সূর্যবানুর ছেলেটি
সূর্যবানু ছিল নাহার নার্সিং হোমের আয়া। তখন টাংগাইল শহরে তথা টাংগাইল জেলায় মাত্র একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ছিল এই নার্সিং হোম। এটা ছিল আকুরটাকুর পাড়ায় একটা বড় পুকুরের পাড়ে। আশেপাশে বড় বড় আমগাছ ও নারিকেল গাছ ছিল। শহরের প্রাণ কেন্দ্রে হলেও এখানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিল সুন্দর, মনোরম । ক্লিনিকের মালিক ছিলেন টাংগাইল শহরের পশ্চিম পাশে অবস্থিত কাইয়ামারার নিঃসন্তান মোয়াজ্জেম হোসেন ফারুক ভাই। তিনি তার স্ত্রী নাহারের নামে এই ক্লিনিক করেন পৈত্রিক সুত্রে পাওয়া জমির উপর তিন তলা বিল্ডিং-এ। পাশেই আগে থেকেই পুরাতন আধাপাঁকা একটা ছিল তাদের । সেই বাড়িটা চিকিৎসকের থাকার কাজে ব্যবহার হতো । আমি ফ্যামিলি নিয়ে সেই বাসায় থাকতাম। বাসা ভাড়া দিতে হতো না। সর্ব সাকুল্যে মাসিক বেতন ছিল আমার ১,৮৫০ টাকা। ১৯৮৮ সনের জুলাই মাসে সরকারি চাকুরি হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি এক বছর এই ক্লিনিকে চাকরি করেছিলাম। আমার কর্তব্যনিষ্ঠা ও দক্ষতায় মুদ্ধ হয়ে ফারুক ভাই ছয় মাসের মাথায়ই আমাকে ক্লিনিকের মেডিকেল ডাইরেক্টর বানিয়ে দেন। তিনি ছিলেন জীবন বীমা কোম্পানির ম্যানেজার। অফিস ছিল ঢাকায়। থাকতেন ঢাকায়। প্রতিদিন তিনি আমাকে ফোন করে ক্লিনিকের খোঁজ খবর নিতেন। প্রথম দিকে ক্লিনিকে লোকশান হতো। আমি লোকশান কাটিয়ে লাভের মুখ দেখিয়েছিলাম। লাভের টাকা তার হাতে তুলে দিলে তিনি টাকা ফেরৎ দিয়ে বললেন “আমার ক্লিনিক থেকে লাভ নেয়ার দরকার নেই। লাভের টাকা দিয়ে ক্লিনিকের উন্নয়ন করতে পারলেই হবে।” আমি সেই টাকা দিয়ে ক্লিনিকের রিপেয়ারিং-এর কাজ করিয়েছিলাম। তিনি খুব খুশী ছিলেন আমার প্রতি। আমার সরকারি চাকরি হলে তিনি আমাকে দ্বিগুণ বেতন অফার করেছিলেন রেখে দেয়ার জন্য। আমি সেই অফার গ্রহণ করি নি।