স্ক্যাবিস: ধামা বা চুলকানির এক ছোঁয়াচে রোগ
স্ক্যাবিস: ধামা বা চুলকানির এক ছোঁয়াচে রোগ
ডা. সাদেকুল ইসলাম তালুকদার
খুবই সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত ও ছোঁয়াচে চর্মরোগ স্ক্যাবিস ।
বাংলায় একে আমরা বলি ধামা, অনেকেই বলেন খাউস চুলকানি, পাচড়া, বা গোট বসা রোগ।
এই রোগটি যেমন কষ্টদায়ক, তেমনি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতাও রাখে।
আসুন, আমরা বিস্তারিতভাবে জানি – এই রোগ কী, কেন হয়, কীভাবে ছড়ায়, এবং এর প্রতিকার কী।
রোগটি কী?
স্ক্যাবিস হলো একটি ছোঁয়াচে চর্মরোগ, যা একটি ক্ষুদ্র জীবাণু—Sarcoptes scabiei নামের মাইট বা পরজীবী কীট দ্বারা হয়ে থাকে।
এই পরজীবীটি মানুষের ত্বকের ভেতরে গর্ত করে ডিম পাড়ে, এবং এর ফলে শুরু হয় তীব্র চুলকানি ও ত্বকে ফুসকুড়ি।
এই রোগটি গরিব, গরম ও ঘিঞ্জি পরিবেশে বেশি দেখা যায়, তবে যেকোনো বয়স ও শ্রেণির মানুষ এতে আক্রান্ত হতে পারে।
কীভাবে ছড়ায়?
স্ক্যাবিস খুব সহজেই ছড়ায়:
- রোগীর সঙ্গে ঘন শারীরিক সংস্পর্শে এলে
- একই বিছানা, কাপড়, তোয়ালে, পোশাক ব্যবহার করলে
- শিশুরা একসাথে ঘুমালে বা খেলার সময় সংক্রমিত হতে পারে
একটি পরিবারে একজন আক্রান্ত হলে, খুব দ্রুত অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হতে পারে। তাই এটা একক রোগ নয়—একটি পারিবারিক বা গোষ্ঠীগত স্বাস্থ্য সমস্যা।
লক্ষণসমূহ
স্ক্যাবিসের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ হলো:
- তীব্র চুলকানি – বিশেষ করে রাতে
- ছোট ছোট গুটি বা ফুসকুড়ি – হাতের আঙুলের ফাঁকে, কবজি, কনুই, নাভির চারপাশ, কোমর, বুকের নিচে, পায়ের আঙুল, বা যৌনাঙ্গে
- স্ক্র্যাচ মার্ক বা ঘষার দাগ
- ঘুমে ব্যাঘাত – চুলকানির জন্য
শিশুদের ক্ষেত্রে:
- মুখ, মাথার ত্বক, হাত-পা—সব জায়গাতেই গুটি দেখা যেতে পারে
- কখনো কখনো জ্বর ও ইনফেকশন-ও হতে পারে
জটিলতা
চুলকানির জায়গা বারবার ঘষে ঘষে খোলস উঠে গেলে তাতে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে, যাকে বলে সেকেন্ডারি ইনফেকশন।
এর ফলে হতে পারে:
- ঘা
- পুঁজ জমা
- পানি পড়া ফোসকা
- শিশুদের ক্ষেত্রে: সেলুলাইটিস বা গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস নামক মারাত্মক কিডনি সমস্যা
তাই স্ক্যাবিসকে ছোট রোগ ভাবলে চলবে না।
করনীয় / চিকিৎসা
- নির্ভরযোগ্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
- সাধারণত ব্যবহৃত ঔষধ:
- পারমেথ্রিন (Permethrin) 5% ক্রিম: পুরো শরীরে ঘুমানোর আগে লাগিয়ে সকালে ধুয়ে ফেলতে হয়
- আইভারমেক্টিন (Ivermectin) ট্যাবলেট: ওজন অনুসারে ডোজ, কিন্তু গর্ভবতী ও শিশুরা গ্রহণ করতে পারে না
- অ্যান্টিহিস্টামিন: চুলকানি কমাতে
- অ্যান্টিবায়োটিক: ইনফেকশন হলে
- পরিবারের সবাইকে একসাথে চিকিৎসা দিতে হবে, না হলে বারবার ফিরে আসবে।
🧺 পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা ও প্রতিরোধ
- ব্যবহৃত বিছানার চাদর, বালিশ, কাপড়, তোয়ালে গরম পানিতে ধুয়ে রোদে শুকাতে হবে
- ৩ দিন ব্যবহৃত পোশাক বন্ধ ব্যাগে রেখে তারপর ধুতে হবে
- নিজের নখ কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে
- স্কুল-হোস্টেল-আবাসিকে সচেতনতা বাড়াতে হবে
- নিজে চিকিৎসা নিয়ে গোপন রাখা যাবে না – সবাইকে জানাতে হবে
শেষ কথাঃ
স্ক্যাবিস একটি নিরাময়যোগ্য রোগ, কিন্তু অবহেলা করলে এটি পরিবার বা সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো – নিজে সুস্থ থাকা, এবং আশপাশের মানুষকে সচেতন করা।