Tag Archives: bati

tiner thali

টিনের থালি

টিনের থালি

(স্মৃতি কথা)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামের অধিকাংশ মানুষ টিনের থালাবাসন ব্যবহার করতো। গরীবরা ব্যবহার করতো পোড়ামাটির থালাবাসন। থালা, বাটি ও ডিস ছিলো টিনের তৈরি। সানকি, বাটি ও গামলা ছিলো পোড়ামাটির তৈরি। ধনি বাড়িতে অল্প কিছু পোরসেলিনের বা চিনামাটির থালাবাসন ছিলো। এগুলোকে করইর বাসনও বলা হয়। এগুলো সাধারণত সিকায় তুলে রাখা হতো। মেহমান এলে করইর থালায় খাবার পরিবেশন করা হতো। এগুলোর সাথে পিতলের চামচ ব্যবহার করা হতো।

টিনের থালির উপর দিয়ে সাদা রংগের প্রলেপ দেয়া থাকতো যাতে জং (মরিচা) না ধরে। থালি পুরান হলে ঘসায় ঘসায় রং উঠে গিয়ে জং ধরে যেতো। জং ধরলে থালি ছিদ্র হয়ে যেতো। আমরা বলতাম ছেন্দা। অন্য এলাকার মানুষ বলতো কানা। ছেন্দা থালি বড় চওনা হাটে নিয়ে মেকার দিয়ে ঝালাই করে আনা হতো। রং উঠে গেলে বলা হতো কালাই উইঠা গেছে। বারবার ঝালাই করলে খালিতে ভাত খাওয়ার অনপোযুক্ত হয়ে যেতো। এমন থালি দিয়ে ভৌরা (নিচু এলাকার) মানুষ নায়ের (নৌকার) পানি হিচতো (সেচতো)। মেয়েরা ছাই ফেলতো বা ছাই রেখে জিয়লমাছ (শিং মাছ) কাটতো। পাহাইড়া (পাহাড় এলাকার) মানুষ মান্দা হিচতো।

ফকিররা (ভিক্ষুক) ভিক্ষার থলেতে একটা টিনের থালি রাখতো। কেউ খাবার দিলে এই টিনের থালিতে নিয়ে খেতো। ভিক্ষা নিতো আইচায় করে। আইচার ভিক্ষা থলের চাউলের সাথে মিশিয়ে নিতো।

এখন গ্রামে বা শহরে টিনের থালি চোখে পড়ে না। আমি কয়েকমাস আগে ময়মনসিংহের স্বদেশী বাজারে কাঁচের বৈয়ম কিনতে গিয়ে এই থালির দেখা পাই। সখ করে একটা থালি কিনে আনি। আজ ভাগনে ফারহানকে দেখিয়ে বলি “এমন টিনের থালিতে আগের দিনে বেশী ভাগ মানুষ ভাত খেতো। এখন এগুলো দেখা যায় না।” ফারহান বললো “আমি যেনো কোথায় দেখেছি। মনে পড়েছে, ভিক্ষুকের হাতে দেখেছি।” শুনে সবাই হা, হা করে হেসে দিলো। আমি এরপর আমার এই স্মৃতি কথাটি লিখে ফেললাম।

ময়মনসিংহ

২৩ ডিসেম্বর ২০২২ খ্রি.

#memoryofsadequel