Tag Archives: River road

Haturi Peta

Haturi Peta

হাতুড়ি পেটা

(স্মৃতি কথা)

প্রথম পোস্টিং ছিল বরিশালের চরামদ্দি ইউনিয়ন সাব-সেন্টারে। ১৯৮৮ সনে এক বছর সেখানে ছিলাম। প্রচুর মারামারির রোগী আসতো। তাদেরকে চিকিৎসা করে ইনজুরির সার্টিফিকেটও দিতে হতো। একবার এক রোগী এলো হাতুড়ি পেটা খেয়ে। বিস্তারিত শুনলাম রোগীর কাছ থেকে। ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে তারা আসছিলো বরিশালে। লঞ্চগুলো সাধারণত রাতে যাতায়াত করতো। বরিশালের অনেক যাত্রী রাতের লঞ্চে ঢাকায় গিয়ে দিনের বেলা অফিসের কাজকর্ম বা মার্কেটিং করে আবার রাতের লঞ্চে ফিরে আসতো। প্রায়ই পথিমধ্যে ডাকাতের কবলে পড়তো। এমনি একটা অভিজ্ঞ ডাকাত পার্টি ছিলো হাতুড়ি পেটা করার। গভীর রাতে ফেরার সময় যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়তো তখন চার পাঁচ জনের অল্প বয়সি ডাকাত পার্টি অতর্কিতে হামলা চালাতো হাতুড়ি দিয়ে। রাইফেল ওয়ালা আনসারের মাথার পেছনে হাতুরি দিয়ে পিটুনি দিলে আনসার অজ্ঞান হয়ে পড়ে যেতো। আনসারের রাইফেল কেড়ে নিয়ে লঞ্চের চালকের মাথার উপর তাক করে ধরে রাখতো ঠিকঠাক মতো চালিয়ে নিতে। অন্য ডাকাতরা সামনে যাকে পেতো তাকেই মাথার চান্দিতে হাতুড়ি পেটা করতো। দুই চার জনকে এভাবে মাথায় পিটুনি দিলে অন্য যাত্রীরা ভয়ে আতংকগ্রস্ত হয়ে মাথা নিচু করে লুকিয়ে উবুত করে বসে থাকতো। আশে পাশে কি হচ্ছে কেউ তা বুঝতে পারতো না। দুই চারজন যাত্রীর মাথায় পিটুনি দিয়ে শত শত যাত্রীকে অকেজো করে রাখতো কয়েকজন ডাকাতে। এ অবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ অর্থ ও স্বর্নালংকার কেরে নিতো। কানের অলংকার খুলে না নিয়ে ঝেংটা টান মেরে ছিড়ে নিতো। লুট করা টাকা ও অলংকার পোটলায় ভরে সুবিধাজনক চর এলাকায় লঞ্চ ভিড়িয়ে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যেতো কাঁশবনের ভেতর। এদিকে যাত্রীরা অনেক্ষণ পর্যন্ত মাথা নিচু করেই বসে থাকতো। লঞ্চের চালক এসে তাদেরকে ইনফরমেশন দিতো এই বলে যে ডাকাতরা চলে গেছে আপনারা মাথা তুলুন।

রোগীর মুখে এমন বিভৎস কাহিনী শুনে আমিও আতংকগ্রস্ত ছিলাম। কারণ, আমাকেও মাসে একবার এমন লঞ্চে রাতে আসা-যাওয়া করতে হতো। সরকারি বেতন মাসিক ১৮৫০ টাকা ছিলো। প্রথম চাকরি। প্রথম মাসের টাকা ঠিকই পেয়েছিলাম। দ্বিতীয় মাস থেকে আমাকে বেতন দেয়া হয় না। আমি ভাঙ্গা একটা ডোয়াপাকা টিনের ঘড়ে থাকতাম। অর্থ অফিসের দাবী ছিলো আমাকে নিয়ম অনুযায়ী ৩৫% বাড়ি ভাড়া কাটতে হবে। আমি ভাঙ্গা ঘরের ভাড়া কাটতে রাজি ছিলাম না। তাই, বেতন বন্ধ ছিলো। ২০ টাকা করে প্রাইভেট রোগী দেখে খাওয়া খরচ করে যা থাকতো তা থেকে বাবার জন্য কিছু টাকা মানি অর্ডার করে পাঠাতাম। আর যা থাকতো তা নিয়ে টাঙ্গাইল বাসায় আসতাম প্রতিমাসের প্রথম সপ্তাহে। যাহোক, চার মাস পরে এক সাথে বাড়ি ভাড়া সহ বেতন পেয়েছিলাম। সেই টাকায় বাবার ইচ্ছানুযায়ী বাড়ির পাশের ১২.৫ শতাংশ জমি কিনেছিলাম। লঞ্চে উঠে আতংকে মাথা হাতাতাম কখন এসে ডাকাতরা আমার মাথায় হাতুড়ি পিটায়। তারা তো আর আমি ডাক্তার কি না তা জিজ্ঞেস করে না। তখন, ডাকাতরা ডাক্তার ও পুলিশকে সমিহ করতো।

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ময়মনসিংহ

৩০ আগস্ট ২০২২ খ্রি.

#memoryofsadequel

#charamoddisadequel

এমন গল্প আরও পড়তে হ্যাস্ট্যাগ শব্দে ক্লিক করুন।