– আরে চাচা, আমি ত হেইডাই জানবার চাইতাছি ঐ মাইয়াডা ক্যারা?

এমুন্সুম জয়গন আইয়া কইল “এই যে আন্নেরা যে এনু মিটাই মিটাই কতা কইতাছুইন, উম্মুরা দিয়া গরু ছুইটা পাহা ধানের হিঞ্জা গুনা আমচাইয়া খাইহালাইতাছে। হেইডা দেহুইন গা।

১/৭/২০২১

ফালানির চাচি হউরিডা এহেবারে কিরপিন। মাছ পইচ্যা যুদি বগবগা কুইয়া অইয়া গোন্দ উইঠাও যায় তাইলেও ফালব না। আন্দন ঘরের পাছ তনে গুলাইলের পাতা তুইলা হেগনার নগে নাড়াচারি কইরা খায়। পেট পরিস্কার য়াখনের নিগা গোন্দ বাদাইলের পাতা ভাইজা খায়।

ফালানির চাচত দেওর

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ফালানির চাচত দেওরডারে কিবা কিবা জানি ঠেহে। য়াটবার সুম মাঞ্জা ঢুলাইয়া য়াটে। মেওপোলা মাইনষের নাগাল য়োঠে লিবিস্টিক দেয়। বাবরি চুল য়াকছে। মইদ্যেহানে হিতি করে। কপালে টিপও দেয়। য়াইসা য়াইসা কতা কয়। গুঞ্জি গায় দেয়। তপন পিন্দে। আবার ছেরিগ নাগাল ওড়না গায় দেয় গামছা দিয়া। খালি মেয়া মাইন্সের নগে মেল দিবার চায়। কেউ বাড়া বানবার নইলে তার নগে গিয়া ঢেহি পার দেয়। ফালানির নগেও ঢেহি পার দিবার নইছাল। ফালানি কইল “ছুট মিয়া, আন্নে অইলাইন গা মর্দাই মানুষ। আন্নে মাইগ্যা মাইনষের নাহাল করুইনকে ক্যা?” দেওর কয় “আলো মাই, ভাউসে কি কয়, আমার অহনই বিয়ার বয়স অইছি নিহি?” কতা কবার নইলেই দুই তিনডা তালি মারে হাতে। আর পান চিবায়। ফালানি হউরির কাছে কইছাল “ছুট মিয়া অবা মেয়া মাইন্সের নাগাল করে ক্যা? আমার নগে ঢেহি পার দিবার চায়। আমার শরম করে।” হউরি কইল “ওডা অর জর্মের দোষ। নাদের ডাক্তর কয় যে পোলা মাইন্সের গতরে যুদি জর্মে তিগা কিছু কোষ মেয়া মাইন্সের কোষের মোত থাহে তাইলে হেডায় অবা করে। হেডারে মাইন্সে হিজরা কয়। মেয়ানোকের কোষ যত বেশী থাকপ তত বেশি মেয়ালিপানা করব। আংগ ভাইস্তাডা কিছুডা হিজরার সভাব পাইছে। ওডারে বিয়া করাইলে বউ থাকপ না।”

ইবারের মরা পরের উপুর দিয়া গেছেঃ

ফালানি তার হউরির নগে তার ফুবু হউরিগ বাড়ি ফয়তার দাওয়ত খাইতে গেছাল। তারা ফবু হউরির নগেই খাবার বইছাল। খায়ন দায়ন ভালাই দিছাল। চামারা ধানের ভাতের নগে হাঁড় গরুর গোস্ত আর মাস কালাইর ডাইল। হেষে চুকা দুই। পাতলা দইয়ে কুশাইরা চিনি দিয়া মাহাইয়া চুমুক পাইরা খাইয়া ফুবু হউরি ঢেউক দিয়া কয় “ইবারের মরা পরের উপর দিয়া গেছে।” হুইন্যা ফালানির হউরি কয় “এল্লা বুঝি ইডা কি কইলাইন, বুঝবার পাইলাম না।” ফুবু হউরি বুঝাইয়া কয় “ইবার কলেরা য়ইয়া আংগ পোলার বউডা মইরা গেল গা, যেডার নিগা আমরা ফয়তা খাপ্পাইলাম। উম্মুরা আবার আংগ বড় গেদির জামাইডা মইরা গেছে কলেরা য়ইয়া। হেডার ফয়তা খামু আগামী শুক্কুরবার। দুইডাই পরের সোন্তান। তাই কই, ইবারের মরা পরের উপুর দিয়া গেছে। “

১২/৯/২০২১

ফালানির খাওনের কষ্টঃ

ফালানির হউরিডা কিবা জানি। পোলার বউগুনারে চাপে য়াখে। য়াকপ না ক্যা, ওডার হউরিও পোলার বউগরে চাপে য়াকত। তাই, হেইডা শোধাইতাছে হের পোলার বউগ উপুর দিয়া। ফালানি একবার মোনে মোনে কয় “আমি হউরি য়ইয়া তা করমু না। তয় এই হউরি বেটি যেসুম বুড়া অইয়া য়াতুর য়ইয়া যাব হেসুম মজা দেহামু। মজ্জালেও কাছ দিয়া যামুনা। বিছনা নষ্ট কইরা ফালাইলেও হেগ্না ধুমু না। ক্যারা বলে কইছে ‘ধারাইলে শোধানী আছে।” ফালানির মায়ের কতা মোনে য়য়। মায়ে কই দিছে “হউরি যত খারাবই য়উক হউরিরে কষ্ট দিবি না। পাপ য়ব।” হেই কতা মোনে কইরা ফালানি মোনে মোনে কয় ” থুক্কু ইন্যা কি চিন্তা করলাম! তওবা, হউরিরে কোন দিনও কষ্ট দিমু না।”

অহন হুনুন, ফালানির হউরি কিবা কইরা তারে খাওনে কষ্ট দেয়। ভাত য়ান্দনের সুম যুদি ফালানি হউরিরে হইছ করে “আম্মা চাইল কয় কাঠা দিমু?” হউরি চোপা কইরা উঠে “ক্যা, তোমার হোদ নাই? তোমার মায় হিকাই দেয় নাই, কয়জোন মাইনসের নিগা কয় কাঠা চাইল দিওন নাগে বুরকার মইদ্যে?” ফালানি আন্দাজ কইরা চাইল দেয়। বাড়ির বেক্কের খাওন শেষ য়ইলে ফালানির খাওন নাগে। কোন কোন দিন দুপুরের খাওন খাইতে ফালানির আছরের জের ওক্ত য়ইয়া যায়। বুরকায় ভাত কোম থাকলে কোমই খাইতে অয়। বেশি থাকলে খাইয়া হাইরা পানি দিয়া পান্তা ভাত বানাইতে য়য়। হেই পান্তা আবার য়াইতে খাওনের সুম ফালানিরই খাইতে অয়। ভাত যুদি পুইড়া ধরে হেই পোড়া ভাত ফালানিরই খাইতে অয়। ভাতের মইদ্যে যুদি ঘাসের বিচি, আখির দানা থাহে হেগ্না হুধ্যাই খাওন নাগে তার। বাড়িতে যুদি তার হশুর, ভাশুর কোন য়াবি জাবি আনে হউরি কোন কোন সুম ফালানিরে হাদে। আবার হাদেও না। হরবি কলাগুনা পাইক্যা মইজ্যা পইচ্যা যাইতাছে। তাও হউরি কোন সোম কয় না “বউ গ কলা গুনা খাও।” যেসুম ফালাই দিওন নাগব হেসুম কয় “এল্লা, বউ কলা খাইলা না?”

এবা।

৮/৯/২০২১

মুরগির আওয়াদানিঃ

(টাংগাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির হউরির আন্ডা পারা মুরগিডা ঘরের পাছে ঠোরকাইয়া ঠোরকাইয়া আধার খাইতাছাল আর মইধ্যে মইধ্যে গলা উচা কইরা করকরাইতাছাল। তারপর ঘরের ভিতর ঢুইকআ পড়লো। ফালানি এই কুরকা কইয়া ডাক দিয়া ঘরের ভিতর হান্দাইয়া দেহে মুরগিডা কিবা করে। এক বার নাফ দিয়া কারে ওঠে, আবার নাফ দিয়া চকির উপুর ওঠে, একবার নাফ দিয়া উগারের উপুর ওঠে, একবার নাফ দিয়া ডোলের উপুর ওঠে। আবার নাফ দিয়া ডোলের ভিতর ধানের উপুর চুপ কইরা বই পড়ল। ফালানি য়ান্দন ঘরে তার হউরিরে ডাক দিয়া কয় “আম্মা গো, মুরগিডা কিবা জানি ঘরের ভিতর আওয়াদানি করতাছে।” হুইন্যা হউরি কয় “করুক, আন্ডা পারবো, তুমি উন তনে আই পড়।”

একটু পর মুরগি কক কক কইরা নাইরা নুইল। তারপর বাইরইয়া কক কক করতে করতে ঘরের পাছে গিয়া মিলাই গেলো গা।

৩০/৯/২০২১

ফালানি বাপের বাড়ি আইপড়ছে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানি বাপের বাড়ির পুস্কুনি তরি আইলে পড়ে দেহে তার ভাবী ঘাটপাড়ে চুল আলগা কইরা মাথা মোল্কাইয়া গোসল করতাছে। নোন্দের জামাই দেইখা ফালাইলে ভাবীয়ে শরমাবো। তাই, জামাইরে কইল “ভাবী ঘাটপাড়ে মাথা আলগা কইরা গোসল করতাছে। শরম পাবো। গলা খাউর দেও।” জামাই গলা খাউর দিলে ভাবী চইমকা গিয়া তাত্তারি কইরা আঁচলডা ঝাহি দিয়া সোজা কইরা মাথায় দিলো। তাতে কি অইল, জামাই মাথা ত দেখলই এক ঝলক শরীরও দেইখা ফালাইল। তাই, মাথা নিচা কইরা কইল “সালামাইকুম, ভাবী সাপ কিবা আছুইন?” ভাবী কইল “এইত্ত, আছি, আন্নেরা যেবা দোয়া করুইন। যাইন বাইত্যে যাইন। আমি আইতাছি গোসল কইরা। ” ফালানি জামাইরে পিঠের মইদ্যে ধাক্কা দিয়া কয় “নও, ভাবী গোসল কইরা আহুক। ” ফালানি জামাই নইয়া বাড়িত গেলো।

ভাবীয়ে ভাবনায় পইড়া গেলো। ফালানিরে আনবার না গেলে ত আবার দেয় না। আইচকা জামাই যে নিজেই নিয়াইল? হউরিয়ে বাইর কইরা দিল নিহি?

