Category Archives: Travel-Vlogs

kirtonkhola

কীর্তনখোলা নদীতে বোটিং, ১৯৯৯ সন

পুরনো হার্ড এলবাম থেকে।

১৯৯৯ সনে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজে এক্সটার্নাল এক্সামিনার হিসাবে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই নদীতে বোটিং করি।

বরিশালের কীর্তনখোলা নদী:

কীর্তনখোলা নদী বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদী। এটি বরিশাল শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এবং স্থানীয় অর্থনীতি, পরিবহন ও সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। নদীটি আড়িয়াল খাঁ নদীর একটি শাখা এবং দক্ষিণে পায়রা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

এই নদী বরিশালের প্রধান নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যার উপর দিয়ে প্রতিদিন শতাধিক লঞ্চ, ট্রলার ও কার্গো চলাচল করে। বর্ষাকালে নদীর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য হয়ে ওঠে। নদী তীরবর্তী এলাকা শহরের বাসিন্দাদের কাছে বিনোদনের জায়গা হিসেবেও জনপ্রিয়।

সংক্ষিপ্ত তথ্য:

অবস্থান: বরিশাল শহর

দৈর্ঘ্য: প্রায় ২০ কিলোমিটার

ব্যবহার: নৌপরিবহন, মাছ ধরা, পর্যটন

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য: তীরবর্তী সবুজ বন, সূর্যাস্ত দৃশ্য

foys-lake

Fay’s Lake

ফ-এস লেক, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৪।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী হিসাবে শিক্ষা সফরে গিয়েছিলাম কমিউনিটি মেডিসিন বিষয়ের পার্ট হিসাবে। ডা: নজরুল ইসলাম (চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ) এবং আমার মাঝে যে শিশুকে দেখা যাচ্ছে, ও হচ্ছে আমার ভাতিজা ডা: শহীদুল্লাহ্ হুমায়ুন কবির তালুকদার (অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ)। ও তখন প্রাইমারী স্কুলে পড়তো।
(পুরনো হার্ড এলবাম থেকে)

চট্টগ্রামের ফ-এস লেক: এক নজরে

চট্টগ্রাম শহরের কেন্দ্রস্থল জিইসি মোড় থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত একটি মনোরম প্রাকৃতিক লেক হলো ফ-এস লেক (Foy’s Lake)। ১৯২৪ সালে ব্রিটিশ আমলে এটি খনন করা হয় শহরের পানির চাহিদা মেটানোর জন্য। পরে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে। চারপাশে সবুজ পাহাড় আর হ্রদের নীল পানি মিলে তৈরি করেছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

এখানে রয়েছে বোট রাইড, এমিউজমেন্ট পার্ক, রিসোর্ট, কেবল কার ও নানা বিনোদনের ব্যবস্থা। ফ্যামিলি পিকনিক, বন্ধুবান্ধবের আড্ডা বা কাপলদের জন্য এটি একটি আদর্শ স্থান।

প্রবেশের জন্য টিকিট লাগলেও এটি সাশ্রয়ী মূল্যে পাওয়া যায়। সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।

ফ-এস লেকে একদিন মানেই শহরের কোলাহল ভুলে প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যাওয়া

taxila

তক্ষশিলা

তক্ষশিলা, ১১ মার্চ, ২০০৪ সন
(পুরোনো হার্ড এলবাম থেকে)
করাচিতে বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিসিয়ানস ও পাকিস্তান কলেজ অব ফিজিসিয়ানস এর যৌথ কনভোকেশন ও কনফারেন্সে যোগ দিতে পাকিস্তান গিয়েছিলাম। কনফারেন্স শেষে অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করি। এই ছবিটি তক্ষশীলা ভ্রমণের।

তক্ষশিলা (টেক্সিলা), পাকিস্তান – ১ মিনিটে জানুন

তক্ষশিলা (Texila বা Taxila) বর্তমান পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত এক প্রাচীন নগরী, যা ইতিহাসে জ্ঞানের এক বিশাল কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।

১. ঐতিহাসিক গুরুত্ব: এটি প্রাচীন গন্ধার রাজ্যের অংশ ছিল এবং খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ৫ম শতাব্দী পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল।

২. বিশ্ববিদ্যালয়: তক্ষশিলা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে চিকিৎসা, ধর্ম, গণিত, দর্শন ও যুদ্ধবিদ্যা পড়ানো হতো।

