Tag Archives: Lyricist

floating-hotel

বুটিগঙ্গায় ভাসমান হোটেলে ৬ মাস

(লুতফর হাসানের জীবনের গল্প থেকে)

ডাঃ সাদেকুল ইসলাম তালুকদার

কবি, গীতিকার, লেখক, কণ্ঠশিল্পী লুতফর হাসান আর জে কিবরিয়ার সাথে এক ভিডিও প্রোগ্রামে তার বিচিত্র জীবনের গল্প শুনিয়েছেন। আমি সেই গল্প শুনেছি। তার থেকে কিছু অংশ এই পর্বে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

এর আগের পর্বে আমি তুলে ধরেছি বিসিএস-এর পরীক্ষার প্রস্তুতি না নিয়ে তিনি ঢাকায় থেকে একটা প্রাইভেট ফার্মে মাসিক তিন হাজার টাকার বেতনে কাস্টোমারদের ঠিকানা সংগ্রহ করে দিতেন। থাকতেন বন্ধুদের ভাড়া করা ফ্লাটবাড়ির রুমের বারান্দায়। একটা প্রিন্টিং প্রেসে অল্পদিন ছোট একটা চাকরিও করেন। তার এলাকার এক বড় ভাই বসিলায় একটা ইটভাটায় ম্যানেজার ছিলেন। তার কাছে একটা চাকরি চাইলে তিনি তাকে দৈনিক তিন ঘন্টার জন্য একটা কাজ দেন সেই ইটভাটায়। কাজটা ছিল এই রকম – কয়টা ট্রাক এলো, কয়টা ট্রাক গেলো এবং কয়টা ইট বিক্রি হলো, এটা খাতায় লিখে রাখা। বাকী সময়টা নষ্ট করেন না। দেখা হলো আরেক বাস মালিকের সাথে। তার কাছে একটা চাকরি চাইলে তিনি তাকে বাসের টিকিট বিক্রির চাকরি দেন। শেওড়া পাড়া ওভারব্রিজের নিচে বসে বাসের টিকিট বিক্রির চাকরি ছিলো সেটা। অল্প টাকা পেতেন সেখান থেকে। আরও কিছু ছোট খাটো কাজ তিনি করতেন, তা তিনি মিডিয়ায় বলতে চান না। বললে তার মা শুনে অনেক কষ্ট পাবেন। তাই তিনি বলেন না। কবির মা আর জে কিবরিয়ার অনুষ্ঠানের ভক্ত। তাই, বলতে চান না। বললে মা শুনে কষ্ট পেয়ে কাদবেন। পাগল হয়ে যাবেন।

তিনি তখন থাকতেন বুড়ীগঙ্গা নদীতে ভাসমান হোটেলে। আহসান মঞ্জিল বরাবর বুড়িগঙ্গা নদীতে কিছু ভাসমান নৌকা আছে যেগুলি ব্যবহার করা হয় ভাসমান হোটেল হিসাবে। নৌকার মাঝ দিয়ে করিডোর রেখে দুইদিকে সারিবদ্ধভাবে ছোট ছোট রুম করে আবাসিক হোটেল করেছে। এখনো এগুলো আছে। এগুলোর প্রতিরুমের ভাড়া ছিলো তিন বেলা খাবার সহ মাত্র ৫০ টাকা।

লুতফর হাসান এখানে থেকেছেন ৬ মাস। নৌকায় শুয়ে শুয়ে তিনি রাতের আকাশ দেখতেন। দেখতেন আকাশের বিশালতা। দেখতেন খা খা চাদের আলো। দেখতেন আকাশে মেঘের খেলা। ডুবে যেতেন কল্পনার জগতে। হয়ে উঠেন কবি, লেখেন গান। সেই গান খোলা গলায় খোলা আকাশের নিচে নিজেই গান। তখন তিনি লিটন হাফিজের মাধ্যমে বাংলা ভিসন টিভিতে কাজ পান। ২০০৫ সনে সালমার কন্ঠে “তোমার বাড়ি, আমার বাড়ি, মধ্যে চিত্রা নদী” গানটি জনপ্রিয়তা পায়। রিংকুর কন্ঠে তার লেখা “কানার হাট বাজার” গানটি জনপ্রিয়তা পায়। ক্লোজ আপ তারকা রাজীবের কন্ঠে তার লেখা “আমি একলা মানুষ দোকলা খুজি” গানটিও জনপ্রিয়তা পায়। এভাবে তার গানের জগতে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হয়।

তিনি সকালে ভাসমান হোটেল থেকে সদর ঘাট হয়ে বসিলার ইটের ভাটায় চাকরি করতে যেতেন। সেখানকার কাজ শেষ করে যেতেন শেওড়া পাড়া বাসের টিকিট বেচার চাকরি করতে। সন্ধায় আসতেন শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটে। এই মার্কেটে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীরা যাতায়াত করেন। এখান থেকে তিনি ফিরে গিয়ে ঘুমাতেন বুড়িগঙ্গায় ভাসমান হোটেলে।

আজিজ সুপার মার্কেটে পরিচয় হয় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য বিভাগের টিচার রেজা আরিফ ও শরীফ সাহেবের সাথে। তিনি ভাসমান হোটেল ছেড়ে তাদের সাথে কাঠাল বাগানের এক বাসায় উঠেন। রেজা আরিফ তাকে রাতে আন্তর্জাতিক মানের ক্লাসিক সিনেমা এবং নাটক দেখাতেন এবং অভিনয় গুলোর ক্লাসিকাল দিক বিশ্লেষণ করে বুঝাতেন। এভাবে তিনি সিনেমা এডিটিং করা শুরু করেন। সেই সময় তার জীবনে প্রেম আসে।তিনি বলেন “আমি যখন জীবনযুদ্ধ করছি তখন মেয়েটি ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নিচ্ছে। সেই সময় তার সাথে আমার প্রেম হয়। কিন্তু তাকে আমি বিয়ে করতে পারিনি। সেই জন্য হয়তো আমার জীবনে ধ্বস নেমেছে।” কেন বিয়ে করতে পারেননি প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সেটা পারিবারিক ভাবে একটা বাজে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল।” বলে তিনি কিছুক্ষণ অন্যমনস্ক হয়ে চুপ থাকেন।

২৮ জুন ২০২৫ খৃ.

#জীবনেরগল্প#গল্প#লুতফর_হাসান

(সুত্র: আর জে কিবরিয়া : ২৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ইউটিউব ভিডিও, স্টুডিও অব ক্রিয়েটিভ আর্টস লি: কবি লুতফর হাসানের জীবনের গল্প: সব বলা যাবে তো?)