বাইত্যে গিয়া দেহে যে ফালানির মায় হুতি দিয়া য়াইসালে তিগা ভুইত্যা একটা ডেগ নামাইতাছে। জামাই গলা খাউর দিয়া কইল ” আম্মা কিবা আছুইন?” হউরিয়ে কইল “কিবা আর থাহি। মাঞ্জায় টাস নাগছে হুতি দিলে সোজা য়নজায়না। তোমরা ভালা আছো? বিয়াই, বিয়ানি, পুতুরা, জিয়ারি, বুইনেরা ভালা আছে?”

ফালানিরে কইল “গেদি, জামাইরে অজুর পানি দেও। খই ভিজাইয়া চিপ্পা মিঠাই দিয়া নাস্তা দেও।”

জউরিরেও চিন্তায় পইরা গেলো। কতানাই বার্তা নাই, জামাই যে ফালানিরে নইয়া অভম্বিতি হশুর বাড়ি আইল?

ads banner:

ফালানি চুক্কা আম খাইল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

গেছেকাইল ফালানির জামাই বাড়িত গেছে গা। যাওনের সুম ফালানির মায় বুরকায় কইরা কয়ডা জিয়ল মাছ দিয়া দিছে। আর কইয়া দিছে “বাজান, মাছগুনা বিয়াই বিয়ানিরে য়াইন্দা খাবার কইয়। জিয়ারিগ নইয়া আবার আইয়। কয়ডা টেহা দিয়া দিলাম। এডা তপন কিন্যা নইয়।” যাওনের সুম ফালানিয় কইছে “আন্নে আমারে নিবার আহুইন জানি। আম্মা কইছাল পেটের সোন্তান তিন মাস অইলে বাপের বাড়ি তিগা আই পড়বা। জৈষ্ঠ্যমাসে তিন মাস পড়ব। নিবার আহুইন জানি। তার আগে যুদি আবার পারুইন এডা বেলাউছ নিয়াইবাইন।

করিম আর ফালানি বাইরবাড়ি আম গাছ তলে বইয়া বইয়া আলাপ করতাছে। করিম কইল

– বুগ, আমগুনা ভালাই ডাংগর অইছে। অহনো ক’ড়া আছে। কয়দিন পরে আইট অইযাবো। খাবা নিহি। ইগাছের আম কাচামিঠা। ওগাছের আম জাউন্যা জাউন্যা নাগে। আর কাচারি ঘরের পাছের আম এবা চুক্কা গো!

করিম গাছে উইঠা কয়ডা কাঁচা আম পাইরা নিয়াইল।

ফালানি কইল

– তুই কাঁচামিঠাডা খা। আমারে চুক্কাডাই দে।

– আম ছিলামু কি দিয়া? ইবার চৈতপূজায় মেলায়ও যাইনাই, ছুরিও কিনি নাই। ঝিনই আছে। ঝিনই নিয়াহিগা। কাইলকা পাটার মইদ্যে ঝিনই ঘইষা দাড় দিছি। য়াসেরে খাওনের নিগা বড় বড় ঝিনই কুড়াইছিলাম। ঝিনইডা খুব ভালা অইছে। চক পাড়ারা ঝিনই পুইড়া চুনা বানায়। পাথর চুনার দাম বেশি। তাই বেশিরভাগ বাইত্যেই ঝিনইর চুনা খায়। অহন খাল হুকাইয়া মেলা ঝিনই বাইরইছে।

– ঐযে এডা হিল পড়া আম দেখতাছি। ঐডা পাইরান। হিল পড়া আম খাইতে ভালাই নাগে। কিবা জানি দেওয়ায় গুড়্গুড়াইতাছে। গুমাও নাগতাছে। ঝড়ি আবার পারে। ঝড়ি আইলে মেলা আম পইড়া যাবগা।

– বু, কাক্কি কি ইবার কাসন্ড বানাইছে? যেসুম আম পাহন ধরব হেসুম কাঁচা আর পাহা আম বটি দিয়া কুচা কুচা কইরা কাইট্যা কাঁচা মইচ দিয়া ভাঞ্জাইয়া ভত্তা কইরা দিবা।

এদুল্যা বাতাস আইলো। হিল পড়া আমডা পইড়া গেলো। ফালানি দৈড় দিয়া খোটতে গিয়া উইস্টা খাইয়া পইড়া গেলো। করিম কইল “ভারে গেলেই ত অইত। অহন পইড়া দুক্কু পাইলানা?”

ফালানির ভাশুর চেতাং মাইরা হুইয়াছাল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানি বাইরবাড়ি তনে আইয়া বড় ঘরে গেছাল তেতইল খাবার নিগা। কয়দিন দইরা খালি চুক্কা খাবার চায় ফালানি। ভাতত খাবারই পায়না। মাছ গোস্ত যেডাই দেইক হেইডাই খালি বয় আহে। তেতইল চাইটা খাইলে চাইরডা ভাত খাবার পায়। ঊমা, ঘরে গিয়া দেহে ভাশুরে চকির উপুর চেতাং মাইরা হুইয়া ঘোম দিছে। ইবাড়ির মানুগুনা এবাই। এহাকজোনের ঘোম পারনের ডিল এহাক ধরনের। কেউ ঘোমায় চিত্তর অইয়া, কেউ ঘোমায় উপ্পুর অইয়া, কেউ ঘোমায় কাইত অইয়া, কেউ ঘোমায় কাউব্দা দিয়া, কেউ ঘোমায় মোক ঢাইকা, কেউ ঘোমা য়া কইরা, কেউ ঘোমায় নাক গাইকা আবার কেউ ঘোমায় তপন খুইলা বুক তরি টান দিয়া। অসুবিধা য়য় না হেসুম তপন দিয়া বুক তনে য়াটু উব্দি ঢাকা থাহে। শরমের কতা, ভাশুরের হুমকে তেতইল খাব কিবায়। এমুন সুম য়ান্দন ঘর তিগা হউরি কইল “বউগ, তোমার ভাশুরেরে ডাক দেও, জহুরের নোমাজের ওক্ত গেতাছেগা, চিত্তর অইয়া হুইয়া ঘোম দিছে।” ভালাই অইল। ফালানি অস্তে কইরা ডাক দিল “মিয়া ভাই, ওটবাইন না? আম্মা নামাজ পড়বার কইতাছে।” ভাশুরের ঘোম ভাইংগা গেলো গা। দুই য়াতের দুই আঙুল দিয়া চউক ঘষা দিয়া য়া কইরা য়াম নিয়শ ছাইরা কয় “ঘোমাই পরছিলাম। এর মইদ্যেই হপন দেখলাম ঘরে এক চোর ঢুইকা কি জানি নিবার নিগা য়াতাপাতা করতাছে। তোমার ডাহনে ঘোম ভাইংগা গেলো গা।

– হেডা বেটা চোর, না বেটি চোর আছাল?

– বেটি চোরই ত দেকলাম।

– তাইলে মোনয় তেতইলের আচার খাবার আইছাল।

– য়বার পারে।

ভাশুর উইঠা চউক কচলাইতে কচলাইতে নাইয়ের তলে তপন পিন্দা য়াটতে য়াটতে কলের পাড় উম্পি গেলোগা।

ভালাই অইল। ফালানির হউরি উগার উপুরের ধন্নার নগে সিকার মইদ্যে করইর বইয়মে তেতইলের আচার য়াকছাল। হেইডা পারবার সুম একটা বুরকার মইদ্যে ঠ্যালা নাইগ্যা ঢুস কইরা পইরা গেলগা। হউরি হইছ করল

– বউগ, শব্দ অইল কিয়ে, কী পড়ল?

– বিলাই, বিলাইয়ে বুরকার মইদ্যে মুক দিয়া কাইত কইরা ফালাইছে।

– ভাংগে নাইত?

– না, ভাংগে নাই।

ফালানি বইয়ম তিগা তেতইল বাইরা কইরা চোটকাইয়া খাওনের সুম জিলবায় চট চট শব্দ য়ইছাল। হউরি বুজবার পাইয়া কইল ” বউগ, বেকটি খাই ফালাইও না। গেদির নিগা য়াইখা দিও। গেদি আইলে তেতইল খাবার চাবো। ” ফালানি শরম পাইল।

ফালানির মাথার চুলে বিলি দিলো

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

দুপুইরা খাওন শেষ কইরা ফালানির মায় ঘরের হাইঞ্চায় হরবি গাছটার তলে টুলডা নইয়া বইল। ফালানিরে ডাক দিয়া কইল “গেদি, আয়ছে, তোর চুলে বিলি দিয়া দেই।” ফালানি ফিরাডা টান দিয়া আইন্যা মায়ের হুমকে বইল। ফালানির ছোট বুইনডারে ডাক দিয়া কইল “অ গেদি, তুইয় আয় মাথায় বিলি দিবার। তর ভাবীরেও আবার ক। আর বড় ঘর তনে মোস্কা, হাড়ের কাহই আর খাস তেলের বোতলডা নিয়ায়। এরপর বেক্কেই লাইন দইরা গাছতলে বইল মাতায় বিলি দিবার নিগা। বেকের আগে বইল ফালানির ছোট বুইন। তার পাছে ফালানি। তার পাছে ফালানির মাও। তার পাছে ফালানির ভাবী বইল। মাথায় বিলি দেওন শুরু অইল। ভাবীডার পাছে কেউ বহে নাই। তাই ভাবীর বিলি দেওনের কেউ নাই। পরের বাড়ির মেয়াগ এবাই অয়।

গেরামের মেয়া মাইনষের যেসুম কাম কোম থাহে হেসুম তারা লাইন দইরা মাথায় বিলি দিতে বহে। বিলি দিয়া তারা উহুন আনে। মোস্কা দিয়া উহুন আইব্যা মুচমুচি মারে। য়াড়ের কাহই দিয়া চুলে হিতি করে। যারা মাথা মোলকাইয়া গোসল ধয় না তাগ মাথায় উহুন য়য়। উহুনে চুলের গোড়ে বই বই য়স খায় আর আগে। এই জোন্যে উহুন অইলে মাথা খাইজায়। উহুনে গুড়া গুড়া আন্ডা পারে চুলের গোড়ে। হেই আন্ডা ফুইটা নিক বাইরয়। এবা খুদি খুদি নিক বাইটা বাচ্রার নাগাল, চুলের নগে নাইগ্যা থাহে। এই নিক গুনা নউখ দিয়া চিমটি দিয়া দইরা আনা যায়। দুই য়াতের বুইড়া আঙ্গুলের চিপা দিয়া টিপি দিয়া ইন্যারে ফাটাইয়া মাইরা ফালান যায়। আবার মোসকা দিয়া ধুইরা টান মাইরা আইন্যা চাপ দিলে মুচমুচি ফাইট্যা মইরা যায়। বড় উকুন দুই আঙ্গুল দিয়া ধইরা আইন্যা দুই বুইরা আঙুলের নউখ দিয়া চিপা দিয়াও মাইরা ফালান যায়।

মাথায় বিলি দিতে দিতে মেওপোলাগুনায় আলাপ জুইরা নইল।

ফালানির বুইন – তোমরা ঢেলা ঢেলা উহুন আইন্যা আমার য়াতে দিবা। আমি আঙ্গুল দিয়া চাপা দিয়া টাসটাসি মাইরা ফালামু।

ফালানি – এই যে এডা ধরছি। গালাই ফালা।

বুইন – ইডা না উরুসের নাগাল ভুইত্তা। হেদিন দেহি দুলাভাইর ঘারের নিচে পিঠের উপুরে নাল টক টকা অইয়া চাক্কা বান্দিছে। আমি কইলাম, এল্লা দুলাভাই, আন্নের পিঠে কী অইছে? দুলাভাই কইল যে তোংগ চকিত উরুস আছে। উরুসে কামড়াইছে।

ফালানি – তুই আবার দেকলি কিবায়?