৩. বিশিষ্ট ছাত্র: আচার্য চাণক্য, আয়ুর্বেদাচার্য চরক ও চিকিৎসক জীবক এখানে শিক্ষালাভ করেন।

৪. ধর্মীয় কেন্দ্র: এটি হিন্দু, বৌদ্ধ ও গন্ধার শিল্পের মিলনস্থল। বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে এখানকার ভূমিকা বিশাল ছিল।

৫. ধ্বংস ও সংরক্ষণ: নানা আক্রমণে শহরটি ধ্বংস হয়। বর্তমানে এটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান।

তক্ষশিলা শুধু একটি প্রাচীন শহর নয়, বরং ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীন বিদ্যার আলো ছড়ানো এক গর্বিত নিদর্শন।

pairabond

বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র, পায়রাবন্দ, রংপুর, ১৯ জুন ২০০৪ খ্রি

(পুরনো হার্ড এলবাম থেকে)

রংপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস প্যাথলজি এক্সটার্নাল এক্সামিনার হিসাবে পরীক্ষা নিতে গিয়ে বিকেলে বেড়াতে গিয়েছিলাম।

বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র :

বেগম রোকেয়া স্মৃতি কেন্দ্র রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে অবস্থিত, যা নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মস্থান। কেন্দ্রটি তার স্মৃতিকে সম্মান জানাতে নির্মিত হয়েছে।

এখানে একটি ছোট জাদুঘর, পাঠাগার, সভাকক্ষ ও প্রদর্শনী এলাকা রয়েছে, যেখানে বেগম রোকেয়ার জীবন, সাহিত্যকর্ম ও নারীর অধিকার নিয়ে তার আন্দোলনের স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে।

শিক্ষার্থী, গবেষক ও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান। নারীশিক্ষা ও সমাজ সংস্কারে বেগম রোকেয়ার অবদান জানতে এটি এক অনন্য কেন্দ্র।

Samad Sir

Samad Sir

সামাদ স্যার


সামাদ স্যার ছিলেন আমার হাই স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় শিক্ষক। আব্দুস সামাদ বিএসসি স্যার। ক্লাসে সাধারণ গণিত, নৈর্বাচনিক গণিত ও পদার্থবিদ্যা পড়াতেন। এই তিনটি বিষয়েই আমি ভাল করতাম । তাই, স্যার আমাকে অন্যদের থেকে একটু বেশি স্নেহ করতেন। খুব সরল ছিলেন। সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন। ১৯৭৫-৭৬ সনে ভালুকার বাটাজোর বিএম হাই স্কুলে স্যার আমাকে নবম ও দশম শ্রেনীতে পড়িয়েছেন। আমি এর আগে কচুয়া পাবলিক হাই স্কুলে পড়েছি । ১৯৭৫ সনে নবম শ্রেনীতে ওঠার পর কচুয়া স্কুলে আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষক কেউ ছিলেন না । ১৯৭৪ সনে দেশের অবস্থা ভালো ছিল না । মানুষের মধ্যে অভাব অনটন ছিল । গ্রামের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো ছিলো না । অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ রাতের অন্ধকারে দেশ ছেড়ে চলে যায় । আমাদের বিজ্ঞানের শিক্ষক ভীমচন্দ্র বিএসসি স্যারও নিরূদ্যেশ হলেন । জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম । আমাদের বিজ্ঞান ও গনিত বিষয় কেউ পড়ালেন না । কয়াদি স্কুলে আমার ফুফাতো ভাই আব্দুল মোত্তালেব তালুকদার (মতি ভাই)  বিএসসি টিচার ছিলেন। হেড স্যার আমাকে পাঠিয়েছিলেন তাকে কচুয়া স্কুলে চলে আসার প্রস্তাব নিয়ে । তিনি রাজি হলেন না ।

