Bag Niye Nadite Jhap
ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে নদীতে ঝাপ দিলো
(স্মৃতি কথা)
ঢাকা থেকে বরিশাল ফিরছিলাম লঞ্চে কর্মস্থল চরামদ্দি ইউনিয়ন হেলথ সাব-সেন্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রতিমাসেই একবার এভাবে লঞ্চে রাতে যাতায়াত করতে হতো বরিশাল-ঢাকা-বরিশাল ১৯৮৮-৮৯ সনে। সরকারি বেতন মাসে ছিলো ১৮৫০ টাকা। লঞ্চের কেবিন ভাড়া ছিলো ৬০০ টাকা। তাই, সবসময় কেবিনে যাওয়া সম্ভব হয়নি। বেশি সময় লঞ্চের ডেকে শুয়ে যাতায়াত করতাম। ব্রীফকেসে একটা লুঙ্গি ও একটা তোয়ালে রাখতাম। বিকাল ৬ টা বা ৭টায় লঞ্চ ছাড়তো এদিকে ঢাকার সদরঘাট থেকে, ওদিকে বরিশাল সদরঘাট থেকে। সবাই একটা করে সিংগেল বিছানার চাদর সাথে রাখতো। এই চাদরে যতটুকু জায়গা দখল করা যায় ততটুকু জায়গা যাত্রীর অধীন ছিলো। ভাড়া ছিলো ৩০ টাকা। আমি ৩০ টাকার টিকিট কিনতাম। বরিশালের মানুষ আমাকে চিনত না। তাই, অতি সাধারণ ভাবে চলাফেরা করতে আমার লজ্জাবোধ হতো না। লঞ্চের হোটেলে ইলিশের ডিম দিয়ে পেট ভরে ভাত খেয়ে রাত আটটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তাম লুঙ্গি পরে, বিছার চাদর বিছিয়ে ব্রিফকেসের উপর মাথা রেখে। ব্রিফকেসের উপর তাওয়েল বিছাতাম। লঞ্চের ইঞ্জিনের শব্দে ভালো ঘুম হতো। ছেলে বা মেয়ে আগে উঠলে আগে যে যেখানে জায়গা পেতো সেখানেই চাদর বিছিয়ে জায়গা দখল করতো। পরিচয় যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য সহযাত্রীদের সাথে তেমন আলাপ করতাম না। ব্রিফকেসের উপরের ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার লেখা নেইম কার্ডটি উল্টিয়ে রাখতাম। যখন বাসে যাতায়াত করতাম তখন নেইম কার্ডটি সোজা করে রাখতাম। কারন, ডাক্তার পরিচয় পেলে সহযাত্রীরা সম্মান করে ৩/৪ ইঞ্চি জায়গা ফাঁক করে দিতো। নিজের পরিচয় প্রকাশ করার জন্য আমি নিজেই সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করতাম “ভাই, কি করেন?” সহযাত্রী উত্তর দিয়ে কিছুক্ষণ আলাপ করে উল্টো আমাকে জিজ্ঞেস করতেন “ভাই, আপনি কি করেন?” আমি ডাক্তার পরিচয় দিলে একটু নড়ে চড়ে বসে ৩/৪ ইঞ্চি জায়গা ছেড়ে দিতো। আমি কাছে এসে বসুন বললে আরও বেশি করে জায়গা ছেড়ে দিতো।
যাহোক, লঞ্চের কথায় আসি। মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণত একটা নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে বিছানা পারতো। ঐ এলাকাটার চারিদিকে চাদর ঝুলিয়ে পর্দা করে দিতো। তারা ঘুমাতো কিনা জানি না। যতক্ষণ আমি চেতন থাকতাম তাদেরকে গল্পসল্প, হৈহল্লা করে কাটাতে শুনতাম। এদের সংখ্যা সাধারণত ১২/১৪ জন হতো। এমনি এক লঞ্চ জার্নির সময় আমার শিতানের দিকে শুয়েছিলেন এক ভদ্রমহিলা ও তার পাশের জায়গায় শুয়েছিলো এক যুবক ছেলে। গভীর রাতে হঠাৎ সেই যুবক ভদ্রমহিলার ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে মাঝ নদীতে ঝাপ দিলো। যাত্রীদের কোলাহল শুনে আমার ঘুম ভেঙে গেলো। লঞ্চ থামতে থামতে ছেলেটি অনেক দূরে পড়ে গেলো। লঞ্চ ছেলেটিকে ধরার জন্য পেছাতে লাগলো। ততক্ষণে ছেলেটি নদীর কিনারে কাঁশবনে উঠে পড়লো। ওখানে আগে থেকেই তার সহকর্মীরা তাকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করছিলো। তারা ট্রাভেল ব্যাগ নিয়ে কাঁশবনে হারিয়ে গেলো। আমার ব্রিফকেস কেউ ছিন্তাই করতে পারেনি। কারন, ওটা থাকতো আমার মাথার নিচে। নিলেও সমস্যা ছিলো না। টাকা রাখতাম আন্ডারওয়্যারের নিচের পকেটে।
ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
ময়মনসিংহ
১ সেপ্টেম্বর ২০২২ খ্রি.
#memoryofsadequel #charamoddisadequel
এমন গল্প আরও পড়তে হ্যাস্ট্যাগ শব্দে ক্লিক করুন।