বুইন – দুপুরসুম গোসল কইরা উঠানে বাশের আড়ের উপুর তপন হুকা দেওনের সুম দেখছি।

ফালানি – মাইনষের প্যাচাল বাদ দ্যা, সোজা অইয়া ব। তর চুল এবা পাটের ফেউয়ার নাগাল ক্যা? এই ফেইস্কা চুলের আগা হোমান কইরা কাইট্যা ফালান নাগব। কাহই দিয়া চুল দোয়াবি। চুলের মইদ্যে জট অইগেছে।

বুইন – চুলের মইদ্যে ভালা দামী দামী তেল দিওন নাগে। মাইনষের কাছে হুনছি কি একটা তেল জানি আছে, হেডা চুলে দিলে চুল তোসা পাটের নাগাল বড় অইয়া মাটি ছেচইরা যায়।

ফালানি – তর দুলাভাই আমারে বোতলের বাসনা নাইরল তেল আইন্যা দেয়। আমার হউরি খালি হস্তা জিনিস আনবার কয়। হে আনবার কয় আলগা নাইরল তেল। হেন্যা আমার কাছে পোড়া পোড়া গোন্ধ করে। নাইরল করাইর মদ্যে আইসালের আগুনে জ্বাল দিয়া আলগা তেল বানায়। হেই জোন্যে গোন্ধ করে।

বুইন – তাইলে বতলের নাইরল তেল বাসনা করে ক্যা?

ফালানি – মিশিনে নাইরল তেল বানাইয়া তার নগে বাসনা ফুলের পাপড়ি ভিজাইয়া থয় মোনয়।

মা – তর বাপে সব সুমই আমার নিগা বাসনা তেলের বতল আনত। বিয়ার সুম দিছাল গোন্ধরাজ তেল। তুই য়বার পর আমার মাথার চান্দি জ্বলত। চান্দি দিয়া ততা ভাপ বাইরইত। এবা ততা য়ইত জানি চান্দিতে আলই ধানের চাইল দিলে ফুইট্টা উঠব। হিম কবরি তেল দিলে মাথা ঠান্ডা য়ই গেত। তাই, হেসুম হিম কবরি তেল আনত আমার নিগা।

ভাবী – আংগ মা মাথায় কদুর তেল দেয়।

বুইন – মা, কদুর তেল বানায় কি দিয়া গ?

মা – মাইনষে কয় না, যেই কদু হেই নাউ। নাউরেই কোন কোন মাইনষে কদু কয়। নাউয়ের বিচি তনে তেল বাইর করলে তারে কয় কদুর তেল। জয়না গোটার বিচির তনে তেল বাইর করলে কয় জয়না তেল। বয়রা গোটার বিচি তিগা অয় বয়রা তেল। বাজনা গোটার নিচি তনে বাজনা তেল, তিলের তিগা তিলের তেল, ভেন্না গোটা তিগা ভেন্না তেল, বাদাম তিগা বাদাম তেল, হউসা তিগা খাস তেল। সূর্যমুখীর বিচির তনেও তেল য়য় সূর্যমুখী তেল।

ফালানি – সোয়াবিন তেল, জল্পইর তেল, কালিজিরা তেল, জয়তুন তেল, ইন্নার কথা ত কওই নাই।

বুইন – মইয়রজান বুর চুলগুনা দীলগা আছে। ছাইড়া দিলে য়াটুর নিচ তুরি পড়ে।

ভাবী – মইয়রজানের চেহারাডা খপসুরুতের অইলেও সুখ অইল না। জামাইয়ে ছাড়া কইরা দিছে।

ফালানি – ক্যা, কি অইছিল?

বুইন – ওডার হউরিও যেবা জাউরা, ওডার জামাইডাও হেবা জাউরা। জমিন জিরাত বেইচ্যা, ওডার গয়নাগাটি বেইচ্যা বিদেশ করবার গেছে গা। মইয়রজান বু জিদ ধরছাল গয়না বেচপার দিব না। জোর কইরাই গয়নাগুনা বেইচ্যা ফালাইলে বু বাপের বাড়ি আই পড়ে। আর শশুরবাড়ি যায় না। জামাইয়েও তারে কাগজ কইরা খেদাই দিছে।

ফালানি – এই জোন্যেই কয়দিন ধইরা দেখতাছি ছেড়ি গরু-ছাগল হাচার দেয়। অইদে মদে কাম করে। বেজার অই থাহে। আমার নগেও মোন খুইলা কতা কইল না। গয়না নইয়া কি কেউ কব্বরে যায়? গয়নার নিগা কিয়েরে বিয়া ভাংগন নাগব? বেক্কুইল্যা মেয়ানোক! জামাই বিদেশ তনে টেহা কামাই কইরা আইন্যা ওর থিগা আরও ভরা গয়না কিনবার পাইত।

মা – কিবাজানি দেওয়ায় গুড়্গুড়াইতাছে। টিনের চালে ঢাসঢাসি ফোটা পরতাছে। বৌগ, উঠ, তোমার হশুরের তপনডা ভিজ্জা যাব। তুইল্যা ফালাওগা। উইঠা পর তরা।

ফালানি গরুরে গোস্ত খাইতে দিছাল

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

গয়নাগাটি বেইচ্চা ফালানের পর তিগা ফালানির মুহে য়াসি নাই। এরপর আবার পালের হাড় গরুডা বেইচ্চা ফালাইছে। এই জোন্যে তার মোনডা এহেবারে ভাইংগা গেছেগা। গুতাইন্যা হাড় অইলেও ফালানিরে কুনদিন গুতায় নাই। গরুডার নিগা ফালানির পরন পোড়ে। খালি চাড়ির পাড়ের মুহি চাই থাকে। মশায় যাতে না কামুর দিবার পারে হে জুন্যে চট কাইটা হাড়ডার গতরে পিনদাইয়া দিত। হেই চটটা অহন গোয়াইল ঘরের বেড়ার উপুর ঝুলতাছে।

ফাগুন মাস। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুল ফুল ফুইটা গাছ নাল য়ইয়া গেছে। গাছ ভর্তি হালিক ফুলের মধু খাইতাছে আর কালকিল করতাছে। ঝোপের ভিতর তিগা কুকিল পৌখে কু কু করতাছে। কিবা জানি হুনা হুনা নাগতাছে ফালানির। দুপুর বেলা পুস্কুনির পাড়ে আম গাছ তলার বাসের মাচাংগে গিয়া বইল। চৌখ আবার চাড়ির পাড়ের মুহি। মোনে অইয়া গেল হেই হাড়ের কথা। নতুন বউ কালে এক বার চাড়ির হাড়ের খাবারের নগে ফালানি গোস্তের সালুন মিশাই দিছাল। গরু যে গোস্ত খায় না হেডা ফালানি জানত না। ফালানি ভালাবুইজা গরুর খাওনের নগে গোস্ত মিশাই দিছাল। হাড়ে চাড়ি খায় না ক্যা, খায়না ক্যা, ইডা নইয়া বেবাকে যেসুম পেচাল পারতাছে হেসুম ফালানির জ্যাডা হশুর আইয়া চাড়ির খাওন আওলাইয়া দেহে গোস্ত মিশাইন্যা। কইল “এই, ইন্যার নগে গোস্ত মিশাইছে ক্যারা? ফালানি কইল ” আমি গো।”

– মিশাইছ ক্যা?

– আমার গরুডার নিগা পরন পোড়ে, তাই।

– এই পাগুল্লি, গরুয়ে যে গোস্তের বয় সইয্য করতে পারে না হেইডা তোমার মাও বাপে হিকাই দেয় নাই? গোস্ত ভাঞ্জাইয়া দিছ দেইখাই গরুয়ে খাইতাছে না। চাড়ির বেবাক খাবার হেইমটা পরিস্কার কইরা নতুন কইরা খাবার দেও।

ফালানি বেবাকের হুমকে চাড়ি পরিস্কার কইরা নতুন কইরা খাবার দিল। গরু হেইন্না গামছাইয়া খাইল।

ফালানি এক ঢেইলেই য়াঁস মাইরা ফালাইছাল

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালালি হেদিনকাও বাইরবাড়ির গাছ তলের মাচাংগে বইয়া ঠ্যাং নাচাইছাল। দেহে পুস্কুনির পানিতে দুইডা য়াঁস হাতুর পারতাছাল জোড়া ধইরা। এডা য়াঁসা আরেডা য়াঁসি। দেইখা ফালানির মেলা খুশি নাগছাল। হেসুম অচমবিতি তাগ বাড়ির কতা মোনইল। হেডা বিয়ার আগের কতা। হেগ পুস্কুনিতেও হেগ দুইডা য়াঁসা-য়াঁসি হাতুর পারত। হেডাও তার কাছে বালা নাগত। মস্কিল য়ইল, একদিন দেহে ঘাটের যেনু বইয়া ফালানি কাপড় ধোব হেনু ঢাল্লা একটা আগা দিছে। য়াঁসের কামই অবা। গ্যাতগেতি খাব, আর যেনুনা হেনু পেঁচপেঁচি আগবো। য়াঁসের গু ঘাটে দেইখা ফালানির য়াগ উইঠা গেলো গা। পুস্কুনির পাড়ে তিগা পাইল্যা ভাঙার চেড়া দিয়া একটা ঢেইল মারছে। হেই ঢেইল নাগল গিয়া য়াঁসিডার মাতার মইদ্যে। মাতায় ঝাই ধইরা কাইত অইয়া পানিত ভাসপার নইল। ফালানি তাত্তারি কইরা য়াঁসটারে ধইরা বাড়িত নিয়া গিয়া মায়রে কইল “মইরা গেলো গ।” মায় কইল “জব কর তাত্তারি।” ফালানির বড় ভাইয়ে অবাই নেংগা বঠি দিয়া য়াঁসিডারে জব কইরা ফালাইল। উনুকার মানু অবাই করে। য়াঁস কুরকা যুদি কোন কারনে মইর যাবার নয়, তাত্তারি জব কইরা ফালায়। ফালানি হেসুম ছোট আছাল। বিয়ার যোগ্যি অইছাল না। পোলাইপানির ভাবে যায় নাই। হেই য়াঁসের সালুন খুব বাস্না অইছাল। গোস্তের টুকরা য়াতে নইয়া বারিন্দায় খারই খারইয়া যেসুম ফালানির চাচত ভাইরে দেহাই দেহাই ফালানি খায়, হেসুম চাচত ভাই কয় “আমগোও য়াঁস কুরকা আছে! আমগো য়াঁস কুরকারও ব্যারাম অব। ব্যারাম অইলে আমরাও জব করমু। হেসুম আমরাও অবা দেহাই দেহাই খামু।” এবা য়াসুইন্যা কতা মোনে অইল ফালানির। যে য়াঁসাডা বাইচ্যা আছাল, হেডাও কয়দিন পরে ফালানির দুলাভাই আইলে জব কইরা খাই ফালায়। এই য়াঁস দেইখা হেই য়াঁস গুনার কতা মোনয়। পরান পোড়ে।

ads banner:

ফালানির জামাইরে বিদেশ করবার দিবনা

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

পরদিন দুপুসুম ফালানি, ফালানির জামাই আর করিম গাছতলে বইয়া আলাপ করাতাছিল। এমুনসুম শুয়াকুরের মুহি তিগা মগ্য মিয়া এডা ছাগল নইয়াইতাছিল। বাইরবাড়ি তুরি আইয়া ছাগলডায় খুট্টি ধরলো। যতই টান দেয় ততই খুট্টি ধরে। পাইছায় খালি, আইগায় না। হেসুম মেলা বাতাস আছিল। মগ্য মিয়া ফালানির ভাবীর কিবা ভাই অয় জানি, কপ্পামু না। হেই জোন্যে তাগ মইদ্যে বেয়াই বিয়ানি সোম্পর্ক। তার নগে ফালানিরে দিয়া একবার বিয়ার কতাও অইছাল । ফালানির পছন্দও অইছাল। কিন্তু ফালানির বাপে কি জোন্য জানি পছন্দ করল না। ইডা আবার জামাইয়েও জাইন্যা ফালাইছে। এই জোন্যে মগ্য মিয়ারে জামাই ভালা চৌক্ষে দেহে না।

ফালানি মগ্য মিয়ারে হইছ করলো “ছাগল কিন্না আনলাইন নিহি?” মগ্য কইল “টাইন্যাই নিমু। ” আবার হইছ করল “আমি হইছ করতাছি, ছাগলডা কিন্যা আনলাইন নিহি।” কয় “হেছড়াইয়াই নিমু।” ফালানি কয় “কানে কোম হুনুইন নিহি?” মগ্য কয় “দড়ি ছিড়ব না। দড়ি হক্ত আছে। ” আসলে মগ্য মিয়া য়ারকালা না। বাতাসের শব্দে কতা ঠিকমতো হোনা যায় নাই। মগ্য মোনে করছে ছাগলের খুট্টির কথা কইতাছে। করিম খুট্টি ছাড়াইন্যা কাম করল। গাছ তিগা অল্প কয়ডা কাঠলের পাতার ডাইল য়াতে নিয়া কইল “আয় আয়।” অবাই ছাগলডা খুট্টি ছাইড়া ফালানিগ কাছে আইল। মগ্য মিয়া তাত্তারি কইরা ঘোড়া কাঠের পয়ার মইদ্যে ছাগলডারে বাইন্দাহালাইল। ছাগলডায় হেনু চোনাই দিল। চোনাই হাইরাই নাদান নইল। বটি বটি নাদা। করিম কয় “ছাগলের নাদা অবা বটি বটি য়য় কিবায়? আট্টু বড় অইলে ইন্যা দিয়া মাডবল খেলান গেতো। ছোট পোলাপাইনে বুট মোনে কইরা মুহে দিব।” ফালানি কয় “তুই যেসুম আকুরা পারস হেসুম বুট মোনে কইরা ছাগলের নাদা মুখে দিছিলি।” করিম কয় “ফালানি বু, বেশী কিছু কইলে কইল আমি তোমার কতা দুলাভাইর কাছে কইয়া দিমু।”

ফালানি মগ্যরে যেই কইছে “আন্নে একটা য়াম ছাগল” অবাই মগ্য কইয়া উঠল “আন্নের জামাইই একটা য়াম ছাগল।” ফালানি কইল “আমি কবার নইছিলাম আন্নে একটা য়াম ছাগল কিনবাইন। য়াম ছাগলে লাভ বেশী। মেলা দাম পাওযায়। হবি ভাই একটা য়াম ছাগল পাইল্যা ডাংগর কইরা পায়তিরিশ য়াজার টেহা বেচ্চে।” মগ্য কইল “আবার ঠাস কইরা পইরা মইরা গেলে পায়তিরিশ য়াজার টেহাই গেলো গা।” ফালানির জামাই বিরক্তি য়ইয়া কইল “ছাগলের পেঁচাল বাদ দেওছে।”

ফালানি মগ্যরে হইছ করলো

– আইচ্ছা বিয়াই, আন্নে বিদেশে গিয়া কিয়ের চাকরি করুইন?

– আমি কোম্পানির চাকরি করি। সহাল বেলা অফিসে আর বিহাল বেলা মালিকের বাসায়। য়াইতে মালিকের বাসায়ই থাহি।

– খাওয়া দাওয়া য়ান্নাবাড়ি?

– কামের ফাকে আমিই দু’য়ান য়ান্দি। বেশী আন্দন নাগে না। মালিকে খাইয়া যেডি বেশী য়য় হেডিই খাইহারন যায় না। থালি ভইরা ভাত, নয় পোলাও নিব। আস্ত মুরগী পাতে নিব। এক কামুর খাইয়া আর খাব না হালায়। হেইন্যা আমারে ফালাবার দেয়। আমি নিয়া কামড়াই খাই। য়াইতে এসি ছাইড়া হুই থাহি মালিকের বাসায়ই। আরাম আছে।

– হেই জোন্তেই ত আন্নের এবা ভুড়ি অইছে। আরামে থাহুইন ত, আর আই পরনের নাম নাই। এনু থাকলেত ছাগল টানন নাগব। বউয়ের ফরমাইস করন নাগব। অহন আলা আইপরুইন গা।

– এই, বিয়াই, নইন আন্নেরে নিয়া যাই বিদেশ। আমি ভিসা আইন্যা দিমু নি, আমার মালিকেরে কইয়া।

– ফালানি হুইন্যা তেলে বাগুনে জ্বইল্যা উঠলো। আন্যের কুবুদ্ধি দেয়ন নাগবনা। আংগ বিদেশ করন নাগব না। আমরা কষ্ট কইরাই থাকমু। অহন আলা বিয়ানির কাছে যাইন।

ফালানি হশুরের তপন ফালাই দিছাল

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

গয়নাগুনা আর পালের হাড় গরুডা বেচনের পর তিগা ফালানির বেশী ভালা ঠেহে না। কামে মোন ধরে না। হউরিয়ে বুজবার পায়। তাই বেশী কিছু কয় না। ফালানি কাম বাদ দিয়া খালি বাইর বাড়ি মাচাংগে বই থাহে। এমমুর দিয়া হউরি য়ান্দন ঘরে বইয়া বটি দিয়া তরিতরকারি কাটতাছে। ছিমইর কাটা শেষ। যেসুম নবিল্লা কাটতাছে হেসুম ফালানি বাইর বাড়ি তিগা বাইত্যে আই পরতাছে। উঠানের মইদ্যে দড়ির উপুর হশুরে তপন হুকা দিয়া য়াকছে। হেই তপনের নিচ দিয়া যাওনের সুম মাথার কিলিপের নগে বাইজা তপনডা মাটিত পইরা গেলো গা। ফালানি ধাতুবাত কইরা তুইল্যা ঝাহি দিয়া আবার হুকা দিয়া য়াকলো। হউরি আবার হেডা দেইখা ফালাইছে। কয় “কিবা কইরা য়াটো, হশুরের তপনে বাইজা পড়? হোদ নাই?”

ফালানিগ গাই বিয়াইছে

(টাঙ্গাইলের ভাষার ব্যবহার)

ফালানিগ চিত কপাইল্যা গাইডা আইজকা বিয়ানবেলা বিয়াইছে। একটা বহন বাছুর অইছে। এটের পর তিনবার বহন বাছুর অইল। এডা হাড় বাছুর অইলে ভুষি টুষি খাওয়াইয়া পাইল্যা নাইল্যা ডাংগর কইরা বড় কইরা কুরবানির য়াটে বেইচা ভালা দাম পাওন গেত। তাই, ফালানির হউরির মোন ভালা না। অওনের পর থিগাই বাছুরডা জারে থইরালে কাপতাছে। ফালানি গরুর নিগা গোয়াইল ঘরে খের বিছাই দিছে জানি টেল্কা না নাগে। বাছুরডার নিগা ফালানির পরণ পোড়ে।

শব্দার্থঃ

চিত কপাইল্যা – কপালে সাদা রঙ আছে

গাইডা – গাভীটা

আইজকা – আজকে

বিয়ানবেলা – সকালে

বিয়াইছে – প্রসব করেছে

বহন বাছুর – বকনা বাছুর

হাড় বাছুর – ষাড় বাছুর

অইছে – হয়েছে

অইল – হলো

এটের পর – পরপর

পাইল্যা নাইলা – লালন পালন করে

য়াটে – হাটে

গেত – যেতো

ডাংগর – বড়

জারে – শীতে

থইরালে – থরথর করে

টেল্কা – ঠান্ডা

পরণ পোড়ে – মায়া লাগে, প্রাণ পোড়ে।

in-feed-ads:

ফালানির বেক গয়নাগাটি বেইচা ফালাইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির চাচত দেওর চাকরি করবার নিগা ছৌদি যাবো। চাইর লাখ টেহা নাগব। দালালেই সব কিছু কইরা দিতাছে। মাও-বউয়ের গয়নাগাটি, ইডা ওডা বেইচা দুই লাখ টেহা দালালের য়াতে তুইলা দিছে। মেডিকেলে আনফিট কইরা কিছু টেহা বেশী নিছে দালালে। টেহা দিলেই যুদি আনফিট তিগা ফিট য়য়, তাইলে আনফিটের ইপোর্টটাই ভুয়া মোনে য়ইতাছে। যাইগ্যা, নেয় নেইগ্যা। ছলের টেহা জলেই যাবো দালালের। অহন অনেক টেহা যোগার করতে য়বো। ফালানির চাচাহশুর পালানের ক্ষেতটা বেচপার চাইল ফালানির হশুরের কাছে। কইল “আন্নের ক্ষেতের নগে ক্ষেত, পালানের ক্ষেত, য়াস, কুরকা, ছাগল, গরু ছাইড়া দিলেই এই ক্ষেতে আইয়া পড়ে। আমি চাই আন্নেই এই ক্ষেতটা নেইন। মাইনসের কাছে জমিন বেচাডা ঠিক অব না।” ফালানির হশুরের য়াতে টেহা নাই জমিন কিনবার। য়াইতে ফালানির হশুর- হউরি গিরিমিন্টি কইরা বুদ্ধি বাইর করলো ফালানির গয়নাগাটি বেইচ্যা টেহা যোগার করবার নিগা। বড়ঘরে ডাইকা নিয়া হউরি ফালানিরে বুজাইয়া কইল “বউগ, পালানের জমিনডা বেইচা ফালাইতাছে। আংগই নিনন নাগব। আংগ য়াতে অহন টেহা নাই। কইছিলাম কি, তোমার বাপের কাছে কইয়া যুদি কিছু টেহা যোগার কইরা দিতা!” ফালানি নাক খাউজাইয়া কইল “আম্মা, আংগ বাবার কাছেও অহন টেহা নাই। টেহা চাওন ঠিক য়ব না। ” হউরি পানের পিস্কি ফালাইয়া কইল “তাইলে তোমার গয়নাগুনা বেইচা ফালাও। উন্না ত আমরাই দিছিলাম। ক্ষেতের ফসল বেইচ্চা আবার বেক গয়না কিন্যা দিমুনি।” মেলা বুজানির পরে ফালানি য়াজি অইল। হেই গয়নাগুনা কিনল ফালানির নোন্দে। গেছে কাইল, না, গেছে পশুদিন, ফালানির নোন্দে হেই গয়নাগুনা পইরা জামাই নইয়া পাপের বাড়ি আইছে ফুর্তি কইরা। এবাই কইল কূন্দিন আহেনা আনবার না গেলে। হেদিন নাচন মাইরা আই পড়ছে। আইয়া দাঁত বাইর কইরা য়াইসা য়াইসা ডাইন কানের মার্কি দুলাইয়া, গলার মপচেইন কামড় দিয়া ধইরা ফালানিরে কয় “ভাবী, কিবা আছুইন?” ফালানির আত্মার মইদ্যে ছেত কইরা উঠলো। উঠব না ক্যা, উন্না যে আছাল ফালানির বিয়ার গয়না!

ফালানির সোন্তান পেটে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির বড় ভাশুরের মেয়াডা ভালাই গায়গতরে বাইড়া ওঠছে। বিয়ার যোগ্যি অইয়া ওঠতাছে। পরায় সুমই ফালানির নগে থাহে। হেও বুঝবার পাইছে গয়না আর পালের হাড় গরুডা বেচনের পর তিগা ফালানি কিবা জানি অই গেছে। কতা কয় না, খায় না-দায় না। হুকাইয়া চোউক ডো~রে গেছেগা। হে য়ান্দন ঘরে গিয়া ফালানির হউরির কাছে কইল “দাদি, কাক্কিরে মোনয় ভুতে ধরছে।”

– কিবা কতা কস?

– কাক্কি যে খালি ভুতলামি ধইরা বই থাহে, খায় না, বিয়ান বালা ওঠে না। তাইতে কই।

– গয়নাগুনা বেচনে মোন ভালানা, তাই।

– একবার মোনয় য়াক্কস য়ই গেছে।

– ক্যা?

– আইসালের পোড়ামাটি খায়, মাটির পাইল্যাভাংগা চ্যাড়া খায়। কোমরের কোচের মইদ্যে হাইরা থয়। ঘরের পাছে গিয়া কুরমুড়াইয়া চাবাইয়া খায়। ইডা য়াক্কস না, কী?

– তাই নিহি? কয়দিন দইরা কইতাছে মাথা ভার ভার নাগে। বমি অবার চায়। তেতইল খায়। বুইজা ফালাইছি কি অইছে। তর কাক্কিরে ডাক দ্যাছে।

ভাশুরের মেয়া ঘরের পাছে গিয়া দেহে ফালানি উছাত করতাছে। দাদির কাছে আইয়া কইলে দাদি কয় “এহেবারে বুইজা ফালাইছি। বউয়ের সোন্তান পেটে আইছে।”

ফালানি নোন্দের জামাইর বেক টেহা নিয়া গেছেগা

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

এক্সো কইরা দেহা গেছে ফালানির নোন্দের মাঞ্জার য়াড্ডি ভাইংগা গেছেগা। ডাকতরেরা নোয়ার পাতি নাগাইয়া স্ক্রুপ দিয়া আটকাই দিব। হেইন্যা মেলা দামের। এই জুন্যে বাড়িত তনে পোনর য়াজার টেহা নিয়াইছে নোন্দের জামাই। বুকের বাম পকটে য়াইখা দিছে। টেহা পকটে নিয়াই গেছাল অইটালে খাবার নিগা। এক বেটা হোমকে তিগা সালামালকি দিয়া কয় “মিয়া ভাইরে চিনা চিনা নাগতাছে! নাম জানি কী?” জামাই নাম কইয়া দেয়। “বাড়ি জানি কোন গেরামে?” জামাই গেরামের নাম কইয়া দেয়। “তাইলে ত আন্নে আমগ বাড়ির কাছেরই মানুষ। এই জোন্যেই চিনাচিনা নাগতাছে। আহুইন নাস্তা করি।” জামাই খুশি য়ইয়া নাস্তা খাইতে বহে। নাস্তার অর্ডারি বেটাডায়ই দেয়। দুইজোনে পেট ভইরা নাস্তা খায়। ইডা ওডা আলাপ কইরা বেটাডায় বেবাক জাইন্যা ফালায়। একসুম বেটায় কয় “আপনে খাওয়া দাওয়া অইটালে না কইরা আংগ বাসায়ই করবাইন। হাসপাতালে চাকরি করি। মোটামুটি ভালাই চলে। অসুদপাতি বাইরে তিগা কিনবাইন না। আমি হাসপাতাল তিগা পাওনের কাম কইরা দিমুনি।” অচমবিতি জামাইর বুক পকেটের টেহাডি তার য়াতে নিয়া কয় “এনু কয় টেহা আছে? বেশি টেহা নগে য়াকবাইননা। শহরে টাউট বাটপার আছে নিয়া যাবগা।” এই বিল্লা খুচরা পঁচাত্তর টেহা জামাইর পহেটে দিয়া বাকী টেহাডি বেটার য়াতে নিয়া নিলো। এক কাপ চায়ের অর্ডারি দিয়া বেটায় কইল “চা খাইতে থাকুন। আমি সামনে তিগা খিলি পান নিয়া আহি। আন্নেরে নিয়া আমগো বাসায় যামু। আন্নের ভাবির নগে পরিচয় করাইয়া দিমু।” জামাই শুনে খুশি য়য়। চা খাওয়া শেষ, বেটায় পান নিয়া আহে নাই। আধা ঘন্টা পার অইয়া গেছে বেটার কোন খোজ পাত্তা নাই। অইটালের বেটারা কয় “কি, বই আছুইন ক্যা? টেবিল খালি করুইন। কাউন্টারে গিয়া বিল দেইন গা।” কাউন্টারে গিয়া বিল কত য়ইছে হুইন্যা জামাইর মাথায় য়াত। জামাইর য়াতে আছে মাত্র পঁচাত্তর টেহা। সব টেহা নিয়া গেছে সেই টাউট বেটায়। জামাই কাহিনি হুনাইলে ম্যানেজার কয় “দুই টাউটে যুক্তি কইরা মাংনা খাবার আইছস? একটা ঘুষি দিয়া নাক ফাটাই ফালামু, টেহা দে?”

in-article-ads:

ফালানির নোন্দের গয়নাগাটি চোরে নিছে

(টাঙ্গাইলের গ্রাম্য আঞ্চলিক ভাষায় লেখা উপন্যাসের অংশ)

বিসুদবারের য়াটে গিয়া য়াবিজাবি বেইচ্যা ফালানির জামাই কিছু জিনিস কিনলো শশুরবাড়ি নইয়া যাওনের নিগা। ফালানির নিগা এডা বেলাউছ নিল। ফালানিই কইছিল নিয়া যাওনের নিগা। দোহানদার হইচ করছাল “কয় নম্বার বেলাউছ গতরে দেয়?” জামাই কইল “নোম্বর ত কপ্পামু না। তয় গতর বেশী মোটাও না, আবার বেশী চিকনও না। তিন মাইসা সোন্তান পেটে। আরও মোটা য়ব। এবা দেইখা দেইন জানি সোন্তান য়ওন তুরি গতরে দিবার পায়। অহন যে ছায়া পিন্দে হেগনাও পরে কষা অব। তাই, ডোলা দেইখা দুইডা ছায়া দেইন।” ফালানির ছোট বুইনের নিগা এডা নিমা, আর এডা কাচুলি নইল। ফালানির চাচত ভাই করিমের নিগা এডা বাটইল কিনল। বেক্কের নিগা কিছু জিলাপা আর য়স গজা নইল। ফালানি বাদামটানা আর নইটানা পছন্দ করে। তাই, তার নিগা আলাদা কইরা একটা বাদামটানার তক্তি, আর এডা নই টানার তক্তি পলিথিন দিয়া পেচাইয়া নইল। এই দুইডা জিনিস যুত কইরা ফালানির য়াতে দিল। বাটইল পাইয়া করিম খুশির চোটে কয় “দুলাভাই, ইডা দিয়া ঘুগু মাইয়া আন্নেরে খিলামু। য়াইত পোহাই নউক।” বুইনে কইল “দুলাভাই, কাচুলি আনছুইন ক্যা? কাচুলি গতরে দিতে আমার ভালা ঠেহে না।” ডোলা ছায়া দেইখা ফালানি কইল “ইডা এডা ভালা কাম করছুইন বুদ্ধি কইরা।”

য়াইতে হুইয়া হুইয়া মেলা আইত তুরি প্যাচাল পারল ফালানি জামাইর নগে। ফালানি হইচ করল

– আম্মা কি আমারে নিয়া যাওনের কোন কতা কইছে? আমার ইনুও মাইয়ার নগে থাকপার মোন চায়, আবার উনুও আন্নের কাছে থাকপার মোন চায়। আমি পরছি দোটানায়।

– মা, কইছে আর কয়দিন পর তোমারে নিয়া যাবো। আবার সোন্তান য়বার আগ দিয়া এনু পাঠাই দিব। সোন্তান য়বার সুম নিহি মায়ের কাছে থাহন ভালা। মায় যেবা ঝালাম সইতে পারব হউরি কি তা পারবো?

– আম্মা যেডা কয় হেডাই য়ব নি। আমার য়হন তিগাই কিবা জানি ডর করতাছে। য়ানি বুজি পরতম সোন্তান য়বার সুমই পইরা গেছে। হেই কতা মোনইয়া আমার ডর করে।

– এই যে দুনিয়া ভইরা মানুষ দেকতাছ, ইন্নার মাও কি সোন্তান য়বার সুম মইরা গেছে? একটা খারাপ খবর আছে।

– কী?