আমার পড়ার উদ্যেশ্য ছিল ডাক্তার হওয়ার । না হতে পারলে ইঞ্জিনিয়ার । না হতে পারলে বিএসসি-এমএসসি হওয়ার। কিন্তু নবম শ্রেনীর তিন মাস হয়ে গেলো বিজ্ঞান পড়া শুরুই করতে পারলাম না । মনটা খুব খারাপ হয়ে গেলো । চলে এলাম বাটাজোর স্কুলে। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শওকত স্যার । তিনি ছিলেন সেই সময়ের এলাকার মধ্যে শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক । তিনি যে স্কুলেই প্রধান শিক্ষক হতেন সেই স্কুলই রাতারাতি উন্নত হয়ে যেতো । তার আগে বাটাজোর স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন মরহুম কুতুব উদ্দিন স্যার। তিনিও খুব শক্তিশালী হেড মাস্টার ছিলেন । তার অবদানেই বাটাজোর স্কুল অত্র এলাকার মধ্যে শ্রেষ্ঠ স্কুল ছিল । তিনি রাজনীতি করতেন । শুনেছি, তিনি একাই আওয়ামী লীগের অনেক সংঠনের প্রধান ছিলেন । এজন্য ভেতরে ভেতরে তার অনেক শত্রু তৈরি হয় । এক রাতের অন্ধকারে তিনি শত্রুদের দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরন করেন । সেই খুনের জের ধরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বাটাজোর এলাকায় খুনা-খুনি চলতে থাকে ।

শওকত স্যার ইংরেজি লিটারেচার পড়াতেন । প্রথম যেদিন তার ক্লাশ করলাম সেদিন তিনি ক্যাসাবিয়াংকা নামে একটা পয়েম (কবিতা) পড়াচ্ছিলেন । তিনি পাজামা-পাঞ্জাবি ও জিন্না-ক্যাপ পরতেন । বাম হাতে বই নিয়ে ডান হাত ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে মঞ্চের উপর হেটে হেটে কবিতা পড়ে পড়ে বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন । তিনি বলছিলেন “ক্যানন এট রাইট অব দেম, ক্যানন এট লেফট অব দেম,  –“ । এমনভাবে অভিনয় করে করে পড়াচ্ছিলেন যে মনে হচ্ছিলো স্যারই কামানের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন । আমি তার পড়ানোর স্টাইল দেখে মুগ্ধ হলাম । আরেকদিন তিনি একটা কবিতা পড়াচ্ছিলেন । সেটা মেঘনায় বান কবিতার “শোন মা আমিনা, রেখে দেরে কাজ, তরা করে মাঠে চল, এখনি নামিবে দেয়া, এখনি নামিবে ঢল —“এর ইংরেজি ভার্সনের “ও মেরি, গো এন্ড কল দা ক্যাটল হোম —-”  পড়াচ্ছিলেন । মেরি বানে ভেসে মারা গিয়েছিল । তার খোঁজে গিয়ে দেখতে পেলো মেরির চুল পানিতে ভাসছে । দেখে চুল না শেওলা বুঝা যাচ্ছিল না । কবিতায় ছিলো “ইজ ইট উইড?” স্যার এমনভাবে অভিনয় করে পড়ালেন যে, যেনো স্যার নিজের চোখে দেখছেন। স্যারের পড়ানোর স্টাইল আমাকে মুগ্ধ করেছিলো । কিন্তু অল্প কিছুদিন পরই স্যারকে এই স্কুল ছেড়ে অন্য স্কুলে চলে যেতে হলো । আমরা আরেক শ্রেষ্ট প্রধান শিক্ষককে হারালাম ।

আমি ভর্তি হয়েছিলাম ২ এপ্রিল ১৯৭৫ সনে । দিয়েছিলাম ১ এপ্রিল । সেদিন এপ্রিল ফুল মনে করে কে যেনো ভর্তি হতে নিষেধ করেছিলেন ।  আমি সন্তুষ্ট হলাম । বিএসসি স্যার হিসাবে পেলাম আব্দুস সামাদ স্যার ও আব্দুর রউফ স্যারকে । আব্দুল বারী স্যার খুব সম্ভব আইএসসি, বিএ টিচার ছিলেন । সামাদ স্যার পড়াতেন গনিত ও পদার্থ বিজ্ঞান, রউফ স্যার পড়াতেন রসায়ন,  বারী স্যার জীব বিজ্ঞান, জামাল স্যার বাংলা সাহিত্য, সামসুল হক স্যার বাংলা ব্যাকরন, বিল্লাল  স্যার ইংরেজি গ্রামার এবং আনসার মৌলভি স্যার ইসলামীয়াত । শওকত স্যার চলে যাবার পর নতুন হেড স্যার আসেন আব্দুর রহমান স্যার । পরপর দুইজন হেড মাস্টার আসেন। দুইজনের নামই ছিল আব্দুর রহমান । যিনি হেড স্যার ছিলেন তিনিই ইংরেজি লিটারেচার পড়াতেন ।