– ছোট বুইনডার গয়নাগুনা চোরে নিছে গা।

– কি কও? তারমানে আমার কাছ তনে যে গয়নাগুনা কিন্না নিছাল হেইন্যা বেইকটি চোরে নিছে গা? কিবায় নিলো।

– তার আগের গয়নাগুনা, তোমার কাছ তনে কিনা গয়নাগুনা, সব চোরে নিছে।

– কিবায় নিলো? শিং কাইটা চোর ঘরে ঢোকছাল?

– হেদিন খুব গুমা আছাল। ছেড়িডায় য়াইতে খাইয়া গুমার চোটে চকির উপুর একটা গইর দিছাল। কুনসুম জানি ঘোমাই পড়ে। আর জাগনা পায় না। জানলা-দুয়ার বেকই খোলা আছাল। দুয়ার খোলা পাইয়া চোর ঘরে ঢুইকা পরে। চাংগের উপুর তার সুটকেস আছিল। সুটকেস ধইরা গয়নাগাটি নিয়া গেছে। একটু ভাছও পায় নাই। কুত্তায় এটু ঘেউঘেউ করছিল। হুইন্যা তার হউরি কইছে “এই কুত্তা।” কুত্তায় থাইমা গেছে। উত্তরমুরা ক্ষেতে নিয়া সুটকেসের তালা ভাইংগা সব কিছু থুইয়া খালি গয়নাগুনা নইয়া গেছে। চোর মোনয় বাড়ির কাছেরই য়ব।

– ক্যান, কাউরে সন্দে য়য়?

– চোর মোনয় অগ উত্তর বাড়ির আজিতে। চুরি য়ওয়ার পরের দিন আজিত কইট্টার য়াটে গেছিল। তারে দেহা গেছে সোনারুপার য়াটে ঘুরাফিরা করতে। ইডা অগ পাড়ার একজোনে এখছে। টাঙ্গাইল তনে এডিও আর ঘড়ি কিন্যা নিয়াইছে। এত ফ্যারাংগি করনের টেহা পাইল কুনু? টায় টায় থাইক্যা আসল ঘটনাডা বাইর করন নাগবো।

– আন্দাজি মাইনষেরে সন্দে কইরা শউত্রামি বাড়াইও না। এতদিন আশা আছাল কোন দিন যুদি নোন্দে গয়নাগুনা বেচপার চায় আমিই হেইন্যা কিন্যা নিমু। আমার পইরনের গয়না আমার তনেই আবো। তাও অইল না।

এবা ভরা কতা কইতে কইতে কুনসুম জানি অরা ঘুমাই পড়ে। সকালে নাস্তা খাইয়া জামাই যায়গা।

ads banner:

ফালানিগ হেই গুতাইন্যা হাড়ডা বেইচ্যা ফালাইছে

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার)

ফালানির নোন্দের জামাই টেহা য়ারাইয়া এহেবারে হাতারে পইরা গেছে। হউরিরে কইল “আন্নেগ হাড়ের গুতা খাইয়াই আন্নের মেয়ার পাঞ্জা ভাংছে। আর তার চেস্টা করার নিগাই আমি হাসপাতালে টেহা নিয়া গেছিলাম। হেই টেহাগুনা জাউরা মাইনসে নিয়া গেলো গা। অহন আমি কোন মুহে বাপের কাছে টেহা চামু? কাজে কাজেই, আন্নেরগই টেহা দিওন নাগব।” ফালানির মায় কইল “বিয়াই-বিয়ানির ত য়াগ করনেরই কথা। আমরা অইলেও য়াগ করতাম। বাজান, আমরা অহন টেহা পামু কুনু?” জামাই কইল “ক্যা, ওই গুতাইন্যা হাড়ডাই বেইচ্যা ফালাইন। পালে থাকলে আবার কারে গুতা দিয়া মিন্দারার য়াড্ডি ভাইংগা ফালায়, কেরা জানে। দেহা যাবো আন্নেরডাই ভাইংগা ফালাইছে।” হউরিয়ে হুইন্যা য়াজি অইল। সয়ার য়াটে নিয়া হারডা বেইচা জামাইডারে টেহা দিয়া দিল। হেই টেহায় মাঞ্জার অপারেশন করাইল। অপারেশন কইরা ভালা অইছে। খালি একটু টেংগুস পাইরা পাইরা য়াটে।

ফালানির পিঠে আম পড়লো

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ফালানির জামাই যাওনের পর তিগা ফালানির মোনের ভিতরে খালি আইরাম বাইরাম করে। একবার বাইরবাড়ি যায়। আবার আই পড়ে। কোনহানেই তার ভালা নাগে না। তার মোনে দোমনদসা। একমোনে চায় জামাইর কাছে যায়। আরেক মোনে চায় মায়ের নগেই থাহে। দুপুরসূম ফালানি বাইরবাড়ির আম গাছের তলে গিয়া ঘোড়াকাঠের উপুর বইল। দহিন পাড়ায় কয়ডা গুড্ডি উড়তাছাল। এইন্যারমুহি চাইয়া আছাল ফালানি। একটা গুড্ডির নাম পাইল্যা গুড্ডি। ওডার নিচমুহি মাটির পাইল্যার নাগাল। তাই, ওডার নাম পাইল্যা গুড্ডি। আরেকটা গুড্ডির নাম ফেইচ্ছা গুড্ডি। ওডার নিচমুহি ফেইচ্ছা পৌখের নাগাল নেজ আছে। তাই, কয় ফেইচ্চা গুড্ডি। একটা চং গুড্ডি উড়তাছাল। ওডার উপুরমুহি দুইমুড়া দুইডা নিশান নাগান আছে। নিচমুহি দুইডা পায়জামার মোতন আছে। ওড়ারসুম উন্না পতপত করে। ওডার মাথায় বেত নাগান আছে। বাতাস নাইগ্যা গুনগুন কইরা বাজে। হোনতে ভালাই নাগে। একটা পতিঙ্গা, আরেকটা সাপা গুড্ডিও উড়তাছাল। সাপা গুড্ডিডা ওড়ারসুম মোনে য়য় জানি আসমানে অজগর সাপ মোচড় পারতাছে। এমুনসুম বাড়িরমুহি তিগা করিম আইল ঝিনই দিয়া আম ছিলাইয়া খাইতে খাইতে। কইল

– ফালানি বু, আম খাবা?

– কোন গাছের আম?

– জাউইন্যা গাছের।

– দ্যা এক ফালা।

করিমও ঘোড়া কাঠে বইল। আম চোটকাইতে চোটকাইতে ফালানি কইল

– ঐ, অতগুনা গুড্ডি উড়াইতাছে ক্যারা?

– দুইখার পোলা জাফরে। দুইখা যেবা বেইন্যা, জাফরেও হেবা বেইন্যা অইছে। খালি জমিন বেইচা মুচমুচাইয়া খায়। কাম ত করেইনা। খালি আকাইমা খরচ করে। খাইয়া খাইয়া এবা মোটা অইছে যে ভুড়ি ভাসাইয়া কেদরাইয়া কেদরাইয়া য়াটে। অতগুনা গুড্ডি উড়ানের কি দরকার? খালি ঐ তালেই থাহে। বু, দেহছে, আমার ঘারের তলে পীঠের মইদ্যে কিবা জানি উচবিচ করতাছে। এটু খাইজাই দেও ছে।

– এনু?

– না, আট্টু নিচমুহি, গুঞ্জির তলে।

– এনু?

– হ, আট্টু ডাইনমুহি।

– কুনু গেছিলি যে পিঠ খাইজাইতাছে?

– পাট ক্ষেতে গেছিলাম।

– পাটের পাতা থিগা মোনয় ছেংগা নাগছে। পাট ক্ষেতে গেছিলি ক্যা?

– পাট ক্ষেতে কিয়েরে যায় হেডা জানো না?

– পানি খরচ করলি কুনু?

– পাট ক্ষেতের বাতর এটু কাটা আছে। অনুই পানি আছে কিছু। অনুই পানি করচ করছি। আইজকা কিবাজানি চুটমুটুইন্যা গুমা করতাছে। দেওয়া আইতে পারে। দেওয়া আইলে ঝুপঝুপি ভিজমু। দমকা বাতাস আইতাছে। ধলা বকগুনা উড়াল পারতাছে। দেওয়ায় হাচ করছে। ঝটকা বাতাসে পাইল্যা গুড্ডিডা ছুইটা গেলো। কাতাইতে কাতাইতে গিয়া পড়লো পাগাড়ে। দেওয়া অইলে উজাইন্যা কৈ মাছ ধরমু। হেদিন ভরাগুনা ধরছিলাম। উজাইন্যা কৈ ধরতে ভালাই নাগে।

বাড়ির ভিতর তিগা ফালানির মায় ডাক দিলেন “গেদি, বানাস চালাইছে। ঘরে আইপর। মাথার উপুর আম পড়বো।” কওয়ার নগে নগেই আগ ডাইল তিগা একটা ভুইত্যা আম পড়ল গিয়া ফালানির পিঠের মিনদাড়ার য়াড্ডির উপুর। ফালানি বেহা ধইরা এক নোড়ে বাইত গেলো গা।

—-

আজকের পর্বের বৈশিষ্ট্যঃ

গ্রামের বিভিন্ন রকমের ঘুড়ির পরিচয় দেয়া হয়েছে। জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্নিত হয়েছে। বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যথা আইরাম বাইরাম, চুটমুট, খাইজায়, গুমা, বাতর, পানি খরচ, ছেংগা, ভুইত্যা, নোড়, গেদি, মিনদাড়া, বানাস, উজান্যা, কাতাইতে কাতাইতে, কেদরাইয়া, ঝুপঝুপি, বেহা, গুঞ্জি, ধলা, হাচ, চুটমুটুইন্যা, ঝিনই, জাউইন্যা, কুনু, ক্যা ইত্যাদি।

ফালানির মামুর অবস্থা ভালানা

(টাঙ্গাইলের আঞ্চলিক ভাষায় লেখা “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

বড়বাইদপাড়া, সখিপুর

ফালানি বাইরবাড়ি ঘোড়া কাঠে বইয়া পাও নাচাইতেছিল। এমুনসুম তার মামু আইলো খোরাইয়া খোরাইয়া য়াটতে য়াটতে। দুই বোছর ধইরা তার এবা য়োগ য়ইছে। মাইনষে কয় অর্ধঙ্গের বাতাস নাইগ্যা এবা য়ইছে। কিননিগা কয় তা জানুইন? তারা মোনে করে খারাপ কিসিমের বাতাস তার গতরে নাগছে। যে বাতাস নাগলে শৈলের একমুরা দিয়া অবস য়ইয়া যায়। মানে অর্ধ অঙ্গ অবস য়ইয়া যায়। মুক একমুহি বেহা য়ইয়া গেছে। এক চৌক মুনজে না। খালি পানি পড়ে। জিবলা একমুহি নড়ে না। তাই, বেক কতা বোজন যায় না। বাইয়াত নুলা য়ই গেছে। বাইয়া ঠ্যাংও নড়ে না। ছেছুড় পাইরা য়াটন নাগে। এবা কইরা য়াইটা য়াইটা এনু উনু যায়। ডাকতর দিয়া চিগিস্যা করাইছিল। কাম য়য় নাই। কবিরাজেও কিছুদিন চিগিস্যা কইরা না পাইরা কই দিছে “ডাকতরেরা ইঞ্জিশন দিয়া য়োগ ডাবাই ফালাইছে। অহন কবিরাজি অসুধে কাম অব না। ফালানি কইল

– মামু, এবা কষ্ট কইরা এত দূর আইলাইন?

– কি করমু গেদি, ভরা দিন ধইরা তগ দেহি না। তাই আইজকা এবা কইরাই আইলাম। তা গেদি কিবা আছো? তর মায় কিবা আছে?

– আল্লায় বাচাইলে বালাই আছি। আংগ মামানিরে নই আইতাইন।

– কি আব, বাড়ি খালি থুইয়া আহন যায়?

– ক্যা, আন্নেগ য়শিদের বউ বাইত্তে নাই?

– গেদি, তুই মোনয় জানস না। হে জাউরাডা আমাগ নগে আর থাহে না। আংগ বাদ দিছে।

– ইন্না কী কইন? থাহে না মানে? ভাইংগা কইনসে।

– য়শিদ আছিল এডা ফকিন্নির পোলা। অরে গেন্দা থুইয়া অর বাপ মাও মইরা যায়। অর দাদীর কাছ তনে অরে পালবার আনছিলাম আংগ কোন সয়সোন্নতান য়ইল না দেইখা। হেই পোলারে কত যত্ন কইরা ভরা টেহা ভাইংগা পড়াইয়া আই এ পাস করাইছিলাম। এডা কাম অ করবার দেই নাই। জমিন জিরাত বেইচা পড়াইছিলাম। সিঙ্গাপুর যাবো কইরা কিয়েরজানি এডা টেনিং নাগবো কইরা দুই লাখ টেহা খরচ কইরা ঢাহা তনে টেনিং করাই আনলাম। তিন চাইর লাখ টেহা খরচ কইরা সিঙ্গাপুর পাঠাইলাম। যাওনের আগে তারে বিয়া করাইলাম ধনি বাড়ি দেইখা। বৌডাও শৈষ্ঠবের। বিদেশ যাওনের সুম তার হশুরের তনে তিন লাখ টেহা নিছিলাম। হেইডার নিগাই আমি ধরা খাইলাম। পোলা অহন বৌয়ের পাগল। হউরিরে ছাড়া কিছুই বুঝে না। বউডা এহেবারে ঝাউরা। খালি কুবুদ্ধি দেয়। পালুইন্যা পোলা আমার। পোলার বউরে জমি নেইকা দিবার কয়। জমি নেইকা না দিলে ত পালুইন্যা পোলায় পাবো না। আমার জমি ওই এটু। এও যুদি তারে নেইকা দেই, আর হে বউ যে ঝাউমারি করবো না ক্যারা কবো। ওই বৌ অই পোলা আংগ ভাত দিব না। আমি বুইজা ফালাইছি। অহন আংগ খোজ খবর তারা নেয় না। বিদেশ তনে টেহা পাঠায় বউয়ের কাছে। হেইন্যা দিয়া তার বাপ মাও নিয়া তেলে ঝোলে খায়। হশুর বাইত্যে এডা বিল্ডিং দিছে। হেনুই থাহে। পরের পোলা কি আপন য়য়? য়াতে জমিন যা আছে তা বাগি দিয়া যা পাই তাই দিয়া কোন মোতে চইলা যাইতাছে। গেদি, তরে অবা ওশা ওশা দেহা যাইতাছে ক্যা, ব্যারাম য়ইছে নিহি?

ফালানি মামুর হুমকে শরম পাইল। কইল “মামু, আন্নে যেসুম আন্নের মায়ের পেটে আছিলাইন হেসুম আন্নের মাও এবা ওশা ওশা ধরছাল।” ফালানির মামু খুশি হইয়া কইল “গেদি, তাইলে আমি নানা হইতাছি নিহি!”

২/৬/২০২২

কচু,গেচু, হালুক

(আঞ্চলিক ভাষায় রচিত “টাঙ্গাইলের ফালানি” উপন্যাসের অংশ বিশেষ)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

বড়াবাইদপাড়া, সখিপুর, টাঙ্গাইল

ফালানিগ বাড়ির পচিম উত্তর কোনার দুই তিন ক্ষেত পরেই নছুগ বাড়ি। মেলা বোছর ধইরা নছুর বাতের ব্যারাম। য়াত পাওয়ের আঙ্গুলের গিড়ায় গিড়ায় বিষ। কালকাল কইরা বিষায়। গরীম মানুষ। ভাত খাওনের টেহা নাই। অসুধ কিনব কি দিয়া? কবিরাজের কাছ তনে হস্তা অসুদের বোতল আনে। হেইন্না খাইয়া কিছুই অয় না। ছাগল বেচা টেহা নইয়া একবার ডাক্তরের কাছে গেছাল। ডাকতরে ভরা টেহার পরীক্ষা কইরা টেহাই ফুরাই ফালাইছে। ভরা টেহার অসুদ লেখছে। অত টেহার অসুদ খাওনের মুরাদ নাই নছুর। অহন আলা ডাক্তুরি অসুদ খাওন বাদ দিছে। বিষের চোটে য়াত পাওয়ের আঙ্গুলগুনা কোরকামোরকা ধইরা গেছে গা। কাম করবো কিবায়? নছুর বৌ মাইনষের ধান নইয়া দিয়া কিছু কিছু পায়। তাই দিয়া কোন মোতে এক বেলা খাওন যায়। আরেক বেলা কচু ঘেচু খাইয়া থাকন নাগে। নছুর ডাইন ড্যাংগের য়াটুর একটু নিচের য়াড্ডির মইধ্যে গুল দিছে। লোহার প্যারেক ততা কইরা য়াড্ডির উপুর ছেক দিয়া ঘাও বানাই ফালাছে। হেই ঘাওয়ের মইধ্যে এডা গোল কাঠের বল বহাইয়া তেনা দিয়া বাইন্দা থোয়। মইধ্যে মইধ্যে তেনা খুইলা গুলডা ধুইয়া আবার বহাইয়া তেনা দিয়া বাইন্দা থয়। গুলের গোড়া দিয়া য়স পড়ে। নছু মোনে করে বিষ পইড়া যায়। আসলে শৈলের পানির নগে ভালা জিনিস বাইরই পড়ে। নছু হেডা বুঝে না। শরীর হুকাইয়া কাঠ য়ইগেছে।

নছুর আছাল চাইর মেয়া আছাল । পোলা নাই। বড় মেয়াডার ওঠকাটা আছাল জন্মের তিগাই। হেডারে মেলা টেহা খরচা কইরা বিয়া দিছাল। জামাই খালি টেহা নিত নছুর কাছ তনে। টেহা না দিলে ছেড়িডারে খালি বাইরাইত। হউরিয়েও তারে মেলা শাজা দিত। হেডার কাপরে আগুন ধইরা মইরা গেছে। কেউ কেউ কয় হউরিয়ে কাপরের মইধ্যে কেরাইশ তেল ছিটাই দিয়া মেছের কাঠি দিয়া আগুন ধরাইয়া মাইরা ফালাইছে। হেডার কোন বিচার আচার য়য় নাই। গরীম মাইনষে কি বিচার পায়?

নছুর তিন মেয়া বিলের পারমুহি তিগা আইতেছিল। ফালানি হইছ করলো

– এই ছেড়িরা, কুনু গেছিলি?

– আমরা বিলে গেছিলাম।

– মাছেরে গেছিলি?

– না, আবিজাবি আনবার গেছিলাম।

– এই খালইর মইধ্যে কী?

– হামুক, য়াসেরে খাওয়ানোর নিগা। আংগ দুডা য়াস আছে। হামুক ভাইংগা দিলে গেত গেতি খায়।

– এই খালুইর মইদ্যে কী?

– ইন্যা ঘেচু। বিলের পাড় তিগা তুইল্লা আনলাম।

– ইন্যা দিয়া কী করবি?

– এইন্যা হিদ্দ কইরা খামু। এইন্যা খাইয়াই আংগ বাচন নাগে। কচু ঘেচু না থাকলে আংগ মরন ছাড়া আর কোন উপায় আছাল না। জাউরা মাইনষে হুয়রের বাতান নইয়া আহে কচু খেচু খাওয়াবার নিগা। অহন কচু ঘেচুও পাওন যায় না।

– ওডার মইদ্যে কী?

– ইডার মইদ্যে? ইডার মইদ্যে হালুক। হালুক গাছের বেকই কামে নাগে। উপুরে ডোগার মইদ্যে ধলা ফুল ফুটছে ছোট বোইনডায় মাথায় বানছে। স্যারে হাবলা ফুলরে কয় শাপলা ফুল। হাবলার ফুল তিগা যে ফল ধরে হেডা অইল ঢেপ। ঢেপও আনছি, এই যে। আংগ মা ঢেপের বিচি হুকাইয়া ভাইজা ঢেপের খই বানায়। মোয়া বানায় কুশাইরা মিঠাই দিয়া। এই যে হাবলা গাছ তুইলা আনছি। মা ইন্যা দিয়া তরকারি য়ান্দিব। হাবলা গাছের গোরে এই হালুক ধরছিল। হালুক হিদ্দই বেশী মজা। ফালানি বু তুমি কয়ডা হালুক নেও। হিদ্দ কইরা খাই দেইখো।

৮/৬/২০২২

in-feed-ads:

কাঠলের আঠা
ফালানীর একটা দেওর ঢাহা থাহে। ফ্যাক্টুরিতে চাহুরি করে। হেনু ঢাহাইয়া এডা পোলার নগে খাতির য়ইছে। তারে নগে কইরা ফালানীর হশুর বাড়ি নইয়াইছে। তারে গাছ পাহা এডা কাঠল ভাইংগা দিছে। নাকে, ওঠে, মুছে কাঠলের কষ নাইগ্যা এহেবারে চ্যারাব্যারা য়ইগেলোগা। কষ তোলার নিগা যতই গষে ততই আঠা ছড়তে থাহে। ফালানীর আরেকটা চাচত দেওর আছে ১০ বছইরা। হে এহেবারে যাইরা পোলাপান, কইলো
– য়াত দিয়া ঘষা না দিয়া শিমুইল তুলা দিয়া ঘষা মারুইন। কাঠলের আঠা তুলার নগে উইঠা আবো।
– তুলা পামু কুনু?
– আহুইন আমার নগে বড় ঘরে উগার পাড়ে।
মেমান উগার পাড়ে গিয়া খারইল। ফালানীর দেওর ডোলের ভিতর তনে এক খামছা তুলা বাইর কইরা মেমানের য়াতে দিলো। মেমান মুখের উপুর দিয়া ডলা দিলে মুখ গাল ভইরা তুলা নাইগ্যা গেলো। এমুন সুম ফালানীর হউরি ঘরে আইয়া দেহে মেমানের মুখ ধলা বিলাইর মোতন দেহা যাইতাছে।

কাঠলের আঠা

১০/৩/২০২৪ খ্রি.