যেহেতু আমি তিন মাস বিজ্ঞান ও অংক বিষয় ক্লাস করিনি সেহেতু আমি এই বিষয়গুলো ক্লাসে তেমন ফলো করতে পারছিলাম না । তাই, আমি স্যারদের দৃষ্টি আকর্ষন করতে পারছিলাম না । আমি ক্লাসে অপরিচিত এক আগুন্তুক হিসাবে রয়ে গেলাম । আমি বিষন্ন থাকতাম ক্লাসে । ক্লাসে ফজলু ও দেলোয়ারের খুব নাম ছিল । অথচ কচুয়া স্কুলে থাকাকালিন ওদের মতোই আমি ছিলাম । ওরা এই স্কুলে আসে ক্লাস সেভেনে থাকতে । জামাল স্যার ফজলুকে বেশী স্নেহ করতো । আমার হিংসা হতো । এপ্রিলেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হলো । আমি পদার্থ বিজ্ঞানে দুই নম্বর কম পেয়ে ফেল করে বসলাম । জীবনে আমি থার্ড হইনি । সেই আমি একটা সাবজেক্টে ফেল করলাম! নিজেকে শান্তনা দিতাম এই বলে যে আমি গত তিন মাস কিছুই পড়ি নি । পাস মার্কের কাছাকাছি গিয়েছি, কম কিসের?

আমিই ফার্স্ট হবো এই সংকল্প নিয়ে পড়া শুরু করলাম ।  সব পাঠ্য বইয়ের নোট বই কিনে ফেললাম । পাঠ্যবই ভাল ভাবে পড়ি । তারপড় কিভাবে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তা নোট বই দেখে শিখে নেই । কিভাবে অংক কষতে হবে নোট বই দেখে শিখে নেই ।  ক্লাসে ভালো করতে থাকি । মনোযোগ দিয়ে ক্লাসে স্যারদের কথা শুনি । সামাদ স্যার ধীরে ধীরে সরল ভাষায় কথা বলে পড়াতেন । আমি স্পষ্ট বুঝতে পারতাম । সামাদ স্যারের পড়ানোর ধরন আমার ভালো লাগে । আমি এটাকে স্টাইল না বলে ধরনই বললাম । আমি এমবিবিএস ক্লাসে স্টাইল করে পড়াই না । আমার পড়ানোর ধরন সামাদ স্যারের মতো । আমি জানি, আমি যেভাবে পড়াই ছাত্রদের বুঝার জন্য উপকারি । অল্প কিছু ছাত্রদের কাছে সেটা পছন্দ নাও হতে পারে । আমি মনে করি স্টাইল করার দরকার নাই, ভালোভাবে বুঝে ছাত্ররা ভা্লো ডাক্তার হলেই হলো ।

সামাদ স্যার ক্লাসে অংক করতে দিতেন । আমরা দ্রূত অংক করে মঞ্চে উঠে স্যারকে দেখাতাম । যে আগে দেখাতে পারতো স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতো । আগের রাতে নোট দেখে চেপ্টারের সব অংক সল্ভ করা শিখে আসতাম । ক্লাসে অংক দেয়ার সাথে সাথে দ্রূত সমাধান করে ফার্স্টবয় ফজলুর আগে দেখাতে চেষ্টা করতাম । দ্রুত দেখাতে গিয়ে বেঞ্চের কোনায় আংগুলে ঠেলা লেগে গল গলি রক্ত পড়ে । আমার সেদিকে খেয়াল ছিল না । আমার টারগেট ছিলো স্যারকে আগে অংক করে দেখানো । ক্লাসমেট মজনু আমাকে বলল “এই খুন হয়ে গেছো । আঙ্গুল কেটে রক্ত পড়ছে ।” বলার পর আমি দেখি গলগলি রক্ত পড়ছে আঙ্গুল কেটে । এমন ছিলো আমার জেদ । ফার্স্ট হতেই হবে । সামাদ স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতেই হবে । এরপর দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় দ্বিতিয় স্থান অধিকার করলাম । সব স্যারের দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো আমার প্রতি । সামাদ স্যারের কাছে হয়ে গেলাম এক নাম্বার অনুগত ভালো ছাত্র।