Salah Uddin

Mawlana Salah Uddin

মাওলানা সালাউদ্দিন

Maolana Salah Uddin

মাওলানা সালাউদ্দিন ছিলেন আমার চাচাতো বোন হেলেনা আপার স্বামী। আরবী লাইনে লেখাপড়া করলেও তিনি বেশ বিজ্ঞান মনস্ক ও সাংস্কৃতিমনা ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ও হিন্দু পরিবারকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। তিনি বিয়ের পর জমি জমা কিনে আমাদের গ্রামেই স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষকের পদে চাকরি করতেন। পাশাপাশি নিকাহ রেজিস্ট্রার করতেন। তিনি কাকরাজান ইউনিয়নের বিবাহ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স পেয়েছিলেন। বিবাহ রেজিস্ট্রি করাকে ইসলামি পরিভাষায় কাবিননামা বলা হয়। আমরা সংক্ষেপে কাবিন বলতাম। বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কাবিন করলে দুলাইভাই বেশী ফি নিতেন। তাই, অনেকেই দুলাভাইর বাড়িতে এসে কাবিন করাতেন। যিনি কাবিন রেজিস্ট্রি করতেন তাকে বলা হয় কাজী। তাই দুলাভাইকে কাজীও বলা হতো। দুলাভাই মারা যাবার পর তার মেজো ছেলে কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে শিক্ষকতার সুযোগ পায় এবং কাজীর কাজটাও পায়। এখন তার কাছে কাজীর কাজটা নেই। দুলাভাইর ছোট ছেলে রুহুল আমীনও ঘোনারচালা হাই স্কুলে শিক্ষকতা করে। বড় ছেলে আব্দুল হালিম প্রাইভেট হাসপাতালে চাকরি করে।

আমি ছোটবেলা থেকেই দেখতাম দুলাভাই কাবিন করেন। তিনি কচুয়া আব্দুল্লাহ স্যারদের বাড়ির জামে মসজিদের শুক্রবার জুম্মায় ইমামতিও করতেন। দুলাভাইর সাথে আমি দু-এক বাড়িতে কাবিন করতেও গিয়েছি। ভালো খাবারও খেয়েছি।

শীতের দিনে তিনি বাহিরবাড়ির ধানিখোলায় খর বিছিয়ে তার তার উপর পিঠের বেতের পাটি বিছিয়ে কাবিন করতে বসতেন। বর ও কনে উভয় পক্ষই আসতেন। তারাও পাটির উপর বসতেন। গ্রামের মানুষ তামাসা দেখতে ভালোবাসে। তাই, যেখানে কয়েকজন লোক একত্র বসত সেখানেই গিয়ে সবাই ভীর করতো। কোথাও দুইপক্ষ ঝগড়া বাঁধালেও সবাই তামসা দেখতে যেতো। একবার গোড়াই থেকে একটা ছেলে এবং একটা মেয়ে, বয়স খুব সম্ভব ১৬-১৭ হবে, হাত ধরে ঘুরাফিরা করছিল কচুয়া হাটের রাস্তায়। শুনলাম তারা একে অপরকে ভালোবেসে, বাবা-মার অমতে বিয়ে করার উদ্যেশে বের হয়ে পড়েছে। লোকে বলত বাইরইয়া পড়ছে। কাজেই তাদেরকে ভিন গ্রামের মানুষ ধরে বিয়ে পড়িয়ে দিত। এই জুটির পিছনে প্রায় ৫০-৬০ জন ছেলে মেয়ে তামসা দেখছিল। আমিও কিছুক্ষণ তামসা দেখলাম।

একবার পশ্চিম দিক থেকে কয়েকজন লোক এসেছিল দুলাভাইর কাছে কাবিন করতে। তাদের বেশভূষা দেখে গরীব মনে হলো। কনেটাকে আমার কাছে অসহায় মনে হলো। বর পক্ষের লোকগুলোকে তেমন সভ্য মনে হলো না। দুলাভাই কাবিন রেজিস্ট্রার খাতায় লিখার পর সরকারি ফি নিয়ে নিলেন। তারপর কনের উদ্দেশ্যে বললেন “অমুকের ছেলে তমুক এত টাকার দেন মোহর সাব্যস্ত করিয়া আপনাকে বিবাহের প্রস্তাব দিয়াছে। আপনি রাজি আছেন?” কনে অনেকক্ষণ হয়ে গেলো কিছুই বললো না। দুলাভাই দ্বিতীয় বার ওকথাগুলো বললেন। কনে অনেকক্ষণ চুপ করেই রইলো ঘোমটা দিয়ে। তৃতীয় বার দুলাভাই বিরক্তির সাথে কথাগুলো বলে ধমকের সুরে উচ্চকণ্ঠে বললেন “রাজি আছেন?” কনে বিস্ফোরিত কণ্ঠে উচ্চস্বরে বলে উঠল “রাজি আছি।” আমি চমকে গিয়ে খেরের উপর ঢলে পড়লাম। কনে ফিকুরে ফিকুরে কান্না করতে লাগলো। আমি তখন ক্লাস সেভেন না এইটে পড়ি। আমার মনে হলো এটা ঠিক না। জোর করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে। দুলাভাই কিছুক্ষণ মেয়েটির কান্না শুনলেন। আমি দুলাভাইর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম। দুলাভাই চুপ করে রইলেন। দুলাভাই বললেন “এ বিয়ে হবে না।” বরপক্ষ বললেন “কনে রাজি আছে বলছে। বিয়ে হয়ে গেছে।” দুলাভাই বললেন “না, হবে না। সমস্যা আছে। কাবিন বাতিল।” মেয়েটি আরও পরিস্কার করে কান্না করতে লাগলো। অনেক কথাকাটাকাটির বরপক্ষ কাবিনের ফি ফেরত চাইল। দুলাভাই বললেন “কাবিনের পাতা খরচ হয়ে গেছে। আমি বই হিসাবে কিনে আনি। ফেরত পাবেন না। আপনাদের বিচার হবে। আপনারা জোর করে মেয়ে বিয়ে করতে নিয়ে এসেছেন। মেয়ে রাজি না। আমার ধমক শুনে রাজি বলেছে। মেম্বার ও পাড়ার মাদবর নিয়ে আসুন। তারপর কাগজ দেয়া হবে।” পরে কি হয়েছিল আমি জানি না।

কাবিননামা শেষ হলে বরের হাতের উপর কনের বাবার হাত রেখে দুলাভাই পাঠ করাতেন কনের বাবাকে “বলুন, আমার কন্যা, মুসাম্মত অমুক খাতুনকে এত টাকা দেন মোহরে আপনার কাছে বিবাহ দিলাম।” দুলাভাই বরকে বলতে বলতেন “আপনি বুলুন, কবুল, আলহামদুলিল্লাহ, কবুল করিলাম।” বর বলতেন “আলহামদুলিল্লাহ, কবুল করিলাম।” দুলাভাই বরের উদ্যেশ্যে বলতেন “আপনার বিবিকে ভরনপোষণ দিবেন, ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী চলাফেরা করাবেন এবং পর্দা পুশিদায় রাখবেন। তিন মাসের অধিক কাল নিরুদ্দেশ থাকিলে, পাগল কিংবা কারাগারাবদ্ধ হইলে বিবি আপনাকে তালাক দিতে পারিবেন। খাতা বন্ধ করলে বরপক্ষ সবাইকে খাজা বাতাসা ও কদমা খাওয়াইত। আমার কাছে সাদা কদমা খুব মজা লাগতো।

আমাদের গ্রামে একজন গরীব লোক ছিল। নিজের জমি ছিলো না। খুব আলসে ছিল। বোকাও ছিল। তার নাম লিখলাম না। ছদ্মনাম দিলাম হামজা। হামজা ভাই মাঝে মাঝে বোকার মতো কথা বলতেন। কেউ বোকার মতো কথা বললে আমরা বলতাম ” তুই অবা হামজা ভাইর নাগাল কথা কস ক্যা?” চৈত্র মাসে অথবা যে মাসে কোন কাজ থাকত না সেই মাসে হামজা ভাই খাবেন কী। কামলা দিলে যা টাকা পাওয়া যেতো সেই টাকা দিয়ে হামজা ভাই চাউল ও আটা কিনে খেতেন। মানে, দিন এনে দিন খেতেন। একদিন কামলা না দিলে না খেয়ে থাকতে হতো তার স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ। হামজা ভাইর বউ পরের ধান ভেনে অল্প কিছু চাউল পেতেন। আঁচলে করে আনতেন। শরীর খুব দুর্বল ছিল অল্প খেয়ে খেয়ে। তাই, ঢেকিতেও তেমন বল করে পার দিতে পারতেন না। যেদিন কামলা দিতে না পারতেন সেদিন হামজা ধনি বাড়ি থেকে এক কামলার দাম নিতেন। সেই টাকায় কাজের সময় তিনি কামলা দিয়ে পরিশোধ করতেন। মৌসুমের সময় কামলার দাম দুইগুন তিনগুন হলেও তিনি তা নিতে পারতেন না। যেহেতু তিনি অগ্রিম টাকা নিয়ে নিয়েছেন। অগ্রিম টাকা নিয়ে মৌসুমের সময় কামলা দিলে তাকে বলা হয় ঠুকা কামলা। হামজা ভাই ছোটদের মতো সামনে ভাজ করে লুঙ্গি পরতেন। তাই, আরও বোধাই বোধাই দেখা যেতো। কম বয়সেই তিনজন সন্তান রেখে হামজা ভাইর স্ত্রী মারা যান।

গ্রামে গরীব পরিবার স্ত্রী ছাড়া চলতে পারে না। তাই, হামজা ভাই আরেকটি বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেন। সেই বিয়ের কাবিনের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম। হামজা ভাই কিস্তিটুপি পাতালি করে পরেছিলেন। তাতে আরও বোধাই বোধাই লাগছিলো। যথারীতি কাবিন সম্পাদন করে হামজা ভাইর হাত ধরলেন তার শশুর। কাজী বলতে বললেন “বলুন, আমার কন্যা।” হামজা ভাইর শশুরে বলার কথা। ভুলক্রমে হামজা ভাই বলে ফেললেন “আমার কন্যা।” দুলাভাই ধমক দিয়ে বললেন “এই বোধাই, কারে কী কয়।” আমি ও মজি ভাই হাসতে হাসতে খেরের উপর লুটিয়ে পড়লাম।

২২/৪/২০২২ খ্রি.
ময়মনসিংহ