১৯৭৬ সনে টেস্ট পরীক্ষা শেষে আমাদের ক্লাস বন্ধ রাখা হয়। ভাল ভাবে পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য আমাদের ৩১ জন পরীক্ষার্থীকে স্কুলের হোস্টেলে রাখেন। এক রুমে অনেকজন রাখা হত। আমার পড়ায় ক্ষতি হতে পারে বলে জানালে স্যার আমাকে একাই এক রুমে রাখেন। আমাদের তত্বাবধান করার জন্য সামাদ স্যার ও বারী স্যার স্কুল বিল্ডিং-এ থাকতেন। মাঝে মাঝে বেত হাতে নিয়ে চুপি চুপি রাউন্ড দিতেন। এক দিন রাত ১২ টার দিকে স্যারগণ চুপি চুপি রাউন্ড দিচ্ছিলেন। ছাত্ররা ঐ সময় একটু দুষ্টুমি করছিল। বারী স্যার বললেন “এই তোরা কি শুরু করেছিস?” সুলতান একটু ফক্কর ছিল। সে ভিতর থেকে বলে উঠল “শুরু না স্যার, শেষের দিকে।”

আমাদের পাহারা দেয়া ছাড়া স্যারদের তেমন কাজ ছিল না। বারান্দায় বসে সারাক্ষণ দাবা খেলতেন সামাদ স্যার আর বারী স্যার। বন্ধুরা দুপুরে খেয়ে প্রায় সবাই দুই এক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিত। আমি দুপুরে খেয়ে ঘুমাতাম না। টেস্ট পেপার থেকে সামাদ স্যারকে একটা প্রশ্নপত্র পছন্দ করে দিতে বলতাম। স্যার যে কোন একটা প্রশ্নপত্র পছন্দ করে দিতেন। তখন শীতকাল ছিল। মাঠে বেঞ্চ বসিয়ে তার উপর বসে ঘড়ি ধরে বিকেল ২ টা থেকে ৫টা পর্যন্ত পরীক্ষা দিতাম। একেক দিন একেক বিষয় পরীক্ষা দিতাম। সামাদ স্যার ও বারী স্যার খাতা দেখে নাম্বার দিতেন। বাংলা ও ইংরেজী ছাড়া সব বিষয়েই ৮০-র উপর নাম্বার পেতাম। ৮০-র উপর নাম্বার পেলে লেটার মার্ক বলা হতো । আমি তাই ৬ বিষয়ে লেটার পাবো বলে স্বপ্ন দেখতাম । খাতা দেখার জন্য স্যারগণ কোন ফি নেবার কল্পনাও করেন নি। বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষায় আমি ৪টা বিষয়ে লেটারমার্ক পেয়েছিলাম। সামাদ স্যারের সাবজেক্টগুলো বেশী ভাল করেছিলাম। সাধারণ গনিতে ৯৮, নৈর্বাচনিক গনিতে ৯৫ পদার্থবিদ্যায় ৯২ পেয়েছিলাম।

একদিন বিকাল ৩ টার দিকে আমি মাঠে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলাম । দেখলাম সামাদ স্যার লেট্রিন থেকে হারিকেন নিয়ে বের হচ্ছেন। টিনসেড কাঁচা পায়খানাঘর স্কুল ঘর থেকে ৪০-৫০ গজ দূরে ছিল। আমরা টিউবওয়েল থেকে বদনায় পানি নিয়ে কাঁচা পায়খানায় মল ত্যাগ করতাম। হারিকেন জ্বালিয়ে পড়তাম। হারিকেন একটি বিশেষ ধরনের কেরোসিনের বাতি ছিল যার আলো কমানো-বাড়ানো যে্তো। আমাদের সবার রুমে এ্কটা হারিকেন ও একটা করে বদনা থাকত। স্যারের হাতের হারিকেন নেভানো অবস্থায় ছিল। এমন ফকফকা দিনের বেলায় স্যারের হাতে হারিকেন কেন আমি তা বুঝতে পারছিলাম না। বুঝতে গেলে আবার আমার পরীক্ষার ক্ষতি হয়। হাতে হারিকেন আছে, কিন্তু বদনা নেই।  আরও জটিল মনে হচ্ছে। ফিরে আসার পর দেখি দুই স্যার হাসাহাসি করছেন। বুঝতে পারলাম দাবা খেলার নেশায় প্রকৃতির ডাকে যথাসময়ে সারা না দেয়ার কারনে জরুরী অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে বদনার পরিবর্তে হারিকেন নিয়ে স্যার লেট্রিনে গিয়েছিলেন। পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীরাও মাঝে মাঝে এমন আত্বভোলা হতেন। আমি পরীক্ষায় মনোনিবেশ করলাম।

১৯৭৭ সনের এসএসসি পরীক্ষায় পাস করার পড় মাত্র একবার বা দুইবার স্যারের সাথে দেখা । তিনি ছেলের চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে ময়মনসিংহ আসেন আমার কাছে । স্যারের ছেলের নামও রেখেছেন আমার নামে ‘সাদেকুর রহমান’ । সে ময়মনসিংহ পড়ার সময় আমার সাথে দেখা করতো । দীর্ঘদিন স্যারের সাথে যোগাযোগ ছিল না । ২০১০ সনের দিকে অনেক কষ্ট করে স্যারের মোবাইল নাম্বার যোগার করে কল দেই । স্যারের কুশলাদি জানার পর আমি আমার অবস্থান জানাই । যানাই “আমার বড় মেয়ে কম্পিউটার সাইন্সে বিএসসি পাস করেছে। এখন এমবিএ পড়ে । ছোট মেয়ে এমবিবিএস পড়ছে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে । ওদের জন্য দোয়া করবেন ।“ শুনে স্যার বললেন “আমার জন্যও দোয়া করবে । আমি এখন শান্তা মারিয়াম ইউনিভার্সিটিতে বাংলায় এমএ পড়ছি। আমার একটা আফসোস ছিল এমএ পাস করার। দেখি পাস করতে পারি কিনা।”

এরপর থেকে স্যারের সাথে আমার মাঝে মাঝে মোবাইলে যোগাযোগ হয় ।  স্যার গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। মোবাইল করলে খুশী হন। অনেক কথা বলেন। গত বছর বারবার স্যার বলছিলেন তার গ্রামে অনেক সম্পত্তি আছে। সেই সম্পত্তিতে একটা মেডিকেল কলেজ করবেন। তার অনেক ছাত্র ডাক্তার হয়েছে তারা সবাই সহযোগিতা করলে মেডিকেল কলেজ করা তার জন্য কঠিন না বলে তিনি জানান। আমি বলি গ্রামে মেডিকেল কলেজ করা সম্ভব না। স্যার বুঝতে চান না। আজও স্যারের সাথে কথা হয়েছে মোবাইলে। স্যার ভাল আছেন। আল্লাহ স্যারকে সুস্থ সুন্দর ধীর্ঘ জীবন দান করুন।

প্রথম লিখন – ৫/১০/২০১৭ খ্রি.

দ্বিতিয় সংস্করণ – ২৪/০৪/২০২০ খ্রি.

পুনশ্চঃ

আজো স্যারের সাথে কথা হয়েছে মোবাইলে । আমি বললাম

-স্যার, সকালে আপনাকে কল দিয়ে পাই নি । আপনাকে কল দেয়ার পর বারী স্যারকে কল দিয়েছিলাম । তিনি কল ধরেন নি ।

-বারী সাব ত ঢাকায় থাকেন । তার ছেলে এখন নৌবাহিনীর একটা জাহাজের প্রধান । খুব ভালো আছেন । ছেলে এতো বড় পদে চাকরি করে! আমার ছেলেও বিমান বন্দরে ভাল চাকরি করে ।

-স্যার, আমি ১৫ এপ্রিল ২০২০ তারিখ থেকে পিআরএল-এ গেছি ।

-তুমি এলপিআর-এ গেছো?

-স্যার, ওটাই এখন পিআরএল। আমি ১৩ তারিখে রিলিজ নেয়ার পর করোনা ভাইরাস লক ডাউনে যে ঘরে প্রবেশ করেছি তারপর থেকে আর নিচে নামি নি ।

-ভালোই হয়েছে তোমার জন্য । এই বিপদের সময় হাসপাতালে যেতে হবে না । তা কিভাবে সময় কাটাও?

-স্যার, আমি তিনটা মেডিকেল জার্নাল এডিট করি ঘরে বসে অনলাইনে । আরেকটা জার্নাল দেখাশুনা করি এডিটরিয়াল বোর্ডের মেম্বার হিসাবে । গল্প লেখি । দুইটা গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে । আরও ৮-৯টা প্রকাশিত হবে ইনশা আল্লাহ । আপনাকে নিয়ে একটা গল্প লিখছি । আমার প্রিয়জনদের নিয়ে একটা স্মৃতিচারণমূলক বইয়ে এটা থাকবে । প্রকাশ পাওয়ার পর সব বই আপনাকে দেব, ইনশা আল্লাহ ।

-আমিও লেখা লেখি করি । আমি একটা উপন্যাস লিখছি । করোনা পরিস্থি চলে গেলে ওটা ছাপতে দেব । নাম দিয়েছি ‘চন্দ্রকলা’ । চাঁদের যেমন কলা আছে, বড় হতে হতে পূর্ণ হয়ে যায়, আবার ছোট হতে হতে শেষ হয়ে যায়, তেমন আরকি।

-প্রিন্ট হবার পর আমি নিব, স্যার। ইনশা আল্লাহ। দোয়া করবেন ।

২৪/৪/২০২০ খ্রি.

নিচে সামাদ স্যারের ভিডিও দেখুন

Travel and Vlogs

I was a guest in village of Gouranga, YouTuber of favourite channel Shadow of village – Last part.

প্রিয় ইউটিউব চ্যানেল শেডো অব ভিলেজ এর ইউটিউবারের গ্রামের বাড়িতে মেহমান হলাম – শেষ পর্ব

I was a guest at the village house of Gauranga, the YouTuber of my favorite YouTube channel, Shadow of Village

প্রিয় ইউটিউব চ্যানেল শেডো অব ভিলেজ এর ইউটিউবার গৌরাঙ্গদের গ্রামের বাড়িতে মেহমান হলাম – ১ম পর্ব

শীতকালে আমাদের গ্রাম – ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার- My Village in Winter-Dr. Sadequel Islam Talukder

ময়মনসিংহ থেকে টাংগাইল যেতে রাস্তার পশ্চিম পাশের কিছু দৃশ্য ২৯/১/২০২১- ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

শরত কালে আমাদের সুন্দর গ্রাম – ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার – Dr. Sadequel Islam Talukder

বসন্তকালে আমাদের গ্রাম – ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার – Our Village in Spring – Sadequel Talukder

রীষ্ম কালে গ্রামের দৃশ্য – আমার শশুরবাড়ি – পারশী, ঘাটাইল, টাঙ্গাইল – ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

ঈদুল ফিতরের পরদিন গ্রামে গিয়েছিলাম যে পথে – দাদাবড়ি, নানাবাড়ির গ্রাম হয়ে @sadequeltalukder

শরতে বড়বাইদ পাড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

শুকনারছিট ভ্রমণ | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ খ্রি.

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ – প্রথম পর্ব | ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | Sreemongal Tour | Sadequel Talukder

শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ – দ্বিতীয় পর্ব | ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | Sreemongal Tour | Sadequel Talukder

হেমন্তে বড়বাইদ পাড়া গ্রাম | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | Barabaidpara Village

বড়বাইদ পাড়া নূরানী হাফেজিয়া মাদ্রাসার কচিকাঁচাদের দক্ষতার প্রদর্শনী ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

আমার দাদাবাড়ি ভিয়াইল গ্রামে, ২৪/১২/২০২১| ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

বড় ফুফুর বাড়ি ভিয়াইল গ্রামে | ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ | সাদেকুল তালুকদার

নানাবাড়ি রৌহা গ্রামে ২৪ ডিসেম্বর ২০২১- ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

আমার বুবুর বাড়ি আমজানি গ্রামে বংশি নদীর পারে | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

পলাশতলীর শাইল সিন্দুরের খাল | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

ছোট চওনার ঝোরা | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার | ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প, ইন্দারজানি, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

ইন্দারজানিতে, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১ | ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

প্রিয়কুঞ্জ মীর্জা পার্ক, পন ঘাগড়া, চুরখাই, ময়মনসিংহ ঘুরে এলাম | ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

সুন্ধরা বারিধারা আবাসিক এলাকায় প্লট কিনলাম যেভাবে | জীবনের গল্প | ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার